দলিল ও দুর্নীতি সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে: -টিআইবি’র গবেষণা
ভূমি
নিবন্ধনে এ অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটির এ
প্রতিবেদনে ভুমি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। টিআইবি
বলছে, এ খাতে দুর্নীতি রোধের চেষ্টা করা হলেও দুর্নীতি কমেনি, বরং আগের
চেয়ে বেড়েছে। টিআইবির নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নির্বাহী পরিচালক
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দলিল নিবন্ধন অফিস দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ
নিয়েছে। এই সেবায় ক্রমাগত দুর্নীতি বেড়েই চলেছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে,
দেশব্যাপী কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া দেশের সব দলিল লিখন অফিসের ঘুষ লেনদেন
বিষয়টি এখন স্বাভাবিক চিত্র।
অনুষ্ঠানের শুরুতে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন, নিহার রঞ্জন রায় ও শাম্মী লায়লা ইসলাম। এতে বলা হয়, একটি দলিলের নকল তুলতে সেবা গ্রহীতাদের গুনতে হয় ১ থেকে ৭ হাজার টাকা। আর দলিল নিবন্ধনের জন্য দলিল লেখক সমিতিকে চাঁদা দিতে হয় ৫শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও ভূমির আকার ও এলাকাভেদে এই টাকার পরিমাণ অনেক সময় বেশিও হয়ে থাকে। আর দলিল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নিয়ম বর্হিভূতভাবে গুণতে হয় ১ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।
টিআইবি জানায়, দেশের ৮টি বিভাগের ১৬টি জেলার ৪১টি সাবরেজিস্ট্রার অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও জাতীয় পর্যায়ে নিবন্ধন অধিদপ্তর ও অংশীজনদের কাছ থেকে গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় উঠে আসে-২০১৭ সালের জরিপের ফলাফল অনুযায়ী ৪২.৫ শতাংশ সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে সেবা গ্রহণের সময় দুর্নীতির শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ২৮.৩ শতাংশ গড়ে ১১ হাজার ৮৫২ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এসব অবৈধ অর্থ ১০/১৫ শতাংশ সাবরেজিস্ট্রার ও বাকী অর্থ অফিসের সকলের মধ্যে পদ অনুযায়ী বাটোয়ারা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নিবন্ধন অধিদপ্তরের অধীনে ৩৬ লাখ ৭২ হাজার ৬২৮টি দলিল নিবন্ধন হয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৪৩২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
গবেষণায় একটি উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, একটি পৌঁনে ৬ শতক জমির প্রকৃত মূল্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তিনি ৫ লাখ টাকা কমানোর জন্য দেন ৫ লাখ টাকা ঘুষ। আর ফি জমা দেন ৫ লাখ টাকা।
গবেষণায় আরো উঠে আসে, এই ৪১ অফিসের প্রায় অর্ধেক অফিসের কর্মচারীরা সময়মতো অফিসে আসেন না। নকলনবীশদের নিয়োগ এবং দলিল লেখকদের লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশ ছাড়া কাজ হয় না। আবার এই সুপারিশ অনেকসময় করে থাকেন মেয়র, সংসদ সদস্য এমনকি মন্ত্রীও। নকলনবীশ হিসেবে নাম তালিকাভুক্তকরণ ২০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। এছাড়াও নকলনবীশ থেকে মোহরার পদে যোগদানে ২ থেকে ৮ লাখ টাকা, মোহরার থেকে সহকারী পদে যোগদানে ৩ থেকে ১০ লাখ, দলিল লেখকের লাইসেন্স প্রাপ্তি ১ থেকে ৩ লাখ টাকা, দলিল লেখক সমিতিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করণে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা আর সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে বদলিতে ৩ থেকে ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়।
গবেষণায় ব্যবহৃত অফিসের ৪১টির মাঝে ২৭টি জরাজীর্ণ ভবনে কাজ চলছে। নকলনবীশদের কাজ করতে হয় ২০/২৫ জনকে এক রুমে। এছাড়া বারান্দা, সিঁড়ির নিচেও কাজ করতে হয় তাদের। আর ৪১ টির মধ্যে ৩২ টি অফিসেই দেখা যায় প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের ঘাটতি। ৩১টি অফিসে সরকার নির্ধারিত ফি’র চার্ট নেই কিংবা দৃষ্টিগোচর নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই দুর্নীতি বন্ধ করতে সদিচ্ছা জরুরি। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আর ভূমির ডিজিটালাইজেশন খুবই জরুরি। দিনে দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এমন ব্যক্তি কমই খুঁজে পাওয়া যায় যিনি দলিল সংক্রান্ত দুর্নীতির শিকার হননি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনি জটিলতার কারণেও কিছু অস্পষ্টতা ও বিরোধিতা হয়ে আসছে। হালনাগাদ খতিয়ান সাব-রেজিস্ট্রার অফিসগুলোতে নিয়মিত সরবরাহ হচ্ছে না। এছাড়াও জনবলের ঘাটতি, লজিস্টিকস ও আর্থিক বরাদ্দ এবং দুর্বল অবকাঠামো ও ডিজিটালাইজেশনের ঘাটতি। আর নিয়মবহির্ভুতভাবে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এই আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে বিভিন্ন অংশে বিভিন্নজনের পারস্পরিক যোগসাজশ থাকায় অভ্যন্তরীন জবাবদিহিতা কাঠামো যৌথভাবে কাজ করছে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল, উপদেষ্টা (নির্বাহী) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন, নিহার রঞ্জন রায় ও শাম্মী লায়লা ইসলাম। এতে বলা হয়, একটি দলিলের নকল তুলতে সেবা গ্রহীতাদের গুনতে হয় ১ থেকে ৭ হাজার টাকা। আর দলিল নিবন্ধনের জন্য দলিল লেখক সমিতিকে চাঁদা দিতে হয় ৫শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও ভূমির আকার ও এলাকাভেদে এই টাকার পরিমাণ অনেক সময় বেশিও হয়ে থাকে। আর দলিল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে নিয়ম বর্হিভূতভাবে গুণতে হয় ১ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।
টিআইবি জানায়, দেশের ৮টি বিভাগের ১৬টি জেলার ৪১টি সাবরেজিস্ট্রার অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও জাতীয় পর্যায়ে নিবন্ধন অধিদপ্তর ও অংশীজনদের কাছ থেকে গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় উঠে আসে-২০১৭ সালের জরিপের ফলাফল অনুযায়ী ৪২.৫ শতাংশ সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে সেবা গ্রহণের সময় দুর্নীতির শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ২৮.৩ শতাংশ গড়ে ১১ হাজার ৮৫২ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এসব অবৈধ অর্থ ১০/১৫ শতাংশ সাবরেজিস্ট্রার ও বাকী অর্থ অফিসের সকলের মধ্যে পদ অনুযায়ী বাটোয়ারা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নিবন্ধন অধিদপ্তরের অধীনে ৩৬ লাখ ৭২ হাজার ৬২৮টি দলিল নিবন্ধন হয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৪৩২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
গবেষণায় একটি উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, একটি পৌঁনে ৬ শতক জমির প্রকৃত মূল্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তিনি ৫ লাখ টাকা কমানোর জন্য দেন ৫ লাখ টাকা ঘুষ। আর ফি জমা দেন ৫ লাখ টাকা।
গবেষণায় আরো উঠে আসে, এই ৪১ অফিসের প্রায় অর্ধেক অফিসের কর্মচারীরা সময়মতো অফিসে আসেন না। নকলনবীশদের নিয়োগ এবং দলিল লেখকদের লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশ ছাড়া কাজ হয় না। আবার এই সুপারিশ অনেকসময় করে থাকেন মেয়র, সংসদ সদস্য এমনকি মন্ত্রীও। নকলনবীশ হিসেবে নাম তালিকাভুক্তকরণ ২০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। এছাড়াও নকলনবীশ থেকে মোহরার পদে যোগদানে ২ থেকে ৮ লাখ টাকা, মোহরার থেকে সহকারী পদে যোগদানে ৩ থেকে ১০ লাখ, দলিল লেখকের লাইসেন্স প্রাপ্তি ১ থেকে ৩ লাখ টাকা, দলিল লেখক সমিতিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করণে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা আর সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে বদলিতে ৩ থেকে ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়।
গবেষণায় ব্যবহৃত অফিসের ৪১টির মাঝে ২৭টি জরাজীর্ণ ভবনে কাজ চলছে। নকলনবীশদের কাজ করতে হয় ২০/২৫ জনকে এক রুমে। এছাড়া বারান্দা, সিঁড়ির নিচেও কাজ করতে হয় তাদের। আর ৪১ টির মধ্যে ৩২ টি অফিসেই দেখা যায় প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের ঘাটতি। ৩১টি অফিসে সরকার নির্ধারিত ফি’র চার্ট নেই কিংবা দৃষ্টিগোচর নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই দুর্নীতি বন্ধ করতে সদিচ্ছা জরুরি। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আর ভূমির ডিজিটালাইজেশন খুবই জরুরি। দিনে দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এমন ব্যক্তি কমই খুঁজে পাওয়া যায় যিনি দলিল সংক্রান্ত দুর্নীতির শিকার হননি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনি জটিলতার কারণেও কিছু অস্পষ্টতা ও বিরোধিতা হয়ে আসছে। হালনাগাদ খতিয়ান সাব-রেজিস্ট্রার অফিসগুলোতে নিয়মিত সরবরাহ হচ্ছে না। এছাড়াও জনবলের ঘাটতি, লজিস্টিকস ও আর্থিক বরাদ্দ এবং দুর্বল অবকাঠামো ও ডিজিটালাইজেশনের ঘাটতি। আর নিয়মবহির্ভুতভাবে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এই আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে বিভিন্ন অংশে বিভিন্নজনের পারস্পরিক যোগসাজশ থাকায় অভ্যন্তরীন জবাবদিহিতা কাঠামো যৌথভাবে কাজ করছে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল, উপদেষ্টা (নির্বাহী) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।
No comments