‘লাশ নদীতে ফেলে অপারেশনের ইতি টানি’-রানার জবানবন্দি by বিল্লাল হোসেন রবিন
নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সেভেন মার্ডারের সঙ্গে
নিজের সম্পৃক্ততার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক
জবানবন্দি দিয়েছেন র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা নৌবাহিনীর লে. কমান্ডার (অব.)
এম এম রানা। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের
বিচারক কে এম মহিউদ্দিন তার জবাববন্দি গ্রহণ করেন। দীর্ঘ পৌনে ৪ ঘণ্টার
জবানবন্দিতে এম এম রানা সাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা ছাড়াও আরও
কারা জড়িত, কিভাবে অপহরণ ও হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলা দেয়া হয়েছে তার
বর্ণনা দেন। এর আগে বুধবার র্যাব-১১ এর সাবেক কর্মকর্তা মেজর (অব.) আরিফ
হোসেন সাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে একই আদালতে
জবানবন্দি দিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, বুধবার মেজর (অব.) আরিফ হোসেন সাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ২৩ জন জড়িত থাকার কথা বললেও আজ (বৃহস্পতিবার) লে. কমান্ডার (অব.) এম এম রানা বলেছেন, পুরো মিশনে ৩০-৩২ জন জড়িত রয়েছে। তবে আরিফ ও রানার বক্তব্য কাছাকাছি। র্যাবের একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নির্দেশে ও কতিপয় রাজনৈতিক গডফাদারের সমন্বয়ে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। রানা তাদের বিস্তারিত পরিচয়ও প্রকাশ করেছেন তার জবানবন্দিতে। সাখাওয়াত হোসেন খান আরও বলেন, বর্তমানে বাদী পক্ষের আইনজীবীরা নিজেদের নিরাপত্তাহীন মনে করছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
সাত খুনের মামলার আসামি রিমান্ডে থাকা লে. কমান্ডার (অব.) এম এম রানাকে কঠোর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইন থেকে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কেএম মহিউদ্দিনের আদালতে হাজির করা হয়। জবানবন্দি দানে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য এম এম রানাকে এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন আদালত। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে এম এম রানাকে বিচারকের খাসকামরায় নেয়া হয়। সেখানে পৌনে ৪ ঘণ্টাব্যাপী দীর্ঘ জবানবন্দি দেন আরিফ হোসেন। সূত্রমতে, দু’টি হত্যা মামলার মধ্যে নাসিক প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৫ জনকে অপহরণ ও হত্যা মামলায় ১৫ পৃষ্ঠা এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিমকে অপহরণ ও হত্যা মামলায় ১৪ পৃষ্ঠার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন আদালত।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ওসি মামুনুর রশিদ মণ্ডল বলেন, লে. কমান্ডার (অব.) এমএম রানা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে সাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। সূত্র জানায়, স্বীকারোক্তিতে এম এম রানা সাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা বলতে গিয়ে বলেন, র্যাবের একজন মহাপরিচালক ও র্যাব-১১-এর সিও লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদের নির্দেশ পালন করতে গিয়েই তিনি সাত খুনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তার ওপর দায়িত্ব ছিল শুধু নজরুলকে অপহরণ করা। পুরো হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় ছিলেন তারেক সাঈদ ও আরিফ হোসেন। রানা আরও বলেন, অপহরণ থেকে শুরু করে হত্যা ও পরে লাশ ফেলা পর্যন্ত পুরো মিশনে ছিল ৩০-৩২ জন। নূর হোসেনকে আমি চিনতাম না। নূর হোসেনের সঙ্গে মেজর (অব.) আরিফ হোসেনের পরিচয় ছিল। ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নূর হোসেনের সঙ্গে আরিফের মোবাইলে যোগাযোগ ছিল।
অপহরণের দিন মেজর (অব.) আরিফ হোসেনের সঙ্গে ঘটনাস্থলে এম রানা নিজেও উপস্থিত ছিলেন বলে আদালতকে জানান। কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে অপহরণ করার সিদ্ধান্ত ছিল। নজরুল ইসলাম সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে অস্থায়ী জামিন নেন। তখন তাকে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তখন নূর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে খবর রাখা হয় নজরুল কবে নারায়ণগঞ্জ আদালতে আসবেন। দু’দিন আদালত এলাকায় রেকি করা হয়। পরে নূর হোসেনের মাধ্যমে মেজর আরিফ নিশ্চিত হন তিনি ২৭শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে স্থায়ী জামিন নিতে আসবেন। পরিকল্পনা মতে, ওই দিন আদালত প্রাঙ্গণে সাদা পোশাকে সকাল থেকে একটি গ্রুপ অবস্থান নেয়। ১১ সদস্যের দ্বিতীয় গ্রুপ অবস্থান নেয় নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিঙ্ক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে। সেখানে মেজর আরিফের সঙ্গে সে (রানা) নিজেও ছিলেন। নজরুল ইসলাম একটি সাদা প্রাইভেটকার যোগে আদালত ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে আদালতের গ্রুপটি খবর পৌঁছে দেয় মেজর আরিফ হোসেনের কাছে। নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম সংলগ্ন (ময়লা ফেলার স্থান) এলাকা থেকে নজরুল ইসলামসহ ৫ জন এবং নজরুলের গাড়ির পেছনে থাকা চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালককে র্যাবের গাড়িতে তুলে নেয়া হয়। গাড়িতে তুলেই তাদের প্রত্যেকের শরীরে ইনজেকশন পুশ করা হয়। এতে তারা অচেতন হয়ে পড়ে। দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে নজরুলের গাড়ি গাজীপুরের জয়দেবপুরে এবং চন্দন সরকারের গাড়ি গুলশানের নিকেতনে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। অচেতন অবস্থায় অপহৃত সাতজনকে র্যাবের গাড়িতে কয়েক ঘণ্টা রাখা হয়। এক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয় নরসিংদীতে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে কাঁচপুর ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বালু-পাথর ব্যবসাস্থল জনমানুষশূন্য করার জন্য নূর হোসেনকে ফোন দেয় মেজর (অব.) আরিফ হোসেন। মোট কথা সেখানে যেন কোন লোকজন না থাকে। গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পর র্যাবের গাড়ি ওই স্থানে পৌঁছায়। গাড়ির ভেতরই অচেতন প্রত্যেকের মাথা ও মুখমণ্ডল পলিথিন দিয়ে মড়ানো হয়। পরে গলা চেপে ধরার পর একে একে শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায় সাতজন। পরে সাতজনের নিথর দেহ গাড়ি থেকে নামানো হয়। পরে নারায়ণগঞ্জ শহরের ৫নং ঘাট থেকে র্যাবের নির্দিষ্ট নৌকা নিয়ে যাওয়া হয় কাঁচপুর ব্রিজের নিচে। তৃতীয় গ্রুপ লাশগুলো নৌকায় উঠিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে যাওয়ার পথে আদমজী ইপিজেড ঘাট থেকে লাশ গুমের উপকরণ নৌকায় তোলা হয়। লাশ যাতে ভেসে না ওঠে এজন্য নৌকার মধ্যেই একে একে প্রত্যেকটি লাশের সঙ্গে ইট বাঁধার পর লাশের পেট ফুটো করে দেয়া হয়। তারপর তিন নদীর (শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বর ও মেঘনা) মোহনায় লাশগুলো ফেলে দিয়ে অপারেশনের ইতি টানা হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, বুধবার মেজর (অব.) আরিফ হোসেন সাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ২৩ জন জড়িত থাকার কথা বললেও আজ (বৃহস্পতিবার) লে. কমান্ডার (অব.) এম এম রানা বলেছেন, পুরো মিশনে ৩০-৩২ জন জড়িত রয়েছে। তবে আরিফ ও রানার বক্তব্য কাছাকাছি। র্যাবের একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নির্দেশে ও কতিপয় রাজনৈতিক গডফাদারের সমন্বয়ে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। রানা তাদের বিস্তারিত পরিচয়ও প্রকাশ করেছেন তার জবানবন্দিতে। সাখাওয়াত হোসেন খান আরও বলেন, বর্তমানে বাদী পক্ষের আইনজীবীরা নিজেদের নিরাপত্তাহীন মনে করছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
সাত খুনের মামলার আসামি রিমান্ডে থাকা লে. কমান্ডার (অব.) এম এম রানাকে কঠোর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইন থেকে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কেএম মহিউদ্দিনের আদালতে হাজির করা হয়। জবানবন্দি দানে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য এম এম রানাকে এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন আদালত। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে এম এম রানাকে বিচারকের খাসকামরায় নেয়া হয়। সেখানে পৌনে ৪ ঘণ্টাব্যাপী দীর্ঘ জবানবন্দি দেন আরিফ হোসেন। সূত্রমতে, দু’টি হত্যা মামলার মধ্যে নাসিক প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৫ জনকে অপহরণ ও হত্যা মামলায় ১৫ পৃষ্ঠা এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিমকে অপহরণ ও হত্যা মামলায় ১৪ পৃষ্ঠার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন আদালত।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ওসি মামুনুর রশিদ মণ্ডল বলেন, লে. কমান্ডার (অব.) এমএম রানা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে সাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। সূত্র জানায়, স্বীকারোক্তিতে এম এম রানা সাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা বলতে গিয়ে বলেন, র্যাবের একজন মহাপরিচালক ও র্যাব-১১-এর সিও লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদের নির্দেশ পালন করতে গিয়েই তিনি সাত খুনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তার ওপর দায়িত্ব ছিল শুধু নজরুলকে অপহরণ করা। পুরো হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় ছিলেন তারেক সাঈদ ও আরিফ হোসেন। রানা আরও বলেন, অপহরণ থেকে শুরু করে হত্যা ও পরে লাশ ফেলা পর্যন্ত পুরো মিশনে ছিল ৩০-৩২ জন। নূর হোসেনকে আমি চিনতাম না। নূর হোসেনের সঙ্গে মেজর (অব.) আরিফ হোসেনের পরিচয় ছিল। ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নূর হোসেনের সঙ্গে আরিফের মোবাইলে যোগাযোগ ছিল।
অপহরণের দিন মেজর (অব.) আরিফ হোসেনের সঙ্গে ঘটনাস্থলে এম রানা নিজেও উপস্থিত ছিলেন বলে আদালতকে জানান। কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে অপহরণ করার সিদ্ধান্ত ছিল। নজরুল ইসলাম সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে অস্থায়ী জামিন নেন। তখন তাকে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তখন নূর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে খবর রাখা হয় নজরুল কবে নারায়ণগঞ্জ আদালতে আসবেন। দু’দিন আদালত এলাকায় রেকি করা হয়। পরে নূর হোসেনের মাধ্যমে মেজর আরিফ নিশ্চিত হন তিনি ২৭শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে স্থায়ী জামিন নিতে আসবেন। পরিকল্পনা মতে, ওই দিন আদালত প্রাঙ্গণে সাদা পোশাকে সকাল থেকে একটি গ্রুপ অবস্থান নেয়। ১১ সদস্যের দ্বিতীয় গ্রুপ অবস্থান নেয় নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিঙ্ক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের সামনে। সেখানে মেজর আরিফের সঙ্গে সে (রানা) নিজেও ছিলেন। নজরুল ইসলাম একটি সাদা প্রাইভেটকার যোগে আদালত ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে আদালতের গ্রুপটি খবর পৌঁছে দেয় মেজর আরিফ হোসেনের কাছে। নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম সংলগ্ন (ময়লা ফেলার স্থান) এলাকা থেকে নজরুল ইসলামসহ ৫ জন এবং নজরুলের গাড়ির পেছনে থাকা চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালককে র্যাবের গাড়িতে তুলে নেয়া হয়। গাড়িতে তুলেই তাদের প্রত্যেকের শরীরে ইনজেকশন পুশ করা হয়। এতে তারা অচেতন হয়ে পড়ে। দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে নজরুলের গাড়ি গাজীপুরের জয়দেবপুরে এবং চন্দন সরকারের গাড়ি গুলশানের নিকেতনে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। অচেতন অবস্থায় অপহৃত সাতজনকে র্যাবের গাড়িতে কয়েক ঘণ্টা রাখা হয়। এক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয় নরসিংদীতে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে কাঁচপুর ব্রিজের পশ্চিম পাড়ে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরভূমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বালু-পাথর ব্যবসাস্থল জনমানুষশূন্য করার জন্য নূর হোসেনকে ফোন দেয় মেজর (অব.) আরিফ হোসেন। মোট কথা সেখানে যেন কোন লোকজন না থাকে। গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পর র্যাবের গাড়ি ওই স্থানে পৌঁছায়। গাড়ির ভেতরই অচেতন প্রত্যেকের মাথা ও মুখমণ্ডল পলিথিন দিয়ে মড়ানো হয়। পরে গলা চেপে ধরার পর একে একে শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যায় সাতজন। পরে সাতজনের নিথর দেহ গাড়ি থেকে নামানো হয়। পরে নারায়ণগঞ্জ শহরের ৫নং ঘাট থেকে র্যাবের নির্দিষ্ট নৌকা নিয়ে যাওয়া হয় কাঁচপুর ব্রিজের নিচে। তৃতীয় গ্রুপ লাশগুলো নৌকায় উঠিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে যাওয়ার পথে আদমজী ইপিজেড ঘাট থেকে লাশ গুমের উপকরণ নৌকায় তোলা হয়। লাশ যাতে ভেসে না ওঠে এজন্য নৌকার মধ্যেই একে একে প্রত্যেকটি লাশের সঙ্গে ইট বাঁধার পর লাশের পেট ফুটো করে দেয়া হয়। তারপর তিন নদীর (শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বর ও মেঘনা) মোহনায় লাশগুলো ফেলে দিয়ে অপারেশনের ইতি টানা হয়।
দুই মামলায় জবানবন্দি
আদালত সূত্রমতে, সেভেন মার্ডারের ঘটনার পর দায়ের করা দু’টি মামলাতেই জবানবন্দি দিয়েছেন এম এম রানা। দু’টি মামলার মধ্যে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৫ জনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে একটি মামলা করেছিলেন। এ মামলায় নাসিক কাউন্সিলর নূর হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন মিয়াসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এডভোকেট চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম অপহরণ ও পরে হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করে চন্দন সরকারের মেয়ে জামাতা বিজয় পাল বাদী হয়ে অপর মামলাটি করেন। এরমধ্যে নজরুলসহ ৫ জনের মামলায় ১৫ পৃষ্ঠা ও চন্দন সরকার ও তার গাড়ি চালকে হত্যার মামলায় ১৪ পৃষ্ঠা জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন আদালত।
৩নং সেলে আরিফ: নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার পর মেজর আরিফকে বুধবার বিকালে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষ মেজর (অব.) আরিফকে ৩নং সেলের একটি কক্ষে রেখেছে। সেখানে রয়েছে লাগোয়া বাথরুম। রাতে শোয়ার জন্য দেয়া হয়েছে দু’টি পুরনো কম্বল। বৃহস্পতিবার সকালে কারাগারের নতুন কয়েদি হিসেবে মেজর (অব.) আরিফের ছবি তোলা হয়। তার ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২৭শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালত থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একটি মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়ে নাসিক প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, সিরাজুল ইসলাম লিটন, তাজুল ইসলাম প্রাইভেটকার যোগে বাসায় ফেরার পথে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোড থেকে গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমসহ ৫জনকে অপহরণ করা হয়। একই সময় একই স্থান থেকে অপহরণ করা হয় আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিমকে। এ ঘটনায় ২৭ এপ্রিল রাতেই চন্দন সরকারের পরিবার নিখোঁজ উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি জিডি করেন। ২৮শে এপ্রিল ফতুল্লা মডেল থানায় নাসিক কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম একটি মামলা দায়ের করেন। ৩০শে এপ্রিল বিকালে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৬ জন এবং ১লা মে সকালে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রত্যেকটি লাশের সঙ্গে ২৪টি করে ইট বাঁধা ছিল। এবং নাভির নিচে ফুটো করা ছিল।
এদিকে অপহরণের পর হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ স্পষ্ট হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৫ই মে লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেনকে সেনাবাহিনী থেকে এবং নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এম.এম রানাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ১৬ মে রাতে ক্যান্টমেন্ট থেকে লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও মেজর (অব.) আরিফ হোসেনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৭শে মে তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। একই দিন রাতে ক্যান্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় লে. কমান্ডার (অব.) এম এম রানাকে। ১৮ই মে আদালত তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ২২শে মে তারেক সাঈদ ও আরিফ হোসেনকে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাসহ ৫ জনকে অপহরণ ও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ২৬শে মে এম রানাকেও সাত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জর করেন। ৮ দিন রিমান্ড শেষে ৩০শে মে তারেক সাঈদ ও আরিফকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ৮ দিনের রিমান্ড শেষে এম এম রানাকে ২রা মে আদালতে হাজির করে তৃতীয় দফায় ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। চন্দন সরকার হত্যা মামলায় ৪র্থ দফায় ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন তারেক সাঈদ। তাকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইনে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
No comments