সহিংসতার প্রবণতা ও অসহিষ্ণুতার এই মাত্রা উদ্বেগজনক ছাত্রদের তাণ্ডব
ঘটনা শুরুর পেছনের কারণটি খুবই সামান্য, কিন্তু এ নিয়ে শেষ পর্যন্ত যা ঘটেছে তাকে তাণ্ডব ছাড়া আর কিছুই বলা যাবে না। ঘটনাস্থল পুরান ঢাকার কবি নজরুল কলেজ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হামলায় এই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ভবন ও ক্লাসরুমগুলো রীতিমতো লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।
ঘটনাটি আমাদের সমাজে, বিশেষ করে ছাত্রদের মধ্যে, অসহিষ্ণুতার যে মাত্রা তুলে ধরল, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।কারণে-অকারণে ছাত্রদের সহিংস হয়ে ওঠার প্রবণতা ও সহিংস কর্মকাণ্ড সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষভাবে লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। নিজেরা নিজেরা মারামারি করে নিজ সংগঠনের কর্মীকে হলের ভবন থেকে ফেলে দেওয়ার মতো ঘটনা, নিজেদের থাকার জায়গা ছাত্রাবাস জ্বালিয়ে দেওয়া, দুর্ঘটনায় সহপাঠীর মৃত্যুর পর নির্বিচারে যানবাহন ভাঙচুর করে নিরীহ জনগণের জীবন বিপন্ন করা এবং সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা আমরা গত কয়েক বছরে লক্ষ করেছি।
বুধবার এই যে তাণ্ডবের ঘটনা ঘটল, তার শুরু কবি নজরুল কলেজের জনতা ব্যাংক শাখায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রের লাইনে দাঁড়ানোর ঘটনা নিয়ে কথা-কাটাকাটি ও মারধরের ঘটনা দিয়ে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘটা এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় যে সংঘর্ষ ও হামলা শুরু হয়, তাতে তিন ঘণ্টা পুরান ঢাকার ওই এলাকা অচল হয়ে পড়েছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হামলায় কবি নজরুল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলেন, তা পত্রপত্রিকায় ছাপা হওয়া ছবিতে স্পষ্ট। একাডেমিক ভবনের নিচের সিঁড়িঘরে মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার পর অনেকে দোতলার বারান্দা থেকে লাফিয়ে পড়েন, এমনকি ছাত্রীদেরও ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়। দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার সূচনাপর্বে উদ্যোগ নেওয়া গেলে নিশ্চয়ই পরিস্থিতি এ পর্যায়ে চলে যেত না।
ভাঙচুর, হামলা, সম্পদ ধ্বংস—এসব আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পর্কিত। এ নিয়ে থানায় মামলা হয়েছে, তদন্ত চলবে, হয়তো অভিযুক্তদের কারও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও সম্ভব হবে। কিন্তু আমরা মনে করি, ছাত্রদের কারণে-অকারণে সহিংস হয়ে ওঠার এই প্রবণতা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে শিক্ষার্থীদের এই প্রবণতা থেকে দূরে রাখতে পারে, এ জন্য নিয়মিত কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায় কি না, সে ব্যাপারে আমরা গবেষকদের দৃষ্টি ও মনোযোগ আকর্ষণ করছি।
No comments