অভিন্ন সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের পথ দেখাচ্ছে বিআরআই by সুলতানা ইয়েসমিন
কাজাখস্তানের
নাজারবায়েভ ইউনিভার্সিটিতে ২০১৩ সালের ৭ ডিসেম্বর সিল্ক রোড ইকোনমিক
বেল্টটি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়টি প্রথম উপস্থাপন করেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি
জিনপিং। একই বছরের ৩ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়া সফরকালে টুয়েন্টি ফার্স্ট
সেঞ্চুরি ম্যারিটাইম সিল্ক রোড নির্মাণের আইডিয়া তুলে ধরেন তিনি। এই দুটো
ধারণাকে পরে সম্মিলিতভাবে ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড (ওবিওআর) ইনিশিয়েটিভ বা
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বেল্ট
অ্যান্ড রোড দেশগুলোর মধ্যে একটা সমন্বিত, সহযোগিতামূলক, এবং পারস্পরিক
উপকারী নৌ ও স্থল-ভিত্তিক অর্থনৈতিক করিডোর গড়ে তোলা এই প্রকল্পের
উদ্দেশ্য।
চীনের প্রস্তাবিত বিআরআই এরই মধ্যে সারা বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১২৬টি দেশ ও ২৯টি আন্তর্জাতিক সংস্থা এই ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে চীনের সাথে ১৭৬টি সহযোগিতা চুক্তি করেছে।
জাতিসংঘ বিআরআইকে উষ্ণ স্বাগত জানিয়েছে এবং ২০১৬ সালের প্রস্তাবে বিআরআইকে অন্তর্ভুক্ত করার সাথে সাথে তারা সব পক্ষকে এই মেগা প্রকল্পে অংশগ্রহণের আহ্বান জানায়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউনাইডেট নেশান্স ডেভলপমেন্ট প্রগ্রাম (ইউএনডিপি) বিআরআইয়ের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীনের সাথে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে একটি সমঝোতা স্মারক এবং ২০১৭ সালের মে মাসে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
অবকাঠামো ও সংযোগ নির্মাণ, নীতি সমন্বয়, বাণিজ্য সম্ভাবনার বিকাশ, আর্থিক সমন্বয়, এবং অভিন্ন সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের নীতির ভিত্তিতে জনগণের পর্যায়ে সম্পর্ক নির্মাণের ব্যাপারে বিআরআই সফলভাবে তার সক্ষমতা দেখিয়েছে। যদিও কিছু মিডিয়া রিপোর্টে তথাকথিত ‘ঋণের ফাঁদ’ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু বিশ্ব খুব দ্রুতই বুঝতে পেরেছে যে, বিআরআই যে নীতির ভিত্তিতে চালিত হচ্ছে, সেখানে সব পক্ষের জন্য অর্জন রয়েছে, এবং এখানে সর্বমুখী সংযোগকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জোর দিয়ে বলেছেন, “চীনের প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ কোন ভূরাজনৈতিক অস্ত্র বা ঋণের ফাঁদ নয়, বরং এটা সহযোগিতার একটা প্ল্যাটফর্ম”।
উদাহরণস্বরূপ, বিআরআইয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি) এ যাবত দারুণ অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং সফলভাবে দেখিয়েছে যে, পাকিস্তানের জন্য এটা একটা ‘ঋণমুক্তির’ প্রকল্প, কোন ‘ঋণের ফাঁদ’ নয়। একই সাথে, তারা এটাও স্পষ্ট করেছে যে, শ্রীলংকার হামবানতোতা বন্দর নিয়ে তথাকথিত যে ‘ঋণের ফাঁদের’ অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেখানেও কোন সত্যতা নেই। শ্রীলংকার যে ঋণ পরিশোধ সমস্যা, সেটা তাদের সামগ্রিক ঋণ পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত, যেখানে চীনা ঋণের পরিমাণ মাত্র ১০ শতাংশ এবং সেখানেও ছাড় দেয়ার শর্ত রয়েছে।
সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট এবং টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ম্যারিটাইম সিল্ক রোডের মাধ্যমে চীন বেল্ট অ্যান্ড রোডভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অবকাঠামো ও পরিবহন উন্নয়ন ব্যাপকভাবে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন, যাতে এই দেশগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয় এবং তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পায়। এই প্রকল্প বহু উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে এবং বিশ্বের স্থল ও নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০১৩ সালে বিআরআইয়ের ধারণা জন্মের পর থেকে অভিন্ন প্রবৃদ্ধি ও পারস্পরিক উপকারের লক্ষ্য নিয়ে বেল্ট অ্যান্ড রোড নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে, যেখানে বেল্ট অ্যান্ড রোড দেশগুলোতে চীনের সরাসরি বিনিয়োগের পরিমাণ ৯০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বিআরআই নিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঘোষণা বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বাংলাদেশ এখানে সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট এবং টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ম্যারিটাইম সিল্ক রোড – দুটোরই অংশ। ২০১৬ সালের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বিআরআইয়ে যোগ দেয়। বাংলাদেশ বিআরআইকে একটা বিশাল সুযোগ হিসেবে নিয়েছে, যেটার মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে তারা মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের পর্যায়ে উন্নীত হতে পারবে।
এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, বিআরআই একটা নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যেটার ভিত্তি হলো বহুমেরুকেন্দ্রিকতা, উন্মুক্ত অর্থনীতি, অভিন্ন সমৃদ্ধি, পারস্পরিক উন্নয়ন, এবং মানবতার জন্য অভিন্ন ভবিষ্যৎ নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা।
>>>সুলতানা ইয়াসমিন চীনের হুবেইয়ের সেন্ট্রাল চায়না নর্মাল ইউনিভার্সিটির (সিসিএনইউ) স্কুল অব পলিটিক্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (এসপিআইএস) পিএইচডি গবেষক।
চীনের প্রস্তাবিত বিআরআই এরই মধ্যে সারা বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১২৬টি দেশ ও ২৯টি আন্তর্জাতিক সংস্থা এই ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে চীনের সাথে ১৭৬টি সহযোগিতা চুক্তি করেছে।
জাতিসংঘ বিআরআইকে উষ্ণ স্বাগত জানিয়েছে এবং ২০১৬ সালের প্রস্তাবে বিআরআইকে অন্তর্ভুক্ত করার সাথে সাথে তারা সব পক্ষকে এই মেগা প্রকল্পে অংশগ্রহণের আহ্বান জানায়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউনাইডেট নেশান্স ডেভলপমেন্ট প্রগ্রাম (ইউএনডিপি) বিআরআইয়ের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীনের সাথে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে একটি সমঝোতা স্মারক এবং ২০১৭ সালের মে মাসে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
অবকাঠামো ও সংযোগ নির্মাণ, নীতি সমন্বয়, বাণিজ্য সম্ভাবনার বিকাশ, আর্থিক সমন্বয়, এবং অভিন্ন সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের নীতির ভিত্তিতে জনগণের পর্যায়ে সম্পর্ক নির্মাণের ব্যাপারে বিআরআই সফলভাবে তার সক্ষমতা দেখিয়েছে। যদিও কিছু মিডিয়া রিপোর্টে তথাকথিত ‘ঋণের ফাঁদ’ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু বিশ্ব খুব দ্রুতই বুঝতে পেরেছে যে, বিআরআই যে নীতির ভিত্তিতে চালিত হচ্ছে, সেখানে সব পক্ষের জন্য অর্জন রয়েছে, এবং এখানে সর্বমুখী সংযোগকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। চীনের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জোর দিয়ে বলেছেন, “চীনের প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ কোন ভূরাজনৈতিক অস্ত্র বা ঋণের ফাঁদ নয়, বরং এটা সহযোগিতার একটা প্ল্যাটফর্ম”।
উদাহরণস্বরূপ, বিআরআইয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি) এ যাবত দারুণ অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং সফলভাবে দেখিয়েছে যে, পাকিস্তানের জন্য এটা একটা ‘ঋণমুক্তির’ প্রকল্প, কোন ‘ঋণের ফাঁদ’ নয়। একই সাথে, তারা এটাও স্পষ্ট করেছে যে, শ্রীলংকার হামবানতোতা বন্দর নিয়ে তথাকথিত যে ‘ঋণের ফাঁদের’ অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেখানেও কোন সত্যতা নেই। শ্রীলংকার যে ঋণ পরিশোধ সমস্যা, সেটা তাদের সামগ্রিক ঋণ পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কিত, যেখানে চীনা ঋণের পরিমাণ মাত্র ১০ শতাংশ এবং সেখানেও ছাড় দেয়ার শর্ত রয়েছে।
সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট এবং টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ম্যারিটাইম সিল্ক রোডের মাধ্যমে চীন বেল্ট অ্যান্ড রোডভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অবকাঠামো ও পরিবহন উন্নয়ন ব্যাপকভাবে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন, যাতে এই দেশগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয় এবং তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পায়। এই প্রকল্প বহু উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে এবং বিশ্বের স্থল ও নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০১৩ সালে বিআরআইয়ের ধারণা জন্মের পর থেকে অভিন্ন প্রবৃদ্ধি ও পারস্পরিক উপকারের লক্ষ্য নিয়ে বেল্ট অ্যান্ড রোড নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে, যেখানে বেল্ট অ্যান্ড রোড দেশগুলোতে চীনের সরাসরি বিনিয়োগের পরিমাণ ৯০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বিআরআই নিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঘোষণা বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বাংলাদেশ এখানে সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট এবং টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ম্যারিটাইম সিল্ক রোড – দুটোরই অংশ। ২০১৬ সালের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বিআরআইয়ে যোগ দেয়। বাংলাদেশ বিআরআইকে একটা বিশাল সুযোগ হিসেবে নিয়েছে, যেটার মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে তারা মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের পর্যায়ে উন্নীত হতে পারবে।
এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, বিআরআই একটা নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যেটার ভিত্তি হলো বহুমেরুকেন্দ্রিকতা, উন্মুক্ত অর্থনীতি, অভিন্ন সমৃদ্ধি, পারস্পরিক উন্নয়ন, এবং মানবতার জন্য অভিন্ন ভবিষ্যৎ নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা।
>>>সুলতানা ইয়াসমিন চীনের হুবেইয়ের সেন্ট্রাল চায়না নর্মাল ইউনিভার্সিটির (সিসিএনইউ) স্কুল অব পলিটিক্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (এসপিআইএস) পিএইচডি গবেষক।
গত ২ জুলাই মঙ্গলবার চীনের দালিয়ান শহরে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশ বিআরআইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয় |
No comments