কোকোর পাচার করা অর্থ ফেরত এনেছে সরকার
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা অর্থের মধ্যে ২০ লাখ ৪১ হাজার ৫৩৪ দশমিক ৮৮ সিঙ্গাপুরি ডলার (প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা) দেশে ফিরিয়ে এনেছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় অর্থ ফেরত আনার পুরো আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। আর নিয়মানুযায়ী অর্থ এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে।
বাংলাদেশে এই প্রথম পাচার করা অর্থ ফেরত আনা হলো। আসার অপেক্ষায় রয়েছে আরও নয় লাখ ৩২ হাজার মার্কিন ডলার।বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশের সরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের একটি প্রকল্পের কাজ পেতে জার্মান বহুজাতিক কোম্পানি সিমেন্স এজির স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সিমেন্স-বাংলাদেশ বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের ঘুষ দেয়। এর মধ্যে কোকোও ছিলেন। ২০০৫ সালে সিঙ্গাপুরে একটি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে এই অর্থ লেনদেন হয়েছিল। এই ঘুষের অর্থই ফেরত আনা হয়েছে।
গত বুধবার সোনালী ব্যাংকের রমনা করপোরেট শাখায় দুদকের খোলা একটি বিশেষ হিসাবে এ অর্থ জমা হয়েছে। আইন অনুযায়ী ‘স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি হিসাব’ নামে একটি হিসাবেই এই অর্থ জমা হয়।
দুদক চেয়ারম্যান গতকাল বৃহস্পতিবার দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের অর্থ ফেরত আনার তথ্য জানিয়ে বলেন, ফেরত আনা অর্থ দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমে ব্যয় করা হবে। বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে দুদক, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় যৌথভাবে কাজ করেছে।
দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, খুব দ্রুত চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া নয় লাখ ৩২ হাজার ৬৭২ মার্কিন ডলারও বাংলাদেশে ফিরে আসছে। মূলত চট্টগ্রাম বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ পেতে প্রতিষ্ঠানটি কোকোকে ওই অর্থ ঘুষ দেয়।
এ ঘটনায় দুদকের উপপরিচালক আবু সাঈদ বাদী হয়ে ২০০৯ সালের মার্চে কোকো এবং সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী আকবর হোসেনের ছেলে ইকবাল হোসেন সায়মনকে আসামি করে কাফরুল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে সিঙ্গাপুরের ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকে কোকোর ওই হিসাব বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাংলাদেশ। দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে এ জন্য সমঝোতা সই হয়। পরে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে ওই অর্থ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের আদালতের ওই রায়ে কোকো ও সায়মনকে ছয় বছরের কারাদণ্ড এবং ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল। মামলায় দুজনকেই পলাতক দেখানো হয়েছে।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, কোকোর হিসাবটি ছিল একটি যৌথ হিসাব। সিঙ্গাপুরের নাগরিক লিম ইউ চ্যাং ২০০৪ সালে ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকে হিসাবটি খোলেন। যার শর্ত ছিল, চ্যাং ও কোকোর যৌথ সই দিয়েই ওই হিসাব থেকে অর্থ তোলা যাবে। কোকোর পাচার করা অর্থ রাখা এবং এ বিষয়ে দুর্নীতি তদন্তকারী কর্তৃপক্ষকে না জানানোর অপরাধে সিঙ্গাপুরের আদালত ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে লিম ইউ চ্যাংকে অর্থদণ্ড দেন। এ কারণে টাকা ফেরত আনা সহজ হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ওই সময় দেশটির স্ট্রেইট টাইমস পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত কোকোর সহযোগী লিম ইউ মূলত কোকোর আদেশ অনুযায়ী পাচার করা মুদ্রা ব্যাংকে নিজ নামের হিসাবে রেখেছিলেন। একই সঙ্গে অপরাধমূলকভাবে পাচার হওয়া ওই টাকার বিষয়টি তিনি গোপন করেন এবং তা পুলিশ বা কর্তৃপক্ষ বা করাপ্ট প্র্যাকটিস ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোকে জানাননি। এ অপরাধে সিঙ্গাপুর আদালত তাঁকে নয় হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার জরিমানা করেন।
কাজ পেতে কোকোকে ঘুষ দেওয়ার এই ঘটনায় মার্কিন আদালতেও দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল সিমেন্স। এ জন্য তাদের পাঁচ লাখ ডলার জরিমানা দিতে হয়। সিমেন্সের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে গত ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম আলোতেই প্রথম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
কোকোর অর্থ ফেরত আসা নিয়ে বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউই আইনি কাগজপত্র না দেখে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।a
No comments