বার একাত্তরের চেয়ে আমার আশঙ্কা বেশি -ধর্মভিত্তিক রাজনীতি by শাহদীন মালিক

গত সপ্তাহে এক ভাগ্নির বিয়েতে গিয়েছিলাম। সময় কীভাবে চলে যায় তা আমরা প্রায় সবাই সম্ভবত খেয়াল করি না। মনে হয় ওই তো সেদিনের কথা। মামাতো বোনটা ফ্রক পরত, বয়স তখন দশ বছরও হয়নি। আর গত সপ্তাহে গেলাম তার মেয়ের বিয়েতে। ভাগ্নিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার পাঠ চুকিয়ে চাকরিও শুরু করে দিয়েছে। আর সেদিনের ফ্রক পরা মামাতো বোনটি সরকারের যুগ্ম সচিব।
একাত্তরের এপ্রিল। বাবা চট্টগ্রামে থাকতেন বেশ কিছু বছর ধরে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে মামা-মামি আর তাদের চার ছেলেমেয়ে নিয়ে আমাদের বাসায়। নিজের বাসায় তার নিরাপদ বোধ হচ্ছিল না। সবচেয়ে ছোট মেয়েটির বয়স এক বছরও হয়নি, বড়জন, আগেই বললাম, দশও হয়নি। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহেই পাকিস্তান আর্মি চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। পাকিস্তান আর্মির ট্যাংক, বড় কামান ইত্যাদির তোপে বাঙালি সেনা ইপিআর আস্তে আস্তে পিছু হটে কালুরঘাট ব্রিজ পেরিয়ে কোন দিকে দিয়ে যেন গ্রাম-গঞ্জে চলে গেছে। সে সময়ের আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেনা- কর্মকর্তাদের লেখা বইগুলোতে বিশদ বিবরণ আছে। পাঁচলাইশে যে বাড়িতে থাকতাম তার আশপাশে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়েছিল। ঠিক পাশের তিনতলা বাড়ির তৃতীয় তলা ট্যাংকের গোলার আঘাতে বিধ্বস্ত। আমাদের বাড়িটাও কেঁপে উঠেছিল। ডাইনিং টেবিলের নিচে জড়োসড়ো হয়ে সবাই বসে থাকার সময় মনে হয়েছিল আমাদের দোতলা বাড়িটির উপরের তলায়ই বোধ হয় কামানের গোলা পড়েছে।
মধ্য এপ্রিলে চট্টগ্রাম পাকিস্তানি আর্মির নিয়ন্ত্রণে। তখন পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় থাকত প্রধানত চট্টগ্রামের স্থানীয় আর বিহারি বা উর্দুভাষী ব্যবসায়ীরা। যে বাসায় থাকতাম তার মালিক ছিলেন তখনকার বড় বিহারি ব্যবসায়ী। তিনি থাকতেন দোতলায়, আমরা নিচের তলায়। মধ্য এপ্রিল নাগাদ পাঁচলাইশ এলাকা সুনসান, জনমানবশূন্য। মামার কথা—মধ্য এপ্রিলের দুপুর। সাঁজোয়া গাড়ি আর বিভিন্ন ধরনের বীভত্স সব বন্দুকধারী জনা পঞ্চাশেক পাকিস্তানি সেনা বাড়ি ঘিরে ফেলল কিছু বোঝার আগেই। আর্মির জিপ থেকে অফিসার গোছের একজন নামলেন। মামার নাম বলে জিজ্ঞাসা করলেন, ওই ব্যক্তি কি এ বাসায় আছেন।
মনে পড়ে মামা গোসল সেরে বেরিয়েছেন। পরনে লুঙ্গি গেঞ্জি শার্ট না পাঞ্জাবি তা মনে পড়ে না। তাকে ধরে জিপে উঠানো হলো। জিপ আর আমাদের দিকে বন্দুক তাক করা সব সেনারও চলে গেল। তারপর অনেক দিন বাসায় মিলাদ মাহফিল, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া, দরুদ—মামা যাতে সুস্থ শরীরে ফিরে আসেন। মামা আর আসেননি। পরে বুঝেছি, মামার একটু ‘আওয়ামী দোষ’ ছিল। কিছু টাকা-পয়সা দিতেন। আঁচ করেছিলেন ধর্মরক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ কিছু পাড়া-প্রতিবেশী হয়তো তার দোষটা ‘জায়গামতো’ জানিয়ে দিতে পারে। তাই চলে এসেছিলেন আমাদের বাসায়।
বিজয়ের পর পরই সম্ভবত ২০ কি ২১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম থেকে সিলেট গিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের মাসগুলোতে সিলেটের গ্রামে থাকা দাদা-দাদির খোঁজ পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যেতে দুই দিনের বেশি লেগেছিল। রাস্তাঘাট ভাঙা, সেতু-ব্রিজ-কালভার্ট কিছুই অক্ষত ছিল না। কিছু কিছু জায়গায় মিত্রবাহিনী পন্টুন না অন্য কী যেন নাম অর্থাত্ অস্থায়ী আপাতত কাজ চালানোর জন্য ব্রিজ বানিয়েছিল। অনেক জায়গায় রাস্তা ছেড়ে ধানখেত দিয়ে ঘুরে রাস্তায় ফিরে আসা। ডিসেম্বর মাস, তাই খাল-বিল-মাঠে পানি ছিল না। তাই গাড়ি চলেছিল। ফেনী থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে রাস্তা থেকে যতদূর চোখ গেছে কোথাও ঘর-বাড়ি অক্ষত ছিল না। হয় আগুন দিয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে অথবা গোলাগুলিতে বিধ্বস্ত অথবা লুটপাট হয়ে গেছে।
সবই ধর্ম রক্ষা করার জন্য। ধর্ম রক্ষার জন্য খুন, ধর্ম রক্ষার জন্য ধর্ষণ, ধর্ম রক্ষার জন্য গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নিরীহ মানুষ মারা। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ইসলাম ধংস হয়ে যাবে, আমরা সবাই অমুসলিম-হিন্দু হয়ে যাব।

২.
প্রায় চল্লিশ বছর পর আজও সেই একই কথা বলা হচ্ছে। ১৯৭১-এ বলা হতো যে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে, পাকিস্তান ভেঙে গেলে ইসলাম বিপন্ন হবে। আমরা সবাই অমুসলিম হয়ে যাব। যখন বলা হচ্ছে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ না থাকলে ইসলাম বিপন্ন হবে, আমি-আপনি বিধর্মী হয়ে যাব। আমি-আপনি যাতে মুসলমান থাকি তা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম গ্যারান্টি বা রক্ষাকবচ নাকি সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ থাকা এবং রাষ্ট্রের ধর্ম ইসলাম রাখা। আমরা নাকি ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি।
মামার মতো যে ৩০ লাখ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা-খুন করা হয়েছিল, তাঁরা কি আমাদের এই বাংলাদেশকে ধর্মীয় রাষ্ট্র করার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন। আমাদের বীরশ্রেষ্ঠ সাতজনের খেতাব মরণোত্তর। তাদের তো আর জিজ্ঞাসা করা যাবে না। বীর বিক্রম, বীর উত্তম আর বীর প্রতীকদের অনেকেই এখনো বেঁচে আছেন। তাঁরা কি সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ আর রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের জন্য জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। তাঁদের সংখ্যা কমে আসছে। তাঁদের সবাইকে এখনো জিজ্ঞাসা করা যাবে। জেনে নিন।
এক কোটি লোক ভারতে পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিল। তারা কি ‘ধর্মের জন্য হিজরত’ করেছিল।

৩.
একই বিশ্ববেহায়া, চরম দুর্নীতিবাজ যে ১৯৭২ সালে পাকিস্তানে বসে পাকিস্তানে আটকেপড়া বাঙালি সেনা কর্মকর্তা-সৈনিকদের বিরুদ্ধে আনীত দেশদ্রোহিতাসহ অন্যান্য অপরাধের বিচারক ছিল, বন্দুক উঁচিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল, যে ফরমান জারি করেছিল যে ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’; এখন সে লোকের ফরমানটা শিরোধার্য করে পঁচাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সব চেতনা, মূল্যবোধ, আশা-আকাঙ্ক্ষা জলাঞ্জলি দেওয়ার অকাট্য যুক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।
চেম্বারে বসে লিখছি। টেবিলের উল্টো দিকের সেলফে বেশ কিছু আইনি বই আছে। মুসলিম আইন, ইসলামিক আইন, ইসলামিক আইনের ইতিহাস এবং আনুষঙ্গিক নামের গোটা ত্রিশেক বই আছে। অনেকগুলোর প্রথম দুই-চার পৃষ্ঠা উল্টালাম। অন্যান্য আইনের বইও আছে। ইসলামি আইন বা অন্য আইনের কোনো বইয়ের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ শব্দগুলো নেই। বুঝতে পারছি না এ মুহূর্তে করণীয় কী। ‘বিসমিল্লাহ’ নেই বলে ওই বইগুলো পড়তে গেলে কি আমি বিধর্মী হয়ে যাব?
যাদের জন্য ইসলাম বা ধর্ম ব্যক্তি স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার মাত্র, তারাই ‘বিসমিল্লাহ’ নিয়ে মাতম করে। একাত্তরের মতো এখনো বলব—সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ না থাকলে আমরা বিধর্মী হয়ে যাব, একাত্তরে যেভাবে বলা হয়েছিল যারা বাংলাদেশ চায় তারা বিধর্মী—তাদের কতল করো, তাদের সহায়-সম্পত্তি লুটপাট করো।
ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করার চেয়ে অযৌক্তিক ধ্বংসযজ্ঞে লেলিয়ে দেওয়া অনেক সহজ কাজ। হিংস্র অমানুষ মানুষ ধ্বংসযজ্ঞে পারদর্শিতা সব সময় বেশি দেখাতে ও করতে পেরেছে।
একাত্তরের যারা ঘাতক, এখন মনে হচ্ছে জামায়াত-শিবির না করেও অনেকেই সে দলের কথা বলছেন—পত্রিকায়, কলমে আর টক শোতে।

৪.
মনে মনে অনেক দিন ধরেই একটা প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি মারছিল। ধর্ম বা বিশ্বাস ব্যক্তির, প্রতিষ্ঠান কীভাবে একটা ধর্মে বিশ্বাসী হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম কী? অথবা মোহামেডান বা আবাহনী ক্লাব? জনতা বা অগ্রণী ব্যাংকের ধর্ম কী? ওই সব বা অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানের যদি ধর্ম না থাকে, তবে রাষ্ট্রের ধর্ম কীভাবে হবে। রাষ্ট্র তো ব্যক্তি না। রাষ্ট্র একটা প্রতিষ্ঠান।
প্রশ্নের উত্তরটা পেলাম আপিল বিভাগের সাম্প্রতিক একটা রায়ে। [ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড বনাম দি কমিশনার অফ ট্যাক্সেস, ১৪ এমএলআর, আপিল বিভাগ পৃষ্ঠা ৩৩৭-৩৫৪]। ইসলামী ব্যাংক তার আমানতকারী বা অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের জমাকৃত অর্থ থেকে নির্ধারিত হারে টাকা কেটে নিয়ে জাকাত দিয়েছে। জাকাত হিসেবে দেওয়া এই অর্থ ব্যাংক বলছে তাদের ‘ব্যবসায়িক খরচ’। ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক খরচ হিসেবে যে টাকা ব্যয় হয় সেটা প্রতিষ্ঠানের আয় হিসাবে গণ্য হয় না এবং ওই পরিমাণ অর্থের ওপর আয়কর দিতে হয় না। ইসলামী ব্যাংক বলছে, তাদের আমানতকারীর যে পরিমাণ অর্থ তারা ‘জাকাত’ দিয়েছে, সেটা তাদের ব্যবসায়িক খরচ হিসেবে বাদ দিতে হবে অর্থাত্ জাকাত হিসেবে প্রদত্ত অর্থ তাদের ‘আয়ের হিসাবের’ বাইরে থাকবে এবং ওই পরিমাণ অর্থের ওপর আয়কর দিতে হবে।
আপিল বিভাগ এই যুক্তি অগ্রাহ্য করলেন। অগ্রাহ্য করার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে আদালত বলেছেন—জাকাত বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য ফরজ। যে ব্যক্তি সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে তার জন্য নামাজ এবং জাকাতসহ (বলাবাহুল্য বছর শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা হিসাবে থাকলে) পাঁচটা ‘ফরজ’। আইনের চোখে ব্যক্তি দুই প্রকার—ন্যাচারাল পারসন এবং লিগ্যাল পারসন, অর্থাত্ স্বাভাবিক ব্যক্তি (একজন মানুষ) এবং আইনানুগ ব্যক্তি বা আইনের দৃষ্টিতে একজন ব্যক্তি। আইনানুগ ব্যক্তি যেমন ব্যাংক বা রাষ্ট্র সাধারণ ব্যক্তির মতো অনেক আইনি পদক্ষেপ বা কাজ করতে পারে। যেমন বাড়ি-গাড়ি কিনতে পারে, ব্যাংক বা রাষ্ট্র জমি-বাড়ি-গাড়ির মালিক হতে পারে। আইনের দৃষ্টিতে ব্যক্তি হলেও মানুষের মতো অনেক আইনি কাজ করতে পারে না—যেমন ভালোবাসা, বিয়ে, তালাক, পিতামাতা হওয়া।
আদালত বলেছেন প্রতিষ্ঠানের কোনো ধর্ম বিশ্বাস থাকতে পারে না, অতএব জাকাত দেওয়া বা না দেওয়া তার জন্য বাধ্যতামূলক নয় এবং আমানতকারীর পক্ষে থাকতে দেওয়ার জন্য কোনো আইনগত সুবিধা সে পেতে পারে না। তত্কালীন প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন, বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুল মতিন ও বিচারপতি এম এম রুহুল আমিন—তিনজন স্ব স্ব ভাবে রায় লিখেছেন। মূলকথাতে সবাই একমত।
অর্থাত্ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে আমার প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। প্রতিষ্ঠান হিন্দু-মুসলমান-খ্রিষ্টান-বৌদ্ধ হতে পারে না। ধর্মবিশ্বাস ব্যক্তিগত ব্যাপার। ব্যক্তি তার ইহকালে কৃত কাজকর্মের জন্য বেহেশত বা দোজখে যাবে—যা সৃষ্টিকর্তা নির্ধারণ করবেন। ইসলামী ব্যাংক বা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ পরকালে কোথায় যাবে?

৫.
একাত্তরের মতো একদল পিশাচ আবার এ দেশের সহজ-সরল-ধর্মপ্রাণ মানুষকে নৃশংসতা আর বর্বরতার দিকে ঠেলে দিতে উদ্যত হয়েছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা করে দেশে আবার রক্তগঙ্গার পাঁয়তারা চলছে। এবার একাত্তরের চেয়ে আমার আশঙ্কা বেশি। প্রথমত এখন ধর্মীয় উন্মাদনা বিশ্বব্যাপী। দ্বিতীয়ত অস্ত্রশস্ত্র, বোমা-বন্দুকের সহজপ্রাপ্যতায় যুক্তি, মানসিকতা, সহনশীলতা ও গণতন্ত্র প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে। তৃতীয়ত সম্ভবত অগ্র-পশ্চাত্ বিবেচনা না করেই ছয় দফা বা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল না এমন কথার মোহে অনেকেই আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছেন।
আমরা সবাই ধার্মিক। যারা ধর্ম বোঝে না বা বুঝেও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে ধর্মকে স্থান দিতে পারে না; রাষ্ট্র ও ব্যক্তির পার্থক্য গুলিয়ে ফেলে; বর্বরতা ও নৃশংসতা যাদের মুখ্য হাতিয়ার তারাই আজ পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায় নিয়ে ‘ধর্ম গেল, ধর্ম গেল’ বলে মাতম করছে, উত্তেজনা ছড়াচ্ছে, যেমনটি করেছিল একাত্তরে।
মামার লাশ পাওয়া যায়নি। কেউই তার ‘কবর জিয়ারত’ করতে পারিনি। মামা বেঁচে থাকলে প্রথম নাতনির বিয়েতে নিশ্চয় দোয়া-দরুদ পড়তেন। হাত তুলে নবদম্পতির শুভকামনায় মোনাজাত করতেন। আমি নিশ্চিত তাঁর ও আমাদের এই দেশকে ‘ধার্মিক’ বানানোর মধ্যযুগীয় কথাবার্তা শুনলে আঁতকে উঠতেন।
দেশটা ওই ধর্মান্ধ ও তাদের স্বার্থান্বেষী বর্বর লোভীদের নয়। এটা পনেরো কোটি বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষ দেশ।
শাহদীন মালিক: আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট।

No comments

Powered by Blogger.