শ্রীলংকার টি মিউজিয়াম, ঐতিহ্য বেঁচে আছে যেখানে by ফ্রান্সিস বুলাতসিঙ্ঘালা
ঔপনিবেশিক
অতীত আর বর্তমান এক সাথে মিশে গেছে শ্রীলংকার যাদুঘরে, যেখানে দেশের চায়ের
ঐতিহ্য সংরক্ষিত রয়েছে। ঐতিহাসিক ক্যান্ডি শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে
নয়নাভিরাম হানতানা পাহাড়ি এলাকায় দাঁড়িয়ে আছে এই যাদুঘর। ১৯২৫ সালে হানতান
টি ফ্যাক্টরিটিই এখন যাদুঘরে রূপ নিয়েছে। দানবাকৃতির চা প্রক্রিয়াজাতকরণের
যন্ত্রপাতি আর শত বছরের পুরনো সরঞ্জামাদি রয়েছে এখানে। চা পাতা শুকানো এবং
বিশ্বের দূর-দূরান্তের বাজারে পাঠানোর উপযোগী করে তুলতে একসময় এই সব
যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হতো।
যাদুঘরের দেয়ালে এক-দেড়শ বছর আগের ছবি ঝুলছে। কিভাবে বন বাদার কেটে চা চাষের জমি তৈরি হলো, মাটির রাস্তা যেগুলো দিয়ে গরুর গাড়িতে চা নিয়ে যাওয়া হতো কলম্বো বা গালে বন্দরে। রেললাইন তৈরির আগে ওই মাটির রাস্তাতেই চা পরিবহন করতে হতো।
সেই শুরুর দিকের ব্রিটিশদের তৎপরতাও জীবন্ত উঠে উঠেছে যাদুঘরে। যেমন স্কটিস ভদ্রলোক জেমস টেইলর। চা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার নেশা ছিল তার। বলা যায় তার কারণেই শ্রীলংকায় চা চাষের শুরু। ১৮৬০-এর দশক পর্যন্ত সিলনে ব্রিটিশ চাষীদের প্রধান কৃষিপণ্য ছিল কফি। দারুণ মুনাফা হতো কফি চাষে। কিন্তু ১৮৬৯ সালে ভয়াবহ পাতার রোগ ছড়িয়ে পড়ে, পুরো তছনছ হয়ে যায় কফি শিল্প।
বলা যায় টেইলরের একক প্রচেষ্টাতেই কফির শূন্য জায়গা দখল করে চা। ভারত থেকে চা গাছ এনেছিলেন টেইলর। সেগুলো নিয়ে তার আগ্রহের অন্ত ছিল না। আদতে এই গাছগুলো আনা হয়েছিল চীন থেকে। এরপর কলকাতার বোটানিক্যাল গার্ডেনে উষ্ণ ও আদ্র ভারতীয় আবহাওয়ায় প্রথম লাগানো হয় গাছগুলো। এরপর আসামেও লাগানো হয় গাছগুলো এবং শেষ পর্যন্ত শ্রীলংকার ক্যান্ডি পাহাড়ে শেষ ঠিকানা হয় এগুলোর। আজকের যে টি মিউজিয়াম, এর কাছেই লুলেকোন্দেরা ইস্টেটে ১৯ একর জায়গা জুড়ে প্রথম চা বাগান গড়ে তুলেছিলেন টেইলর। টেইলরের ব্যাপারটা অনন্য ছিল সত্যিই কারণ শুধু বিপুল পরিমাণ চা চাষের দিকেই তার আগ্রহ ছিল না, চা প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রেই সবার সেরা হতে চেয়েছিলেন তিনি।
টি মিউজিয়াম এই সব আবিষ্কারের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে বিশেষ করে টেইলর যে সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছিলেন। অতিকায় বা মাঝারি আকারের এই সব যন্ত্রপাতির মধ্যের চা রোলিং মেশিনও রয়েছে একটি, চা পাতা গুড়া করার জন্য যেটি উদ্ভাবন করেছিলেন টেইলর। বাকি যন্ত্রপাতিগুলো চা চাষ থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহার করা হতো।
টি মিউজিয়ামে দর্শনার্থীরা টেইলর, তার যন্ত্রপাতি এবং শ্রীলংকার চা চাষের ইতিহাসের সাথে সাথে চা শিল্পের আরও সব বড় বড় ব্যক্তিদের অতীতটাও জীবন্ত দেখতে পাবেন। প্রচুর তথ্যের সাথে এখানে লিফলেট, পোস্টার এমনকি ভিডিও-ও রয়েছে। মিউজিয়ামের মধ্যেই তৈরি রেস্তোরাঁয় বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে এই সব ভিডিও দেখতে পারবেন আপনি।
চা ‘টেস্ট’ করার সুক্ষ্ম ব্যাপারটার সাথেও পরিচিত হতে পারবেন দর্শনার্থীরা। শ্রীলংকার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন আবহাওয়ায় চাষ ও প্রক্রিয়াজাত করা চা দেয়া হবে আপনার সামনে। ছোট দেশ হলেও শ্রীলংকায় বিচিত্র স্বাদের চায়ের দেখা মিলবে। পাহাড়ি এলাকার কত উচ্চতায় চা উৎপাদিত হচ্ছে, তার উপর ভিত্তি করে স্বাদও বদলে যায় চায়ের। আবার ক্যান্ডিতে যে চা তৈরি হচ্ছে, সেটা নুয়ারা এলিয়ান্দের মতো শীতল উঁচু এলাকায় খেতে একরকম লাগবে, আবার নিচু গালে বা মাতারা এলাকায় তার স্বাদ হবে ভিন্ন। বাতাসে জলীয় বাস্পের তারতম্যের কারণে বদলে যায় এই স্বাদ।
সব মিলিয়ে চারটি তলা জুড়ে ছড়ানো যাদুঘরটি। নিচ তলা আর তৃতীয় তলায় রয়েছে পুরনো যন্ত্রপাতিগুলো। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে লাইব্রেরি। চা নিয়ে যাবতীয় তথ্য রয়েছে এখানে। সাথে রয়েছে অডিটোরিয়াম আর অডিও ভিডিওর কালেকশান। চতুর্থ তলায় রয়েছে কেনাবেচার দোকান। শ্রীলংকার সবচেয়ে ভাল চা’টা এখান থেকে কিনতে পারবেন আপনি। চা সম্পর্কিত বই পুস্তক, পোস্টার, অডিও ভিডিও-ও পাবেন এখানকার দোকানগুলোতে।
যাদুঘরের চতুর্থ তলার সাথেই রয়েছে চমৎকার চা ক্যাফে। চা তো খেতে পারবেনই, এখানে রয়েছে আরও চমৎকার আকর্ষণ। টেলিস্কোপ বসানো রয়েছে এই ক্যাফেতে, যেগুলো দিয়ে অসাধারণ দৃষ্টিনন্দন হুনাসগিরিয়া, নাকলস রেঞ্জ এবং মাতালে রেঞ্জের পাহাড়গুলোতে ঘনিষ্ঠ নজর বুলাতে পারবেন আপনি। সন্দেহ নেই টেলিস্কোপে দেখার পর ওই জায়গাগুলোতে যেতে ইচ্ছে করবে আপনার। আরও যদি চায়ের স্বাদ নিতে চান আপনি, যাদুঘরের চারদিকে ঘিরে বহু রকমের চা পাবেন আপনি।
যাদুঘরে এবং এর চারপাশে আসলে কি আছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ধারণা দেয়ার জন্য যাদুঘরের পক্ষ থেকে গাইডের ব্যবস্থাও রয়েছে। যাদুঘরের স্টাফরা আপনাকে বুঝিয়ে দেবে কোন মেশিন দিয়ে কি করা হতো। চায়ের কি স্বাস্থ্যগুণ, সেগুলো নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট তথ্য ও লিফলেট। এই যাদুঘরে একবার ঘুরে গেলে নিশ্চিত চায়ের ভক্ত হয়ে যাবেন আপনি। শুধু এর স্বাদের কারণে নয়, বরং এর স্বাস্থ্যগুণের কারণে বিশেষ করে ক্যান্সার প্রতিরোধে এর ভূমিকার কারণে।
এই্ প্রতিবেদনটি শ্রীলংকার চা ও এর ঐতিহ্য নিয়ে সাউথ এশিয়ান মনিটরের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের অংশ।
যাদুঘরের দেয়ালে এক-দেড়শ বছর আগের ছবি ঝুলছে। কিভাবে বন বাদার কেটে চা চাষের জমি তৈরি হলো, মাটির রাস্তা যেগুলো দিয়ে গরুর গাড়িতে চা নিয়ে যাওয়া হতো কলম্বো বা গালে বন্দরে। রেললাইন তৈরির আগে ওই মাটির রাস্তাতেই চা পরিবহন করতে হতো।
সেই শুরুর দিকের ব্রিটিশদের তৎপরতাও জীবন্ত উঠে উঠেছে যাদুঘরে। যেমন স্কটিস ভদ্রলোক জেমস টেইলর। চা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার নেশা ছিল তার। বলা যায় তার কারণেই শ্রীলংকায় চা চাষের শুরু। ১৮৬০-এর দশক পর্যন্ত সিলনে ব্রিটিশ চাষীদের প্রধান কৃষিপণ্য ছিল কফি। দারুণ মুনাফা হতো কফি চাষে। কিন্তু ১৮৬৯ সালে ভয়াবহ পাতার রোগ ছড়িয়ে পড়ে, পুরো তছনছ হয়ে যায় কফি শিল্প।
বলা যায় টেইলরের একক প্রচেষ্টাতেই কফির শূন্য জায়গা দখল করে চা। ভারত থেকে চা গাছ এনেছিলেন টেইলর। সেগুলো নিয়ে তার আগ্রহের অন্ত ছিল না। আদতে এই গাছগুলো আনা হয়েছিল চীন থেকে। এরপর কলকাতার বোটানিক্যাল গার্ডেনে উষ্ণ ও আদ্র ভারতীয় আবহাওয়ায় প্রথম লাগানো হয় গাছগুলো। এরপর আসামেও লাগানো হয় গাছগুলো এবং শেষ পর্যন্ত শ্রীলংকার ক্যান্ডি পাহাড়ে শেষ ঠিকানা হয় এগুলোর। আজকের যে টি মিউজিয়াম, এর কাছেই লুলেকোন্দেরা ইস্টেটে ১৯ একর জায়গা জুড়ে প্রথম চা বাগান গড়ে তুলেছিলেন টেইলর। টেইলরের ব্যাপারটা অনন্য ছিল সত্যিই কারণ শুধু বিপুল পরিমাণ চা চাষের দিকেই তার আগ্রহ ছিল না, চা প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রেই সবার সেরা হতে চেয়েছিলেন তিনি।
টি মিউজিয়াম এই সব আবিষ্কারের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে বিশেষ করে টেইলর যে সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছিলেন। অতিকায় বা মাঝারি আকারের এই সব যন্ত্রপাতির মধ্যের চা রোলিং মেশিনও রয়েছে একটি, চা পাতা গুড়া করার জন্য যেটি উদ্ভাবন করেছিলেন টেইলর। বাকি যন্ত্রপাতিগুলো চা চাষ থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহার করা হতো।
টি মিউজিয়ামে দর্শনার্থীরা টেইলর, তার যন্ত্রপাতি এবং শ্রীলংকার চা চাষের ইতিহাসের সাথে সাথে চা শিল্পের আরও সব বড় বড় ব্যক্তিদের অতীতটাও জীবন্ত দেখতে পাবেন। প্রচুর তথ্যের সাথে এখানে লিফলেট, পোস্টার এমনকি ভিডিও-ও রয়েছে। মিউজিয়ামের মধ্যেই তৈরি রেস্তোরাঁয় বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে এই সব ভিডিও দেখতে পারবেন আপনি।
চা ‘টেস্ট’ করার সুক্ষ্ম ব্যাপারটার সাথেও পরিচিত হতে পারবেন দর্শনার্থীরা। শ্রীলংকার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন আবহাওয়ায় চাষ ও প্রক্রিয়াজাত করা চা দেয়া হবে আপনার সামনে। ছোট দেশ হলেও শ্রীলংকায় বিচিত্র স্বাদের চায়ের দেখা মিলবে। পাহাড়ি এলাকার কত উচ্চতায় চা উৎপাদিত হচ্ছে, তার উপর ভিত্তি করে স্বাদও বদলে যায় চায়ের। আবার ক্যান্ডিতে যে চা তৈরি হচ্ছে, সেটা নুয়ারা এলিয়ান্দের মতো শীতল উঁচু এলাকায় খেতে একরকম লাগবে, আবার নিচু গালে বা মাতারা এলাকায় তার স্বাদ হবে ভিন্ন। বাতাসে জলীয় বাস্পের তারতম্যের কারণে বদলে যায় এই স্বাদ।
সব মিলিয়ে চারটি তলা জুড়ে ছড়ানো যাদুঘরটি। নিচ তলা আর তৃতীয় তলায় রয়েছে পুরনো যন্ত্রপাতিগুলো। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে লাইব্রেরি। চা নিয়ে যাবতীয় তথ্য রয়েছে এখানে। সাথে রয়েছে অডিটোরিয়াম আর অডিও ভিডিওর কালেকশান। চতুর্থ তলায় রয়েছে কেনাবেচার দোকান। শ্রীলংকার সবচেয়ে ভাল চা’টা এখান থেকে কিনতে পারবেন আপনি। চা সম্পর্কিত বই পুস্তক, পোস্টার, অডিও ভিডিও-ও পাবেন এখানকার দোকানগুলোতে।
যাদুঘরের চতুর্থ তলার সাথেই রয়েছে চমৎকার চা ক্যাফে। চা তো খেতে পারবেনই, এখানে রয়েছে আরও চমৎকার আকর্ষণ। টেলিস্কোপ বসানো রয়েছে এই ক্যাফেতে, যেগুলো দিয়ে অসাধারণ দৃষ্টিনন্দন হুনাসগিরিয়া, নাকলস রেঞ্জ এবং মাতালে রেঞ্জের পাহাড়গুলোতে ঘনিষ্ঠ নজর বুলাতে পারবেন আপনি। সন্দেহ নেই টেলিস্কোপে দেখার পর ওই জায়গাগুলোতে যেতে ইচ্ছে করবে আপনার। আরও যদি চায়ের স্বাদ নিতে চান আপনি, যাদুঘরের চারদিকে ঘিরে বহু রকমের চা পাবেন আপনি।
যাদুঘরে এবং এর চারপাশে আসলে কি আছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ধারণা দেয়ার জন্য যাদুঘরের পক্ষ থেকে গাইডের ব্যবস্থাও রয়েছে। যাদুঘরের স্টাফরা আপনাকে বুঝিয়ে দেবে কোন মেশিন দিয়ে কি করা হতো। চায়ের কি স্বাস্থ্যগুণ, সেগুলো নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট তথ্য ও লিফলেট। এই যাদুঘরে একবার ঘুরে গেলে নিশ্চিত চায়ের ভক্ত হয়ে যাবেন আপনি। শুধু এর স্বাদের কারণে নয়, বরং এর স্বাস্থ্যগুণের কারণে বিশেষ করে ক্যান্সার প্রতিরোধে এর ভূমিকার কারণে।
এই্ প্রতিবেদনটি শ্রীলংকার চা ও এর ঐতিহ্য নিয়ে সাউথ এশিয়ান মনিটরের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের অংশ।
No comments