কত মায়ের কোল খালি হলে আমরা চেতন হব -ছাত্রের মৃত্যু by মেহতাব খানম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী পরিশ্রমী ছাত্র আবু বকর আর মায়ের কোলে ফিরে আসবে না কখনো। নিজে না খেয়ে, মাথায় তেল না দিয়ে যে সন্তানটিকে তিলে তিলে বড় করেছিলেন স্নেহময়ী মা, তাঁর বুকের ব্যথার তীব্রতা এতটুকুও কমবে না এই জীবনে। অন্য সবাই ভুলতে শুরু করবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু বকর নামে একজন শিক্ষার্থী ছিল, যাকে মূল্যবান জীবনটি দিতে হয়েছিল লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির কোন্দলের কারণে। কিন্তু মায়ের কাছে এই লক্ষ্মী আর কর্তব্যপরায়ণ ছেলেটির স্মৃতি সব সময় অমলিন থাকবে। যারা শিক্ষাঙ্গনগুলোতে অসুস্থ রাজনীতিচর্চার কারণে মারা গেছে, তাদের মায়েদের দীর্ঘশ্বাস ও আর্তচিত্কার আমাদের বিবেককে কি একটু নাড়া দিচ্ছে? এ প্রশ্ন আমাদের নিজেদের করা উচিত। লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি আর শিক্ষকরাজনীতি আমাদের শিক্ষাঙ্গনগুলোকে কলঙ্কিত আর ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে বহুদিন ধরে। বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে এর বিস্তার ঘটেছে মাহামারির মতো। বিভন্ন সময় শাসক বদলেছে। কখনো গণতন্ত্র, কখনো স্বৈরশাসন দেখেছি আমরা। কিন্তু কখনো কি মনে হয়েছে, আমরা সাধারণ নাগরিক সব দিক থেকে শান্তিতে আছি? অনেক বিষয় আমাদের পীড়া দিয়েছে অহরহ। এর মধ্যে একটি বড় ধরনের পীড়াদায়ক বিষয় হচ্ছে শিক্ষাঙ্গনে প্রতিনিয়ত মারামারি আর সহিংসতা। দিনের পর দিন ছাত্রদের নিহত বা আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে আমাদের চোখের সামনে। সেগুলো দেখার পর আমরা কিছুদিন ‘আহা’, ‘উহু’ করেছি, দুফোঁটা চোখের জলও হয়তো ফেলেছি এবং তারপর সেটা ভুলে গিয়ে নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। আমরা এখন অনেক নির্বিকার হয়ে গেছি এবং এ ধরনের মৃত্যু আমাদের আর স্পর্শ করে না। হয়তো বা এসব ঘটনা এত বেশি ঘটে যে আমরা সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন, ‘এটা কোনো ব্যাপার না, কেবল বিচ্ছিন্ন ঘটনা।’ কথাটি মনে হয়েছে আমারও, কিন্তু মুখে না বললেও অনেকটা এ ধরনের মনোভাব নিয়েই চলছি। কারণ আমরা কেউ তো রাস্তায় নেমে এসব মৃত্যুর নিন্দা বা প্রতিবাদ করছি না। আমাদের স্কুলপড়ুয়া সন্তানেরা ভবিষ্যতে কোথায় শিক্ষা নেবে, কোন ধরনের মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষকের কাছে পড়বে তা নিয়ে ভাববার অবসর আমাদের কারোরই নেই।
রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা ছাত্রদের শিক্ষা গ্রহণের ওপর কতটা গুরুত্ব আরোপ করেন, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। যদি তাঁরা এ ব্যাপারে আন্তরিক হতেন, তাহলে এত দিন ধরে অস্ত্রবাজি বা দলবাজির সংস্কৃতি রাজনীতির অস্থিমজ্জার এত গভীরে প্রবেশ করত না। শুধু রাজনৈতিক দলগুলোই নয়, যাঁরা উচ্চপদে আসীন থেকে দলগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করেন এবং সেই সঙ্গে কিছু স্বার্থান্বেষী শিক্ষক রয়েছেন, তাঁরাও এই সংস্কৃতি তৈরি হওয়ার জন্য অনেকাংশে দায়ী। এ সমস্ত বুদ্ধিজীবী বিভিন্ন সভায়, সেমিনারে, মিডিয়ায় তাঁরা যে দল সমর্থন করেন, সেই দলের নেতাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং ছাত্ররাজনীতির গৌরবময় ইতিহাসের কথা জাতির সামনে তুলে ধরেন। তাঁরা স্বীকার করেন না যে ছাত্রদের সেই সময়কার ভূমিকার সঙ্গে এখনকার ভূমিকার বিন্দুমাত্র সাদৃশ্য নেই। পুরোনো রেকর্ড বারবার শোনানোর মতো করে তাঁরা বলতে থাকেন, ছাত্রদের জন্যই ভাষা আন্দোলন হয়েছে, গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে, স্বৈরশাসন উত্খাত হয়েছে; অতএব, ছাত্ররাজনীতি অব্যাহত থাকবে। এর অর্থ কি এই দাঁড়ায় না যে আমরা এই অহেতুক মৃত্যুকে আর শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্যকে প্রশ্রয় দিচ্ছি?
কতিপয় শিক্ষক প্রত্যক্ষভাবে কেউ বিরোধী দলের এবং কেউ সরকারি দলের রাজনীতিতে যেভাবে সমর্থন দান করছেন, তার মধ্যে তো লেজুড়বৃত্তি ও তাঁবেদারি ছাড়া এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। একটি রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনে জিতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনে রাতারাতি দলীয়করণের যে প্রক্রিয়া চলতে থাকে, তা সমস্ত জাতির জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর। সাধারণ ছাত্ররা কিন্তু ভালো করেই জানে যে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ, যাঁদের মধ্যে শিক্ষকেরাও রয়েছেন, তাঁরা যদি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে সরকার ও বিরোধী দলের লোকজনের অপকীর্তির নিন্দা করে তাদের সর্বদা সঠিক পথের নির্দেশনা দিয়ে আসতেন, তাহলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে অন্য সব জায়গায় এত বড় ধস নামত না। ছাত্ররাজনীতির নামে যেভাবে সব জায়গায় ক্ষমতার প্রভাব খাটানো হয়, সেসব ঘটনা সমাজের সব সচেতন মানুষই জানে, নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সত্যিই দেশের মানুষের শান্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনীতির চর্চা হলে সাধারণ মানুষের কাছে তা অনেক গ্রহণযোগ্য হতো। কিন্তু বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আর তেমন স্বপ্ন দেখি না।
এখন একমাত্র উপায় হচ্ছে, যারা এই দেশটির সচেতন ও সাধারণ মানুষ, যারা কখনো অন্ধভাবে কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন জানায়নি কিন্তু দেশটিকে এবং মানুষকে ভালোবাসে, তারা যদি সন্তানহারা বাবা-মায়ের সঙ্গে দুঃখ ভাগ করে নিতে চায়, তাহলে চলুন সবাই মিলে শপথ করি—যেভাবেই হোক, অন্তত আগামী ১০ বছর এই লেজুড়বৃত্তির তথাকথিত রাজনীতি যাতে বন্ধ থাকে, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করব। অনেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্রদের গৌরবময় অবদানের কথা স্মরণ করে এটি অব্যাহত রাখার কথা বলছেন, কিন্তু লেজুড়বৃত্তি চাইছেন না। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, বিষয়টিকে এখন শুধু সাদা-কালোতেই দেখতে হবে। ধূসর এলাকায় এটিকে টিকিয়ে রাখতে চাইলে এর পরিণতি আরও ভয়াবহ হওয়ারই সম্ভাবনা রয়েছে। ছাত্ররাজনীতির নামে টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, অস্ত্রবাজি, অর্থের ছড়াছড়ি—এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে কীভাবে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়, সেই লক্ষ্যে আমরা সমমনা কিছু মানুষ একটি ফোরাম তৈরি করে সুপারিশমালা দিতে পারি।
প্রাথমিকভাবে যা করা যেতে পারে তা হচ্ছে, অবিলম্বে আগামী ১০ বছর সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলবাজি বন্ধ করা। শুধু প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের লক্ষ্যে যার যার প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম বন্ধ করার জন্য, প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ রক্ষার জন্য দুর্নীতি রোধ, অপসংস্কৃতি রোধ, শিশু অধিকার রক্ষা—এ ধরনের কিছু বিষয়ের ওপরই শুধু দলবদ্ধ হয়ে শান্তি বজায় রেখে কাজ করা যাবে এমন নির্দেশ উচ্চ আদালত থেকে আসতে পারে।
সমমনা নাগরিকদের পক্ষ থেকে চলুন আমরা হাত জোড় করে রাজনৈতিক নেতাদের বলি, ‘তোমাদের আর কত রক্ত দরকার? এবার নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই গড়ে নাও। ছাত্রদের ওপর ভর করে গোটা জাতিকে এভাবে ধ্বংস করে দিও না। তোমরা কি সন্তানহারা মায়েদের কান্না একেবারেই শুনতে পাও না? যে ছেলেগুলোকে ঘর থেকে বের করে অর্থ, ক্ষমতা আর অস্ত্রের লোভ দেখিয়েছো; আগামী ১০ বছরের মধ্যে তোমরা আবার তাদের ঘরে পৌঁছে দাও। তোমাদের বুঝতে হবে, শিক্ষা গ্রহণ আর দেশোদ্ধার একই সঙ্গে করা সম্ভব নয়। ছাত্রদের যদি সত্যি আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাও, তাহলে ওদের মধ্যে অর্থ আর ক্ষমতা নয়, জ্ঞানের পিপাসা তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করো। আর সেটাই হবে তোমাদের প্রকৃত দেশসেবা। যেন ভবিষ্যতে কোনো মায়ের সন্তান অস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাস না করে, টেন্ডারের অর্থ নিয়ে মাতাল না হয়, অস্ত্রবাজি আর সন্ত্রাসের কারণে নিরীহ ছাত্রের মায়ের কান্না আর দীর্ঘশ্বাস বাতাসে ভেসে না বেড়ায়, তেমন একটি সমাজ তোমরা নিশ্চিত করো। দুহাত জোড় করে সেই অঙ্গীকারটুকু চাইছি তোমাদের কাছে।’
মেহতাব খানম: অধ্যাপক, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা ছাত্রদের শিক্ষা গ্রহণের ওপর কতটা গুরুত্ব আরোপ করেন, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। যদি তাঁরা এ ব্যাপারে আন্তরিক হতেন, তাহলে এত দিন ধরে অস্ত্রবাজি বা দলবাজির সংস্কৃতি রাজনীতির অস্থিমজ্জার এত গভীরে প্রবেশ করত না। শুধু রাজনৈতিক দলগুলোই নয়, যাঁরা উচ্চপদে আসীন থেকে দলগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করেন এবং সেই সঙ্গে কিছু স্বার্থান্বেষী শিক্ষক রয়েছেন, তাঁরাও এই সংস্কৃতি তৈরি হওয়ার জন্য অনেকাংশে দায়ী। এ সমস্ত বুদ্ধিজীবী বিভিন্ন সভায়, সেমিনারে, মিডিয়ায় তাঁরা যে দল সমর্থন করেন, সেই দলের নেতাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং ছাত্ররাজনীতির গৌরবময় ইতিহাসের কথা জাতির সামনে তুলে ধরেন। তাঁরা স্বীকার করেন না যে ছাত্রদের সেই সময়কার ভূমিকার সঙ্গে এখনকার ভূমিকার বিন্দুমাত্র সাদৃশ্য নেই। পুরোনো রেকর্ড বারবার শোনানোর মতো করে তাঁরা বলতে থাকেন, ছাত্রদের জন্যই ভাষা আন্দোলন হয়েছে, গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে, স্বৈরশাসন উত্খাত হয়েছে; অতএব, ছাত্ররাজনীতি অব্যাহত থাকবে। এর অর্থ কি এই দাঁড়ায় না যে আমরা এই অহেতুক মৃত্যুকে আর শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্যকে প্রশ্রয় দিচ্ছি?
কতিপয় শিক্ষক প্রত্যক্ষভাবে কেউ বিরোধী দলের এবং কেউ সরকারি দলের রাজনীতিতে যেভাবে সমর্থন দান করছেন, তার মধ্যে তো লেজুড়বৃত্তি ও তাঁবেদারি ছাড়া এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। একটি রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনে জিতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনে রাতারাতি দলীয়করণের যে প্রক্রিয়া চলতে থাকে, তা সমস্ত জাতির জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর। সাধারণ ছাত্ররা কিন্তু ভালো করেই জানে যে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ, যাঁদের মধ্যে শিক্ষকেরাও রয়েছেন, তাঁরা যদি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে সরকার ও বিরোধী দলের লোকজনের অপকীর্তির নিন্দা করে তাদের সর্বদা সঠিক পথের নির্দেশনা দিয়ে আসতেন, তাহলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে অন্য সব জায়গায় এত বড় ধস নামত না। ছাত্ররাজনীতির নামে যেভাবে সব জায়গায় ক্ষমতার প্রভাব খাটানো হয়, সেসব ঘটনা সমাজের সব সচেতন মানুষই জানে, নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সত্যিই দেশের মানুষের শান্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনীতির চর্চা হলে সাধারণ মানুষের কাছে তা অনেক গ্রহণযোগ্য হতো। কিন্তু বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আর তেমন স্বপ্ন দেখি না।
এখন একমাত্র উপায় হচ্ছে, যারা এই দেশটির সচেতন ও সাধারণ মানুষ, যারা কখনো অন্ধভাবে কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন জানায়নি কিন্তু দেশটিকে এবং মানুষকে ভালোবাসে, তারা যদি সন্তানহারা বাবা-মায়ের সঙ্গে দুঃখ ভাগ করে নিতে চায়, তাহলে চলুন সবাই মিলে শপথ করি—যেভাবেই হোক, অন্তত আগামী ১০ বছর এই লেজুড়বৃত্তির তথাকথিত রাজনীতি যাতে বন্ধ থাকে, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করব। অনেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছাত্রদের গৌরবময় অবদানের কথা স্মরণ করে এটি অব্যাহত রাখার কথা বলছেন, কিন্তু লেজুড়বৃত্তি চাইছেন না। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, বিষয়টিকে এখন শুধু সাদা-কালোতেই দেখতে হবে। ধূসর এলাকায় এটিকে টিকিয়ে রাখতে চাইলে এর পরিণতি আরও ভয়াবহ হওয়ারই সম্ভাবনা রয়েছে। ছাত্ররাজনীতির নামে টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, অস্ত্রবাজি, অর্থের ছড়াছড়ি—এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে কীভাবে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়, সেই লক্ষ্যে আমরা সমমনা কিছু মানুষ একটি ফোরাম তৈরি করে সুপারিশমালা দিতে পারি।
প্রাথমিকভাবে যা করা যেতে পারে তা হচ্ছে, অবিলম্বে আগামী ১০ বছর সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলবাজি বন্ধ করা। শুধু প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের লক্ষ্যে যার যার প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম বন্ধ করার জন্য, প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ রক্ষার জন্য দুর্নীতি রোধ, অপসংস্কৃতি রোধ, শিশু অধিকার রক্ষা—এ ধরনের কিছু বিষয়ের ওপরই শুধু দলবদ্ধ হয়ে শান্তি বজায় রেখে কাজ করা যাবে এমন নির্দেশ উচ্চ আদালত থেকে আসতে পারে।
সমমনা নাগরিকদের পক্ষ থেকে চলুন আমরা হাত জোড় করে রাজনৈতিক নেতাদের বলি, ‘তোমাদের আর কত রক্ত দরকার? এবার নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই গড়ে নাও। ছাত্রদের ওপর ভর করে গোটা জাতিকে এভাবে ধ্বংস করে দিও না। তোমরা কি সন্তানহারা মায়েদের কান্না একেবারেই শুনতে পাও না? যে ছেলেগুলোকে ঘর থেকে বের করে অর্থ, ক্ষমতা আর অস্ত্রের লোভ দেখিয়েছো; আগামী ১০ বছরের মধ্যে তোমরা আবার তাদের ঘরে পৌঁছে দাও। তোমাদের বুঝতে হবে, শিক্ষা গ্রহণ আর দেশোদ্ধার একই সঙ্গে করা সম্ভব নয়। ছাত্রদের যদি সত্যি আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাও, তাহলে ওদের মধ্যে অর্থ আর ক্ষমতা নয়, জ্ঞানের পিপাসা তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করো। আর সেটাই হবে তোমাদের প্রকৃত দেশসেবা। যেন ভবিষ্যতে কোনো মায়ের সন্তান অস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাস না করে, টেন্ডারের অর্থ নিয়ে মাতাল না হয়, অস্ত্রবাজি আর সন্ত্রাসের কারণে নিরীহ ছাত্রের মায়ের কান্না আর দীর্ঘশ্বাস বাতাসে ভেসে না বেড়ায়, তেমন একটি সমাজ তোমরা নিশ্চিত করো। দুহাত জোড় করে সেই অঙ্গীকারটুকু চাইছি তোমাদের কাছে।’
মেহতাব খানম: অধ্যাপক, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments