সৃষ্টির সেরা উপহার মা by মো. কামরুজ্জামান সোহাগ
ইসলামের দৃষ্টিতে মায়ের মর্যাদা সবার ওপরে। ইসলামই মাকে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার দিয়েছে। মায়ের সম্মানের ওপরে এক সম্মানই আছে, তা হলো মহান আল্লাহর ইবাদত। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, 'আপনার প্রভু নির্দেশ দিচ্ছেন তাঁকে ছাড়া আর কারও ইবাদত করবে না, আর পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করবে।'
মাকে খেদমত ও সেবা করে জান্নাত পাওয়া যায়। মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) বলেন, 'নিশ্চয়ই মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।'মায়ের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করতে হবে, তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা যাবে না, কষ্ট দেওয়া যাবে না, বরং সম্মানের সঙ্গে কথা বলতে হবে। সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষা ও চরিত্র গঠনে মায়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১০ জন শিক্ষাদাতা যা না পারেন, এক মা-ই তা পারেন। মায়ের মর্যাদা অপরিসীম। এ ব্যাপারে মহানবী (সা.) অনেক নির্দেশ দিয়ে গেছেন। ইসলাম মাকে বিরল ও বিপুল সম্মানে ভূষিত করে। আর মাকে যে মহামর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে তার কোনো তুলনাই নেই। সন্তানের ওপর বাবার চেয়ে মায়ের হক অনেক বেশি। নবী করিম (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তোমাদের জন্য মায়ের অবাধ্যতাকে হারাম করেছেন। তিনটি কারণে মায়ের হক বাবার চেয়ে বেশি_ ক. প্রায় ২৮০ দিন ধরে গর্ভে সন্তান ধারণ করায় মায়ের কষ্ট; খ. তার প্রসবকালে কষ্ট ও জীবনের ঝুঁকি; গ. সন্তানকে শিশুকালে দুধ পান করানোর জন্য তার ব্যস্ততা ও আরাম-আয়েশ ত্যাগ।
মায়ের দোয়া সন্তানের জন্য রহমতস্বরূপ। মা যা দোয়া করেন আল্লাহ তা কবুল করেন। প্রিয় নবী করিম (সা.) বলেন, মায়ের দোয়া খুব শিগগির কবুল হয়। তিনি আরও বলেন, আল্লাহতায়ালা তাঁর ইচ্ছামতো বান্দার সব গুনাহ মাফ করে দেন, কিন্তু মা-বাবার অবাধ্যতার গুনাহ মাফ করবেন না। বরং এ গুনাহর জন্য পার্থিব জীবনে মৃত্যুর আগেই শাস্তি দিয়ে থাকেন। (বায়হাকি)
সন্তানের অন্যতম দায়িত্ব হলো বৃদ্ধ অবস্থায় বাবা-মায়ের খেদমত করা। একদিন নবী করিম (সা.) তিনবার বললেন, সে লাঞ্ছিত হোক; জিজ্ঞাসা করা হলো সে ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি বাবা-মা উভয়কে বা তাদের একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেয়ে তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের দ্বারা বেহেশতের অধিকারী হতে পারেনি। (মুসলিম শরিফ)।
মায়ের প্রতি আনুগত্য থাকা সন্তানের একান্ত কর্তব্য। মা হচ্ছেন সন্তানের সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাধিক অধিকারী। অধিকাংশ মহানুভব ব্যক্তিই মায়ের প্রতি একান্ত অনুগত ছিলেন। হজরত আবদুল কাদের জিলানি ডাকাতের হাতে পড়েও মায়ের আদেশ ভুলে যাননি। বায়েজিদ বোস্তামি সারারাত ধরে পানির গ্গ্নাস হাতে নিয়ে মায়ের শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকেন, কখন মা পানি পান করবেন। হাজি মুহম্মদ মুহসীন একটি কথাও না বলে মায়ের আদেশ পালন করতেন। স্যার সৈয়দ আহমদ খানও মায়ের প্রতি গভীরভাবে অনুরাগী ছিলেন।
মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, মায়া-মমতা, ভালোবাসা ও দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন একটি বিশেষ দিনের জন্য নয়, বরং তা প্রতিদিনের জন্য। মায়ের অনুগত, মায়ের খেদমত, মায়ের হক আদায় ও বৃদ্ধ অবস্থায় সেবা-যত্ন করা এবং পরকালীন মুক্তির জন্য দোয়া ও মাগফিরাত কামনা করা আমাদের সবার একান্ত কর্তব্য। আমাদের কোনো আচরণে মা যেন দুঃখ-কষ্ট না পান। কারণ মা সন্তানের জন্য আল্লাহর এক বিরাট নেয়ামত। এ নেয়ামতের সদ্ব্যবহার করে সন্তান তার জীবন সুন্দর করতে এবং পরকালীন মুক্তির পথ প্রশস্ত করতে পারে।
No comments