লস্করগাহের শরণার্থীদের দুর্দশা
লস্করগাহের নতুন অস্থায়ী বিমানবন্দরের পেছনে কাদামাটির তৈরি একটি দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোহাম্মদ খান। তাঁর কালো ময়লাযুক্ত হাত দেখেই বোঝা যায়, তিনি একজন মোটর মেকানিক। প্রায় এক মাস আগে আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের হেলমান্দ প্রদেশের কৃষিসমৃদ্ধ মারজাহ এলাকার বাড়ি ছেড়েছেন তিনি। কারণ, সেখানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনীর সঙ্গে তালেবান জঙ্গিদের যুদ্ধ চলছে। জীবন বাঁচাতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পালিয়ে হেলমান্দ প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী লস্করগাহে এসেছেন। হয়েছেন শরণার্থী।
মোহাম্মদ খানের মতো একই অবস্থা লস্করগাহে থাকা মারজাহ এলাকার অন্য বাসিন্দাদের। লস্করগাহে তাদের জন্য কোনো পানি ও বিদ্যুত্ নেই, নেই কোনো খাবার ও গোসলের ব্যবস্থা। তাদের অবস্থা খুবই করুণ, বঞ্চিত সবকিছু থেকে। ময়লা আবর্জনাযুক্ত নোংরা পরিবেশে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে তারা।
মোহাম্মদ খান জানান, স্থানীয় সরকার বা আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার কেউই কোনো ধরনের সাহায্য নিয়ে আসেননি। খান বলেন, ‘আমি একজন খুব ভালো কারিগর। আমার পরিবারের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। শিগগিরই আমার একটি কাজ প্রয়োজন।’
তবে লস্করগাহের প্রাদেশিক পুনর্গঠন দলের (পিআরটি) ব্রিটিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, মারজাহ থেকে আসা শরণার্থীরা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ছিল এবং তাদের বেশির ভাগই চলে গেছে।
কিন্তু এই সপ্তাহে লস্করগাহে গিয়ে মারজাহ থেকে আসা লোকজনকে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়নি। শরণার্থীরা জানায়, শরণার্থী হিসেবে তাদের নিবন্ধন করা হয়নি। তারা কোনো সাহায্য পায়নি। স্বজনেরাও তাদের সঙ্গে নেই। গ্রামের বাড়িতে ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো পরিকল্পনা করেনি তারা।
মোহাম্মদ খান জানান, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মার্কিন নৌবাহিনীর নেতৃত্বাধীন প্রায় ১৫ হাজার আন্তর্জাতিক ও ব্রিটিশ সেনা তালেবান নির্মূলে কৃষিসমৃদ্ধ মারজাহসহ আশপাশের ২০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় অভিযান চালায়। তখন তিনিও অন্যান্য পরিবারের মতো মারজাহ থেকে পালিয়ে আসেন।
খান বলেন, ‘তালেবান জঙ্গিরা আমাদের গ্রাম থেকে চলে যেতে মানা করেছিল। কারণ, আমরা নাকি তাদের উপকারে আসব। বোমাবর্ষণের সময় একবার তারা (তালেবান) আমাদের বাড়িতে লুকিয়ে ছিল। আমাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আমাদের বাড়ি থেকে তারা মার্কিন সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে।’ মোহাম্মদ খান জানান, হামলার সময় প্রচুর মানুষ মারজাহ থেকে পালিয়ে এখানে (লস্করগাহ) আসে। অনেকে নিমরোজ (প্রদেশ) ও অন্য জেলায় চলে গেছে।
মোহাম্মদ খান বলেন, ‘সন্তানদের খাবার দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই। আমরা এখানে থাকব, নাকি মারজাহে ফিরে যাব, বুঝতে পারছি না। আমরা এখানে থাকি বা চলে যাই না কেন, কারও কিছু আসে-যায় না।’
মারজাহ এলাকায় চলা যুদ্ধের নাম ‘অপারেশন মুশতারাক’। আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন নয় বছরের অভিযানের মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল অভিযান এটি। এ অভিযানের মাধ্যমে ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে হেলমান্দ ও প্রতিবেশী কান্দাহার প্রদেশ থেকে তালেবান জঙ্গি ও মাদক ব্যবসায়ীদের নির্মূল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
মূলত আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে চালানো এ অভিযানের জন্য গত আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো দেশটিতে তাদের সেনাসংখ্যা এক লাখ ২১ হাজার থেকে বাড়িয়ে দেড় লাখ করেছে।
প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র দাউদ আহমাদি বলেন, মুশতারাক অভিযানে তিন হাজার ৮৩৫টি পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। তাদের সবাই লস্করগাহ ও এর পাশের এলাকায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। বেশির ভাগ লোক জরুরি ত্রাণ-সহায়তা পেয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এখন প্রায় সব পরিবার নিজেদের উদ্যোগে তাদের বাড়ি ফিরে গেছে। তবে ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিওএস) এ সপ্তাহে জানিয়েছে, মারজাহে সংঘর্ষের কারণে বাড়িছাড়া প্রায় ১০০ পরিবার জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ এখনো শরণার্থী হিসেবে তাদের নিবন্ধন করেনি।
আইসিওএসের প্রেসিডেন্ট নরিন ম্যাকডোনাল্ড বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, সপ্তাহখানেক আগে ন্যাটো সামরিক হামলার কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করলেও তাদের (শরণার্থী) উপস্থিতিই প্রমাণ করে, মারজাহর বাসিন্দাদের প্রস্তুতির অভাব ছিল। ম্যাকডোনাল্ড বলেন, এ অভিযানকে এগিয়ে নিতে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক পরিকল্পনা ও অর্থ খরচ করা হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ অভিযানের ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর যে প্রচুর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে একই ধরনের পরিকল্পনা ও অর্থ খরচের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি।
লস্করগাহের একজন ত্রাণকর্মী বলেন, হামলা চালানোর আগের দিন পর্যন্ত মারজাহর বাসিন্দাদের কল্যাণে আন্তরিকতার সঙ্গে কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিমা একজন ত্রাণকর্মী বলেন, এটা একটি বিশৃঙ্খল অভিযান। তিনি বলেন, খুব উত্তেজনা বিরাজ করছে। দিনে তারা কয়েক দফা বৈঠক করছে এবং একে অপরকে দোষারোপ করছে। জাতিসংঘও সহযোগিতা করছে না। ত্রাণ নিয়ে আসতে অন্য সংস্থাকে চাপ দিচ্ছে তারা।
লস্করগাহের অস্থায়ী বিমানবন্দরের এক প্রান্তে মারজাহর আরেক বাসিন্দা নানজিয়ালাই বলেন, বোমা নিক্ষেপের পর তিনি তাঁর পরিবারকে নিয়ে পালিয়ে আসেন। নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি ফিরবেন না তাঁরা।
নানজিয়ালাই বলেন, মারজাহে মাদক ব্যবসায়ী ও তালেবান জঙ্গিদের থাকাটা দোষের কিছু ছিল না। মানুষ সেখানে সুখে ছিল, নিরাপদে ছিল। তিনি বলেন, আফগান কর্তৃপক্ষ যদি সেখানকার দায়িত্ব নিতে চায়, তবে তাদের অবশ্যই পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে লোকজনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা। যদি তা না করে, তাহলে তালেবান জঙ্গিরা ফেরত আসবে এবং আবার লড়াই শুরু হবে।
মোহাম্মদ খানের মতো একই অবস্থা লস্করগাহে থাকা মারজাহ এলাকার অন্য বাসিন্দাদের। লস্করগাহে তাদের জন্য কোনো পানি ও বিদ্যুত্ নেই, নেই কোনো খাবার ও গোসলের ব্যবস্থা। তাদের অবস্থা খুবই করুণ, বঞ্চিত সবকিছু থেকে। ময়লা আবর্জনাযুক্ত নোংরা পরিবেশে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে তারা।
মোহাম্মদ খান জানান, স্থানীয় সরকার বা আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার কেউই কোনো ধরনের সাহায্য নিয়ে আসেননি। খান বলেন, ‘আমি একজন খুব ভালো কারিগর। আমার পরিবারের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। শিগগিরই আমার একটি কাজ প্রয়োজন।’
তবে লস্করগাহের প্রাদেশিক পুনর্গঠন দলের (পিআরটি) ব্রিটিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, মারজাহ থেকে আসা শরণার্থীরা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ছিল এবং তাদের বেশির ভাগই চলে গেছে।
কিন্তু এই সপ্তাহে লস্করগাহে গিয়ে মারজাহ থেকে আসা লোকজনকে খুঁজে পেতে কষ্ট হয়নি। শরণার্থীরা জানায়, শরণার্থী হিসেবে তাদের নিবন্ধন করা হয়নি। তারা কোনো সাহায্য পায়নি। স্বজনেরাও তাদের সঙ্গে নেই। গ্রামের বাড়িতে ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো পরিকল্পনা করেনি তারা।
মোহাম্মদ খান জানান, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মার্কিন নৌবাহিনীর নেতৃত্বাধীন প্রায় ১৫ হাজার আন্তর্জাতিক ও ব্রিটিশ সেনা তালেবান নির্মূলে কৃষিসমৃদ্ধ মারজাহসহ আশপাশের ২০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় অভিযান চালায়। তখন তিনিও অন্যান্য পরিবারের মতো মারজাহ থেকে পালিয়ে আসেন।
খান বলেন, ‘তালেবান জঙ্গিরা আমাদের গ্রাম থেকে চলে যেতে মানা করেছিল। কারণ, আমরা নাকি তাদের উপকারে আসব। বোমাবর্ষণের সময় একবার তারা (তালেবান) আমাদের বাড়িতে লুকিয়ে ছিল। আমাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আমাদের বাড়ি থেকে তারা মার্কিন সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে।’ মোহাম্মদ খান জানান, হামলার সময় প্রচুর মানুষ মারজাহ থেকে পালিয়ে এখানে (লস্করগাহ) আসে। অনেকে নিমরোজ (প্রদেশ) ও অন্য জেলায় চলে গেছে।
মোহাম্মদ খান বলেন, ‘সন্তানদের খাবার দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই। আমরা এখানে থাকব, নাকি মারজাহে ফিরে যাব, বুঝতে পারছি না। আমরা এখানে থাকি বা চলে যাই না কেন, কারও কিছু আসে-যায় না।’
মারজাহ এলাকায় চলা যুদ্ধের নাম ‘অপারেশন মুশতারাক’। আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন নয় বছরের অভিযানের মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল অভিযান এটি। এ অভিযানের মাধ্যমে ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে হেলমান্দ ও প্রতিবেশী কান্দাহার প্রদেশ থেকে তালেবান জঙ্গি ও মাদক ব্যবসায়ীদের নির্মূল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
মূলত আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে চালানো এ অভিযানের জন্য গত আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো দেশটিতে তাদের সেনাসংখ্যা এক লাখ ২১ হাজার থেকে বাড়িয়ে দেড় লাখ করেছে।
প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র দাউদ আহমাদি বলেন, মুশতারাক অভিযানে তিন হাজার ৮৩৫টি পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। তাদের সবাই লস্করগাহ ও এর পাশের এলাকায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। বেশির ভাগ লোক জরুরি ত্রাণ-সহায়তা পেয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এখন প্রায় সব পরিবার নিজেদের উদ্যোগে তাদের বাড়ি ফিরে গেছে। তবে ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিওএস) এ সপ্তাহে জানিয়েছে, মারজাহে সংঘর্ষের কারণে বাড়িছাড়া প্রায় ১০০ পরিবার জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ এখনো শরণার্থী হিসেবে তাদের নিবন্ধন করেনি।
আইসিওএসের প্রেসিডেন্ট নরিন ম্যাকডোনাল্ড বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, সপ্তাহখানেক আগে ন্যাটো সামরিক হামলার কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করলেও তাদের (শরণার্থী) উপস্থিতিই প্রমাণ করে, মারজাহর বাসিন্দাদের প্রস্তুতির অভাব ছিল। ম্যাকডোনাল্ড বলেন, এ অভিযানকে এগিয়ে নিতে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক পরিকল্পনা ও অর্থ খরচ করা হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এ অভিযানের ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর যে প্রচুর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে একই ধরনের পরিকল্পনা ও অর্থ খরচের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি।
লস্করগাহের একজন ত্রাণকর্মী বলেন, হামলা চালানোর আগের দিন পর্যন্ত মারজাহর বাসিন্দাদের কল্যাণে আন্তরিকতার সঙ্গে কোনো প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিমা একজন ত্রাণকর্মী বলেন, এটা একটি বিশৃঙ্খল অভিযান। তিনি বলেন, খুব উত্তেজনা বিরাজ করছে। দিনে তারা কয়েক দফা বৈঠক করছে এবং একে অপরকে দোষারোপ করছে। জাতিসংঘও সহযোগিতা করছে না। ত্রাণ নিয়ে আসতে অন্য সংস্থাকে চাপ দিচ্ছে তারা।
লস্করগাহের অস্থায়ী বিমানবন্দরের এক প্রান্তে মারজাহর আরেক বাসিন্দা নানজিয়ালাই বলেন, বোমা নিক্ষেপের পর তিনি তাঁর পরিবারকে নিয়ে পালিয়ে আসেন। নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি ফিরবেন না তাঁরা।
নানজিয়ালাই বলেন, মারজাহে মাদক ব্যবসায়ী ও তালেবান জঙ্গিদের থাকাটা দোষের কিছু ছিল না। মানুষ সেখানে সুখে ছিল, নিরাপদে ছিল। তিনি বলেন, আফগান কর্তৃপক্ষ যদি সেখানকার দায়িত্ব নিতে চায়, তবে তাদের অবশ্যই পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে লোকজনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা। যদি তা না করে, তাহলে তালেবান জঙ্গিরা ফেরত আসবে এবং আবার লড়াই শুরু হবে।
No comments