লবণচাষিদের সমস্যা
কক্সবাজারে কয়েক হাজার লবণচাষির বিক্ষোভ ও তাঁদের বক্তব্য লক্ষ করার বিষয়। চাষিরা বলছেন, তাঁরা লবণ বিক্রি করছেন কেজিপ্রতি দুই টাকারও কম দরে; অথচ বাজারে প্যাকেটজাত লবণ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮ থেকে ২০ টাকায়।
এটা নিঃসন্দেহ অস্বাভাবিক। লবণচাষিরা বলছেন, মধ্যস্বত্বভোগী একটি চক্র এ থেকে মুনাফা লুটছে।
লবণচাষিদের দুর্দশা হলো এই যে মণপ্রতি লবণ উৎপাদনে তাঁদের খরচ হয় প্রায় ৮২ টাকা, আর তা বিক্রি করে তাঁরা পাচ্ছেন ৭০ থেকে ৮০ টাকা। কিন্তু এভাবে কোনো শিল্পের টিকে থাকা অসম্ভব। কক্সবাজার এলাকার ৪৫টি লবণ কারখানার মধ্যে ৩০টি এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বলে লবণ মিল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, দেশে মোট লবণের চাহিদা প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ মেট্রিক টন। আমাদের লবণচাষিরা গত মৌসুমে উৎপাদন করেছেন প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ উদ্বৃত্ত উৎপাদন প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন। এই উদ্বৃত্ত লবণ আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারতাম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে উল্টোটা: ভারত থেকে লবণ আমদানি করা হচ্ছে, মিয়ানমার থেকে চোরাই পথেও লবণ আসছে। অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে এমনটি হওয়ার কথা নয়। চাহিদার চেয়ে বেশি পণ্যদ্রব্য উৎপাদিত হলে সেই বাজারে বাইরে থেকে বাড়তি পণ্য আসার কথা নয়। এখানে দেশি লবণের প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণন-ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে কি না, তা দেখা প্রয়োজন। লবণচাষিরা লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন এ জন্য যে তাঁরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য থেকে মুনাফা করতে পারছেন না, বরং লোকসান গুনছেন। কিন্তু ভোক্তারা বাজারের প্যাকেটজাত লবণ কিনছে উচ্চমূল্যে। প্যাকেটজাত যে লবণ কেজিপ্রতি ১৮ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তা কাদের বদৌলতে এই উচ্চমূল্য ধারণ করছে?
প্রায় ৫০ হাজার লবণচাষির পরিবার এখন সংকটে; প্রক্রিয়াকরণ, বিপণনসহ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। দেশের লবণশিল্প বিপন্ন হলে আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করতে হবে। সে অবস্থায় কোনোভাবেই যাওয়া চলবে না। সরকারের উচিত এই শিল্পে সৃষ্ট সংকটের কারণগুলো খতিয়ে দেখে প্রতিকারের পদক্ষেপ নেওয়া।
No comments