উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে চাই স্থিতিশীলতা- বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে
বাংলাদেশের অর্থনীতি যে টেকসই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, সে কথা এখন বহির্বিশ্বও স্বীকার করছে। বিশ্বের নামকরা গণমাধ্যম ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অর্জনকে বিরাট সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করছে।
বিশ্বব্যাংকের বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০১৩-এ বলা হয়েছে, বিশ্বে যে গুটিকয়েক দেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন—উভয় ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অগ্রগণ্য।যেসব খাতে বাংলাদেশের এই অগ্রগতি সংস্থাটির সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, সেগুলো হলো: বার্ষিক প্রবৃদ্ধিতে শিল্প খাতের ৩০ শতাংশ অবদান, দ্রুত নগরায়ণ, তৈরি পোশাকশিল্পে ৩০ লাখ নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান, কৃষি খাতের উৎপাদন বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার হ্রাস ও ক্ষুদ্রঋণের প্রসার। এ ছাড়া যুব ও নারী জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক।
এর আগে লন্ডনের বিখ্যাত সাপ্তাহিক ইকোনমিস্ট ‘আউট অব বাস্কেট কেস’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে বলেছিল, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি অভাবনীয় সফলতা পেয়েছে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাক্স ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন ও ভারতের পরই বাংলাদেশকে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বলে অভিহিত করেছে। নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, কিছু বাধা সত্ত্বেও দ্রুত বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে। প্রতি দশকে অর্থনীতির আকার দ্বিগুণ হওয়া কিংবা বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশে ধরে রাখাকে সাফল্য হিসেবেই দেখছে তারা। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
অস্বীকার করার উপায় নেই, এ সাফল্যের পেছনে রয়েছে সাধারণ মানুষের উদ্যম, পরিশ্রম ও অধ্যবসায়। স্বীয় কর্মশীলতা ও সৃজনশীলতা দিয়ে তারা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের সুনামও ছড়িয়ে দিয়েছে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে।
এ কথা ঠিক, বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতির স্বীকৃতি দিলেও যেটুকু প্রশংসা প্রাপ্য, তা দিতে অনেক সময় কার্পণ্য করে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের উন্নয়নকে ‘অমীমাংসিত ধাঁধা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে সংস্থাটি বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের পরীক্ষাগার’ বলে অভিহিত করেছিল। আবার এসব উন্নয়ন-সহযোগী এমন সব নীতি-কৌশল চাপিয়ে দেয়, যা হিতে বিপরীত হয়েছে।
তবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা এবং অবকাঠামো উন্নয়নে যেসব সুপারিশ উন্নয়ন-সহযোগীরা করেছে, তার সঙ্গে আমরাও একমত। বাস্তবতার সঙ্গে সংগতি রেখেই নিজস্ব নীতি-কৌশল নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
সব শেষে অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকা জরুরি। গত সাড়ে তিন বছরে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পেছনে সরকারের বাস্তবমুখী নীতি-কৌশলের যেমন ভূমিকা আছে, তেমনি প্রায় ‘হরতাল-অবরোধ মুক্ত’ রাজনীতিও অনুকূল পরিবেশ হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তা আলোচনার মাধ্যমেই নিরসন হওয়া বাঞ্ছনীয়। উন্নয়নযাত্রাকে ব্যাহত করে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।
No comments