গুয়ানতানামোর অজানা ৭ তথ্য
আফগানিস্তানে বন্দী একজন মার্কিন সেনার বিনিময়ে পাঁচজন কুখ্যাত তালেবান জঙ্গি নেতাকে মুক্তি দিয়ে আবার আলোচনায় চলে এসেছে গুয়ান্তানামো বে। গত সপ্তাহের প্রায় পুরোটাই আলোচনা ছিল কুখ্যাত এ কারাগার নিয়ে। আফগানিস্তানে বন্দী মার্কিন সেনাসদস্য সার্জেন্ট বো বার্গদাহলকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে পাঁচজন জ্যেষ্ঠ তালেবান বন্দীর মুক্তির পর। কিউবার দক্ষিণাঞ্চলের একটি সেনাঘাঁটিতে তাঁরা বন্দী ছিলেন। মার্কিন আইনপ্রণেতারা প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, বন্দীদের মুক্তি দিতে তাঁদের বাধ্যতামূলক ৩০ দিনের নোটিশ দেওয়া হয়নি। তবে মার্কিন প্রশাসন বলছে, তাঁদের দ্রুত কাজ করতে হয়েছে। কারণ বার্গদাহলের স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছিল। প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আরও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বন্দী সরানোর বিষয়টি নানা পর্যায়ে অবেক্ষাধীন রয়েছে। এ বিষয়ে চলতি বছরে ব্যাপক অগ্রগতি দেখা যাবে বলে আমি মনে করি।’
গুয়ানতানামো বে কারাগার নিয়ে যখন এত কথা হচ্ছে, তখন এ কারাগার সম্পর্কে সাতটি তথ্য জেনে নিই:
ইতিহাস
৯/১১-এর পরবর্তী সময়ে ‘শত্রু যোদ্ধা’দের আটক রাখতে ২০০২ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এ কারাগার চালু করেন। দক্ষিণ কিউবায় অবস্থিত মার্কিন সেনাঘাঁটিতে এ কারাগার অবস্থিত। ১৯০৩ সালের হাভানা চুক্তির আওতায় কিউবা থেকে ইজারা নিয়ে মার্কিন ঘাঁটি তৈরি করা হয়।
কারাগারটি চালু করার পর থেকে বেশ দ্রুত এর কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সারা দুনিয়ায়। খাঁচার ভেতর বেড়ি ও হাতকড়া পরা কয়েদিদের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর এ কারাগার ঘৃণার প্রতীক হিসেবে পরিচিত হয় মানুষের কাছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বারবার এ কারাগার বন্ধ করার ঘোষণা দিলেও কংগ্রেসের বাধার কারণে তাঁর উদ্যোগ আংশিক ব্যাহত হয়। কংগ্রেস এ কারাগার যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করতে চায়নি।
বন্দী যাঁরা
বর্তমানে ওই কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ১৪৯ জন। এর মধ্যে ৭৮ জনকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি না হওয়ায়’ মুক্তি দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৮ জন ইয়েমেনি, পাঁচজন তিউনিসিয়ান, চারজন আফগান ও চারজন সিরীয় নাগরিক রয়েছেন।
বাকি ৭১ জন বন্দীর ১০ জন ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সেনা কমিশন কর্তৃক অভিযুক্ত হয়ে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর ৩৮ জনকে মামলা পুনর্বিবেচনা করার জন্য যোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। গত সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া পাঁচজন তালেবান নেতা এই ৩৮ জনের মধ্যে ছিলেন।
বিচার ও দণ্ড
২০০৬ সালে বিশেষ সেনা কমিশন গঠনের পর থেকে আটজনকে বিচারের মুখোমুখি করে অভিযুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ছয়জনের অপরাধ প্রমাণিত হয়। ফেডারেল কর্তৃপক্ষ এর মধ্যে দুজনের শাস্তি মওকুফ করে। দুটি ক্ষেত্রে আপিল করা হয়। শেষ পর্যন্ত চারজনকে নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। একমাত্র তানজানিয়ার নাগরিক আহমেদ আল ঘালিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। ১৯৯৮ সালে আফ্রিকায় মার্কিন দূতাবাসে হামলার দায়ে অভিযুক্ত তিনি।
কোথায় গেলেন তাঁরা?
এর বাইরে যেসব বন্দী ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১৯টি দেশের নাগরিক ছিলেন। একজনকে দেখানো হয়েছে রাষ্ট্রহীন হিসেবে। সেখানে ইয়েমেনের ৮৭, আফগানিস্তানের ১২, সৌদি আরবের ১১ জন এবং অন্যান্য দেশ—যেমন মিসর, রাশিয়া, পাকিস্তানের কয়েকজন নাগরিক ছিলেন। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়নি, তাঁদের তৃতীয় কোনো দেশে ফেরত পাঠাতে চেয়েছিল প্রশাসন, অনেক বন্দীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলেও কাউকে কাউকে আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, বারমুডায় গৃহবন্দী হিসেবে রাখা হয়।
ব্যয়
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, গুয়ানতানামোয় একজন বন্দীকে রাখতে বছরে খরচ হয় ২৭ থেকে ২৮ লাখ মার্কিন ডলার। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে অত্যাধুনিক কারাগারে একজন বন্দীকে রাখতে খরচ হয় ৭৮ হাজার ডলার।
মুক্ত ব্যক্তিদের অপরাধপ্রবণতা
গুয়ানতানামো থেকে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিদের ওপর কড়া নজর রাখে যুক্তরাষ্ট্র। কয়েকটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ছাড়া পাওয়া ব্যক্তিদের ৩০ শতাংশই পশ্চিমাদের ওপর হামলার মাধ্যমে প্রতিশোধ নিতে পুরোনো জঙ্গি সংগঠনে ফেরত যান। একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, অপরাধী হিসেবে শনাক্ত এবং সন্দেহভাজন উভয়ের ক্ষেত্রেই এটা দেখা যায়। তিনি বলেন, মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিদের ১৬ শতাংশ যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত এবং ১২ শতাংশের বিষয়ে ধারণা করা হচ্ছে।
সুপরিচিত বন্দী
এখনো গুয়ানতানামো কারাগারে বন্দী রয়েছেন কয়েকজন সুপরিচিত জঙ্গি নেতা। এঁদের একজন খালিদ শেখ মোহাম্মদ। খালিদ নিজেকে ৯/১১-এর মূল পরিকল্পক বলে দাবি করেন।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জঙ্গি হামলায় সন্দেহভাজন আরও চারজন রয়েছেন। বন্দীদের আরেকজন সৌদি নাগরিক আবদাল রহিম আল নাসিরি। তাঁর বিরুদ্ধে ‘লিমবার্গ হামলায়’ নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আটক এ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ হতে পারে। এএফপি।
গুয়ানতানামো বে কারাগার নিয়ে যখন এত কথা হচ্ছে, তখন এ কারাগার সম্পর্কে সাতটি তথ্য জেনে নিই:
ইতিহাস
৯/১১-এর পরবর্তী সময়ে ‘শত্রু যোদ্ধা’দের আটক রাখতে ২০০২ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এ কারাগার চালু করেন। দক্ষিণ কিউবায় অবস্থিত মার্কিন সেনাঘাঁটিতে এ কারাগার অবস্থিত। ১৯০৩ সালের হাভানা চুক্তির আওতায় কিউবা থেকে ইজারা নিয়ে মার্কিন ঘাঁটি তৈরি করা হয়।
কারাগারটি চালু করার পর থেকে বেশ দ্রুত এর কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সারা দুনিয়ায়। খাঁচার ভেতর বেড়ি ও হাতকড়া পরা কয়েদিদের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর এ কারাগার ঘৃণার প্রতীক হিসেবে পরিচিত হয় মানুষের কাছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বারবার এ কারাগার বন্ধ করার ঘোষণা দিলেও কংগ্রেসের বাধার কারণে তাঁর উদ্যোগ আংশিক ব্যাহত হয়। কংগ্রেস এ কারাগার যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করতে চায়নি।
বন্দী যাঁরা
বর্তমানে ওই কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ১৪৯ জন। এর মধ্যে ৭৮ জনকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি না হওয়ায়’ মুক্তি দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫৮ জন ইয়েমেনি, পাঁচজন তিউনিসিয়ান, চারজন আফগান ও চারজন সিরীয় নাগরিক রয়েছেন।
বাকি ৭১ জন বন্দীর ১০ জন ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সেনা কমিশন কর্তৃক অভিযুক্ত হয়ে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর ৩৮ জনকে মামলা পুনর্বিবেচনা করার জন্য যোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। গত সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া পাঁচজন তালেবান নেতা এই ৩৮ জনের মধ্যে ছিলেন।
বিচার ও দণ্ড
২০০৬ সালে বিশেষ সেনা কমিশন গঠনের পর থেকে আটজনকে বিচারের মুখোমুখি করে অভিযুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ছয়জনের অপরাধ প্রমাণিত হয়। ফেডারেল কর্তৃপক্ষ এর মধ্যে দুজনের শাস্তি মওকুফ করে। দুটি ক্ষেত্রে আপিল করা হয়। শেষ পর্যন্ত চারজনকে নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। একমাত্র তানজানিয়ার নাগরিক আহমেদ আল ঘালিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। ১৯৯৮ সালে আফ্রিকায় মার্কিন দূতাবাসে হামলার দায়ে অভিযুক্ত তিনি।
কোথায় গেলেন তাঁরা?
এর বাইরে যেসব বন্দী ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ১৯টি দেশের নাগরিক ছিলেন। একজনকে দেখানো হয়েছে রাষ্ট্রহীন হিসেবে। সেখানে ইয়েমেনের ৮৭, আফগানিস্তানের ১২, সৌদি আরবের ১১ জন এবং অন্যান্য দেশ—যেমন মিসর, রাশিয়া, পাকিস্তানের কয়েকজন নাগরিক ছিলেন। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়নি, তাঁদের তৃতীয় কোনো দেশে ফেরত পাঠাতে চেয়েছিল প্রশাসন, অনেক বন্দীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হলেও কাউকে কাউকে আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, বারমুডায় গৃহবন্দী হিসেবে রাখা হয়।
ব্যয়
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, গুয়ানতানামোয় একজন বন্দীকে রাখতে বছরে খরচ হয় ২৭ থেকে ২৮ লাখ মার্কিন ডলার। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে অত্যাধুনিক কারাগারে একজন বন্দীকে রাখতে খরচ হয় ৭৮ হাজার ডলার।
মুক্ত ব্যক্তিদের অপরাধপ্রবণতা
গুয়ানতানামো থেকে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিদের ওপর কড়া নজর রাখে যুক্তরাষ্ট্র। কয়েকটি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ছাড়া পাওয়া ব্যক্তিদের ৩০ শতাংশই পশ্চিমাদের ওপর হামলার মাধ্যমে প্রতিশোধ নিতে পুরোনো জঙ্গি সংগঠনে ফেরত যান। একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, অপরাধী হিসেবে শনাক্ত এবং সন্দেহভাজন উভয়ের ক্ষেত্রেই এটা দেখা যায়। তিনি বলেন, মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিদের ১৬ শতাংশ যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত এবং ১২ শতাংশের বিষয়ে ধারণা করা হচ্ছে।
সুপরিচিত বন্দী
এখনো গুয়ানতানামো কারাগারে বন্দী রয়েছেন কয়েকজন সুপরিচিত জঙ্গি নেতা। এঁদের একজন খালিদ শেখ মোহাম্মদ। খালিদ নিজেকে ৯/১১-এর মূল পরিকল্পক বলে দাবি করেন।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জঙ্গি হামলায় সন্দেহভাজন আরও চারজন রয়েছেন। বন্দীদের আরেকজন সৌদি নাগরিক আবদাল রহিম আল নাসিরি। তাঁর বিরুদ্ধে ‘লিমবার্গ হামলায়’ নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আটক এ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ হতে পারে। এএফপি।
No comments