মানহানিকর বিজ্ঞাপন ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট -সরল গরল by মিজানুর রহমান খান
সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন অর্থের বিনিময়ে প্রকাশ করা হয়। তাই বলে তা একেবারে সাংবাদিকতার নীতিমালার বাইরের বিষয় নয়। একজন দায়িত্বশীল সম্পাদক কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রিপোর্ট বা সম্পাদকীয় প্রকাশে সতর্কতার পরিচয় দেন। কিন্তু বিজ্ঞাপন বলেই তিনি অসতর্ক হতে পারেন না।
বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ৩৯ বছরে সাংবাদিকতাবিষয়ক প্রশিক্ষণ, লেখালেখি, গ্রন্থ রচনা বিরল নয়। কিন্তু বিজ্ঞাপনের বিশাল জায়গাটি রয়ে গেছে অচেনা, অনাবিষ্কৃত ও অনালোচিত। বিজ্ঞাপন ছাপার সীমারেখা নিয়ে একটি তর্ক-বিতর্কের সূচনা ঘটানোর তাড়না থেকেই এ লেখা। আর তা লিখতে গিয়ে সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনবিষয়ক জগিট আমার কাছে যেভাবে উন্মোচিত হলো, তা চমকপ্রদ।
১৯৮৪ সালে পেঙ্গুইন প্রকাশ করেছে মিডিয়া ল। এর দুই লেখক জিওফ্রে রবার্টসন ও অ্যান্ড্রু নিকোল। দুজনই আইনজীবী, কুইন্স কাউন্সেল। ওই বইটির চতুর্থ সংস্করণের (২০০২) ৭১০ পৃষ্ঠায় দেখি একটি উপশিরোনাম, ‘দ্য অ্যাডভার্টাইজিং স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি’ (বিজ্ঞাপন মান কর্তৃপক্ষ) এএসএ। তারাই ব্রিটেনের বিজ্ঞাপন শাসনকর্তা। তাদের অভিজ্ঞতা একটু বিশদ বলি। কারণ ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন কোডই বিশ্বজুড়ে অনুসরণীয়। প্রতিবেশী ভারতেও তা সমাদৃত।
ব্রিটেনের বিজ্ঞাপনশিল্প ১৯৬২ সালে চাপের মুখে পড়েছিল। কারণ এ সময়টিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণসংক্রান্ত মলোনি কমিটি (Moloney Committee) গঠিত হয়। তারা বিধিবদ্ধ নিয়মকানুন চালুসহ নানা কড়াকড়ি আরোপ করে। বিজ্ঞাপনজগত্ নড়েচড়ে বসে। তাঁরা বুঝতে পারেন, নিয়মনীতি ছাড়া বিজ্ঞাপন ছাপানোর দিন শেষ। সরকারের মুখাপেক্ষী হননি তাঁরা। নিজেরাই বিজ্ঞাপনবিষয়ক কার্য ও নীতি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হন। গঠিত হয় ওই এএসএ। এর মূলমন্ত্র ঠিক হলো, বিজ্ঞাপন হবে ‘আইনানুগ, সুন্দর, সত্ ও সত্য।’ গত ৫০ বছরে এএসএ ব্রিটেনে সবচেয়ে কার্যকর ও শ্রদ্ধেয় জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সে তুলনায় ব্রিটিশ প্রেস কাউন্সিল দুর্বল।
স্বেচ্ছাসেবী ও বিজ্ঞাপনদাতাদের একান্ত নিজস্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে এএসএর মর্যাদা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি সরকারি সংস্থার চেয়ে কম নয়। তাদের প্রণীত বিজ্ঞাপন কোড বা বিজ্ঞাপনবিধি সবাই মানে। তাদের সীমাবদ্ধতা হলো, মিথ্যা বিজ্ঞাপনদাতা বা আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের তারা সরাসরি শাস্তি দিতে অপারগ। তবে বিজ্ঞাপনদাতার কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কৈফিয়ত তলব করতে পারে।
ব্রিটেনে যারা বিজ্ঞাপন কোড লঙ্ঘন করেন, তাদের শাস্তি জোটে সরকারি ‘অফিস অব ফেয়ার ট্রেডিং’ বা ওএফটির মহাপরিচালকের মাধ্যমে। রবার্টসন ও নিকোল লিখেছেন, ‘কেউ মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ফেয়ার ট্রেডিং সংস্থার সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব।’
এএসএর কাউন্সিল খণ্ডকালীন ১২ সদস্য নিয়ে গঠিত। এর সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজ্ঞাপনজগতের বাইরের লোক। তাদের এখতিয়ারও ব্যাপক। পত্রিকা ছাড়াও সিনেমা, ভিডিও, ই-মেইল, ফ্যাক্স এমনকি রাস্তার ধারের হোর্ডিংগুলোতে সাঁটানো পোস্টার বিজ্ঞাপন পর্যন্ত। ব্রিটিশ প্রেসে বছরে প্রায় তিন কোটি বিজ্ঞাপন ছাপা হয়। হোর্ডিংগুলোতে পোস্টার পড়ে এক লাখ। আর এ থেকে গড়ে ১২ হাজার অভিযোগ আসে। বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনবিষয়ক এ রকম কোনো তথ্য জানা যায় না।
বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্যক্তির চরিত্র হনন বা তাকে কোনোভাবেই হেয়প্রতিপন্ন করার বিষয়ে ব্রিটিশ কোড অত্যন্ত সংবেদনশীল। কোড বলেছে, ‘বিজ্ঞাপনদাতাদের উচিত নয় কোনো লোককে নেতিবাচক বা আক্রমণাত্মকভাবে উপস্থাপন করা।’ ব্যক্তি ছাড়াও অন্যের ব্যবসায় বা তাদের পণ্য সম্পর্কে কোড বলেছে, বিজ্ঞাপনদাতাদের উচিত নয়, অন্যের ব্যবসায় বা পণ্যের বিরুদ্ধে অশালীন আক্রমণ করা বা তাকে খাটো করা।
আধাবিচারিক সরকারি সংস্থা ওএফটি এবং বেসরকারি এএসএর কার্যক্রমের ওপর রয়েছে ব্রিটিশ আদালতের পূর্ণ এখতিয়ার। এএসএ যখন কোনো আপত্তিকর বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করার আদেশ দেয়, তখন অধিকাংশ বিজ্ঞাপনী সংস্থা তা দ্রুত তামিল করে। ১৩ সদস্যের কাউন্সিলের বর্তমান চেয়ারম্যান সাবেক সংস্কৃতি ও গণমাধ্যমমন্ত্রী ক্রিস স্মিথ।
মিথ্যা বিজ্ঞাপন প্রকাশের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকার বিশেষ মনোযোগ দেয় দুই দশক আগেই। রবিনসন ও নিকোল বলেন, ‘১৯৮৮ সালে ফেয়ার ট্রেডিংয়ের মহাপরিচালককে নির্দিষ্টভাবে মিথ্যা বিজ্ঞাপনদাতাদের শায়েস্তা করতে সংবিধিবদ্ধ ক্ষমতা দেওয়া হয়।’ (প্রাগুক্ত। পৃ. ৭১৮)। দ্য কন্ট্রোল অব মিসলিডিং অ্যাডভার্টাইজমেন্টস রেগুলেশনস, ১৯৮৮-এর মূল কথা হলো, বিজ্ঞাপনে মিথ্যা তথ্য দেওয়া যাবে না।’ এএসএ কখনো ব্যর্থ হলে সরকারি ফেয়ার ট্রেডিংয়ের মহাপরিচালক উদ্যোগ নেন। এটাই সর্বশেষ হাতিয়ার। ব্রিটিশদের রয়েছে অন্ধ স্লিম-প্রীতি। বছরে ৬০০ কোটি পাউন্ডের ব্যবসা। সানডে স্পোর্ট পত্রিকায় স্লিম হওয়া নিয়ে একটি আপত্তিকর বিজ্ঞাপন ছাপা হচ্ছিল। এএসএর সিদ্ধান্তও পত্রিকাটি উপেক্ষা করে। আপত্তিকর বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা তাদের নেই। তাই তারা বিষয়টি পাঠায় ফেয়ার ট্রেডিংয়ের কাছে। এএসএর চিঠি পেয়ে ফেয়ার ট্রেডিং দেরি করেনি। সঙ্গে সঙ্গে ওই বিজ্ঞাপন বা একই ধরনের বক্তব্যসংবলিত বিজ্ঞাপন প্রকাশ নিষিদ্ধ করতে আদালতের মাধ্যমে ইনজাংশন জারির পদক্ষেপ নেয়। বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বর্গভূমিতেও বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের নজির কিন্তু আমরা পেলাম।
বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত পত্রপত্রিকাও অনেক সময় বিজ্ঞাপনকে পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদনের চেহারা দিয়ে ছাপানোর চেষ্টা চালায়। উদ্দেশ্য হলো পাঠককে বিভ্রান্ত করা। তাদের বোঝানো যে এটি বিজ্ঞাপন নয়, পত্রিকার প্রতিবেদন বা নিবন্ধ। ব্রিটিশ কোডে এ ধরনের তত্পরতা নিষিদ্ধ।
রবিনসন ও কলিন তাঁদের বইয়ের ৭২০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘সংবাদপত্রগুলো বিজ্ঞাপনদাতাদের পণ্য বা তাদের লোকজন সম্পর্কে সমালোচনামূলক সম্পাদকীয় প্রকাশ ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সময়ে সময়ে বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রতিশোধের শিকার হয়।’ বাংলাদেশে এ ধরনের প্রতিশোধপরায়ণতার বহিঃপ্রকাশ ‘যেকোনো পন্থায়’ ঘটানো সম্ভব হতে পারে। সভ্য ব্রিটেনের বিজ্ঞাপনদাতারাও প্রতিশোধ নেন। তবে তা নেওয়ার উপায়টা হলো, কোনো সংবাদপত্রকে ভবিষ্যত্ বিজ্ঞাপন দেওয়া থেকে বঞ্চিত করে। বিজ্ঞাপনবিষয়ক চুক্তি বাতিল করে। আবার এ কাজ একটি বেসরকারি সংস্থার পক্ষে যতটা সহজ, সরকারি সংস্থার পক্ষে তত সহজ নয়। মিডিয়া সম্রাট রুপার্ট মারডকের সাময়িকী টাইমস এডুকেশন সাপ্লিমেন্ট-এ শিক্ষাবিষয়ক নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিত লেবার-দলীয় নেতা নিয়ন্ত্রিত ‘ডারবিশায়ার কাউন্টি কাউন্সিল’। কিন্তু মারডকের মালিকানাধীন দৈনিক সানডে টাইমস যখন লেবার নিয়ন্ত্রিত ওই কাউন্সিল ও তার নেতা ডেভিড বুকবাইন্ডারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করে, তখন তারা প্রতিশোধ নেয়। এডুকেশন সাপ্লিমেন্টের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিলে তারা মামলা করে। কাউন্সিল আদালতে হেরে যায়। আদালত বলেন, বিজ্ঞাপন বাতিলের সিদ্ধান্ত জনস্বার্থে হয়নি। এটা প্রতিশোধ, তাই তা অবৈধ।
ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন কোড অনুসরণ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ব্রিটেন ইইউর বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। শুধু ইইউভুক্ত নয়, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশও এর সদস্য হয়েছে। সেখানে রয়েছে মিসলিডিং অ্যাডভার্টাইজমেন্টস (সংশোধন) রেগুলেশন ২০০০। কমনওয়েলথের বহু দেশ ওই কোডের আদলে স্বতন্ত্র বিজ্ঞাপন কোড করেছে। আন্তর্জাতিক চেম্বার অব কমার্স আইসিসির ওয়েবসাইটেও একটি বিজ্ঞাপন কোড রয়েছে। সবগুলোরই বিষয়বস্তু মোটামুটি অভিন্ন। ডাহা মিথ্যা রিপোর্ট যে সংবাদপত্রে ছাপা যায় না, তা কে না জানে। কিন্তু টাকার বিনিময়ে জেনে-শুনে ডাহা মিথ্যা কথা বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করে দায়মোচনের কোনো পথ কোথাও খোলা আছে কি না, তা কিছুটা খতিয়ে দেখলাম। কোথাও দৃষ্টান্ত পেলাম না।
ভারতের দি অ্যাডভার্টাইজিং স্ট্যান্ডার্ডস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এএসসিআই) একটি অমুনাফাভোগী প্রতিষ্ঠান। ভারতীয় কোম্পানি আইনের ২৫ ধারা অনুযায়ী গঠিত মুম্বইভিত্তিক এএসসিআই একটি শক্তিশালী ও কার্যকর বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সব বিভাগ ও সংস্থায় বিজ্ঞাপনসংক্রান্ত যেকোনো কমিটি বা আলোচনায় তাদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এএসসিআই প্রণীত বিজ্ঞাপনবিধির প্রথম পরিচ্ছেদের প্রথম দফার প্রথম বাক্যটি হলো, বিজ্ঞাপন অবশ্যই ট্রুথফুল বা সত্যনিষ্ঠ হবে। তিন দফা বলেছে, বিজ্ঞাপনে যদি কোনো ব্যক্তির সুনামও করা হয়, তাহলে সে জন্য তার অনুমতি থাকতে হবে। আর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করা যাবে না। বিজ্ঞাপন দিয়ে তথ্যের বিকৃতি ঘটানো যাবে না। এএসসিআই বছরে ১২০ থেকে ১৪০টি বিজ্ঞাপনবিষয়ক অভিযোগ পেয়ে থাকে।
ব্রিটেনে মানহানির মামলায় পরাস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ড গুনতে হয়। বাক্স্বাধীনতার দেশ আমেরিকায় অবশ্য মানহানি মামলায় জেতা সহজ নয়। কিন্তু যদি প্রমাণ করা যায় যে মিডিয়া সত্যিই মিথ্যা ও মানহানিকর খবর বা বিজ্ঞাপন ছেপেছে, তাহলে তার নিস্তার নেই। ২০০৬ সালে লুজিয়ানার এক নারী ফ্লোরিডার এক নারীর বিরুদ্ধে ইন্টারনেট ব্লগ বা মেসেজ বোর্ডে মানহানিকর কথা লিখেছিলেন। তিনি তাঁকে বলেছিলেন, ‘ক্রুক ও ফ্রড’। ফ্লোরিডার ব্রওয়ার্ড কাউন্টির একজন জুরি এ কারণে অভিযুক্তকে ১১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদানের রায় দেন। ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ বিজ্ঞাপন ছাপানো দণ্ডনীয় বলে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ১৯০৯ সালেই রায় দিয়েছিলেন। পেক বনাম ট্রিবিউন শীর্ষক ওই মামলায় মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট এ কথাও বলে দেন, বিজ্ঞাপনে দেওয়া ভুল তথ্য তৃতীয় কোনো ব্যক্তির জন্য মানহানিকর হলে তাও দণ্ডনীয়।
বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় তেমন কোনো ঝুঁকি ছাড়াই মানহানিকর খবর ও বিজ্ঞাপন ছাপা হয়। প্রতিকারের জন্য আইনি ও বিচার পরিমণ্ডল থেকে প্রতিকার লাভ পরিচ্ছন্ন নয়। ফৌজদারি কার্যবিধিতে ৫০০, ৫০১, ৫০২-এর যেসব বিধান রয়েছে, তার কার্যকর প্রয়োগ ঢিলেঢালা। মানহানির মামলা দায়ের করা ও তার খবর ফলাও করে প্রচারের মাধ্যমেই সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা প্রায়ই সান্ত্বনা খোঁজেন। ওই সব বিধান অজামিনযোগ্য। তাই মামলা দায়েরকারীরা সর্বাগ্রে একটি মামলা ঠুকে ওয়ারেন্ট জারি করানোর প্রবণতা দেখান। পত্রিকার সম্পাদকেরা তাই দাবি জানিয়ে আসছিলেন, যাতে এই বিধান না থাকে। জরুরি অবস্থায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিষয়টি আইন কমিশনে পাঠিয়েছিলেন। বিচারপতি মোস্তাফা কামালের নেতৃত্বাধীন তত্কালীন আইন কমিশন এই বিধান রহিত করতে রাজি হয়নি। তারা যুক্তি দেখায়, ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদা সবচেয়ে দামি। এ জন্য ফৌজদারি কার্যবিধিতে ওই বিধান থাকতে হবে।
বিজ্ঞাপনের এক বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে আজ বাংলাদেশে। গড়ে উঠেছে অনেক বিজ্ঞাপনী সংস্থা। তাদের একটি সংগঠনও রয়েছে বলে জানালেন প্রথম আলোর বিজ্ঞাপন বিভাগের প্রধান রশিদুর রহমান সবুর। তিনি নিশ্চিত করেন, ‘বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনবিধি প্রবর্তন নিয়ে তেমন আলাপ-আলোচনা কখনো হয়নি। পত্রিকাগুলো অলিখিত কিছু নিয়মকানুন মেনে চলে। প্রথম আলো নানা ধরনের হেকমত, স্বপ্নবিষয়ক বুজরুকি, ধরিয়ে দিন ইত্যাদি ধরনের বিজ্ঞাপন ছাপে না।’ আসলে এসব মুদ্রণ প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ। কিন্তু সংবাদপত্র এক ধরনের অঘোষিত অন্যায্য দায়মুক্তি ভোগ করে চলেছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ মামলা করার ঝামেলায় যেতে চায় না। বিশ্বের ও ভারতের অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে পারি। ভারতীয় বিজ্ঞাপনবিধির চতুর্থ পরিচ্ছেদের চতুর্থ দফা বলেছে, বিজ্ঞাপন প্রচলিত কোনো আইনের লঙ্ঘন ঘটাবে না কিংবা আইনের শর্ত পূরণ করা থেকে বিচ্যুত হবে না। এ ধরনের একটি বিধান আমাদের থাকা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। মনে রাখা ভালো, আমরা বিশ্বায়নের যুগে বাস করছি। জাতীয় আইনি পরিমণ্ডলে শূন্যতা বজায় রেখে নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে রেখে অনন্তকাল ধরে নিরাপদ ভাবা বোকামি। আমেরিকার বিখ্যাত ব্যবসা সাময়িকী ফর্বস। তাদের এক লেখায় ক্ষুব্ধ হলেন রুশ ব্যবসায়ী বরিস ব্রেজোভস্কি। তিনি আমেরিকা কিংবা রাশিয়ায় নয়, মানহানির মামলা ঠুকলেন ব্রিটেনে। ওই সাময়িকীর অনলাইন সংস্করণ যেহেতু ইন্টারনেটে ব্রিটেনবাসী দেখতে পায় এবং ব্রিটেনে ব্রেজোভস্কির ব্যবসাগত স্বার্থ ও যোগসূত্র রয়েছে, তাই তিনি ব্রিটেনের টর্ট আইনে প্রতিকার চাইলেন। বিচারপতি পপলওয়েল ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর এর ওপর দাঁড়িয়ে রায় দেন, মামলা দায়েরের অধিকার তাঁর রয়েছে। কিন্তু ব্রিটেনে তাঁর স্বার্থ খুবই নগণ্য। তাই তাঁর উচিত রুশ কোর্টে মামলা করা। ব্রেজেভস্কি দমবার পাত্র নন। ১৯৯৮ সালের ১৯ নভেম্বর ইংল্যান্ডের কোর্ট অব আপিল তাঁর আপিল গ্রহণ করেন। তাঁরা বলেন, এই মানহানি মামলার বিচার অবশ্যই ব্রিটেনে হতে পারে। সুতরাং দেশে যাঁরা আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী রয়েছেন, তাঁরা বিদেশি জুরিসডিকশন বা অধিকারক্ষেত্রের দিকে চোখ রাখতে পারেন। কোনো কোনো সম্পাদক ভাবতে পারেন, অনলাইনে পাওয়া জিনিস বর্জ্য কি না, তা পরখ করার দরকার নেই। কিন্তু তা ভুল। ইন্টারনেট-সংক্রান্ত মানহানি আইন ও তার ব্যাপকতা অনেকটা ধেয়ে আসছে। কোনো ওয়েবসাইটের গালগল্প ছেপে ঘুমিয়ে পড়লে চলবে না।
আমাদের পত্রপত্রিকাগুলো অনলাইনে গিয়ে কার্যত নিজেদের অজান্তেই আন্তর্জাতিক আইনি পরিমণ্ডলে প্রবেশ করছে। যেকোনো মিথ্যা ও কুত্সাপূর্ণ বিজ্ঞাপন এখন অনলাইনের কল্যাণে আর কেবলই অভ্যন্তরীণ থাকছে না; এর আন্তসীমান্ত প্রভাব অনিবার্য হচ্ছে। এফবিসিসিআইয়ের মতো সংগঠনগুলো তাই বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনবিধি না থাকার বিষয়ে নীরব দর্শক হতে পারে না। ব্রিটেন ও ইউরোপে যাদের যথেষ্ট বাণিজ্য স্বার্থ রয়েছে, আন্তর্জাতিক চেম্বার অব কমার্স—আইসিসির সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, বিদেশি অধিকারক্ষেত্রেও তাদের প্রতিকারের উপায় আছে কি না, তা হয়তো খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। ব্রাসেলসভিত্তিক ইউরোপীয় অ্যাডভার্টাইজিং স্টান্ড্যার্ডস অ্যালায়েন্স প্রণীত ব্লু বুক বাংলাদেশ সরকারের ওপরও সমানভাবে প্রযোজ্য। সুতরাং ব্রিটেন বা ইউরোপের সঙ্গে বিরাট ব্যবসায় স্বার্থ রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে মিথ্যা বিজ্ঞাপন আগ্রাসনের শিকার হলে বা আগ্রাসী ভূমিকায় নেমে পড়লে সরকার বাহাদুরও হয়তো নিরপেক্ষ বা ‘চেয়ে চেয়ে দেখলাম’ অবস্থান নিতে পারে না।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের বিধিবিধান একটি বিরাট রক্ষাকবচ। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না। প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করতে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে। গণমাধ্যমের ওপর এর প্রভাব ন্যূনতম। ১৯৭৪ সালের প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্টের আওতায় ১৯৯৩ সালে একটি আচরণবিধি প্রণীত হয়। এতে বলা আছে, ‘মানহানিকর ও জনস্বার্থবিরোধী না হলে উপযুক্ত ব্যক্তির সই করা যেকোনো বিজ্ঞাপন ছাপানোর অধিকার সম্পাদকের রয়েছে। তবে কেউ যদি কোনো বিজ্ঞাপনের প্রতিবাদ করেন তাহলে তখন তাঁকে তা বিনামূল্যে ছাপতে হবে।’ অনেক ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের সম্পাদকেরা এই আচারণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন। একটি সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত দিই।
নারায়ণগঞ্জের দৈনিক খবরের পাতায় ২০০৬ সালের ২১ নভেম্বর একটি মানহানিকর প্রতিবেদন বিজ্ঞাপন আকারে ছাপা হয়। এতে নারায়ণগঞ্জের তত্কালীন নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে মামলার এক পক্ষ উেকাচের বিনিময়ে তার প্রতিপক্ষকে জামিন দান ও মামলা খালাসের জন্য বিচারককে ৫০ হাজার টাকা প্রদানের মতো অভিযোগ আনে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। বিচারক পত্রিকার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মাসুমের বিরুদ্ধে প্রেস কাউন্সিলে মামলা (নং ৫/২০০৭) করেন। প্রেস কাউন্সিলের পাঁচ সদস্যের জুডিশিয়াল কমিটি (বিচারপতি আবু সাঈদ আহাম্মদ, প্রফেসর ড. মাহবুব উল্লাহ, আলমগীর মহিউদ্দিন, ফজলুল করিম ও আব্বাস উদ্দিন আফসারীকে নিয়ে গঠিত) ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর পত্রিকার সম্পাদককে দোষী সাব্যস্ত করেন। কমিটির রায়, ‘খবরের পাতা পত্রিকার সম্পাদককে মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ সংবাদ প্রচারের কারণে তিরস্কার, ভর্ত্সনা ও সতর্ক করা হলো।’ এই রায় হুবহু সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় ছাপানোর নির্দেশ ছিল। এবং তা তামিল হয়েছিল বলে পত্রিকাটির সম্পাদক আমাকে টেলিফোনে নিশ্চিত করেন।
বাংলাদেশের একটি বিজ্ঞাপনবিধি দরকার। দরকার এ বিষয়ে একটি স্বনিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান। বিজ্ঞাপনশিল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশু বিবেচনায় নিতে পারেন যে নিজেরা নিজেদের তদারক না করলে তাঁরা অন্যের নিয়ন্ত্রণের কবলে পড়তে পারেন।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ৩৯ বছরে সাংবাদিকতাবিষয়ক প্রশিক্ষণ, লেখালেখি, গ্রন্থ রচনা বিরল নয়। কিন্তু বিজ্ঞাপনের বিশাল জায়গাটি রয়ে গেছে অচেনা, অনাবিষ্কৃত ও অনালোচিত। বিজ্ঞাপন ছাপার সীমারেখা নিয়ে একটি তর্ক-বিতর্কের সূচনা ঘটানোর তাড়না থেকেই এ লেখা। আর তা লিখতে গিয়ে সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনবিষয়ক জগিট আমার কাছে যেভাবে উন্মোচিত হলো, তা চমকপ্রদ।
১৯৮৪ সালে পেঙ্গুইন প্রকাশ করেছে মিডিয়া ল। এর দুই লেখক জিওফ্রে রবার্টসন ও অ্যান্ড্রু নিকোল। দুজনই আইনজীবী, কুইন্স কাউন্সেল। ওই বইটির চতুর্থ সংস্করণের (২০০২) ৭১০ পৃষ্ঠায় দেখি একটি উপশিরোনাম, ‘দ্য অ্যাডভার্টাইজিং স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি’ (বিজ্ঞাপন মান কর্তৃপক্ষ) এএসএ। তারাই ব্রিটেনের বিজ্ঞাপন শাসনকর্তা। তাদের অভিজ্ঞতা একটু বিশদ বলি। কারণ ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন কোডই বিশ্বজুড়ে অনুসরণীয়। প্রতিবেশী ভারতেও তা সমাদৃত।
ব্রিটেনের বিজ্ঞাপনশিল্প ১৯৬২ সালে চাপের মুখে পড়েছিল। কারণ এ সময়টিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণসংক্রান্ত মলোনি কমিটি (Moloney Committee) গঠিত হয়। তারা বিধিবদ্ধ নিয়মকানুন চালুসহ নানা কড়াকড়ি আরোপ করে। বিজ্ঞাপনজগত্ নড়েচড়ে বসে। তাঁরা বুঝতে পারেন, নিয়মনীতি ছাড়া বিজ্ঞাপন ছাপানোর দিন শেষ। সরকারের মুখাপেক্ষী হননি তাঁরা। নিজেরাই বিজ্ঞাপনবিষয়ক কার্য ও নীতি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হন। গঠিত হয় ওই এএসএ। এর মূলমন্ত্র ঠিক হলো, বিজ্ঞাপন হবে ‘আইনানুগ, সুন্দর, সত্ ও সত্য।’ গত ৫০ বছরে এএসএ ব্রিটেনে সবচেয়ে কার্যকর ও শ্রদ্ধেয় জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সে তুলনায় ব্রিটিশ প্রেস কাউন্সিল দুর্বল।
স্বেচ্ছাসেবী ও বিজ্ঞাপনদাতাদের একান্ত নিজস্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে এএসএর মর্যাদা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি সরকারি সংস্থার চেয়ে কম নয়। তাদের প্রণীত বিজ্ঞাপন কোড বা বিজ্ঞাপনবিধি সবাই মানে। তাদের সীমাবদ্ধতা হলো, মিথ্যা বিজ্ঞাপনদাতা বা আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের তারা সরাসরি শাস্তি দিতে অপারগ। তবে বিজ্ঞাপনদাতার কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কৈফিয়ত তলব করতে পারে।
ব্রিটেনে যারা বিজ্ঞাপন কোড লঙ্ঘন করেন, তাদের শাস্তি জোটে সরকারি ‘অফিস অব ফেয়ার ট্রেডিং’ বা ওএফটির মহাপরিচালকের মাধ্যমে। রবার্টসন ও নিকোল লিখেছেন, ‘কেউ মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ফেয়ার ট্রেডিং সংস্থার সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব।’
এএসএর কাউন্সিল খণ্ডকালীন ১২ সদস্য নিয়ে গঠিত। এর সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজ্ঞাপনজগতের বাইরের লোক। তাদের এখতিয়ারও ব্যাপক। পত্রিকা ছাড়াও সিনেমা, ভিডিও, ই-মেইল, ফ্যাক্স এমনকি রাস্তার ধারের হোর্ডিংগুলোতে সাঁটানো পোস্টার বিজ্ঞাপন পর্যন্ত। ব্রিটিশ প্রেসে বছরে প্রায় তিন কোটি বিজ্ঞাপন ছাপা হয়। হোর্ডিংগুলোতে পোস্টার পড়ে এক লাখ। আর এ থেকে গড়ে ১২ হাজার অভিযোগ আসে। বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনবিষয়ক এ রকম কোনো তথ্য জানা যায় না।
বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্যক্তির চরিত্র হনন বা তাকে কোনোভাবেই হেয়প্রতিপন্ন করার বিষয়ে ব্রিটিশ কোড অত্যন্ত সংবেদনশীল। কোড বলেছে, ‘বিজ্ঞাপনদাতাদের উচিত নয় কোনো লোককে নেতিবাচক বা আক্রমণাত্মকভাবে উপস্থাপন করা।’ ব্যক্তি ছাড়াও অন্যের ব্যবসায় বা তাদের পণ্য সম্পর্কে কোড বলেছে, বিজ্ঞাপনদাতাদের উচিত নয়, অন্যের ব্যবসায় বা পণ্যের বিরুদ্ধে অশালীন আক্রমণ করা বা তাকে খাটো করা।
আধাবিচারিক সরকারি সংস্থা ওএফটি এবং বেসরকারি এএসএর কার্যক্রমের ওপর রয়েছে ব্রিটিশ আদালতের পূর্ণ এখতিয়ার। এএসএ যখন কোনো আপত্তিকর বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করার আদেশ দেয়, তখন অধিকাংশ বিজ্ঞাপনী সংস্থা তা দ্রুত তামিল করে। ১৩ সদস্যের কাউন্সিলের বর্তমান চেয়ারম্যান সাবেক সংস্কৃতি ও গণমাধ্যমমন্ত্রী ক্রিস স্মিথ।
মিথ্যা বিজ্ঞাপন প্রকাশের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকার বিশেষ মনোযোগ দেয় দুই দশক আগেই। রবিনসন ও নিকোল বলেন, ‘১৯৮৮ সালে ফেয়ার ট্রেডিংয়ের মহাপরিচালককে নির্দিষ্টভাবে মিথ্যা বিজ্ঞাপনদাতাদের শায়েস্তা করতে সংবিধিবদ্ধ ক্ষমতা দেওয়া হয়।’ (প্রাগুক্ত। পৃ. ৭১৮)। দ্য কন্ট্রোল অব মিসলিডিং অ্যাডভার্টাইজমেন্টস রেগুলেশনস, ১৯৮৮-এর মূল কথা হলো, বিজ্ঞাপনে মিথ্যা তথ্য দেওয়া যাবে না।’ এএসএ কখনো ব্যর্থ হলে সরকারি ফেয়ার ট্রেডিংয়ের মহাপরিচালক উদ্যোগ নেন। এটাই সর্বশেষ হাতিয়ার। ব্রিটিশদের রয়েছে অন্ধ স্লিম-প্রীতি। বছরে ৬০০ কোটি পাউন্ডের ব্যবসা। সানডে স্পোর্ট পত্রিকায় স্লিম হওয়া নিয়ে একটি আপত্তিকর বিজ্ঞাপন ছাপা হচ্ছিল। এএসএর সিদ্ধান্তও পত্রিকাটি উপেক্ষা করে। আপত্তিকর বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা তাদের নেই। তাই তারা বিষয়টি পাঠায় ফেয়ার ট্রেডিংয়ের কাছে। এএসএর চিঠি পেয়ে ফেয়ার ট্রেডিং দেরি করেনি। সঙ্গে সঙ্গে ওই বিজ্ঞাপন বা একই ধরনের বক্তব্যসংবলিত বিজ্ঞাপন প্রকাশ নিষিদ্ধ করতে আদালতের মাধ্যমে ইনজাংশন জারির পদক্ষেপ নেয়। বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বর্গভূমিতেও বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের নজির কিন্তু আমরা পেলাম।
বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত পত্রপত্রিকাও অনেক সময় বিজ্ঞাপনকে পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদনের চেহারা দিয়ে ছাপানোর চেষ্টা চালায়। উদ্দেশ্য হলো পাঠককে বিভ্রান্ত করা। তাদের বোঝানো যে এটি বিজ্ঞাপন নয়, পত্রিকার প্রতিবেদন বা নিবন্ধ। ব্রিটিশ কোডে এ ধরনের তত্পরতা নিষিদ্ধ।
রবিনসন ও কলিন তাঁদের বইয়ের ৭২০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘সংবাদপত্রগুলো বিজ্ঞাপনদাতাদের পণ্য বা তাদের লোকজন সম্পর্কে সমালোচনামূলক সম্পাদকীয় প্রকাশ ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে গিয়ে সময়ে সময়ে বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রতিশোধের শিকার হয়।’ বাংলাদেশে এ ধরনের প্রতিশোধপরায়ণতার বহিঃপ্রকাশ ‘যেকোনো পন্থায়’ ঘটানো সম্ভব হতে পারে। সভ্য ব্রিটেনের বিজ্ঞাপনদাতারাও প্রতিশোধ নেন। তবে তা নেওয়ার উপায়টা হলো, কোনো সংবাদপত্রকে ভবিষ্যত্ বিজ্ঞাপন দেওয়া থেকে বঞ্চিত করে। বিজ্ঞাপনবিষয়ক চুক্তি বাতিল করে। আবার এ কাজ একটি বেসরকারি সংস্থার পক্ষে যতটা সহজ, সরকারি সংস্থার পক্ষে তত সহজ নয়। মিডিয়া সম্রাট রুপার্ট মারডকের সাময়িকী টাইমস এডুকেশন সাপ্লিমেন্ট-এ শিক্ষাবিষয়ক নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিত লেবার-দলীয় নেতা নিয়ন্ত্রিত ‘ডারবিশায়ার কাউন্টি কাউন্সিল’। কিন্তু মারডকের মালিকানাধীন দৈনিক সানডে টাইমস যখন লেবার নিয়ন্ত্রিত ওই কাউন্সিল ও তার নেতা ডেভিড বুকবাইন্ডারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করে, তখন তারা প্রতিশোধ নেয়। এডুকেশন সাপ্লিমেন্টের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিলে তারা মামলা করে। কাউন্সিল আদালতে হেরে যায়। আদালত বলেন, বিজ্ঞাপন বাতিলের সিদ্ধান্ত জনস্বার্থে হয়নি। এটা প্রতিশোধ, তাই তা অবৈধ।
ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন কোড অনুসরণ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ব্রিটেন ইইউর বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। শুধু ইইউভুক্ত নয়, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশও এর সদস্য হয়েছে। সেখানে রয়েছে মিসলিডিং অ্যাডভার্টাইজমেন্টস (সংশোধন) রেগুলেশন ২০০০। কমনওয়েলথের বহু দেশ ওই কোডের আদলে স্বতন্ত্র বিজ্ঞাপন কোড করেছে। আন্তর্জাতিক চেম্বার অব কমার্স আইসিসির ওয়েবসাইটেও একটি বিজ্ঞাপন কোড রয়েছে। সবগুলোরই বিষয়বস্তু মোটামুটি অভিন্ন। ডাহা মিথ্যা রিপোর্ট যে সংবাদপত্রে ছাপা যায় না, তা কে না জানে। কিন্তু টাকার বিনিময়ে জেনে-শুনে ডাহা মিথ্যা কথা বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করে দায়মোচনের কোনো পথ কোথাও খোলা আছে কি না, তা কিছুটা খতিয়ে দেখলাম। কোথাও দৃষ্টান্ত পেলাম না।
ভারতের দি অ্যাডভার্টাইজিং স্ট্যান্ডার্ডস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এএসসিআই) একটি অমুনাফাভোগী প্রতিষ্ঠান। ভারতীয় কোম্পানি আইনের ২৫ ধারা অনুযায়ী গঠিত মুম্বইভিত্তিক এএসসিআই একটি শক্তিশালী ও কার্যকর বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। ভারতের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সব বিভাগ ও সংস্থায় বিজ্ঞাপনসংক্রান্ত যেকোনো কমিটি বা আলোচনায় তাদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এএসসিআই প্রণীত বিজ্ঞাপনবিধির প্রথম পরিচ্ছেদের প্রথম দফার প্রথম বাক্যটি হলো, বিজ্ঞাপন অবশ্যই ট্রুথফুল বা সত্যনিষ্ঠ হবে। তিন দফা বলেছে, বিজ্ঞাপনে যদি কোনো ব্যক্তির সুনামও করা হয়, তাহলে সে জন্য তার অনুমতি থাকতে হবে। আর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করা যাবে না। বিজ্ঞাপন দিয়ে তথ্যের বিকৃতি ঘটানো যাবে না। এএসসিআই বছরে ১২০ থেকে ১৪০টি বিজ্ঞাপনবিষয়ক অভিযোগ পেয়ে থাকে।
ব্রিটেনে মানহানির মামলায় পরাস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে মিলিয়ন মিলিয়ন পাউন্ড গুনতে হয়। বাক্স্বাধীনতার দেশ আমেরিকায় অবশ্য মানহানি মামলায় জেতা সহজ নয়। কিন্তু যদি প্রমাণ করা যায় যে মিডিয়া সত্যিই মিথ্যা ও মানহানিকর খবর বা বিজ্ঞাপন ছেপেছে, তাহলে তার নিস্তার নেই। ২০০৬ সালে লুজিয়ানার এক নারী ফ্লোরিডার এক নারীর বিরুদ্ধে ইন্টারনেট ব্লগ বা মেসেজ বোর্ডে মানহানিকর কথা লিখেছিলেন। তিনি তাঁকে বলেছিলেন, ‘ক্রুক ও ফ্রড’। ফ্লোরিডার ব্রওয়ার্ড কাউন্টির একজন জুরি এ কারণে অভিযুক্তকে ১১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদানের রায় দেন। ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ বিজ্ঞাপন ছাপানো দণ্ডনীয় বলে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ১৯০৯ সালেই রায় দিয়েছিলেন। পেক বনাম ট্রিবিউন শীর্ষক ওই মামলায় মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট এ কথাও বলে দেন, বিজ্ঞাপনে দেওয়া ভুল তথ্য তৃতীয় কোনো ব্যক্তির জন্য মানহানিকর হলে তাও দণ্ডনীয়।
বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় তেমন কোনো ঝুঁকি ছাড়াই মানহানিকর খবর ও বিজ্ঞাপন ছাপা হয়। প্রতিকারের জন্য আইনি ও বিচার পরিমণ্ডল থেকে প্রতিকার লাভ পরিচ্ছন্ন নয়। ফৌজদারি কার্যবিধিতে ৫০০, ৫০১, ৫০২-এর যেসব বিধান রয়েছে, তার কার্যকর প্রয়োগ ঢিলেঢালা। মানহানির মামলা দায়ের করা ও তার খবর ফলাও করে প্রচারের মাধ্যমেই সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা প্রায়ই সান্ত্বনা খোঁজেন। ওই সব বিধান অজামিনযোগ্য। তাই মামলা দায়েরকারীরা সর্বাগ্রে একটি মামলা ঠুকে ওয়ারেন্ট জারি করানোর প্রবণতা দেখান। পত্রিকার সম্পাদকেরা তাই দাবি জানিয়ে আসছিলেন, যাতে এই বিধান না থাকে। জরুরি অবস্থায় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিষয়টি আইন কমিশনে পাঠিয়েছিলেন। বিচারপতি মোস্তাফা কামালের নেতৃত্বাধীন তত্কালীন আইন কমিশন এই বিধান রহিত করতে রাজি হয়নি। তারা যুক্তি দেখায়, ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদা সবচেয়ে দামি। এ জন্য ফৌজদারি কার্যবিধিতে ওই বিধান থাকতে হবে।
বিজ্ঞাপনের এক বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে আজ বাংলাদেশে। গড়ে উঠেছে অনেক বিজ্ঞাপনী সংস্থা। তাদের একটি সংগঠনও রয়েছে বলে জানালেন প্রথম আলোর বিজ্ঞাপন বিভাগের প্রধান রশিদুর রহমান সবুর। তিনি নিশ্চিত করেন, ‘বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনবিধি প্রবর্তন নিয়ে তেমন আলাপ-আলোচনা কখনো হয়নি। পত্রিকাগুলো অলিখিত কিছু নিয়মকানুন মেনে চলে। প্রথম আলো নানা ধরনের হেকমত, স্বপ্নবিষয়ক বুজরুকি, ধরিয়ে দিন ইত্যাদি ধরনের বিজ্ঞাপন ছাপে না।’ আসলে এসব মুদ্রণ প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ। কিন্তু সংবাদপত্র এক ধরনের অঘোষিত অন্যায্য দায়মুক্তি ভোগ করে চলেছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ মামলা করার ঝামেলায় যেতে চায় না। বিশ্বের ও ভারতের অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে পারি। ভারতীয় বিজ্ঞাপনবিধির চতুর্থ পরিচ্ছেদের চতুর্থ দফা বলেছে, বিজ্ঞাপন প্রচলিত কোনো আইনের লঙ্ঘন ঘটাবে না কিংবা আইনের শর্ত পূরণ করা থেকে বিচ্যুত হবে না। এ ধরনের একটি বিধান আমাদের থাকা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। মনে রাখা ভালো, আমরা বিশ্বায়নের যুগে বাস করছি। জাতীয় আইনি পরিমণ্ডলে শূন্যতা বজায় রেখে নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে রেখে অনন্তকাল ধরে নিরাপদ ভাবা বোকামি। আমেরিকার বিখ্যাত ব্যবসা সাময়িকী ফর্বস। তাদের এক লেখায় ক্ষুব্ধ হলেন রুশ ব্যবসায়ী বরিস ব্রেজোভস্কি। তিনি আমেরিকা কিংবা রাশিয়ায় নয়, মানহানির মামলা ঠুকলেন ব্রিটেনে। ওই সাময়িকীর অনলাইন সংস্করণ যেহেতু ইন্টারনেটে ব্রিটেনবাসী দেখতে পায় এবং ব্রিটেনে ব্রেজোভস্কির ব্যবসাগত স্বার্থ ও যোগসূত্র রয়েছে, তাই তিনি ব্রিটেনের টর্ট আইনে প্রতিকার চাইলেন। বিচারপতি পপলওয়েল ১৯৯৭ সালের ২২ অক্টোবর এর ওপর দাঁড়িয়ে রায় দেন, মামলা দায়েরের অধিকার তাঁর রয়েছে। কিন্তু ব্রিটেনে তাঁর স্বার্থ খুবই নগণ্য। তাই তাঁর উচিত রুশ কোর্টে মামলা করা। ব্রেজেভস্কি দমবার পাত্র নন। ১৯৯৮ সালের ১৯ নভেম্বর ইংল্যান্ডের কোর্ট অব আপিল তাঁর আপিল গ্রহণ করেন। তাঁরা বলেন, এই মানহানি মামলার বিচার অবশ্যই ব্রিটেনে হতে পারে। সুতরাং দেশে যাঁরা আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী রয়েছেন, তাঁরা বিদেশি জুরিসডিকশন বা অধিকারক্ষেত্রের দিকে চোখ রাখতে পারেন। কোনো কোনো সম্পাদক ভাবতে পারেন, অনলাইনে পাওয়া জিনিস বর্জ্য কি না, তা পরখ করার দরকার নেই। কিন্তু তা ভুল। ইন্টারনেট-সংক্রান্ত মানহানি আইন ও তার ব্যাপকতা অনেকটা ধেয়ে আসছে। কোনো ওয়েবসাইটের গালগল্প ছেপে ঘুমিয়ে পড়লে চলবে না।
আমাদের পত্রপত্রিকাগুলো অনলাইনে গিয়ে কার্যত নিজেদের অজান্তেই আন্তর্জাতিক আইনি পরিমণ্ডলে প্রবেশ করছে। যেকোনো মিথ্যা ও কুত্সাপূর্ণ বিজ্ঞাপন এখন অনলাইনের কল্যাণে আর কেবলই অভ্যন্তরীণ থাকছে না; এর আন্তসীমান্ত প্রভাব অনিবার্য হচ্ছে। এফবিসিসিআইয়ের মতো সংগঠনগুলো তাই বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনবিধি না থাকার বিষয়ে নীরব দর্শক হতে পারে না। ব্রিটেন ও ইউরোপে যাদের যথেষ্ট বাণিজ্য স্বার্থ রয়েছে, আন্তর্জাতিক চেম্বার অব কমার্স—আইসিসির সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, বিদেশি অধিকারক্ষেত্রেও তাদের প্রতিকারের উপায় আছে কি না, তা হয়তো খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। ব্রাসেলসভিত্তিক ইউরোপীয় অ্যাডভার্টাইজিং স্টান্ড্যার্ডস অ্যালায়েন্স প্রণীত ব্লু বুক বাংলাদেশ সরকারের ওপরও সমানভাবে প্রযোজ্য। সুতরাং ব্রিটেন বা ইউরোপের সঙ্গে বিরাট ব্যবসায় স্বার্থ রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে মিথ্যা বিজ্ঞাপন আগ্রাসনের শিকার হলে বা আগ্রাসী ভূমিকায় নেমে পড়লে সরকার বাহাদুরও হয়তো নিরপেক্ষ বা ‘চেয়ে চেয়ে দেখলাম’ অবস্থান নিতে পারে না।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের বিধিবিধান একটি বিরাট রক্ষাকবচ। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না। প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালী করতে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে। গণমাধ্যমের ওপর এর প্রভাব ন্যূনতম। ১৯৭৪ সালের প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্টের আওতায় ১৯৯৩ সালে একটি আচরণবিধি প্রণীত হয়। এতে বলা আছে, ‘মানহানিকর ও জনস্বার্থবিরোধী না হলে উপযুক্ত ব্যক্তির সই করা যেকোনো বিজ্ঞাপন ছাপানোর অধিকার সম্পাদকের রয়েছে। তবে কেউ যদি কোনো বিজ্ঞাপনের প্রতিবাদ করেন তাহলে তখন তাঁকে তা বিনামূল্যে ছাপতে হবে।’ অনেক ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের সম্পাদকেরা এই আচারণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন। একটি সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত দিই।
নারায়ণগঞ্জের দৈনিক খবরের পাতায় ২০০৬ সালের ২১ নভেম্বর একটি মানহানিকর প্রতিবেদন বিজ্ঞাপন আকারে ছাপা হয়। এতে নারায়ণগঞ্জের তত্কালীন নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে মামলার এক পক্ষ উেকাচের বিনিময়ে তার প্রতিপক্ষকে জামিন দান ও মামলা খালাসের জন্য বিচারককে ৫০ হাজার টাকা প্রদানের মতো অভিযোগ আনে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। বিচারক পত্রিকার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মাসুমের বিরুদ্ধে প্রেস কাউন্সিলে মামলা (নং ৫/২০০৭) করেন। প্রেস কাউন্সিলের পাঁচ সদস্যের জুডিশিয়াল কমিটি (বিচারপতি আবু সাঈদ আহাম্মদ, প্রফেসর ড. মাহবুব উল্লাহ, আলমগীর মহিউদ্দিন, ফজলুল করিম ও আব্বাস উদ্দিন আফসারীকে নিয়ে গঠিত) ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর পত্রিকার সম্পাদককে দোষী সাব্যস্ত করেন। কমিটির রায়, ‘খবরের পাতা পত্রিকার সম্পাদককে মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ সংবাদ প্রচারের কারণে তিরস্কার, ভর্ত্সনা ও সতর্ক করা হলো।’ এই রায় হুবহু সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় ছাপানোর নির্দেশ ছিল। এবং তা তামিল হয়েছিল বলে পত্রিকাটির সম্পাদক আমাকে টেলিফোনে নিশ্চিত করেন।
বাংলাদেশের একটি বিজ্ঞাপনবিধি দরকার। দরকার এ বিষয়ে একটি স্বনিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান। বিজ্ঞাপনশিল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশু বিবেচনায় নিতে পারেন যে নিজেরা নিজেদের তদারক না করলে তাঁরা অন্যের নিয়ন্ত্রণের কবলে পড়তে পারেন।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
No comments