ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষক নাজেহালকারীদের শাস্তি হোক
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের নাজেহাল করার মতো ঘৃণ্য ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ নামধারী একদল ছাত্র। শিক্ষকদের অপরাধ, তাদের একটি অংশ জোটবদ্ধ হয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট অন্যায়ের প্রতিকার এবং এসবের সঙ্গে জড়িত থাকা ও সহযোগিতা দেওয়ার অভিযোগে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের অপসারণ দাবি।
সেই দাবিতেই পরিচালিত আন্দোলনের অংশ হিসেবে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছিলেন ওই শিক্ষকরা। বস্তুত, সেপ্টেম্বরের প্রথম দিক থেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের অচলাবস্থা চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩২ জনের মতো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগদানসহ বিভিন্ন অন্যায্য পদক্ষেপের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের উল্লেখযোগ্য অংশ শুরু থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। শিক্ষক সমিতির আহ্বানে ক্লাস বর্জন করে আসছিলেন শিক্ষকরা। তার পরও কোনো পক্ষই এত দিন শিষ্টতার সীমা ছাড়িয়ে যায়নি। কিন্তু গত ১৯ নভেম্বর সোমবার অবস্থান ধর্মঘট পালনরত শিক্ষকদের ছাত্রলীগের একদল কর্মী হুমকি-ধমকি প্রদান করে, এমনকি টানাহেঁচড়ার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার অবতারণা করে ইবির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সংযোজন করে। উপাচার্য এ ঘটনাকে সামান্য 'হাতাহাতি' বলে হালকা করে দিতে চেয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র যদি তাদেরই শিক্ষকদের সঙ্গে উপাচার্যের বয়ানমতো 'হাতাহাতি'তে লিপ্ত হয়, তাহলে তা কোনোভাবেই কি সমর্থন করা যায়? ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক যারা কলঙ্কিত করেছে, উপাচার্য মহোদয় মূলত তাদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনো কোনোটিতে দলবাজিতে অভ্যস্ত ব্যক্তিদের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের মতো দায়িত্বপূর্ণ পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইবির ঘটনা তারই সত্যতা তুলে ধরে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুরুতেই যদি শিক্ষকদের দাবিগুলোর যৌক্তিকতা নিয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় বসত, তাহলে পরিস্থিতির এত অবনতি ঘটত না। কিন্তু উপাচার্য শিক্ষকদের অভিযোগের প্রতি কর্ণপাত না করায় আন্দোলন শেষ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধেও গেছে। এভাবেই কিন্তু বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আন্দোলন সর্বাত্মক রূপ নিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছিল। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়। সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্তও বিষয়টি গড়ায়। ইবির ঘটনাবলি কি তার চেয়েও খারাপ দিকে মোড় নিচ্ছে না? আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ ছেড়ে দিচ্ছেন ২২ শিক্ষক। তারা বৃহস্পতিবার পদত্যাগপত্রগুলো শিক্ষক সমিতির সভাপতির কাছে জমা দিয়েছেন। ছাত্রলীগ নামধারীরা শিক্ষকদের নাজেহাল করেছে এবং কোনো কোনো শিক্ষককে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। এতে দেশের বিদ্বৎসমাজ ও অভিভাবকদের মধ্যে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক। তাই পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই সরকারের উচিত হবে এ সমস্যার গঠনমূলক সমাধানসূত্র বের করা। যারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অপদস্থ করেছে, তারা আর যা-ই হোক, ছাত্র নামের যোগ্য নয়। এদের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। কঠোর শাস্তি অবশ্যই এদের প্রাপ্য। এ ব্যাপারে সরকারের সক্রিয় ভূমিকাই কাম্য। মনে রাখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিচালনার জন্য দলীয় বিবেচনায় নিয়োগদানের সময়ও নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের যোগ্যতা, দক্ষতা এবং নৈতিক ভিত মজবুত কি-না, তা পরখ করা উচিত। শিক্ষা প্রশাসনের ক্ষেত্রে একটা উচ্চমান আমাদের বজায় রাখতেই হবে এবং সেটা দেশের উন্নত ভবিষ্যতের স্বার্থেই করতে হবে।
No comments