পুলিশের আটক-বাণিজ্য- দায়ী ব্যক্তিদের আগে ধরুন, পরে মধ্যস্থতাকারী
পুলিশের আটক-বাণিজ্য ও টাকাপয়সা লেনদেনের
মাধ্যমে আটক ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি যে সরকারিভাবেই স্বীকার করে
নেওয়া হয়েছে, তা আগেই স্পষ্ট হয়েছে। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের
নির্দেশে এর সঙ্গে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের
নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি এই আটক-বাণিজ্যে ঘুষ লেনদেনের কাজে
মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধরনের নির্দেশনা কতটুকু ফল দেবে। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর
দপ্তরের নির্দেশনার পর এই আটক-বাণিজ্যের মূল দায় যাদের, সেই পুলিশ বিভাগের
সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া ও এ পর্যন্ত যে ব্যবস্থা
নেওয়া হয়েছে, তা খুবই দায়সারা।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেওয়া চিঠিতে ১৭৫ জন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ নিজেদের মতো তদন্ত করে মাত্র ২৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে এবং সেটাও এখনো ‘বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ’ পর্যায়ে ঠেকে আছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে আটক ব্যক্তিদের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা খুবই গুরুতর। পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যদি এ ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়েন, তবে শুধু রুটিন বা দায়সারা বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে ফল পাওয়া কঠিন। এ ধরনের অভিযোগের তদন্ত হওয়া উচিত স্বাধীন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি হওয়া উচিত দৃষ্টান্তমূলক।
পুলিশের এই বাণিজ্যে যাঁরা মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের সোর্স থেকে শুরু করে অসাধু সাংবাদিক পর্যন্ত। বোঝা যায় যে মিলেমিশে দুর্নীতি, অন্যায় ও অপকর্ম করার শিকড় কতটা বিস্তৃত। এখন পুলিশের আটক-বাণিজ্যের মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে র্যাবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর যাঁরা আটক-বাণিজ্য করলেন, ঘুষ নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ছেড়ে দিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে যেহেতু এখনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়, তাই ঘুষ লেনদেনে মধ্যস্থতা করেছেন যাঁরা, তাঁদের বিরুদ্ধে নেওয়ার বিষয়টি কতটা কাজে দেবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে, আটক-বাণিজ্যে যাঁদের বিরুদ্ধে দালালির অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে যে নতুন কোনো বাণিজ্য হবে না, সেটা কি নিশ্চিত করে বলা যাবে?
আমরা মনে করি, সরকার যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ ধরনের অপকর্ম ও অভিযোগ থেকে মুক্ত রাখতে চায়, তবে এর দায়ী সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দায়সারা তদন্ত বা ধামাচাপা দেওয়ার যে রীতি আমাদের দেশে চলে আসছে, তা থেকে অবশ্যই সরে আসতে হবে। বাহিনীগুলোর ভাবমূর্তির স্বার্থেই এটি করতে হবে। পুলিশের আটক-বাণিজ্যের বিষয়টিকে সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বলেই নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দুই দফা এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হলো। কিন্তু পুরোনো প্রক্রিয়ায় এসব উদ্যোগ কোনো কাজেই দেবে না।
No comments