বেচাকেনায় তৃতীয় পক্ষ by মুফতি মাহফূযুল হক
যে ব্যক্তি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অন্যের মাল বেচে দেয় অথবা অন্যকে মাল কিনে দেয় তাকে দালাল বলে অভিহিত করা হয়। আমাদের সমাজে যদিও দালালকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়, তবুও দালালরা আধুনিককালের সুবিস্তৃত বিশাল ব্যবসা-বাণিজ্যের অপরিহার্য অংশ।
শুধু একালেই নয়, সেই প্রাচীনকাল থেকেই হাট-বাজারে রয়েছে এদের সরব উপস্থিতি। সময়স্বল্পতা, অনুপস্থিতি, মাল বা মূল্য সম্পর্কে ধারণার অপকস্ফতা, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি কারণে মালের মালিক বা কিনতে আগ্রহী ব্যক্তি অন্যকে বেচাকেনার দায়িত্ব দিতে বাধ্য হন। তাই একজন দালাল তার মেধা, শ্রম ও সময় ব্যয় করে অন্যের উপকার করে থাকে। আবহমানকালের মানুষের স্বাভাবিক এ প্রয়োজনকে স্বভাব ধর্ম ইসলাম স্বীকৃতি দিয়েছে। সাধারণ মানুষের দুর্বলতার সুযোগে অন্য পেশার মতো দালালদের মধ্যেও অনুপ্রবেশ ঘটে প্রতারণা, মিথ্যার। ইসলাম সব অনৈতিকতা ও অসততাকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি এমন নির্দেশনা দিয়েছে, যেগুলো মেনে চললে দালাল সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা ইতিবাচক থাকত। ইসলামের দৃষ্টিতে দালাল হলো সময়মুক্ত শ্রমিক। অতএব, অন্যান্য শ্রমিকের মতোই দালালি হালাল হওয়ার জন্য শর্ত হলো, পারিশ্রমিক আগেই ঠিক করে নিতে হবে। পারিশ্রমিক নির্ধারণ করার দুটি পদ্ধতি। ক. পরিমাণ নির্দিষ্ট করা। যেমন_ খালেদ বকরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলো, সে বকরকে জমি কিনে দেবে, বিনিময়ে বকর তাকে ৫ হাজার টাকা দেবে। খ. দামের অংশ নির্দিষ্ট করা। যেমন_ জায়েদ ওমরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলো, সে ওমরের গরু যত টাকায় বিক্রি করে দেবে তা থেকে শতকরা ৫ টাকা হারে ওমর তাকে পারিশ্রমিক দেবে। দালালের উপরোক্ত উভয় ধরনের পারিশ্রমিক হালাল। পরিষ্কার ভাষায়, বিনিময়ের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকলে একটি মাল বেচাকেনা করে দিয়ে উভয় পক্ষ থেকে দালালি গ্রহণ করাও হালাল হবে। যদি বিনিময় অনির্দিষ্ট রেখে বেচাকেনায় সহযোগিতার চুক্তি করা হয় তাহলে চুক্তি ও বিনিময় সবই নাজায়েজ হবে। যেমন_ নাবিল সাঈদকে বলল, আপনি আমার এ গাড়ি বিক্রি করে আমাকে দুই লাখ টাকা দেবেন। এর বেশি যত বেচতে পারবেন তা আপনার। মুফতি রশিদ আহমদ (রহ.) শেষোক্ত এ পদ্ধতিকে নাজায়েজ বলেছেন। অনুরূপভাবে গোপন দালালিও নাজায়েজ। সাধারণত গরুর বাজারে আরেক ধরনের কৃত্রিম দালালের সন্ধান মেলে, যারা শুধু দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আসল খরিদ্দারের সামনে খরিদ্দার সেজে গরুর দাম করে আসল খরিদ্দারকে ধোঁকা দেয়। অতঃপর বিক্রেতার থেকে ওই বর্ধিত অংশের পার্সেন্টেজ গ্রহণ করে। ইসলামে কোনো ধোঁকাবাজির সুযোগ নেই। কাউকে ধোঁকা দিয়ে উপার্জিত সম্পদ কখনও হালাল নয়। সর্বোপরি শঠতা পরিহার করে স্বচ্ছতা বজায় রেখে সেবার মানসিকতা নিয়ে কেউ যদি দালালি পেশায় আসে ইসলাম তাকে স্বাগত জানায়। mrmahfuz45@gmail.com
No comments