এদের ধরা দরকার by মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন
ছোটবেলা থেকে শুনে আসা প্রিয় গানগুলোর
অন্যতম হল ‘খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি আমার দেশের মাটি’। আবার সেই ছোটবেলা
থেকেই শুনে আসছি, স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা নিজের মায়ের গহনা তৈরিতেও সোনা চুরি
করে। এখন সেই সোনা চুরির একটি ঘটনাই হাতেনাতে প্রমাণিত হল। এ দেশে অনেক
কিছুই চুরি হয়। পুকুর চুরির মতো ঘটনাও ঘটে। সেসবের কিছু প্রমাণ হয়, আবার
কিছু হয় না। কিন্তু এবারে বিদেশী বন্ধু ও সংগঠনকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের
জন্য সম্মানসূচক যে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়েছে, সেখানেই পুকুর চুরির ঘটনা
ঘটেছে। ক্রেস্টের সোনার বারো আনাই ফাঁকি! অর্থাৎ চার ভাগের তিন ভাগ সোনা
চুরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে এক টেলিভিশন শো’তে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক
মন্ত্রীকে বলতে শুনলাম, ব্যাপারটি তদন্ত করিয়ে সে তদন্ত রিপোর্ট নাকি
গ্রহণও করা হয়েছিল। কিন্তু সে রিপোর্টে সোনা চুরির ঘটনা উদ্ঘাটিত হওয়ার
রিপোর্ট সমেত ফাইল মন্ত্রণালয়ে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, বিদেশী
ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মান প্রদানের দায়িত্বে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা
মন্ত্রণালয় এবং এতদসংক্রান্ত ক্রেস্টও তারাই তৈরি করিয়েছিলেন। সে ক্ষেত্রে
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মতো একটি মন্ত্রণালয়, যে মন্ত্রণালয় বীর
মুক্তিযোদ্ধাদের সুনাম ও ঐতিহ্যের ধারক বাহক, সেখানে সোনা চুরির মতো যে
ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে গেল তা বড়ই দুঃখজনক! এ নিয়ে পত্রপত্রিকাসহ বিভিন্ন
মিডিয়ায় সরগরম আলোচনা-সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে এবং মাঠে-ঘাটে-বন্দরে বিষয়টি
মুখরোচক আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে ভেজাল সোনা-রূপার
ক্রেস্টগুলো ফিরিয়ে নিয়ে নতুন করে তা প্রদানের দাবিও উঠেছে। এরই মধ্যে
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাপান সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে মন্তব্য করে
বলেছেন, ‘সোনা খাঁটি না নকল, সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হল সম্মান জানানো।’
উপরোক্ত মন্তব্যটি করার সঙ্গে সঙ্গে তা বিভিন্ন পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে এবং এ নিয়ে নতুন করে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যার এ ধরনের মন্তব্যকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি এবং এসব নিয়ে কেউ কিছু বলতে চাইলে তাদের থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু সেদিন এক স্থানে চার চারজন সাবেক সচিবের সঙ্গে একত্রে কিছু সময় অতিবাহিত করার মুহূর্তে চারজনই যখন এ নিয়ে সমালোচনায় মুখর হলেন এবং আমি যখন তাদের বক্তব্যের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক করতে গিয়ে সুবিধা করতে পারলাম না, তখন মনে হল বঙ্গবন্ধু কন্যা ক্রেস্টের ভেজাল সোনা নিয়ে মন্তব্যটি না করলেও পারতেন। যা হোক, মুখ দিয়ে একবার কোনো কথা বেরিয়ে গেলে তা ফেরত নেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। যেমন এই যে আমি লিখছি, এ লেখাটিও আমার মন থেকে মুখে এসে তারপর কলম দিয়ে বের হচ্ছে। তাই এ লেখার কথাগুলোও ফেরত নেয়ার কোনো ব্যবস্থা থাকবে না। এ বিষয়গুলো বিচার-বিবেচনা করেই জোর দিয়ে বলতে চাই, দেশের এসব স্বর্ণ চোর, অর্থ চোরদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। অন্যথায় এ চোরেরা দিনের পর দিন এভাবে বাংলা মায়ের অলংকার চুরি করে বাংলা মাকে নিরাভরণ করে ফেলবে। এ অবস্থায় সোনা চোরসহ দেশের বড়সড় সব ধরনের চুরির ঘটনার চোরেরা যেন আর কোনো কিছুতেই আশকারা না পায় সে জন্য তাদের এখনই ধরা দরকার।
মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন : মুক্তিযোদ্ধা, কলামিস্ট
No comments