অনাকাঙ্ক্ষিত-দুই নেত্রীর দিকেই তাকিয়ে দেশের মানুষ
বাংলাদেশে নানা কারণে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়েছে। সেই অবস্থা থেকে সহজে উত্তরণ ঘটেনি। তার জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যখন গণতান্ত্রিক আচরণ থেকে সরে আসে, ব্যক্তিগত সম্পর্কের শীতলতা যখন রাজনীতিকে প্রভাবিত করে, তখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেশ ও জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না।
কাঙ্ক্ষিত সেই কল্যাণ আসে রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার ভেতর দিয়ে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যক্তিনির্ভরতা অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক সমঝোতায় বড় বাধা। বাংলাদেশের দুটি বড় রাজনৈতিক দল এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে। দলের শীর্ষপদে যাঁরা আছেন, তাঁদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। দেখা হলেও কথা হয় না। দূর থেকে কুশল জিজ্ঞাসার সৌজন্যটুকুও দেখাতে পারেন না তাঁরা। এর বিরূপ ফল পড়ছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। অথচ দুই নেত্রীর মধ্যে একটি হার্দিক সম্পর্ক গড়ে উঠলে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অনেকাংশেই কেটে যেত বলে অনেকের ধারণা।গত বুধবার দেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের দৃষ্টি ছিল সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানের দিকে। সেদিন অপরাহ্নে সেনানিবাসে দুই নেত্রীর মুখোমুখি হওয়ার কথা। সেই বিশেষ কাঙ্ক্ষিত মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য দেশের মানুষও বলা যায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল। কারণ দীর্ঘদিন সংসদে অনুপস্থিত বিরোধী দল চলতি অধিবেশনে যোগ দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল; যদিও কোনো লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। সংসদ বর্জনের কারণ হিসেবে সরকারি দলের অসহযোগিতার কথা বলা হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তারও সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। পরস্পরের প্রতি বিষোদগার বেড়েছে। অভিযোগের তীর তীব্র হয়েছে। ব্যবধান কমেনি; বরং বেড়েছে। মতপার্থক্য রয়েছে আগামী সংসদ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়েও। এ অবস্থায় আরেকটি সাধারণ নির্বাচনের আগে যখন দুই নেত্রী কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন, এমন খবরে অনেকের মনে এই আশাবাদ জন্মেছিল যে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে দুই নেত্রীর মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল সম্পর্কের শীতল বরফ গলেনি। সম্পর্কের উষ্ণতা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কারো মাথাব্যথা দেখা যায়নি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুযোগটি নিতে পারতেন। অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়ে তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারতেন। অনুষ্ঠানে ভাষণদান শেষে অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের শুরুটাও হতে পারত দুই নেত্রীর শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি। দুই নেত্রী নিজেদের মতো করে অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনেই হয়নি, নিজেদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময়ের কোনো ইচ্ছা তাঁদের ছিল।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুই নেত্রী শুধু দুটি রাজনৈতিক দলের প্রধানই নন, তাঁরা নিজেরাই দুটি প্রতিষ্ঠান। তাঁদের আচরণের ওপর নির্ভর করে দেশে গণতান্ত্রিক আবহ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির নতুন একটি অধ্যায় সূচিত হতে পারে। দেশজুড়ে তাঁদের অসংখ্য অনুসারী। সেই অনুসারীদের স্বার্থেই দুই নেত্রীর মধ্যকার দূরত্ব কমে আসা দরকার বলে আমরা মনে করি। দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে নিজেদের ব্যক্তিগত বিরোধ মিটিয়ে ফেলে তাঁদের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তাতেই দেশ ও দশের মঙ্গল। ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে রাজনীতি সংঘাতের পথে যাবে, গণতান্ত্রিকচর্চা ব্যাহত হবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না।
No comments