শিল্পবর্জ্য-কৃষির স্বার্থ রক্ষা করতে হবে

উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য শিল্প অবশ্যম্ভাবী হলেও এটি পরিবেশ, প্রকৃতি ও কৃষির জন্য যে বিপুল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। শিল্প বিস্তারের সঙ্গে কার্বন নিঃসরণ, বিষাক্ত ও ক্ষতিকর বর্জ্যের উপদ্রব নিয়ে বিশ্বব্যাপী নানা তর্ক-বিতর্কও চলছে। এ প্রেক্ষাপটে অনেক দেশই পরিবেশবান্ধব শিল্প-প্রযুক্তি আয়ত্ত করছে।


অন্যদেরও তাগিদ দেওয়া হচ্ছে যেন তারা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি আয়ত্ত করে। জীবাশ্ম জ্বালানির নির্ভরতা কমিয়ে যাতে দূষণ কমানো যায়, এজন্য কিছুটা হলেও সচেতনতা তৈরি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পরিস্থিতি খুব নাজুক। জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় শিকার বাংলাদেশ_ এ তথ্য বৈশ্বিক ফোরামগুলোতে বহুল উচ্চারিত। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে এ জন্য আমরা ক্ষতিপূরণও দাবি করেছি। কিন্তু দেশে যেন এ বিষয়ে নূ্যনতম সচেতনতাও নেই। একদিকে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বহুমাত্রিক ক্ষতি, অন্যদিকে আমাদের অসচেতনতাজনিত নানা সমস্যা ক্রমশ আমাদের আকীর্ণ করে তুলছে। আমাদের অনেক নদীই ইতিমধ্যে শিল্পবর্জ্য, আবর্জনা ও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে একদিকে পরিবেশ দূষিত হয়েছে, অন্যদিকে নদীর মাছসহ জৈব খাদ্য আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। প্রিয় মাছ থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। কোথাওবা দূষণের কারণে ধারণক্ষমতা পর্যন্ত হারিয়েছে জলাধারগুলো। ঢাকা শহরের আশপাশের নদীগুলো বর্জ্য সমস্যার কারণে ধারণক্ষমতা হারিয়েছে। ফলে বৃষ্টিধোয়া পানি নদী বা জলাশয়ে না পড়ে শহরের রাস্তায় অপ্রতিরোধ্য জলাবদ্ধতা তৈরি করে। শিল্পবর্জ্যের সমস্যা শুধু ঢাকার মতো বড় শহরের নয়। ঢাকার বাইরের শহরগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। মঙ্গলবারের সমকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের একটি চিত্র পাওয়া গেল। ডাইং ও ওয়াশিংসহ নানা কারখানার বর্জ্য সেখানে তুরাগসহ পাঁচটি বিলকে বিষাক্ত করে তুলেছে। বিলগুলো মাছহীন হয়ে পড়েছে। শুধু বিলেই দূষণের সমাপ্তি ঘটে না, কৃষিজমিও দূষণের শিকার হয়েছে। মাছ কমে গেছে, জমিতে ফসলও কমে গেছে। বিস্তীর্ণ এলাকার দূষণ কৃষি আবাদকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোর কমবেশি দূষণচিত্র এই। শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বংশীসহ এ অঞ্চলের কোনো নদী বা জলাধারই বোধকরি আর দূষণমুক্ত নয়। অথচ শিল্প মানেই যে দূষণ ও কৃষি-অবান্ধব তা সর্বক্ষেত্রে সত্য নয়। বরং একটু সচেতন হলে শিল্প দূষণের অনেকটাই রোধ করা সম্ভব। এ সংক্রান্ত আইন ও রীতি রয়েছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা অমান্য হচ্ছে। যে প্রত্যক্ষ দূষণের খবর মিলছে তা এড়ানো সহজ। শিল্প কারখানাগুলো নিয়ম মেনে অ্যাফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) ব্যবহার করলে দূষিত পানি পুনর্ব্যবহারের উপযুক্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে এ পানি জমি দূষণ না করে বরং কাজে লাগতে পারে। বাকি বর্জ্য মাটিতে পুঁতে ফেলা সম্ভব। কিন্তু শিল্পমালিকদের অসাবধানতা ও নীতিহীন মনোভাব, সরকারের তদারকি ও সচেতনতার অভাবে শিল্পবর্জ্য থেকে বিপুল ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থায় কারখানাগুলোতে ইটিপির ব্যবহার নিশ্চিত হওয়া উচিত। যে ক্ষতি আমরা সহজে এড়াতে পারি তা যখন আমাদের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তখন উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্যবিধ দূষণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে আমাদের আন্তরিকতা থাকবে কি? আমরা মনে করি, শিল্পের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়গুলোর দিকেও দৃষ্টি দেওয়া উচিত। কৃষি জমির হ্রাস, জলাধারের দূষণ ভবিষ্যতে আমাদের বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই এ দূষণ প্রতিরোধে এখনই তৎপর হতে হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.