মিয়ানমার সংখ্যালঘু নির্যাতনঃ মূক ও বধিরের ভূমিকায় পশ্চিমী দুনিয়া by নীলাদ্রি সেন
মিয়ানমায় চরম নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়। লঙ্ঘিত মানবাধিকার। চলছে নির্বিচার খুন, নারী নিগ্রহ। ভয়াবহ দাঙ্গা। তবু নির্বিকার মিয়ানমার স্বৈরশাসক। অন্ধ মুসলমান বিদ্বেষে নীরব ওবামাসহ পশ্চিমী দুনিয়া।
উগ্র ধর্মীয় জাতি বিদ্বেষ হিংস্র সংঘর্ষের চেহারা নিল মিয়ানমায়। গত জুনে আরাকানের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর বর্বরোচিত আক্রমণ চালায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়। নিহত হন মুসলিম সম্প্রদায়ের ৬৫০ জন। নিখোঁজ ১২০০। ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা হয় মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত ৯০ হাজারের বেশি মানুষকে। মুসলিম মহিলার ওপর চালানো হয় পাশবিক যৌন নির্যাতন। এত বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও গণহত্যা সম্পর্কে বৃহৎ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যগুলো আশ্চর্যজনকভাবে নীরব।
‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’, ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’, ‘ফক্স নিউস’ থেকে শুরু করে ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার নামী সংবাদ মাধ্যমের মুখে এই গণহত্যা নিয়ে কোনো রা নেই। শুধু তাই নয়, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে সরব মিয়ানমার নোবেলজয়ী বিরোধী নেত্রী আন সান সু কি নিজের দেশে ঘটা এই জঘন্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও গণহত্যা নিয়ে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
আরাকানের এই রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায় বহু প্রাচীন। জানা যায় অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে এই এলাকায় তাদরে বসবাস। দুনিয়ায় তারা অন্যতম সর্বাধিক নির্যাতিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। জানাচ্ছে খোদ জাতিসংঘ। নিজেদের মৌলিক অধিকার, ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি থেকে তারা আজও বঞ্চিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিয়ানমা ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ। এই সময় জাপান মিয়ানমায় আগ্রাসন চালায়। তখনও নির্যাতন চলছে রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর। ২৮ মার্চ, ১৯৪২ মীনবিয়া ও রোহাংগ টাউনে রাখাইন জাতীয়তাবাদীরা হত্যা করে ৫০০০ মুসলিমকে। ন্যূনতম মানবাধিকার পান না এই রোহিঙ্গা মুসলিমরা। অভিযোগ ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালে’র। দুনিয়ার কোথাও স্থায়ী বসতি গড়তে না পেরে যাযাবরের অসহায় জীবন কাটাতে হয় তাদের। সরকারী নাগরিক স্বীকৃতি থেকে তারা বঞ্চিত। এখন প্রায় ১ লক্ষ ১১ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তে দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছেন। গত জুনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের ১৩৩৬টি বাড়ি ভস্মীভূত। জানাচ্ছে সংবাদ সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’। অন্যদিকে ব্রিটেনের মানবাধিকার সংগঠন ‘দি প্ল্যাটফর্মে’র দাবি সংখ্যাটা প্রকৃতপক্ষে ৬০০০। দাঙ্গায় আক্রান্ত হলেও অসংখ্য রোহিঙ্গা মুসলিমদেরই গ্রেফতার করে জেলে রাখা হয়েছে।
আসলে মিয়ানমায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রকৃত সংবাদ পাওয়াটা খুবই দুরূহ। মিয়ানমায় খবর সংগ্রহে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। এক কথায় ‘মিডিয়া ব্ল্যাকআউট’। সাংবাদিকদের স্বাধীন খবর সংগ্রহে রয়েছে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ। তবে সদিচ্ছা থাকলে সংবাদ সংগ্রহ যে অসম্ভব নয় সে কথা বলাই যায়। যেমনটা করে দেখিয়েছে ইরানের ‘নিউজ ওয়েবসাইট’। মিয়ানমার দাঙ্গায় পুড়িয়ে মারা হচ্ছে এক শিশুকে। প্রকাশ দাঙ্গার এক সচিত্র প্রতিবেদনে। ইরানের ওই ‘নিউজ ওয়েবসাইটে’। ইরানের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও ঘটনার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অবিলম্বে মিয়ানমার সরকারকে হিংসা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আরজি জানানো হয়েছে। একই প্রতিক্রিয়া ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর মুসলিম স্কলার্সের। ওয়াশিংটনসহ পশ্চিমী দুনিয়ার এই ঘটনায় নীরবতা তাদের কট্টর মুসলিম বিরোধিতা ও দ্বিচারিতারই প্রমাণ। যে পথ ধরে পশ্চিমী ‘মেইনস্ট্রিম’ সংবাদ মাধ্যমগুলোও এখন ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকায়।
সাদা কালো ছবিতে ভরা বইটার নাম ‘Exiled to Nowwhere : Burma’s Rohingya’ । লেখক গ্রেম কনস্টানটাইন, পেশায় মার্কিন ‘ফটোগ্রাফার’। রাষ্ট্রহীনদের বিশেষত, রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোচনায় যে বিষয়টি বাদ থাকে তা হলো মানবতার কথা। বিশ্বাস গ্রেগের। এই প্রসঙ্গে নিজের লেখা বইতে গ্রেম শুনিয়েছেন এক মর্মস্পর্ষী কাহিনী। ২০ বছর বয়সের তরুণী কাশিদা। বাংলাদেশ থেকে স্বামীকে নিয়ে চলে আসেন মিয়ানমায়। তবে মিয়ানমার সরকার তাকে বিবাহিতা স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। মিয়ানমায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিবাহ ও সন্তান ভূমিষ্ট হওয়াতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ রয়েছে। মিয়ানমা সরকারের ভাষায় রোহিঙ্গা মুসলিমরা ‘রেসিডেন্ট ফরেনার্স’। যাই হোক, পরবর্তীকালে জানা যায় যে, কাশিদা গর্ভবতী। তখন তাদের সমস্ত টাকা-পয়সা ও গোরু, ছাগল কেড়ে নেয়া হয়। হুমকি দিয়ে বলা হয়- ‘এটা তোমদের দেশ নয়। এখানে তোমার গর্ভধারণের কোনো অধিকার নেই। এখানেই শেষ নয়। কাশিদাকে জোর করে গর্ভপাত করাতে বাধ্য করা হয়। মিয়ানমায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি এমন অমানবিক, বর্বরোচিত আচরণ এখন রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
মিয়ানমার রোহিঙ্গা মুসলিমদের করুণ অবস্থার আভাস মেলে ‘আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অরগানাইজেশন’র পক্ষ থেকে প্রকাশিত কিছু তথ্যে। এর থেকে জানা যায় যে, রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিবাহের জন্য মিয়ানমায় সরকারি অনুমোদন নিতে হয়। তাদের দুটির বেশি সন্তান হওয়া নিষিদ্ধ। তাদের দিয়ে জোর করে মজুরের কাজ করানো হয়। এক কথায় যা আধুনিক কালের দাসত্ব। জন্মভূমিতে তাদের নাগরিকত্বের অধিকার দেয়নি মিয়ানমার সরকার। তাদের জমি পর্যন্ত কেড়ে নেয়া হয়েছে। ভ্রমণের ক্ষেত্রেও জারি রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তাদের শিক্ষার সুযোগকেও সঙ্কুচিত করা হয়েছে। এমনকি রোহিঙ্গা মুসলিমদের সম্পত্তির অধিকারও কেড়ে নেয়া হচ্ছে।
‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’র দেয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে, রোহিঙ্গা মুসলিমরা মজুর খাটতে অস্বীকার করলে অথবা কোনো অভিযোগ করলে তাদের চরম দৈহিক নির্যাতন করা হয়। কখনো কখনো তাদরে খুন করে দেয়া হয়। সাত বছর বয়সী শিশুদের জোর করে মজুর খাটবার জন্য নাম লিখিয়ে তালিকাভুক্ত করা হয়।
রাখাইনের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপরে নগ্ন আক্রমণের ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে মিয়ানমায়। অথচ দেশের স্বৈরশাসকের দল সব জেনেও নিশ্চুপ। প্রতিদিন মিয়ানমায় লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। একরকম সরকারী মদতেই চূড়ান্ত নির্যাতন চালানো হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর। ওয়াশিংটনসহ পশ্চিমী দুনিয়া অন্ধ মুসলিম বিদ্বেষে নিয়েছে মুখ ও বধিরের ভূমিকায়। ফলে মিয়ানমায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা আজ হিংসার পর্যায়ে।
নীলাদ্রি সেন: কলকাতার সাংবাদিক
‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’, ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’, ‘ফক্স নিউস’ থেকে শুরু করে ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার নামী সংবাদ মাধ্যমের মুখে এই গণহত্যা নিয়ে কোনো রা নেই। শুধু তাই নয়, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে সরব মিয়ানমার নোবেলজয়ী বিরোধী নেত্রী আন সান সু কি নিজের দেশে ঘটা এই জঘন্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও গণহত্যা নিয়ে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
আরাকানের এই রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায় বহু প্রাচীন। জানা যায় অষ্টাদশ শতাব্দী থেকে এই এলাকায় তাদরে বসবাস। দুনিয়ায় তারা অন্যতম সর্বাধিক নির্যাতিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। জানাচ্ছে খোদ জাতিসংঘ। নিজেদের মৌলিক অধিকার, ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি থেকে তারা আজও বঞ্চিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিয়ানমা ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ। এই সময় জাপান মিয়ানমায় আগ্রাসন চালায়। তখনও নির্যাতন চলছে রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর। ২৮ মার্চ, ১৯৪২ মীনবিয়া ও রোহাংগ টাউনে রাখাইন জাতীয়তাবাদীরা হত্যা করে ৫০০০ মুসলিমকে। ন্যূনতম মানবাধিকার পান না এই রোহিঙ্গা মুসলিমরা। অভিযোগ ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালে’র। দুনিয়ার কোথাও স্থায়ী বসতি গড়তে না পেরে যাযাবরের অসহায় জীবন কাটাতে হয় তাদের। সরকারী নাগরিক স্বীকৃতি থেকে তারা বঞ্চিত। এখন প্রায় ১ লক্ষ ১১ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তে দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছেন। গত জুনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের ১৩৩৬টি বাড়ি ভস্মীভূত। জানাচ্ছে সংবাদ সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’। অন্যদিকে ব্রিটেনের মানবাধিকার সংগঠন ‘দি প্ল্যাটফর্মে’র দাবি সংখ্যাটা প্রকৃতপক্ষে ৬০০০। দাঙ্গায় আক্রান্ত হলেও অসংখ্য রোহিঙ্গা মুসলিমদেরই গ্রেফতার করে জেলে রাখা হয়েছে।
আসলে মিয়ানমায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রকৃত সংবাদ পাওয়াটা খুবই দুরূহ। মিয়ানমায় খবর সংগ্রহে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। এক কথায় ‘মিডিয়া ব্ল্যাকআউট’। সাংবাদিকদের স্বাধীন খবর সংগ্রহে রয়েছে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ। তবে সদিচ্ছা থাকলে সংবাদ সংগ্রহ যে অসম্ভব নয় সে কথা বলাই যায়। যেমনটা করে দেখিয়েছে ইরানের ‘নিউজ ওয়েবসাইট’। মিয়ানমার দাঙ্গায় পুড়িয়ে মারা হচ্ছে এক শিশুকে। প্রকাশ দাঙ্গার এক সচিত্র প্রতিবেদনে। ইরানের ওই ‘নিউজ ওয়েবসাইটে’। ইরানের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও ঘটনার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অবিলম্বে মিয়ানমার সরকারকে হিংসা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আরজি জানানো হয়েছে। একই প্রতিক্রিয়া ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর মুসলিম স্কলার্সের। ওয়াশিংটনসহ পশ্চিমী দুনিয়ার এই ঘটনায় নীরবতা তাদের কট্টর মুসলিম বিরোধিতা ও দ্বিচারিতারই প্রমাণ। যে পথ ধরে পশ্চিমী ‘মেইনস্ট্রিম’ সংবাদ মাধ্যমগুলোও এখন ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকায়।
সাদা কালো ছবিতে ভরা বইটার নাম ‘Exiled to Nowwhere : Burma’s Rohingya’ । লেখক গ্রেম কনস্টানটাইন, পেশায় মার্কিন ‘ফটোগ্রাফার’। রাষ্ট্রহীনদের বিশেষত, রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোচনায় যে বিষয়টি বাদ থাকে তা হলো মানবতার কথা। বিশ্বাস গ্রেগের। এই প্রসঙ্গে নিজের লেখা বইতে গ্রেম শুনিয়েছেন এক মর্মস্পর্ষী কাহিনী। ২০ বছর বয়সের তরুণী কাশিদা। বাংলাদেশ থেকে স্বামীকে নিয়ে চলে আসেন মিয়ানমায়। তবে মিয়ানমার সরকার তাকে বিবাহিতা স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। মিয়ানমায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিবাহ ও সন্তান ভূমিষ্ট হওয়াতে বিভিন্ন বিধিনিষেধ রয়েছে। মিয়ানমা সরকারের ভাষায় রোহিঙ্গা মুসলিমরা ‘রেসিডেন্ট ফরেনার্স’। যাই হোক, পরবর্তীকালে জানা যায় যে, কাশিদা গর্ভবতী। তখন তাদের সমস্ত টাকা-পয়সা ও গোরু, ছাগল কেড়ে নেয়া হয়। হুমকি দিয়ে বলা হয়- ‘এটা তোমদের দেশ নয়। এখানে তোমার গর্ভধারণের কোনো অধিকার নেই। এখানেই শেষ নয়। কাশিদাকে জোর করে গর্ভপাত করাতে বাধ্য করা হয়। মিয়ানমায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি এমন অমানবিক, বর্বরোচিত আচরণ এখন রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
মিয়ানমার রোহিঙ্গা মুসলিমদের করুণ অবস্থার আভাস মেলে ‘আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অরগানাইজেশন’র পক্ষ থেকে প্রকাশিত কিছু তথ্যে। এর থেকে জানা যায় যে, রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিবাহের জন্য মিয়ানমায় সরকারি অনুমোদন নিতে হয়। তাদের দুটির বেশি সন্তান হওয়া নিষিদ্ধ। তাদের দিয়ে জোর করে মজুরের কাজ করানো হয়। এক কথায় যা আধুনিক কালের দাসত্ব। জন্মভূমিতে তাদের নাগরিকত্বের অধিকার দেয়নি মিয়ানমার সরকার। তাদের জমি পর্যন্ত কেড়ে নেয়া হয়েছে। ভ্রমণের ক্ষেত্রেও জারি রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তাদের শিক্ষার সুযোগকেও সঙ্কুচিত করা হয়েছে। এমনকি রোহিঙ্গা মুসলিমদের সম্পত্তির অধিকারও কেড়ে নেয়া হচ্ছে।
‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’র দেয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে, রোহিঙ্গা মুসলিমরা মজুর খাটতে অস্বীকার করলে অথবা কোনো অভিযোগ করলে তাদের চরম দৈহিক নির্যাতন করা হয়। কখনো কখনো তাদরে খুন করে দেয়া হয়। সাত বছর বয়সী শিশুদের জোর করে মজুর খাটবার জন্য নাম লিখিয়ে তালিকাভুক্ত করা হয়।
রাখাইনের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপরে নগ্ন আক্রমণের ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে মিয়ানমায়। অথচ দেশের স্বৈরশাসকের দল সব জেনেও নিশ্চুপ। প্রতিদিন মিয়ানমায় লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। একরকম সরকারী মদতেই চূড়ান্ত নির্যাতন চালানো হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর। ওয়াশিংটনসহ পশ্চিমী দুনিয়া অন্ধ মুসলিম বিদ্বেষে নিয়েছে মুখ ও বধিরের ভূমিকায়। ফলে মিয়ানমায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা আজ হিংসার পর্যায়ে।
নীলাদ্রি সেন: কলকাতার সাংবাদিক
No comments