রয়টার্সের বিশ্লেষণ- গাজা সংকট আড়ালে নিয়ে গেছে মাহমুদ আব্বাসকে
গাজায় অব্যাহত লড়াইয়ের মুখে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস কিছুটা একা হয়ে পড়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠন হামাস গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে তুলনামূলক বেশি আলোচিত হচ্ছে। পশ্চিম তীরে হামাসের নিয়ন্ত্রণকে আরব দেশগুলো ইতিমধ্যে অনানুষ্ঠানিক সমর্থনও দিয়েছে।
সপ্তাহব্যাপী লড়াইয়ের পর গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক নেতাদের জোর প্রচেষ্টা চলছে। আরব নেতাদের পাশাপাশি তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেও গত মঙ্গলবার গাজায় স্বাগত জানান হামাসের নেতারা। এর আগে গাজা সফর করেন মিসরের প্রধানমন্ত্রী, তিউনিসিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কাতারের আমির। এতে প্রেসিডেন্ট আব্বাসের তুলনায় হামাস অধিক কূটনৈতিক গুরুত্ব পাচ্ছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) সাবেক মুখপাত্র ঘাসান আল-খতিব বলেন, হামাস কূটনৈতিক গুরুত্ব অর্জন করায় এই যুক্তি জোরালো হয়েছে, তারা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ভবিষ্যতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং পিএ হচ্ছে অতীত।রামাল্লার একটি দোকানের কর্মী আহমাদ বলেন, জনগণ হামাসকে সমর্থন করে না। কিন্তু তাদের ছোড়া রকেট যখন তেল আবিবে গিয়ে পড়েছে বলে খবর আসে, তখন মনে হয় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সত্যি সত্যিই কেউ লড়ছে।
পশ্চিমা নেতারা হামাসকে এখনো বর্জন করে চলেছেন। ইসলামপন্থী এই সংগঠনটি আব্বাসের ফাতাহ আন্দোলনের বিরুদ্ধে পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের পর ২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করছে। বতর্মান পরিস্থিতিতে হামাসকে কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হলেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের রামাল্লা সফরে আব্বাসের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতিই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে এটি বর্তমান কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় আব্বাসের অনুপস্থিতিকে আড়াল করার মতো যথেষ্ট নয়। ইসরায়েলের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ড্যানি আয়ালন বলেন, আব্বাস এখন কতটা অপ্রাসঙ্গিক, তা গাজা পরিস্থিতিই প্রমাণ করে।
সবাই এখন তাকিয়ে আছে মিসরের দিকে। দেশটির ইসলামপন্থী নেতৃত্ব হামাসের প্রতি সহানুভূতিশীল। গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় মিসর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। হামাস নেতা খালেদ মেশাল মিসরের হোসনি মোবারক সরকারের প্রিয়ভাজন ছিলেন না। কিন্তু প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির আমলে কায়রো এখন হামাসকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তিনবার মোহাম্মদ মুরসির সঙ্গে কথা বললেও মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে একবারও যোগাযোগ করেননি।
মাহমুদ আব্বাস চলতি মাসেই জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের পর্যবেক্ষক হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানাবেন। কিন্তু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের অসম সামরিক লড়াই শুরু হওয়ায় তাঁর ওই পরিকল্পনার বিষয়টি অনেকটাই আড়ালে চলে গেছে। আব্বাস নিজেই বলেছেন, তাঁর পরিকল্পনা ভণ্ডুল করতেই পরিকল্পিতভাবে গাজায় সহিংসতা তৈরি করা হয়েছে।
No comments