ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের জন্য কোনো রকমে সংস্কার- এক দিনেই আগের অবস্থায় যশোর-খুলনা মহাসড়ক
যশোর বিমানবন্দর থেকে বাসে করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল খুলনায় যাবে। তাই গত শনিবার সকাল থেকে যশোর-খুলনা মহাসড়কের ৩৪ কিলোমিটার বেহাল অংশের ইট উঠিয়ে পিচ দেওয়ার কাজ শুরু হয়। গত রোববার সকাল পর্যন্ত কাজ চলে।
এতে খরচ হয় ২৫ লাখ টাকা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলটি খুলনা পৌঁছানোর পর গত সোমবার সকাল থেকেই পিচ উঠে যেতে শুরু করে। এখন সড়কটির অবস্থা আগের চেয়েও খারাপ।স্থানীয় এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, ওই মহাসড়কের যশোর শহর থেকে অভয়নগর উপজেলার রাজঘাট পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার অংশের অধিকাংশ স্থানে অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি ১৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটি সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। খুলনার যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্য বেসিক ইউআইএল-জেভি কাজটি পায়। কিন্তু দরপত্রের প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতার অভিযোগ ওঠায় কার্যাদেশ স্থগিত করা হয়। পরে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় গত ২০ ডিসেম্বর ওই প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এরপর কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। গত ৩১ মে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়।
গত ৬ জুলাই যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সরেজমিনে মহাসড়কটিতে গিয়ে এর বেহাল দশা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দ্রুত সংস্কারের জন্য সওজের প্রকৌশলীদের নির্দেশ দেন। এরপর দরপত্র ছাড়াই কিছু ঠিকাদার নিয়োগ করে সওজ কর্তৃপক্ষ। বর্ষা মৌসুমে মহাসড়কের মুরলী, রাজারহাট, জামতলা, রূপদিয়া, ভাঙাগেট, নওয়াপাড়া ও রাজঘাটের ভাঙা অংশে ইট বিছিয়ে সংস্কার করা হয়। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ায় ও যানবাহন চলাচল করায় ইট উঠে গিয়ে পুনরায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়।
তারপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের খুলনা সফরকে কেন্দ্র করে শনিবার সকাল থেকে শুরু হয় ইট উঠিয়ে ভাঙা অংশে পিচ দেওয়ার কাজ। রোববার সকাল পর্যন্ত চলে কাজ। সোমবার থেকে উঠে যেতে থাকে পিচ। গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, পিচ উঠে মহাসড়কটির অবস্থা আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়েছে।
নওয়াপাড়া বাজারের দোকানদার প্রদীপ সাহা বলেন, ‘ইট উঠিয়ে কোনোমতে পিচ লেপটে দেওয়া হয়েছে। সব পিচ উঠে গেছে। ধুলোর কারণে ঠিকমতো দোকানদারিও করতে পারছি না।’ স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষক মো. মফিজউদ্দিন বলেন, ‘ইট দিয়ে মহাসড়ক সংস্কার হয়, তা আগে কখনো শুনিনি। এবার নিজ চোখে দেখলাম। মহাসড়কটির অবস্থা আগের থেকে আরও খারাপ হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, দেশের অনেক বড় শিল্প ও ব্যবসাকেন্দ্র নওয়াপাড়ায় অবস্থিত। এখান থেকে প্রতিদিন কয়েক শ ট্রাক সার, সিমেন্ট, রড, পাথর ও অন্যান্য শিল্পপণ্য নিয়ে মহাসড়কটি দিয়ে রাজধানীসহ দেশের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় যায়।
সওজ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, আগের প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঠিকাদারদের সহায়তায় জরুরি সংস্কার কাজ করা হয়েছে। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলটি যাতে ঝাঁকি ছাড়া খুলনায় যেতে পারে, সে জন্য সাময়িকভাবে মহাসড়কটিতে পিচের কাজ করা হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের মধ্যে যাতে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা না জন্মে, সে জন্য দেশের স্বার্থে স্থানীয়ভাবে তড়িঘড়ি করে কাজটি করা হয়েছে। দলটি ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সাময়িক সংস্কারকাজ অব্যাহত থাকবে।
জিয়াউল হায়দার বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের জন্য মহাসড়কটির ভাঙা অংশগুলোয় ইট দিয়ে কাজ করা হয়েছিল। সম্প্রতি ইট তুলে ফেলা হয়েছে। নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছি, আগামী মাস থেকে মহাসড়কটির স্থায়ী সংস্কারের কাজ শুরু করা যাবে।’
No comments