যুদ্ধবাজদের এখন পোয়াবারো by ফজলুল কবির
মাস্টার্স
অব ওয়ার’ গানে বব ডিলান সুস্পষ্টভাবে অস্ত্রের রাজনীতি, অর্থনীতি ও
নিরাপত্তার গোপন সম্বন্ধটি উন্মোচন করে দিয়েছেন। গানটি অস্ত্রের কারবারিদের
কথিত নিরাপত্তার মুখোশটি খুলে দিয়েছে।
স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত গানটিতে তিনি পরাশক্তির দ্বন্দ্বের মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কোটি মানুষের জীবনকে শঙ্কায় ফেলা বাণিজ্যের ভিতটি দেখিয়ে দিয়েছিলেন, যা এখনো ভয়াবহভাবে প্রাসঙ্গিক।
অস্ত্রের ঝনঝনানি এ বিশ্বে কখনো থেমেছে কি না বলা মুশকিল। তবে এর শব্দের উচ্চতার তারতম্য নিশ্চয়ই ছিল। ছিল বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির তীব্রতার পার্থক্য। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তার দোহাইয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সশস্ত্রীকরণ একটি অপরিবর্তনীয় বাস্তবতা।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় এমন অজুহাতে সুস্পষ্টভাবে বিভক্ত দুই শিবিরে এমন সশস্ত্রীকরণের উত্তুঙ্গ রূপ বিশ্ব দেখেছে, যা বিশ্বের মানুষকে নিরাপত্তার বদলে অনিরাপত্তার বোধেই আক্রান্ত করেছে বেশি। সেই সময়টিই যেন আবার ফিরে এসেছে। সারা বিশ্বে সশস্ত্রীকরণ এখন সর্বোচ্চ মাত্রায় চলছে, ভীষণভাবে বেড়েছে সামরিক ব্যয়।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি) গত ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় গত বছর বেড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৮৮ সাল থেকে এ-সংক্রান্ত তথ্যের সন্নিবেশ শুরুর পর থেকে এটিই এ খাতে সর্বোচ্চ ব্যয়। আর স্নায়ুযুদ্ধ–পরবর্তী স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ বিশ্বের হিসাবকে গণনায় নিলে এ ব্যয় রীতিমতো চমকে দেয়। কারণ, এ ব্যয় ১৯৯৮ সালের বৈশ্বিক সামরিক ব্যয়ের তুলনায় ৭৬ শতাংশ বেশি।
বৈশ্বিক শক্তিগুলো অবশ্য এই তথ্যকে একটু ভিন্নভাবে দেখতে চায়। তাদের মতে, জিডিপির অংশ হিসেবে গত কয়েক বছরে সামরিক ব্যয় বরং কমেছে। অর্থাৎ আগে বৈশ্বিক জিডিপির যত অংশ সামরিক খাতে ব্যয় করা হতো, এখন তার চেয়ে কম ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু অর্থের অঙ্কে এটি আগের সব হিসাবকে ছাড়িয়ে গেছে, যা সারা বিশ্বে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে রীতিমতো চোখ রাঙাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার দ্বন্দ্বই মূলত এই সময়ে বৈশ্বিকভাবে সামরিক ব্যয় এত বিপুলভাবে বাড়ার কারণ। এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত, তা-ই এই সামরিক প্রতিযোগিতার সূচনা করেছে। শুরুটা হয়েছিল অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট এমনিতেই বিপুল ছিল, যা ২০১৮ সালে আরও বাড়ানো হয়। সামরিক ব্যয় একটি সীমার মধ্যে রাখার বিষয়ে কংগ্রেসের আরোপ করা বাধ্যবাধকতা ভেঙে সাত বছরে প্রথমবারের মতো এই ব্যয় বৃদ্ধি সারা বিশ্বকেই নতুন প্রতিযোগিতার বার্তা দেয়। এই বার্তার মূল লক্ষ্য চীন ও রাশিয়া খুব দ্রুত এর পাঠোদ্ধার করে ‘পরাশক্তির প্রতিযোগিতা’য় নেমে পড়ে। ফলাফল হলো ভয়াবহ।
সিপ্রির তথ্যমতে, গত বছর সারা বিশ্বের সামরিক খাতে ব্যয় ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। আর এই ব্যয়ের প্রায় অর্ধেকই করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন মিলে। এ দুই দেশ মিলে গত বছর সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ৮৯ হাজার ৯০০ কোটি ডলার।
অথচ ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব এখনো প্রতিশ্রুতির কাতারেই রয়ে গেছে, যার বাস্তবায়নের জন্য বছরে এর চেয়ে ঢের কম অর্থের প্রয়োজন। দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়তে বছরে মাত্র ২৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের তহবিল প্রয়োজন বলে উঠে এসেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও, কৃষি উন্নয়নে আন্তর্জাতিক তহবিল আইএফএডি ও ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজের গবেষণায়। এই অর্থে সারা বিশ্বের শিশুদের অপুষ্টির সমস্যা মিটিয়ে ফেলা সম্ভব। একই সঙ্গে সব শিশুর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব। এসব তহবিলে অর্থের জোগান সামরিক ব্যয়ের মতো একমুখী কোনো বিষয় নয়। অপুষ্টি ও ক্ষুধামুক্ত জনগোষ্ঠী অনেক বেশি উৎপাদনশীল, যেখানে সামরিক খাত শুধু চোখ রাঙাতেই পারে। আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) এক গবেষণার তথ্য বলছে, শুধু এশিয়াকে ক্ষুধামুক্ত করতে পারলেই এই অঞ্চলের মানুষের উৎপাদনশীলতা এক প্রজন্মের ব্যবধানে এতটাই বাড়বে যে তা বছরে দেড় লাখ কোটি ডলার অর্থনীতিতে যোগ করবে। তারপরও এসব খাতে তহবিল জোগানের প্রশ্নকে এড়িয়ে বিশ্বনেতারা নির্দ্বিধায় সামরিক ব্যয় বাড়িয়ে চলেন। নামেন প্রতিযোগিতায়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট জানাচ্ছে, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় ছিল ৬৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার, যা ছিল শীর্ষ দশে থাকা আটটি দেশের মোট সামরিক ব্যয়ের প্রায় কাছাকাছি। কিন্তু এটিও সন্তুষ্ট করতে পারেনি পেন্টাগনকে। গত বছর মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগনকে বরাদ্দ করে ৭১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। এতেও হচ্ছে না। আসছে বাজেটে সামরিক খাতে ৭৫ হাজার কোটি ডলার চাইছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে এই চাহিদার অনুকূলে বাজেট বৃদ্ধির প্রস্তাবও দিয়ে রেখেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একমাত্র ইরাক যুদ্ধ ছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট এত বেশি আর কখনো বাড়ানো হয়নি বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
এই দিক থেকে চীন কিছুটা পিছিয়েই আছে বলা যায়। সামরিক খাতে দেশটির ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয়ের এক-চতুর্থাংশ থেকে দুই-পঞ্চমাংশের মাঝামাঝি। তাদের মোট সামরিক বাজেট সম্পর্কে সুস্পষ্ট জানার উপায় নেই। চীনের সামরিক ব্যয় কিংবা এর বছরওয়ারি বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রের সমতুল্য না হলেও, তা এশিয়ার প্রেক্ষাপটে একধরনের সংকট তৈরি করছে। সিকি শতক ধরেই চীনের সামরিক ব্যয় বাড়ছে, যা এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্যে সুস্পষ্ট পরিবর্তন নিয়ে এনেছে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকৃত অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট ১৭ শতাংশ কমেছিল। একই সময়ে চীনের সামরিক বাজেট বাড়ে ৮৩ শতাংশ। মূলত প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আমলেই চীনের সামরিক বাজেট ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক বাজেট নিয়ে ইউএস নেভাল ওয়ার কলেজের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু এরিকসন দ্য ইকোনমিস্টকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আমলে চীন যে মাত্রায় সামরিক সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে, তা চীনের ইতিহাসেই বিরল। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে চীনের নৌবাহিনীর।’
গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইআইএসএসের তথ্যমতে, শুধু ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে চীন তার নৌবাহিনীর ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে, যা ভারত ও ফ্রান্সের নৌবাহিনীর মিলিত শক্তিকে ছাড়িয়ে গেছে। তারপরও দেশটির জিডিপির বিপরীতে সামরিক খাতে ব্যয় এখন অনেক কম। অন্তত সামরিক শক্তির বিচারে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দেশের জিডিপির বিপরীতে ব্যয়কে বিবেচনায় নিলে, তা-ই বলতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র যেখানে জিডিপির ৩ দশমিক ২ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করে, চীন সেখানে করে মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ। এর অর্থ হচ্ছে চীনের সামরিক সম্প্রসারণের আরও বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে, বলার অপেক্ষা রাখে না যা সামষ্টিক শঙ্কাকেই বাড়িয়ে তুলবে।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক সম্প্রসারণ বিশ্বের অন্য শক্তিগুলোকেও সামরিক ব্যয় বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করছে। বিশেষত চীনের সামরিক সম্প্রসারণ বৃদ্ধিকে হুমকি হিসেবে নিচ্ছে তার এশীয় প্রতিবেশীরা। এমনকি জাপানও তার প্রতিরক্ষা নীতিতে পরিবর্তন এনে একে ঢেলে সাজাতে চাইছে। এ লক্ষ্যে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েছে জাপান। কারণ হিসেবে তারা চীনকে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করছে। চীনের আঞ্চলিক প্রতিযোগী ভারত এরই মধ্যে সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে, যা ইউরোপের দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে কিছুদিন আগে হওয়া সীমান্ত বিরোধ এই প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে নিশ্চিতভাবেই। বর্তমান নরেন্দ্র মোদি সরকার পুনর্নির্বাচনের যৌক্তিকতা হিসেবে এই নিরাপত্তার সম্বন্ধটিই সামনে আনছে। নির্বাচনের ফল যেদিকেই যাক না কেন, ভারতের পরবর্তী নেতৃত্ব বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হবেন বলা যায়। ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়াও সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে, যা ছিল ২০০৫ সালের পর সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে চীনের পদক্ষেপের কারণে অনেকটা নিভৃতেই এশিয়ায় শুরু হয়ে গেছে সশস্ত্রীকরণ প্রতিযোগিতা। ১৯৮৮ সালে যেখানে এশিয়ার দেশগুলোর বাজেটের ৮ শতাংশ ব্যয় হতো সামরিক খাতে, এখন তা বেড়ে ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে সিপ্রি।
পিছিয়ে নেই ইউরোপীয় দেশগুলোও। ন্যাটোভুক্ত ইউরোপীয় দেশগুলো ২০১৮ সালে সামরিক বাজেট আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে আইআইএসএস। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, রাশিয়াকে হুমকি মনে করা পোল্যান্ড গত বছর সামরিক বাজেট ৮ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়িয়েছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সামরিক দিক থেকে ইউরোপ সম্মিলিতভাবে বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিধর অঞ্চলে পরিণত হবে, যার শক্তির মাত্রা রাশিয়ার চেয়ে চার গুণ হবে। এই হিসাবটিও নিশ্চয়ই রাশিয়া করছে। ২০১৮ সালে সাড়ে ৩ শতাংশ সামরিক বাজেট কমলেও বিশ্বব্যাপী সামরিকীকরণের এই প্রতিযোগিতায় রাশিয়া চুপ করে বসে থাকার দেশ নয়। ভূরাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় ও সামরিকীকরণের প্রেক্ষাপটকে দেশটি যে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে, তার একটি বড় প্রমাণ বহন করছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কিম জং উনের মধ্যকার সাম্প্রতিক বৈঠক।
তবে বৈশ্বিক এই প্রবণতায় একটি বড় ব্যতিক্রম হচ্ছে আফ্রিকা। অঞ্চলটির সামরিক ব্যয় টানা চার বছর ধরে কমছে। সিপ্রির তথ্যমতে, গত চার বছরে আফ্রিকার দেশগুলোর সম্মিলিত সামরিক বাজেট কমেছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যও কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে। অঞ্চলটির বড় শক্তিগুলোর মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরান সামরিক ব্যয় কমানোর পরিকল্পনা করছে। যদিও আঞ্চলিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে তা শেষ পর্যন্ত কোথায় দাঁড়াবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। বিশেষত ইসরায়েলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পুনর্নির্বাচন ও তাঁর দেওয়া ‘নিরাপত্তা’ প্রতিশ্রুতির বিপরীতে মধ্যপ্রাচ্য শান্তিপ্রক্রিয়ার গতিমুখের ওপরই পুরোপুরি নির্ভর করছে। এ ক্ষেত্রে এমনকি কাতারের সঙ্গে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন চার আরব দেশের বিরাজমান দ্বন্দ্বের বিষয়টিও বিবেচ্য।
সব মিলিয়ে বিশ্ব আবারও এক ভীষণ অস্ত্র প্রতিযোগিতার কালে প্রবেশ করেছে বলা যায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্যযুদ্ধের আবরণে যার সূচনা করেছিলেন, তা এখন খোলাখুলি রণসজ্জার প্রতিযোগিতায় রূপান্তরিত হয়েছে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি অঞ্চল এই প্রতিযোগিতায় ইতিমধ্যে শামিল হয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা বলছে, এই প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে। এই পুরো প্রতিযোগিতা চলছে নিরাপত্তার মতো একটি অতি জরুরি শব্দের প্রয়োগ ও অজুহাতে। যদিও শাসক প্রযুক্ত এই নিরাপত্তার অজুহাত কখনো সাধারণ মানুষকে নিরাপদ বোধ দিতে পারেনি; দিতে পেরেছে শুধু আরও লাল, আরও প্রকট মৃত্যুর চোখরাঙানি। অস্ত্রের সওদার সঙ্গে মৃত্যুর সওদার কোনো তফাত নেই; একটি আরেকটিকে বাড়িয়ে তোলে, যা আদতে অস্ত্রের কারবারিদের সাম্রাজ্যই বাড়িয়ে তোলে।
স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত গানটিতে তিনি পরাশক্তির দ্বন্দ্বের মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কোটি মানুষের জীবনকে শঙ্কায় ফেলা বাণিজ্যের ভিতটি দেখিয়ে দিয়েছিলেন, যা এখনো ভয়াবহভাবে প্রাসঙ্গিক।
অস্ত্রের ঝনঝনানি এ বিশ্বে কখনো থেমেছে কি না বলা মুশকিল। তবে এর শব্দের উচ্চতার তারতম্য নিশ্চয়ই ছিল। ছিল বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির তীব্রতার পার্থক্য। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তার দোহাইয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সশস্ত্রীকরণ একটি অপরিবর্তনীয় বাস্তবতা।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় এমন অজুহাতে সুস্পষ্টভাবে বিভক্ত দুই শিবিরে এমন সশস্ত্রীকরণের উত্তুঙ্গ রূপ বিশ্ব দেখেছে, যা বিশ্বের মানুষকে নিরাপত্তার বদলে অনিরাপত্তার বোধেই আক্রান্ত করেছে বেশি। সেই সময়টিই যেন আবার ফিরে এসেছে। সারা বিশ্বে সশস্ত্রীকরণ এখন সর্বোচ্চ মাত্রায় চলছে, ভীষণভাবে বেড়েছে সামরিক ব্যয়।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি) গত ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক সামরিক ব্যয় গত বছর বেড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৮৮ সাল থেকে এ-সংক্রান্ত তথ্যের সন্নিবেশ শুরুর পর থেকে এটিই এ খাতে সর্বোচ্চ ব্যয়। আর স্নায়ুযুদ্ধ–পরবর্তী স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ বিশ্বের হিসাবকে গণনায় নিলে এ ব্যয় রীতিমতো চমকে দেয়। কারণ, এ ব্যয় ১৯৯৮ সালের বৈশ্বিক সামরিক ব্যয়ের তুলনায় ৭৬ শতাংশ বেশি।
বৈশ্বিক শক্তিগুলো অবশ্য এই তথ্যকে একটু ভিন্নভাবে দেখতে চায়। তাদের মতে, জিডিপির অংশ হিসেবে গত কয়েক বছরে সামরিক ব্যয় বরং কমেছে। অর্থাৎ আগে বৈশ্বিক জিডিপির যত অংশ সামরিক খাতে ব্যয় করা হতো, এখন তার চেয়ে কম ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু অর্থের অঙ্কে এটি আগের সব হিসাবকে ছাড়িয়ে গেছে, যা সারা বিশ্বে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে রীতিমতো চোখ রাঙাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার দ্বন্দ্বই মূলত এই সময়ে বৈশ্বিকভাবে সামরিক ব্যয় এত বিপুলভাবে বাড়ার কারণ। এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত, তা-ই এই সামরিক প্রতিযোগিতার সূচনা করেছে। শুরুটা হয়েছিল অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট এমনিতেই বিপুল ছিল, যা ২০১৮ সালে আরও বাড়ানো হয়। সামরিক ব্যয় একটি সীমার মধ্যে রাখার বিষয়ে কংগ্রেসের আরোপ করা বাধ্যবাধকতা ভেঙে সাত বছরে প্রথমবারের মতো এই ব্যয় বৃদ্ধি সারা বিশ্বকেই নতুন প্রতিযোগিতার বার্তা দেয়। এই বার্তার মূল লক্ষ্য চীন ও রাশিয়া খুব দ্রুত এর পাঠোদ্ধার করে ‘পরাশক্তির প্রতিযোগিতা’য় নেমে পড়ে। ফলাফল হলো ভয়াবহ।
সিপ্রির তথ্যমতে, গত বছর সারা বিশ্বের সামরিক খাতে ব্যয় ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। আর এই ব্যয়ের প্রায় অর্ধেকই করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন মিলে। এ দুই দেশ মিলে গত বছর সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ৮৯ হাজার ৯০০ কোটি ডলার।
অথচ ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব এখনো প্রতিশ্রুতির কাতারেই রয়ে গেছে, যার বাস্তবায়নের জন্য বছরে এর চেয়ে ঢের কম অর্থের প্রয়োজন। দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়তে বছরে মাত্র ২৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের তহবিল প্রয়োজন বলে উঠে এসেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও, কৃষি উন্নয়নে আন্তর্জাতিক তহবিল আইএফএডি ও ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজের গবেষণায়। এই অর্থে সারা বিশ্বের শিশুদের অপুষ্টির সমস্যা মিটিয়ে ফেলা সম্ভব। একই সঙ্গে সব শিশুর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব। এসব তহবিলে অর্থের জোগান সামরিক ব্যয়ের মতো একমুখী কোনো বিষয় নয়। অপুষ্টি ও ক্ষুধামুক্ত জনগোষ্ঠী অনেক বেশি উৎপাদনশীল, যেখানে সামরিক খাত শুধু চোখ রাঙাতেই পারে। আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) এক গবেষণার তথ্য বলছে, শুধু এশিয়াকে ক্ষুধামুক্ত করতে পারলেই এই অঞ্চলের মানুষের উৎপাদনশীলতা এক প্রজন্মের ব্যবধানে এতটাই বাড়বে যে তা বছরে দেড় লাখ কোটি ডলার অর্থনীতিতে যোগ করবে। তারপরও এসব খাতে তহবিল জোগানের প্রশ্নকে এড়িয়ে বিশ্বনেতারা নির্দ্বিধায় সামরিক ব্যয় বাড়িয়ে চলেন। নামেন প্রতিযোগিতায়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট জানাচ্ছে, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় ছিল ৬৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার, যা ছিল শীর্ষ দশে থাকা আটটি দেশের মোট সামরিক ব্যয়ের প্রায় কাছাকাছি। কিন্তু এটিও সন্তুষ্ট করতে পারেনি পেন্টাগনকে। গত বছর মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগনকে বরাদ্দ করে ৭১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। এতেও হচ্ছে না। আসছে বাজেটে সামরিক খাতে ৭৫ হাজার কোটি ডলার চাইছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে এই চাহিদার অনুকূলে বাজেট বৃদ্ধির প্রস্তাবও দিয়ে রেখেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একমাত্র ইরাক যুদ্ধ ছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট এত বেশি আর কখনো বাড়ানো হয়নি বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
এই দিক থেকে চীন কিছুটা পিছিয়েই আছে বলা যায়। সামরিক খাতে দেশটির ব্যয় যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয়ের এক-চতুর্থাংশ থেকে দুই-পঞ্চমাংশের মাঝামাঝি। তাদের মোট সামরিক বাজেট সম্পর্কে সুস্পষ্ট জানার উপায় নেই। চীনের সামরিক ব্যয় কিংবা এর বছরওয়ারি বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রের সমতুল্য না হলেও, তা এশিয়ার প্রেক্ষাপটে একধরনের সংকট তৈরি করছে। সিকি শতক ধরেই চীনের সামরিক ব্যয় বাড়ছে, যা এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্যে সুস্পষ্ট পরিবর্তন নিয়ে এনেছে। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রকৃত অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট ১৭ শতাংশ কমেছিল। একই সময়ে চীনের সামরিক বাজেট বাড়ে ৮৩ শতাংশ। মূলত প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আমলেই চীনের সামরিক বাজেট ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক বাজেট নিয়ে ইউএস নেভাল ওয়ার কলেজের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু এরিকসন দ্য ইকোনমিস্টকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আমলে চীন যে মাত্রায় সামরিক সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে, তা চীনের ইতিহাসেই বিরল। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে চীনের নৌবাহিনীর।’
গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইআইএসএসের তথ্যমতে, শুধু ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে চীন তার নৌবাহিনীর ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে, যা ভারত ও ফ্রান্সের নৌবাহিনীর মিলিত শক্তিকে ছাড়িয়ে গেছে। তারপরও দেশটির জিডিপির বিপরীতে সামরিক খাতে ব্যয় এখন অনেক কম। অন্তত সামরিক শক্তির বিচারে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দেশের জিডিপির বিপরীতে ব্যয়কে বিবেচনায় নিলে, তা-ই বলতে হয়। যুক্তরাষ্ট্র যেখানে জিডিপির ৩ দশমিক ২ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করে, চীন সেখানে করে মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ। এর অর্থ হচ্ছে চীনের সামরিক সম্প্রসারণের আরও বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে, বলার অপেক্ষা রাখে না যা সামষ্টিক শঙ্কাকেই বাড়িয়ে তুলবে।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক সম্প্রসারণ বিশ্বের অন্য শক্তিগুলোকেও সামরিক ব্যয় বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করছে। বিশেষত চীনের সামরিক সম্প্রসারণ বৃদ্ধিকে হুমকি হিসেবে নিচ্ছে তার এশীয় প্রতিবেশীরা। এমনকি জাপানও তার প্রতিরক্ষা নীতিতে পরিবর্তন এনে একে ঢেলে সাজাতে চাইছে। এ লক্ষ্যে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েছে জাপান। কারণ হিসেবে তারা চীনকে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করছে। চীনের আঞ্চলিক প্রতিযোগী ভারত এরই মধ্যে সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে, যা ইউরোপের দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে কিছুদিন আগে হওয়া সীমান্ত বিরোধ এই প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে নিশ্চিতভাবেই। বর্তমান নরেন্দ্র মোদি সরকার পুনর্নির্বাচনের যৌক্তিকতা হিসেবে এই নিরাপত্তার সম্বন্ধটিই সামনে আনছে। নির্বাচনের ফল যেদিকেই যাক না কেন, ভারতের পরবর্তী নেতৃত্ব বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হবেন বলা যায়। ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়াও সামরিক ব্যয় বাড়িয়েছে, যা ছিল ২০০৫ সালের পর সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে চীনের পদক্ষেপের কারণে অনেকটা নিভৃতেই এশিয়ায় শুরু হয়ে গেছে সশস্ত্রীকরণ প্রতিযোগিতা। ১৯৮৮ সালে যেখানে এশিয়ার দেশগুলোর বাজেটের ৮ শতাংশ ব্যয় হতো সামরিক খাতে, এখন তা বেড়ে ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে সিপ্রি।
পিছিয়ে নেই ইউরোপীয় দেশগুলোও। ন্যাটোভুক্ত ইউরোপীয় দেশগুলো ২০১৮ সালে সামরিক বাজেট আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে আইআইএসএস। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, রাশিয়াকে হুমকি মনে করা পোল্যান্ড গত বছর সামরিক বাজেট ৮ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়িয়েছে। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সামরিক দিক থেকে ইউরোপ সম্মিলিতভাবে বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিধর অঞ্চলে পরিণত হবে, যার শক্তির মাত্রা রাশিয়ার চেয়ে চার গুণ হবে। এই হিসাবটিও নিশ্চয়ই রাশিয়া করছে। ২০১৮ সালে সাড়ে ৩ শতাংশ সামরিক বাজেট কমলেও বিশ্বব্যাপী সামরিকীকরণের এই প্রতিযোগিতায় রাশিয়া চুপ করে বসে থাকার দেশ নয়। ভূরাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় ও সামরিকীকরণের প্রেক্ষাপটকে দেশটি যে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে, তার একটি বড় প্রমাণ বহন করছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কিম জং উনের মধ্যকার সাম্প্রতিক বৈঠক।
তবে বৈশ্বিক এই প্রবণতায় একটি বড় ব্যতিক্রম হচ্ছে আফ্রিকা। অঞ্চলটির সামরিক ব্যয় টানা চার বছর ধরে কমছে। সিপ্রির তথ্যমতে, গত চার বছরে আফ্রিকার দেশগুলোর সম্মিলিত সামরিক বাজেট কমেছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যও কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে। অঞ্চলটির বড় শক্তিগুলোর মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরান সামরিক ব্যয় কমানোর পরিকল্পনা করছে। যদিও আঞ্চলিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে তা শেষ পর্যন্ত কোথায় দাঁড়াবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। বিশেষত ইসরায়েলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পুনর্নির্বাচন ও তাঁর দেওয়া ‘নিরাপত্তা’ প্রতিশ্রুতির বিপরীতে মধ্যপ্রাচ্য শান্তিপ্রক্রিয়ার গতিমুখের ওপরই পুরোপুরি নির্ভর করছে। এ ক্ষেত্রে এমনকি কাতারের সঙ্গে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন চার আরব দেশের বিরাজমান দ্বন্দ্বের বিষয়টিও বিবেচ্য।
সব মিলিয়ে বিশ্ব আবারও এক ভীষণ অস্ত্র প্রতিযোগিতার কালে প্রবেশ করেছে বলা যায়। ডোনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্যযুদ্ধের আবরণে যার সূচনা করেছিলেন, তা এখন খোলাখুলি রণসজ্জার প্রতিযোগিতায় রূপান্তরিত হয়েছে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি অঞ্চল এই প্রতিযোগিতায় ইতিমধ্যে শামিল হয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা বলছে, এই প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে। এই পুরো প্রতিযোগিতা চলছে নিরাপত্তার মতো একটি অতি জরুরি শব্দের প্রয়োগ ও অজুহাতে। যদিও শাসক প্রযুক্ত এই নিরাপত্তার অজুহাত কখনো সাধারণ মানুষকে নিরাপদ বোধ দিতে পারেনি; দিতে পেরেছে শুধু আরও লাল, আরও প্রকট মৃত্যুর চোখরাঙানি। অস্ত্রের সওদার সঙ্গে মৃত্যুর সওদার কোনো তফাত নেই; একটি আরেকটিকে বাড়িয়ে তোলে, যা আদতে অস্ত্রের কারবারিদের সাম্রাজ্যই বাড়িয়ে তোলে।
ফজলুল কবির: সাংবাদিক
No comments