‘ভারত-বাংলাদেশ যৌথ ছবি হলে অভিনয় করবো’ -রাইমা সেন
গতকাল সকালের একটি ফ্লাইটে একদিনের ঝটিকা
সফরে ঢাকায় আসেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন নাতনি
অভিনেত্রী রাইমা সেন। কলকাতা এবং বলিউডের ছবি নিয়ে এখন এ অভিনেত্রী বেশ
ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর আগে সর্বশেষ ৬ বছর আগে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন।
এবারে তার ঢাকায় আসার উদ্দেশ্য হচ্ছে লিজান মেহেদীর বিজ্ঞাপনের লঞ্চিং
অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া। শুধু তাই নয়, এই বিজ্ঞাপনটির মডেলও হয়েছেন তিনি। এর
মাধ্যমে প্রথমবারের মতো তিনি বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনে মডেল হলেন। এদিকে সকালে
এয়ারপোর্ট থেকে তিনি সোজা চলে যান সোনারগাঁও হোটেলে। সেখানে ঘণ্টা দুয়েক
বিশ্রাম নেন। এরপর দুপুর ১২টায় লিজান মেহেদী ডিলার কনফারেন্সে অংশ নেয়ার
জন্য ঢাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে আসেন রাইমা। লাল টুকটুকে শাড়ি ও হালকা
সাজে রাইমাকে এ সময় এক কথায় অসাধারণ দেখাচ্ছিল। সৌন্দর্যের দেবী যেন ভর
করেছিল তার ওপর। রূপের পাশাপাশি তার মায়াবী মিষ্টি মধুর কথাতেও সবাই মুগ্ধ
হন। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল
হক ইনুু। মন্ত্রীর সঙ্গে মিলে লিজান মেহেদীর নতুন বিজ্ঞাপনচিত্রটির টিভিতে
প্রচার পূর্ব প্রদর্শন উন্মোচন করেন রাইমা। এর পরপরই মিডিয়ার মুখোমুখি হন
তিনি। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে বেশকিছু প্রশ্নের উত্তর দেন সদাহাস্য এই
অভিনেত্রী। বাংলাদেশে আসার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে রাইমা বলেন, বাংলাদেশে
আমি আসলাম প্রায় ছয় বছর পর। এখানে এসে অনেক ভাল লাগছে। তবে এয়ারপোর্ট থেকে
হোটেল ও কনভেনশন সেন্টারে আসার পথে দেখলাম বাংলাদেশের অনেক কিছু পরিবর্তন
হয়েছে। এয়ারপোর্ট, রাস্তাঘাট, পরিবেশ সব কিছুতেই পরিবর্তন ও উন্নতির ছোঁয়া
চোখে পড়েছে। সত্যি বলতে কী বাংলাদেশ সফরটা অনেক উপভোগ করছি। বাংলাদেশে কি
ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছে আছে? উত্তরে রাইমা বলেন, ইচ্ছে আছে কিন্তু সুযোগ নেই।
কারণ আজই চলে যাবো। কারণ কাল আমার শুটিং রয়েছে। তাই ব্যস্ততার কারণে এবার
আর ঘুরে বেড়ানো হবে না। চেষ্টা করবো সামনে আবার আসলে ঢাকার বাইরে ঘুরে
বেড়াবো। আপনার নানী সুচিত্রা সেনের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু জেনেছেন?
যেহেতু আমার নানীর বাড়ি বাংলাদেশের পাবনাতে। তাই সে সম্পর্কে শুনেছি। তবে
তিনি কিন্তু অভিনয় ছেড়ে দেয়ার পর একটু আড়ালে ছিলেন। কম কথা বলতেন। তাই
ওভাবে বিস্তারিত জানা হয়নি। নানীর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল? তার
প্রভাব কতটুকু আপনার অভিনয় জীবনে? এমন প্রশ্নের উত্তরে আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে
রাইমা বলেন, নানী আমাকে ডলু বলে ডাকতেন। আমি তাকে আম্মা বলে ডাকতাম। আমাদের
সম্পর্কটা অন্যরকম ছিল। তিনি শুধু ভারতে নয়, সব বাংলা ভাষাভাষি দর্শকদের
কাছেই প্রিয়। তার কাছ থেকেই আসলে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহটা পাই। আমার অভিনয়
জীবনে নানী ও মায়ের প্রভাব পুরোটাই বলা চলে। আর এটা আমার জন্য পরম
সৌভাগ্যের ব্যাপার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বলিউডে নির্মিত ‘চিলড্রেন
অব ওয়ার’ ছবিতে বীরাঙ্গনা চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ছবিটি ভারতের পাশাপাশি
বাংলায় ডাব করে ‘যুদ্ধশিশু’ নামে বাংলাদেশেও মুক্তি পেয়েছে সমপ্রতি। এই
ছবিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন? রাইমা বলেন, আসলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
সম্পর্কেতো শুনেছি। তবে ওভাবে কোন কিছু জানতাম না। এই ছবিটি করতে গিয়ে ১৯৭১
সালের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক জেনেছি। শুধু তাই নয়, সেই বিষয়টি ধারণও
করেছি মনে। অনেক ভাল অভিজ্ঞতা হয়েছে এরকম একটি বিষয়ের উপর নির্মিত ছবিতে
কাজ করতে পেরে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে কাজ করার ইচ্ছে কি আছে? বেশ ভেবে
চিন্তে রাইমা বলেন, যদি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ ছবি হলে অভিনয় করবো। তবে শুধু
বাংলাদেশের ছবিতে এখন কাজ করতে চাচ্ছি না। লিজান মেহেদীর বিজ্ঞাপনে কাজ করে
কেমন লেগেছে? রাইমা বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কোন বিজ্ঞাপনে কাজ
করলাম। তাই অভিজ্ঞতাটা ছিল দারুণ। সবাই খুব সহযোগিতা করেছেন। আশা করছি,
বিজ্ঞাপনটি ভাল লাগবে সবার। আপনার মা মুনমুন সেনতো রাজনীতি করছেন? আপনার কি
ইচ্ছে আছে রাজনীতিতে আসার? খানিক হেসে রাইমা বলেন, মায়ের রাজনীতি করাটা
আমরা উপভোগ করছি। আমি ও রিয়া দুইজনই প্রচারণাতেও অংশ নিয়েছি। তবে আপাতত
রাজনীতিতে আসার কোন ইচ্ছে নেই। আমি অভিনয় নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চাই।
বাংলাদেশে আবার কবে আসবেন? হাসিমুখে রাইমা বলেন, আপনারা যখন ডাকবেন তখনই
চলে আসবো। কারণ বাংলাদেশের প্রতি আলাদা একটি টান রয়েছে আমার। এখানে আসলে
নিজের দেশ থেকে আলাদা মনে হয় না। সবাইকে আপন মনে হয়। সুখের কিছু স্মৃতি
নিয়ে আজ দেশে ফিরবো। সামনে আবারও দেখা হবে। খুব জলদি।
ছবি: মুজাহিদ সামিউল্লাহ
No comments