সততা ও শুদ্ধতায় পরিবর্তন -ভূমি প্রশাসনে সুশাসন by মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী
ভূমি মানুষের জীবন-জীবিকার কেন্দ্রবিন্দু, মানুষের স্বপ্ন দেখার সম্বল। ভূমির সঙ্গে জড়িয়ে আছে উৎপাদন, জীবিকা ও উন্নয়ন। একখণ্ড ভূমিতে মানুষের কত রক্ত, শ্রম ও ঘাম জড়িয়ে আছে। মানুষের প্রাণের চেয়েও প্রিয় ভূমি। এ প্রিয় অবলম্বনটুকু ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ভূমি প্রশাসনের। আমাদের দেশের ভূমি প্রশাসন অনেক পুরোনো। ভূমি অফিসের সঙ্গে জনগণের যোগ অত্যন্ত নিবিড়। ভূমি অফিসে কৃষক, শ্রমিক, জেলে, মাঝি, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ধনী, নির্ধন সবাইকে আসতে হয়। ভূমি অফিসগুলোর রয়েছে জনগণকে সেবা দেওয়ার গৌরবময় ঐতিহ্য। পাশাপাশি রয়েছে হয়রানি, ভোগান্তি ও স্বপ্ন ভাঙার করুণ ইতিহাস।
ভূমি নিয়ে মানুষের দুঃখ-দুরবস্থার অন্ত নেই। নামজারির জন্য কত মাস অপেক্ষা করতে হবে, তার সঠিক উত্তর কেউ দিতে পারে না। ভূমি নিয়েই যত দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা। সবার আগে মানুষ খোঁজ নেয় তার ভূমি মালিকানা ঠিক আছে তো? শুধু রাজস্ব আদায়ই ভূমি প্রশাসনের একমাত্র কাজ নয়। তার চেয়েও বড় কাজ হলো, ভূমি মালিকানা পরিবর্তন, রেকর্ড সংশোধন ও হালনাগাদকরণ, ভূমির সদ্ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ, ভূমির ইজারা প্রদান, নামজারি কার্যক্রম সম্পাদন, খাসজমি ব্যবস্থাপনা, ভূমিহীন বাছাই, রেকর্ড রেজিস্টার সংরক্ষণ, অর্পিত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা, সরকারি জমিসংশ্লিষ্ট দেওয়ানি মামলার দলিলাদি প্রস্তুত, সার্টিফিকেট মামলা পরিচালনা, খাসজমির অবৈধ দখল রোধ, হাটবাজার, জলমহাল ও বালুমহাল ব্যবস্থাপনা, আদর্শ গ্রাম, আবাসন প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন, ভূমি জরিপে সরকারি স্বার্থ রক্ষা, ভূমি অফিসের পুকুর, গাছপালা ও সম্পদ সংরক্ষণ ইত্যাদি।
দেশের ভূমি অফিসগুলো গ্রামীণ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে আছে। জনগণের সুখ, দুঃখ এবং অনুভূতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলো। ভূমি অফিসে কাঙ্ক্ষিত সেবা পেলে মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আর না পেলে অভিশাপ দিয়ে যায়। দেশের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থিত ভূমি অফিসগুলো কোনোটি মাটির ঘর, কোনোটি টিনের ঘর কিংবা সেমি পাকা ঘর। এসব অফিসে নেই কোনো জৌলুশ। কিন্তু অফিসগুলো শ্যামল ছায়ায় ঘেরা। ভূমি প্রশাসনে রয়েছে সুশাসনের সংকট। নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বলয় ঘিরে আছে ভূমি অফিসে। ভূমি নিয়ে মানুষের ভোগান্তির ক্ষেত্রগুলো হলো: রেকর্ডিং-ব্যবস্থায় জটিলতা, নামজারিতে দীর্ঘসূত্রতা, খাসজমি বন্দোবস্তে অস্বচ্ছতা, অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় অবহেলা, ভূমি রাজস্ব আদায়ে হয়রানি, জাল দলিল সৃষ্টি করে নামজারি, খতিয়ানে বেআইনি সংশোধনী ইত্যাদি। এ ছাড়া খতিয়ান ও ভলিউমের পাতা বিনষ্টকরণ, আদালতে সরকার পক্ষে দুর্বল তথ্য উপস্থাপন, বেআইনিভাবে জমির শ্রেণী পরিবর্তন, অকৃষি জমিকে কৃষিজমি দেখিয়ে কর প্রদান, ত্রুটিপূর্ণ রেজিস্ট্রেশন, সরেজমিনে তদন্ত ছাড়াই প্রতিবেদন, নামজারির পর রেকর্ড সংশোধন না করা এবং জনবল ও লজিস্টিকসের অভাব ভূমি প্রশাসনের নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা। এসব সমস্যা ও সংকটের খবর মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রকাশ ও প্রচার হয়।
ভূমি প্রশাসনসংক্রান্ত সরকারি নীতি ও নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদের কর্মকর্তারা। তাঁদের চেতনায় সততা না থাকলে দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্ত ভূমি প্রশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ভূমির মালিকদের দুঃখ, কষ্ট ও চাহিদা কর্মকর্তাদের উপলব্ধি করার মানসিকতা থাকতে হবে এবং ভূমির মালিকদের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। ভূমি প্রশাসনে দুর্নীতি নির্মূলে যে দুর্লঙ্ঘ্য বাধা, তা ভেঙে দিতে হবে। জনগণের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে উদাসীন থাকা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার মতো অপরাধ। ভূমি অফিস নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার জমাট অন্ধকারে ঢাকা। ভূমি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দৃঢ় পায়ে এগিয়ে এসে এ অন্ধকারেই জ্বালাতে হবে সেবার প্রদীপ শিখা। সেবার স্পর্শে মুছে দিতে হবে ভোগান্তির যন্ত্রণা।
জনগণের প্রতি বৈরী মনোভাব সুশাসনের অন্তরায়। অনেক সংকট ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ভূমি অফিসে আসতে হয় জনগণকে আস্থা ও আশা নিয়ে। ভূমি অফিসে আসা সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করলেই ভূমি নিয়ে মানুষের কান্না ও দুঃখ বোঝা সহজ হবে। অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বৃত্তে বন্দী ভূমি মালিকদের উদ্ধার করে মানুষের সেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ধৈর্য ও পরিচর্যায় গড়ে তুলতে হবে সেবামুখী ভূমি প্রশাসন। জনগণের সঙ্গে দেয়াল রাখা যাবে না। মানুষের প্রবেশ অবাধ ও অবারিত করে দিতে হবে। এখন উপনিবেশ নেই। জমিদারি নেই। দুর্নীতি ও হয়রানির ঘটনা সরাসরি শ্রবণ করতে হবে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে।
ভূমি প্রশাসনকে দুর্নীতির জাল থেকে বের করে আনতে হবে। কর্মকর্তা হিসেবে সবার আগে নিজের চেতনা ও কাজকে শুদ্ধ করতে হবে। ভূমি অফিস হোক ভূমি মালিকানা রক্ষার নিরাপদ আশ্রয়। একবার দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হলে তার সঙ্গে সবার অভিযোজন হয়ে যাবে। ন্যায়ের দণ্ড হাতে নিয়ে ভূমি প্রশাসনের ওপর থেকে চিরদিনের জন্য মুছে ফেলতে হবে দুর্নীতির চিহ্ন। ভূমি নিয়ে যারা দুঃখ ও দুর্ভোগে পড়েছে, তাদের দিকে সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মানুষের মনে এই প্রেরণা ও প্রত্যাশা জন্মাতে হবে যে দেশের ভূমি প্রশাসনে ফিরে আসবে সুশাসন, পূরণ হবে জনগণের প্রত্যাশা এবং নিশ্চিত হবে সেবামুখী পরিবেশ। ভূমি প্রশাসনে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের লক্ষ্য হোক জনসেবা। রূপকল্প হোক ভূমি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন।
মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী: এডিসি (রাজস্ব), বগুড়া।
ভূমি নিয়ে মানুষের দুঃখ-দুরবস্থার অন্ত নেই। নামজারির জন্য কত মাস অপেক্ষা করতে হবে, তার সঠিক উত্তর কেউ দিতে পারে না। ভূমি নিয়েই যত দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা। সবার আগে মানুষ খোঁজ নেয় তার ভূমি মালিকানা ঠিক আছে তো? শুধু রাজস্ব আদায়ই ভূমি প্রশাসনের একমাত্র কাজ নয়। তার চেয়েও বড় কাজ হলো, ভূমি মালিকানা পরিবর্তন, রেকর্ড সংশোধন ও হালনাগাদকরণ, ভূমির সদ্ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ, ভূমির ইজারা প্রদান, নামজারি কার্যক্রম সম্পাদন, খাসজমি ব্যবস্থাপনা, ভূমিহীন বাছাই, রেকর্ড রেজিস্টার সংরক্ষণ, অর্পিত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা, সরকারি জমিসংশ্লিষ্ট দেওয়ানি মামলার দলিলাদি প্রস্তুত, সার্টিফিকেট মামলা পরিচালনা, খাসজমির অবৈধ দখল রোধ, হাটবাজার, জলমহাল ও বালুমহাল ব্যবস্থাপনা, আদর্শ গ্রাম, আবাসন প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন, ভূমি জরিপে সরকারি স্বার্থ রক্ষা, ভূমি অফিসের পুকুর, গাছপালা ও সম্পদ সংরক্ষণ ইত্যাদি।
দেশের ভূমি অফিসগুলো গ্রামীণ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে আছে। জনগণের সুখ, দুঃখ এবং অনুভূতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলো। ভূমি অফিসে কাঙ্ক্ষিত সেবা পেলে মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আর না পেলে অভিশাপ দিয়ে যায়। দেশের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে অবস্থিত ভূমি অফিসগুলো কোনোটি মাটির ঘর, কোনোটি টিনের ঘর কিংবা সেমি পাকা ঘর। এসব অফিসে নেই কোনো জৌলুশ। কিন্তু অফিসগুলো শ্যামল ছায়ায় ঘেরা। ভূমি প্রশাসনে রয়েছে সুশাসনের সংকট। নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বলয় ঘিরে আছে ভূমি অফিসে। ভূমি নিয়ে মানুষের ভোগান্তির ক্ষেত্রগুলো হলো: রেকর্ডিং-ব্যবস্থায় জটিলতা, নামজারিতে দীর্ঘসূত্রতা, খাসজমি বন্দোবস্তে অস্বচ্ছতা, অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় অবহেলা, ভূমি রাজস্ব আদায়ে হয়রানি, জাল দলিল সৃষ্টি করে নামজারি, খতিয়ানে বেআইনি সংশোধনী ইত্যাদি। এ ছাড়া খতিয়ান ও ভলিউমের পাতা বিনষ্টকরণ, আদালতে সরকার পক্ষে দুর্বল তথ্য উপস্থাপন, বেআইনিভাবে জমির শ্রেণী পরিবর্তন, অকৃষি জমিকে কৃষিজমি দেখিয়ে কর প্রদান, ত্রুটিপূর্ণ রেজিস্ট্রেশন, সরেজমিনে তদন্ত ছাড়াই প্রতিবেদন, নামজারির পর রেকর্ড সংশোধন না করা এবং জনবল ও লজিস্টিকসের অভাব ভূমি প্রশাসনের নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা। এসব সমস্যা ও সংকটের খবর মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রকাশ ও প্রচার হয়।
ভূমি প্রশাসনসংক্রান্ত সরকারি নীতি ও নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদের কর্মকর্তারা। তাঁদের চেতনায় সততা না থাকলে দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্ত ভূমি প্রশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ভূমির মালিকদের দুঃখ, কষ্ট ও চাহিদা কর্মকর্তাদের উপলব্ধি করার মানসিকতা থাকতে হবে এবং ভূমির মালিকদের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। ভূমি প্রশাসনে দুর্নীতি নির্মূলে যে দুর্লঙ্ঘ্য বাধা, তা ভেঙে দিতে হবে। জনগণের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে উদাসীন থাকা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার মতো অপরাধ। ভূমি অফিস নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার জমাট অন্ধকারে ঢাকা। ভূমি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দৃঢ় পায়ে এগিয়ে এসে এ অন্ধকারেই জ্বালাতে হবে সেবার প্রদীপ শিখা। সেবার স্পর্শে মুছে দিতে হবে ভোগান্তির যন্ত্রণা।
জনগণের প্রতি বৈরী মনোভাব সুশাসনের অন্তরায়। অনেক সংকট ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ভূমি অফিসে আসতে হয় জনগণকে আস্থা ও আশা নিয়ে। ভূমি অফিসে আসা সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করলেই ভূমি নিয়ে মানুষের কান্না ও দুঃখ বোঝা সহজ হবে। অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বৃত্তে বন্দী ভূমি মালিকদের উদ্ধার করে মানুষের সেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ধৈর্য ও পরিচর্যায় গড়ে তুলতে হবে সেবামুখী ভূমি প্রশাসন। জনগণের সঙ্গে দেয়াল রাখা যাবে না। মানুষের প্রবেশ অবাধ ও অবারিত করে দিতে হবে। এখন উপনিবেশ নেই। জমিদারি নেই। দুর্নীতি ও হয়রানির ঘটনা সরাসরি শ্রবণ করতে হবে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে।
ভূমি প্রশাসনকে দুর্নীতির জাল থেকে বের করে আনতে হবে। কর্মকর্তা হিসেবে সবার আগে নিজের চেতনা ও কাজকে শুদ্ধ করতে হবে। ভূমি অফিস হোক ভূমি মালিকানা রক্ষার নিরাপদ আশ্রয়। একবার দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হলে তার সঙ্গে সবার অভিযোজন হয়ে যাবে। ন্যায়ের দণ্ড হাতে নিয়ে ভূমি প্রশাসনের ওপর থেকে চিরদিনের জন্য মুছে ফেলতে হবে দুর্নীতির চিহ্ন। ভূমি নিয়ে যারা দুঃখ ও দুর্ভোগে পড়েছে, তাদের দিকে সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মানুষের মনে এই প্রেরণা ও প্রত্যাশা জন্মাতে হবে যে দেশের ভূমি প্রশাসনে ফিরে আসবে সুশাসন, পূরণ হবে জনগণের প্রত্যাশা এবং নিশ্চিত হবে সেবামুখী পরিবেশ। ভূমি প্রশাসনে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের লক্ষ্য হোক জনসেবা। রূপকল্প হোক ভূমি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন।
মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী: এডিসি (রাজস্ব), বগুড়া।
No comments