বৃটিশ ব্যাংকিংয়ে বিবর্তনের সূচনা সুপারমার্কেট ব্যাংকিংয়ের আবির্ভাব by শফিক রেহমান
বৃটিশ প্রকৃতিবিজ্ঞানী চার্লস রবার্ট ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন যে এই পৃথিবীর সব ধরনের প্রাণীরই পূর্বপুরুষ ছিল একই ধরনের। কালের বিবর্তনে একেক প্রাণী একেক ধরনের রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, প্রাণীদের বেচে থাকার যুদ্ধে প্রাকৃতিক বাছাইপ্রক্রিয়ায় বা ন্যাচারাল সিলেকশনে যারা বিজয়ী হয়েছে তারাই এখন পৃথিবীতে বিচরণ করছে।
১৮৫৯-এ তার বিখ্যাত বই অন দি অরিজিন অফ স্পিসিস (On the origin of Species)-এ ডারউইন এই তত্ত্ব প্রকাশ করেন। এই বইয়ে তিনি তার তত্ত্বের সমর্থনে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্য ও প্রমাণ দেন। তার মত অনুসারে ওরাংওটাং, শিম্পাঞ্জি, বানর এবং মানুষের পূর্বপুরুষ ছিল একই। কিন্তু মানুষ তার বুদ্ধি খাটিয়ে প্রকৃতির সাথে অ্যাডজাস্ট করতে পেরেছে। ফলে মানুষ মানুষের রূপে টিকতে পেরেছে। ডারউইনের এই থিওরি সাধারণভাবে বিবর্তনবাদ নামে পরিচিত।
মানব ইতিহাসে সবচাইতে বেশি প্রভাবশালী গুটিকয়েক ব্যক্তির অন্যতম হচ্ছেন ডারউইন। হয়তো তাই বৃটেনের বার্কলেজ কেলেংকারির পর নর্দার্ন রক বিলডিং সোসাইটির সাবেক চেয়ারম্যান ও ব্যাংকার ম্যাট রিডলি জুলাই ২০১২-তে লন্ডনের দি টাইমস পত্রিকায় হাও ডারউইন উড রিফর্ম বৃটেনস ব্যাংকস (How Darwin would reform Britain’s banks) বা ‘ডারউইন বেচে থাকলে কিভাবে বৃটেনের ব্যাংক সংস্কার করতেন’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন।
বর্তমান বিশ্বে বহু ধরনের ব্যাংক আছে। সাধারণত একটি দেশে ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের অধিকারী হয় সেই দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেমন, বাংলাদেশের সেন্ট্রাল ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরেই থাকতে পারে অ্যাডভাইজিং ব্যাংক, এগৃকালচারাল ব্যাংক, কমার্শিয়াল ব্যাংক, কমিউনিটি ভেভেলপমেন্ট ব্যাংক, কো-অপারেটিভ ব্যাংক, ক্রেডিট ইউনিয়ন, কাস্টডিয়ান ব্যাংক, ডিপজিটরি ব্যাংক, এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সি, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক, ইন্ডাস্টৃয়াল ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক, মিউচুয়াল সেভিংস ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, অফশোর ব্যাংক, পোস্টাল সেভিংস ব্যাংক, প্রাইভেট ব্যাংক, রিটেইল ব্যাংক, সেভিংস অ্যান্ড লোন অ্যাসোসিয়েশন, সেভিংস ব্যাংক ইত্যাদি।
বৃটেনের প্রায় প্রতিটি শহরের হাই স্টৃটে বার্কলেজ, লয়েডস, ন্যাটওয়েস্ট, এইচএসবিসি-র বাণিজ্যিক শাখার ব্রাঞ্চ আছে। আর তার পাশেই দেখা যায়, হ্যালিফ্যাক্স, নেশনওয়াইড, নর্দার্ন রক প্রমুখ বিলডিং সোসাইটির ব্রাঞ্চ। বৃটেনে বাড়ি বা ফ্যাট কেনার জন্য মানুষ সাধারণত এসব বিলডিং সোসাইটি থেকে পচিশ বছর মেয়াদি লোন নেয়। ম্যাট রিডলিসহ আরো অনেক ফাইনানশিয়াল এক্সপার্টস এখন মনে করছেন বৃটিশ হাই স্টৃটের এই চেহারা বদলে দিতেই হবে।
বৃটিশ ব্যাংকিংয়ে তিনটি প্রধান সমস্যা
ম্যাট রিডলি বৃটিশ ব্যাংকিং সেক্টরের তিনটি প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করেন।
এক. ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার্স এবং বিভিন্ন ফাইনানশিয়াল কম্পানির প্রধান কর্মকর্তারা সবাই মিলে মুনাফার লোভে সুদের হার ম্যানিপুলেট করেছেন। তারা জানতেন তারা ব্যাংকগুলোকে এত বৃহৎ আকারে রূপান্তরিত করেছেন যে সরকার তাদের ফেল করতে দেবে না। কারণ তার ফলে লক্ষ লক্ষ আমানতকারী (যারা ভোটার) নিঃস্ব হয়ে যাবে। বড় ব্যাংকগুলোর কোনো ঝুকি নেই বলা চলে। সব ঝুকি নিচ্ছে সাধারণ ট্যাক্স পেয়ার বা ভোটাররা। বড় ব্যাংক বিপদে পড়লে ভোটাররা সরকারের মাধ্যমে ব্যাংককে সাহায্য করে বাচিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছে।
ব্যাংকিং ওয়ার্ল্ডে একটি কথা চালু আছে। যারা অল্প পরিমাণে লোন নেয়, তখন সেটা হয় তাদের সমস্যা। ব্যাংক তাদের বাধ্য করতে পারে ঋণ পরিশোধ করতে। কিন্তু যারা বড় পরিমাণে লোন নেয়, তখন সেটা হয় ব্যাংকের সমস্যা। ব্যাংক তাদের বিভিন্ন মহলের তদবিরের কারণে অথবা অন্য কোনো কারণে ঋণ পরিশোধে বাধ্য করতে পারে না। বাংলাদেশে খেলাপিঋণের কালচার এভাবেই শুরু হয়েছিল। বড় শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করার নামে যারা বড় ঋণ নিয়েছিল তাদের অনেকেই খেলাপি হয়েছিল। ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অক্ষম ছিল বছরের পর বছর।
পরিস্থিতি আরো গুরুতর হয় যখন ব্যাংক নিজেই খেলাপি হওয়ার দিকে এগিয়ে যায়। বৃটেনে নর্দার্ন রক বিলডিং সোসাইটি (Northern Rock Building Society) যখন আমানতকারীদের টাকা পরিশোধ করতে পারছিল না তখন বৃটিশ সরকার এই প্রতিষ্ঠানকে বাচিয়ে রাখতে এগিয়ে আসে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত করে। একই কারণে বৃটেনের আরেকটি বড় ব্যাংকিং গ্রুপ, রয়াল ব্যাংক অফ স্কটল্যান্ড বা আরবিএস (যার অধীনে রয়েছে ন্যাটওয়েস্ট ব্যাংক)-কে রাষ্ট্রায়ত্ত করতে বাধ্য হয় বৃটিশ সরকার। বার্কলেজও তারল্য সঙ্কটে পড়েছিল। তবে তারা বৃটিশ সরকারের সাহায্য না নিয়ে কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটির কাছে কিছু শেয়ার বিক্রি করে। ফলে বৃটিশ সরকার নয়, বার্কলেজের আংশিক মালিক হয় পরোক্ষভাবে কাতার সরকার।
দুই. ম্যাট রিডলি মনে করেন ব্যাংকগুলোকে গাইড করার জন্য এবং নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ফাইনানশিয়াল সার্ভিসেস অথরিটি যে ৬,০০০ পৃষ্ঠার হ্যান্ডবুক প্রকাশ করেছে সেটা খুব কমই অনুসরণ করা হয়। অস্ট্রেলিয়া ও কানাডাতে বিধিনিষেধের এত বড় বই নেই এবং সেখানে ব্যাংক সমস্যা কম দেখা যায়।
তিন. বৃটেনে সেন্ট্রাল ব্যাংক ফেল করেছে। আমেরিকার ফেডারাল রিজার্ভ সিসটেমের ত্রয়োদশ চেয়ারম্যান (১৯৮৭ থেকে ২০০৬) অ্যালান গৃনস্প্যান ও বৃটেনের ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের বর্তমান গভর্নর মেরভিন কিং বিশ্বাস করেন ব্যাংকিং কার্যক্রমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু তখনই হস্তক্ষেপ করবে যখন সম্পদের দাম কমা শুরু হবে। সেই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত হবে সুদের হার কমিয়ে দেয়া। কিন্তু সম্পদের দাম বাড়তে থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ করা উচিত হবে না। ম্যাট রিডলি মনে করেন গৃসস্প্যান-কিংয়ের এই পলিসি ভুল ছিল কারণ এর ফলে আর্থিক বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল।
বৃটিশ ব্যাংকিং সিসটেমের এসব রোগ ডায়াগনসিস করার পরে ম্যাট রিডলি তার প্রেসকৃপশন দেন। তিনি বলেন, বৃটেনে বহু বছর যাবৎ নতুন কিয়ারিং ব্যাংক আবির্ভূত হতে পারেনি। নতুন ব্যাংক সৃষ্টির যেসব বাধা আছে সেসব সরিয়ে ফেলতে হবে। বৃটেনের সুপারমার্কেটগুলো এখন নিজেরাই নতুন ব্যাংক খুলছে। আফৃকাতে মোবাইল ফোন কম্পানিগুলো সফলভাবে ব্যাংকিং সার্ভিস দিচ্ছে এবং সেখানে ট্র্যাডিশনাল ব্যাংকগুলোতে কম কাস্টমার যাচ্ছে। বৃটিশ সুপারমার্কেট ও আফৃকান মোবাইল ফোন ব্যাংকিংয়ের মতো আরো অনেক সৃজনশীল ব্যাংক খোলার পথ সহজ করে দিতে হবে। ব্যাংকের আয়তন বড় হলেই তাকে শায়েস্তা করে ছোট রাখতে হবে। সব ফাইনানশিয়াল বিধিনিষেধ ব্যাংকগুলো যেন মেনে চলে সে বিষয়ে সার্বক্ষণিকভাবে তৎপর থাকতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ভেঙে দিয়ে অনেকগুলো ছোট ছোট ব্যাংক করতে হবে। এর পরেই ব্যাংকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃজনশীলতা দেখা যাবে।
ম্যাট রিডলি বলেন, লেহম্যানস-কে (Lehmans) বার্কলেজ কিনেছে। এইচবিওএস (HBOS)-কে লয়েডস কিনেছে এবং এটা কেনার আগে লয়েডস কিনেছিল টিএসবি (TSB)-কে। ব্যাংক অফ আমেরিকা কিনেছে মেরিল লিঞ্চ (Merrill Lynch)-কে। এভাবেই গুটিকয়েক ব্যাংক বড় থেকে আরো বড় হয়েছে। কিন্তু এদের বৃহৎ আয়তন এখন গভীর সংকট সৃষ্টি করেছে। ম্যাট রিডলি বলেন, এদেরকে ‘সাইজ’ করতে হবে, অর্থাৎ ছোট করতে হবে। তিনি জানান, জার্মানিতে প্রায় ২,০০০ ব্যাংক আছে এবং তারা স্থানীয় মানুষকে সার্ভিস দেয় ও ছোটখাটো বিজনেস নিয়ে কাজ করে।
ইতোমধ্যে টোরি এমপি ডগলাস কার্সওয়েল একটা প্ল্যান দিয়েছেন যেটা সংক্ষেপে বুঝিয়ে বলেছেন, ম্যাট রিডলি। তিনি বলেন, ব্যাংকে আমানতকারীরাই স্থির করবে ব্যাংক কোন পথে কিভাবে চলবে এবং কত দূর যাবে। এই সিসটেমে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার সময়ে পেয়িং-ইন স্লিপে দুটো বক্স থাকবে। আমানতকারী যদি বক্স ১-এ টিকচিহ্ন দেয় তাহলে তার টাকা, তারই থাকবে। এই টাকা ব্যাংক কখনোই কোথাও ইনভেস্ট করতে পারবে না। ব্যাংকে টাকা নিরাপদ থাকবে বলেই আমানতকারীরা সেখানে টাকা রাখবে। ব্যাংক হয়তো সে জন্য স্বল্প পরিমাণে কিছু ফিস চার্জ করতে পারে। আর বক্স ২-এ আমানতকারী টিকচিহ্ন দিলে তার টাকা ব্যাংক তাদের নিজেদের বিচারবুদ্ধি অনুযায়ী ইনভেস্ট করতে পারবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক কিছু সুদ আমানতকারীদের দিতে পারে।
কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, রাষ্ট্র শুধু বক্স ১-এর সব টাকা আমানতকারীদের ফেরত পাওয়ার গ্যারান্টি দেবে। সে ক্ষেত্রে ব্যাংক নিরাপত্তাকামী আমানতকারীদের টাকা নিয়ে ছিনিমিনি করতে পারবে না।
ডগলাস কার্সওয়েলের মতে, এর ফলে ব্যাংকগুলোর পুজি বিনিয়োগ ক্ষমতা কমে যাবে কারণ তাদের কাছে শুধু বক্স ২-এর টাকাই থাকবে। এবং যেহেতু বক্স ২-এর ডিপজিটে রাষ্ট্রের গ্যারান্টি থাকবে না সেহেতু ব্যাংক পুজি বিনিয়োগে অতিরিক্ত সতর্ক থাকবে।
ম্যাট রিডলি উপসংহারে লিখেছেন, চার্লস ডারউইন দেখিয়ে গেছেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রাণিকুল বিবর্তনে বদলে যায়। ঠিক তেমনই একটা দেশের ইকনমি এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থাও বদলে যাবে। এই বিবর্তনে ভুলভ্রান্তি হবে। কিন্তু একটা ফুলপ্রুফ অথবা পারফেক্ট সিসটেমে পৌঁছানোর চেষ্টা সবাইকে করতে হবে।
দি ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকায় ৭ জুলাই ১০১২-তে ফাইনানশিয়াল কলামিস্ট সাইমন রিড-ও বৃটেনে ব্যাংকিং ব্যবস্থা বিষয়ে বিকল্প কিছু চিন্তা প্রকাশ করেছেন। সম্ভবত ব্যাংকের রোষ এবং তার পত্রিকায় ব্যাংকের বিজ্ঞাপন হারানোর ভয়ে তিনি ‘অবৈধ’র পরিবর্তে ‘অনৈতিক’ এবং ‘দুর্নীতি’র পরিবর্তে ‘অদক্ষতা’ শব্দ দুটি ব্যবহার করেছেন।
সাইমন রিড লিখেছেন, বৃটিশ কাস্টমারদের ঘৃণা ধরে গেছে বার্কলেজ ও ন্যাটওয়েস্ট ব্যাংকের ওপরে। বড় সব ব্যাংক ছেড়ে বৃটিশ পাবলিক এখন নৈতিক ব্যাংকের প্রতি ঝুকে পড়ছে। যেমন:
১. কো-অপারেটিভ ব্যাংক, যারা বাড়ি-ফ্যাট কেনায় মরগেজ দেয়, লোন দেয় এবং ক্রেডিট কার্ড ও সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুবিধা দেয়। সারা বৃটেনে এই ব্যাংকের প্রায় ৩৫০টি ব্রাঞ্চ আছে। সম্প্রতি অনলাইনে এই ব্যাংকের ব্যবসা ২৫% বেড়েছে।
২. ট্রায়োডস ব্যাংক, যাদের বিভিন্ন ধরনের সেভিংস অথবা ইনভেস্টমেন্ট অ্যাকাউন্টে টাকা রাখলে সেটা তারা নৈতিকভাবে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই ব্যাংকের ইউকে প্রধান চার্লস মিডলটন বলেন, আমাদের ব্যাংকের মিশন হচ্ছে আমরা এমনভাবে পুজি বিনিয়োগ করব যেন ইতিবাচক সামাজিক, পরিবেশগত ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন হয়। এই প্রতিশ্রুতি রক্ষার পাশাপাশি আমরা আমানতকারীদের কিছু সুদও দেব।
৩. চ্যারিটি ব্যাংক, যারা চ্যারিটি আইনের আওতায় নিবন্ধিত। এরা সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুবিধা দেয়। কাস্টমার সেখানে টাকা রাখলে তারা বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা বা চ্যারিটি অর্গানাইজেশনকে, সামাজিক সংস্থাকে এবং কমিউনিটি সংস্থাকে লোন দেয়। কমার্শিয়াল ব্যাংক সাধারণত এদের লোন দিতে চায় না। চ্যারিটি ব্যাংক এই অভাবটা পূরণ করে।
৪. ইকলজি বিলডিং সোসাইটি, যাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে লোন দেয়ার মাধ্যমে আরো সবুজ একটি দেশ গড়া। যেমন, বাড়ি বা ফ্যাট কেনার জন্য এরা লোন দেবে যদি কাস্টমার দেখাতে পারে তাদের কাজের ফলে পরিবেশের উন্নতি হচ্ছে।
লেখক সাইমন রিড অবশ্য প্রশ্ন রেখেছেন কমার্শিয়াল ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ এবং কঠিন বাস্তবতার মুখে নৈতিক ব্যাংকিং সম্ভব কি না।
বিকল্প আছে
একই দিনে দি গার্ডিয়ান পত্রিকা চার পৃষ্ঠা জুড়ে বিকল্প ব্যাংকিং ব্যবস্থা বিষয়ে একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। এতে ব্যাংকস : দেয়ার ইজ এনাদার ওয়ে (Banks : there is another way, Ôব্যাংক : আরেকটি পথ খোলা আছে’) শীর্ষক লিড আর্টিকলে ইংল্যান্ডের উত্তর-পূর্বে বার্নলি শহরের জনৈক উদ্যমী এন্টারপ্রেনিউয়ার ডেভ ফিশউইক-এর বড় ছবি ছেপে তার বক্তব্য প্রকাশ করেছে। বার্নলি নির্বাচনী এলাকার জনসংখ্যা মাত্র ৬৭,০০০। এই ছোট শহরে ব্যবসা করে বড় সাফল্য অর্জন করেছেন ডেভ ফিশউইক। রিপোর্টার প্যাটৃক কলিনসন জানিয়েছেন ফিশউইক চেয়েছিলেন এমন একটি ব্যাংক করতে যারা আমানতকারীদের ৫% সুদ দেবে (বৃটেনে এখন ১% সুদ পাওয়াও কষ্টকর), শস্তায় লোন দেবে এবং যা প্রফিট হবে তার সবই চ্যারিটি বা দাতব্য কাজে দেয়া হবে।
বৃটেনে সবচেয়ে বেশি মিনিবাস বিক্রি করে ফিশউইক মিলিয়নেয়ার হয়েছেন। সুতরাং তার চিন্তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ৪১ বছর বয়স্ক ফিশউইক তার চিন্তাকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বার্নলি সেভিংস অ্যান্ড লোনস নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি কি একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক হতে পারবে?
প্যাটৃক কলিনসন লিখেছেন, এটা দুঃসাধ্য কাজ হবে। কারণ তাকে প্রায় ৮,০০০ পৃষ্ঠাব্যাপী বিভিন্ন ফরম ফিলআপ করতে হবে এবং তাকে মনে রাখতে হবে গত ১০০ বছরে সিটি রেগুলেটররা বৃটেনে মাত্র একটি নতুন ব্যাংক খোলার অনুমতি দিয়েছে।
ফিশউইকের এসব অসুবিধা অতিক্রম ও সমস্যা সমাধানের পথ বিষয়ে বৃটেনের চ্যানেল ফোর টেলিভিশন একটি সিরিজ করছে এবং ফিশউইক যেখানে যা করছেন তার ছবি তুলে রাখছে।
ডেভ ফিশউইকের মাথায় হঠাৎ ব্যতিক্রমধর্মী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার চিন্তা এলো কি করে?
উত্তরটা ফিশউইক দিয়েছেন এভাবে: যখন আমার বয়স বারো কি তের ছিল তখন সবাই আমাকে খেপাতো, বুলি (Bully) করত। তারপর একসময় আমি ফাইট ব্যাক শুরু করলাম। পালটা জবাব দিতে থাকলাম। তখন আমি জানলাম আমি বুলিদের হারাতে পারি। ...২০০৯-এ বৃটিশ ব্যাংকিংয়ে সংকট দেখা দেওয়ার ফলে আমার মিনিবাস বিক্রির ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। কারণ, যারা আমার মিনিবাস কিনতে চাইছিল, তারা ব্যাংক থেকে লোন পাচ্ছিল না। আমার নিজের ফার্মের ব্যালান্স শিট ভালো ছিল। তাই আমার অসুবিধা হচ্ছিল না। কিন্তু ব্যাংকগুলোর অসহযোগিতার ফলে আমার কাস্টমাররা বিপদে পড়েছিল। আমি এখন বুঝতে পারি সমস্যাটা আমার কাস্টমারদের ছিল না। তারা যেমন ছিল তেমনই আছে। তারা মিনিবাস কিনতে পারলে, ব্যবসাও আগের মতোই করতে পারবে এবং লোন পরিশোধও করতে পারবে। আসলে সমস্যা হয়েছিল ব্যাংকগুলোরই ভেতরে। তাই তারা কাস্টমারদের কাছ থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখছিল।
... তখন আমি আমার নিজের ক্যাশ থেকে মিনিবাস ক্রেতাদের লোন দেওয়া শুরু করলাম আমার শর্তে। ছয় মাস পেরিয়ে গেল। দেখলাম একজনও লোন পরিশোধে ফেল করেনিÑ সবাই ঠিক সময়ে পরিশোধ করেছে। তখন আমি বুঝলাম, আসলে ব্যাংক চালানো এমন কোনো কঠিন কাজ নয়।
ডেভ ফিশউইকের এই অভিজ্ঞতা জেনে হয়তো অনেকের মনে পড়বে কোন চিন্তা থেকে ড. ইউনূস বাংলাদেশের দক্ষিণে চট্টগ্রাম জেলায় জোবরা গ্রাম থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের সূচনা করেছিলেন।
টাকা সরিয়ে ফেলুন
পুরো জুলাই ২০১২ জুড়ে প্রতিষ্ঠিত বড় ব্যাংকের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের বিদ্রোহ চলতে থাকে। দি অবজার্ভার পত্রিকার বিজনেস এডিটর হেদার স্টুয়ার্ট ৮ জুলাই ২০১২ -তে কাস্টমার্স ভেন্ট অ্যাংগার বাই লিভিং ‘বিগ ফাইভ’ ব্যাংকস (Customers vent anger by leaving `big five’ banks) বা ‘পাচটি বড় ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে কাস্টমাররা তাদের ক্রোধ প্রকাশ করছে’ শীর্ষক নিবন্ধে লেখেন, ব্যালট পেপার নয়, কাস্টমাররা এবার ভোট দিচ্ছে তাদের মানিব্যাগ দিয়ে। তারা বড় ব্যাংকগুলো থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে।
হেদার স্টুয়ার্ট জানান, ব্যাংক থেকে টাকা ছোট ব্যাংকে ট্রান্সফার করার একটা আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছে। এই আন্দোলনের পুরোভাগে আছে একটি সংগঠন, মুভ ইয়োর মানি ইউকে (Move your money UK) বা আপনার টাকা সরিয়ে ফেলুন, ইউকে।
এই সংগঠন যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছে তাতে জানা গেছে চ্যারিটি ব্যাংকে আমানতকারীদের সংখ্যা ২০০% বেড়েছে ইকোলজি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে আগ্রহীদের সংখ্যা ২৬৬% বেড়েছে। ট্রায়োডস ব্যাংকের আমানতকারীর সংখ্যা ৫১% বেড়েছে।
মুভ ইয়োর মানি ইউকে বলেছে, মেইনস্টৃম ব্যাংক বা মূলধারার ব্যাংকের বিকল্প খুজছে পাবলিক। এ বছরের শুরু থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৮০,০০০ সঞ্চয়কারী বিশাল ব্যাংকগুলো ছেড়ে দিয়ে ছোট ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছে।
এই সংগঠনের মুখপাত্র লুই ব্রুক বলেন, তথাকথিত বড় পাচটি ব্যাংক, বার্কলেজ, লয়েডস, এইচএসবিসি, রয়াল ব্যাংক অফ স্কটল্যান্ড ও সানটানডার-এর প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা কমে গিয়েছে। মানুষ এই পাচটি ব্যাংককে আর বৈধ প্রতিষ্ঠান মনে করছে না। তারা পুরনো স্টাইলের মিউচুয়াল ব্যাংক ও বিলডিং সোসাইটিগুলোতে টাকা রাখছে।
হেদার স্টুয়ার্ট ও মুভ ইয়োর মানি ইউকে-কে সমর্থম জানিয়ে দি গার্ডিয়ানের কলামিস্ট ডিবরা ওর লেখেছেন, প্রেশার গ্রুপ পজিটিভ মানি (Positive Money) জানিয়েছে, অতীতে বার্কলেজ সহ আরো কিছু ব্যাংক নিজেদের নোট ছাপানো নিষিদ্ধ করে দেয়। তখন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড, নোট ছাপানো শুরু করে এবং অন্যান্য ব্যাংক এসব নোট কিনে নেয়। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে বৃটেনের ক্যাশ টাকার মাত্র ৩% আসে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড থেকে। মানুষ তার সঙ্গে বেশি ক্যাশ রাখছে না। ক্যাশ টাকা কম খরচ করছে। এখন ইলেকট্রনিক টাকার ব্যবহার হচ্ছে। ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড প্রভৃতির মাধ্যমে কমপিউটার প্রযুক্তিতে টাকার লেনদেন হচ্ছে। কিন্তু এই লেনদেনের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা খুব কম। কারণ ১৮৪৪ -এ আইনপ্রণেতারা এই যুগের কমপিউটার প্রযুক্তিগত টাকার কথা কল্পনা করেননি।
এর ফলে পণ্যমূল্য ও বাড়ির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য ডিবরা ওর বলেছেন, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং আর রিটেইল ব্যাংকিংকে সম্পূর্ণ আলাদা রাখতে হবে। পাশাপাশি লিমিটেড পারপাস ব্যাংকিং (Limited Purpose Banking) বা সীমিত লক্ষ্যসাধনের ব্যাংক চালু করতে হবে। যেমন, কেউ যদি শুধু বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্ট আমদানি করতে চায়, তাহলে সেই ধরনের ব্যক্তিকে সহায়তার জন্য সীমিত লক্ষ্যে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
সুপারমার্কেট ব্যাংকিংয়ের আবির্ভাব ও পাবলিকের ওয়েলকাম
বৃটিশ ব্যাংকিংয়ে দুর্নীতি ও তোলপাড় অবস্থায় নানা মুনি যখন নানা মত দেওয়া শুরু করে তখন অবস্থার সুযোগ নেয় তিনটি সুপারমার্কেট চেইন ও একটি রিটেইল কোদস ও ফুড অ্যান্ড ডৃংকস চেইন। তারা ব্যাংকিংয়ে ঢুকে পড়ে। সুপারমার্কেট চেইনগুলো আগে থেকেই গাড়ি ও বাড়ি ইনশিওরেন্সের সুবিধা দিচ্ছিল তাদের দোকানগুলোতে। এখন তাদের ফাইনালশিয়াল প্রডাক্টের মধ্যে যুক্ত হয়েছে ব্যাংকিং সার্ভিস।
বৃটেনের সবচেয়ে বড় সুপারমার্কেট চেইন টেসকো (Tesco) বিক্রির পরিমাণে এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সুপারমার্কেট চেইন, আমেরিকার ওয়ালমার্ট ও ইওরোপের ক্যারেফোর-এর পরেই টেসকোর অবস্থান। প্রফিটের বিবেচনায় এর অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়, ওয়ালমার্টের পরেই। ইংল্যান্ডের চেশান্ট-এ এর হেড কোয়ার্টাস এবং এশিয়া, ইওরোপ ও উত্তর আমেরিকা জুড়ে মোট ১৪টি দেশে টেসকোর দোকান আছে। গ্রেট বৃটেনে টেসকোর দোকান সংখ্যা ৬,০০০-এর বেশি এবং এরাই ইউকে-র গ্রোসারি মার্কেটের ৩০% দখল করে রেখেছে। ১৯১৯-তে বাজারে ছোট একটি স্টল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইহুদি ব্যবসায়ী জ্যাক কোহেন। সেখান থেকেই আজকের টেসকো-র সূচনা। এখন টেসকো শুধু ফুড ও ডৃংকস নয়, পোশাক, বই, ইলেকট্রনিক্স, ফার্নিচার ও পেট্রলও বিক্রি করছে। এদের স্টাফ সংখ্যা ৫২০,০০০। বিক্রির পরিমান প্রায় ৬১ মিলিয়ন পাউন্ড।
এশিয়াতে টেসকোর উপস্থিতি হয়েছে টার্কি, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, সাউথ কোরিয়া, জাপান ও ইনডিয়াতে। ২০০৮-এ টেসকো ব্যাঙ্গালোরে একটি সার্ভিস সেন্টার খোলে এবং এখন টাটা গ্রুপের সহযোগিতায় মুম্বাইতে হোলসেল ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি বিজনেস শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
২০০৬ সালে ইউকে-তে রয়াল ব্যাংক অফ স্কটল্যান্ডের সঙ্গে ৫০:৫০ পার্টনারশিপে টেসকো ক্রেডিট কার্ড, লোন, মরগেজ, সেভিংস অ্যাকাউন্ট সহ বিভিন্ন ফাইনানশিয়াল সার্ভিস কাস্টমারদের দেয়া শুরু করে। প্রথম বছরে এই জয়েন্ট ভেঞ্চারে ১৩০ মিলিয়ন পাউন্ড লাভ হয়। তখনই টেসকো বোঝে ব্যাংকিং সেকটরে তাদের আবির্ভাবকে কাস্টমাররা স্বাগত জানিয়েছে। তাই ২৮ জুলাই ২০০৮ -এ ৯৫০ মিলিয়ন পাউন্ডে রয়াল ব্যাংক অফ স্কটল্যান্ডের ৫০% শেয়ার কিনে নেয় এবং সুপারমার্কেটের মধ্যেই টেসকো ব্যাংক নামে ব্যাংকিং সার্ভিস দেয়া শুরু করে।
টেসকোর চাইতে পুরনো হচ্ছে ইউকের তৃতীয় বুহত্তম সুপারমার্কেট চেইন সেইনসবেরিস (Sainsbury’s)। জন জেমস সেইনসবেরি ও তার স্ত্রী মেরি অ্যান সেইনসবেরি কর্তৃক ১৮৬৯ -এ প্রতিষ্ঠিত এই চেইন ১৯৯২ -এ গ্রেট বৃটেনের এক নাম্বার ফুড ও ডৃংকস বিক্রেতা হয়। এরাই ইউকেতে সবচেয়ে আগে সেলফ সার্ভিস স্টোর প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ১৯৯৫ -এ টেসকো হয় মার্কেট লিডার এবং ২০০৩ -এ আসদা উঠে আসে দ্বিতীয় স্থানে। সেইনসবেরির দোকান সংখ্যা ১,০১২। স্টাফসংখ্যা ১৫০,০০০। মার্চ ২০০৭-এ লয়েডস ব্যাংকিং গ্রুপের সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে সেইনসবেরিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়।
সেইনসবেরি ও টেসকোর তুলনায় আসদা (Asda) সুপারমার্কেট চেইন খুব নতুন। কিন্তু এর সম্ভাবনা এখন বেশি। লিডস, ইংল্যান্ডে ১৯৬৫ -তে প্রতিষ্ঠিত আসদাকে বিশ্বের এক নাম্বার রিটেইল জায়ান্ট আমেরিকান কম্পানি ওয়ালমার্ট কিনে নেয়। আসদার বিক্রির স্লোগান হলো তাদের দোকানেই পণ্যের দাম সবচেয়ে কম। গ্রেট বৃটেনে আসদা-র দোকান সংখ্যা ৫২৩ এবং স্টাফসংখ্যা ১৪৩,১২৬। টেসকো ও সেইনসরেরির পথ ধরে আসদাও ব্যাংকিং সার্ভিস দেয়া শুরু করেছে। তাদের এই কাজে সহায়ক হয়েছে জিই ক্যাপিটাল ব্যাংক ও গ্রুপো সানটানডার।
ইউকের রিটেইল মার্কেটে ব্যাংকিং সার্ভিস এখন দেয়া শুরু করেছে মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার (Marks and Spencer) যাকে সংক্ষেপে এম অ্যান্ড এস (M & S)-ও বলা হয়। কেউ কেউ এদের দোকানকে মার্কস অ্যান্ড স্পার্কস বলেন। ১৮৮৪-তে পোল্যান্ড থেকে আগত ইহুদি ব্যবসায়ী মাইকেল মার্কস ও ইংল্যান্ডের জনৈক ক্যাশিয়ার টমাস স্পেনসার পার্টনারশিপে লিডসে তাদের ব্যবসা চালু করেন। ১৯৫০-এর মধ্যেই পোশাক পরিচ্ছদ, বিশেষত নারী ও পুরুষের অন্তর্বাস বিক্রিতে মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার হয় ইউকের শীর্ষ কম্পানি। এরপর তারা ফুড অ্যান্ড ডৃংকস বিক্রিতে যায়। ১৯৭৪-এর তারা তাদের দোকানগুলোতে ইনডিয়ান-বাংলাদেশি ও চায়নিজ ফুড বিক্রি শুরু করে। মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার এখনো নারীদের কোয়ালিটি অন্তর্বাস ম্যানুফ্যাকচারিং ও বিক্রির ক্ষেত্রে তাদের লিড ধরে রেখেছে। তাদের ফুড অ্যান্ড ডৃংকসের মানও উন্নত। বাংলাদেশে তাদের অফিস আছে এবং বৃটেনে তাদের দোকানে বাংলাদেশি গার্মেন্ট বিক্রি হয়। এরাও এম অ্যান্ড এস মানি (M & S Money) নামে এখন ব্যাংকিং সার্ভিস দেয়া শুরু করেছে। এদের দোকান সংখ্যা ১,০১০-এর বেশি। স্টাফ ৮১,০০০। মার্কস অ্যান্ড স্পেনসারের সঙ্গে ইসরেলের ঘনিষ্ঠতা থাকলেও আরব টুরিস্টরা এই চেইনকে পছন্দ করে। কারণ এদের প্রায় সব প্রডাক্টের মান ভালো। ইউকে-তে টেসকো ব্যাংক, সেইনসবেরিস ব্যাংক, আসদা মানি এবং এম অ্যান্ড এস মানি খুব দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। চার্ট দেখুন।
এর অনেকগুলো কারণ আছে। ব্যাংকের তুলনায় সুপারমার্কেট বেশি সময় জুড়ে খোলা থাকে। সুনির্দিষ্ট সময়ে ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাস্টমাররা বিপদে পড়ে। কিন্তু সুপারমার্কেটগুলো প্রতিদিনই খোলা থাকে এবং অনেক সময়ে সন্ধ্যার পরেও খোলা থাকে। তাছাড়া ব্যাংকের তুলনায় সুপারমার্কেট চেইনের ব্রাঞ্চ সংখ্যা অনেক বেশি। অন্যদিকে ব্যাংক তাদের বিজ্ঞাপনে বহু খরচ করতে বাধ্য হয়। সুপারমার্কেট চেইন তাদের ফুড-ডৃংকসের বিজ্ঞাপনের সঙ্গে জুড়ে দিতে পারে ব্যাংকিং সার্ভিসের বিজ্ঞাপন। সুপারমার্কেটের এক কোনায় ব্যাংকিং সার্ভিস দেয়া হয় এবং এর জন্য অন্য বাড়ি ভাড়া নিতে হয় না। বিভিন্ন কারণে ব্যাংকের তুলনায় সুপারমার্কেট চেইনে ব্যাংকিং সার্ভিস দেয়ার খরচ কম।
বড় ব্যাংকগুলোর দুর্নীতি ও অদক্ষতার পর এখন ইউকে-তে এই সুপারমার্কেট চেইনগুলো কম খরচে সীমিত কিন্তু প্রায় সার্বক্ষণিক ব্যাংকিং সার্ভিস দিয়ে চার্লস ডারউইনের বিবর্তবাদকে আবারও সুপ্রতিষ্ঠিত করছে।
১৩ আগস্ট ২০১২
শফিক রেহমান: প্রখ্যাত সাংবাদিক ও টিভি অ্যাংকর।
No comments