মিয়ানমারের বর্বরতার ব্যাপারে চোখ বন্ধ রাখতে পারে না আসিয়ান by এরিক পলসেন
মিয়ানমারের
উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীকে টার্গেট করে হামলা হওয়ার পর ২০১৭
সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে বর্বর নিধন অভিযান চালিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী
বহু রোহিঙ্গাকে হত্যা ও আহত করে, শত শত নারী ও বালিকাদের ধর্ষণ করে, এবং
বহু গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। সামরিক বাহিনীর ওই ‘শুদ্ধি’ অভিযান থেকে প্রাণ
বাঁচাতে ৭৪৫,০০০ রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের কারণে তারা রাষ্ট্রহীন হয়ে আছে, তাদের কোন অধিকার নেই। সত্তর ও নব্বইয়ের দশকেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল।
বাংলাদেশে আগে থেকেই প্রায় তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী ছিল। এর সাথে সাম্প্রতিক ঘটনা যুক্ত হয়ে বাংলাদেশে এখন রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা এক মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে, যাদের বেশির ভাগই এখন বাস করছে কক্সবাজার জেলায়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্প এখন এই কক্সবাজারে। এটা বাংলাদেশের বদান্যতা যে প্রচুর রোহিঙ্গা ঘাড়ের উপরে থাকা সত্বেও তারা কাউকে ফিরিয়ে দেয়নি।
কিন্তু বাংলাদেশের ধৈর্য আর সম্পদ সীমাহীন নয় এবং এর চাপটা আস্তে আস্তে বোঝা যেতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি পার্লামেন্টে বলেছেন যে, দেশের সম্পদ সীমিত হয়ে আসছে এবং উত্তেজনা বাড়ছে। কিভাবে এই পরিস্থিতি সবচেয়ে ভালোভাবে কাটিয়ে উঠা যায়, সেই চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।
যারাই কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পগুলো দেখেছেন, যেখানে আমি সম্প্রতি গিয়েছিলাম, তারা সবাই জানেন যে, ক্যাম্পগুলোর অবস্থা বিপর্যস্ত এবং দীর্ঘসময় টিকে থাকার উপযোগী নয়। একদিকে পরিকল্পনাহীনতার কারণে সেখানে সংক্রামক রোগ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়তে পারে, অন্যদিকে গাছপালা উজার হওয়ার কারণে সেখানে পাহাড় ধসের আশঙ্কাও বেড়ে গেছে।
আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও পয়োনিষ্কাষণের মৌলিক চাহিদাগুলো ঠিকমতো পূরণের ব্যবস্থা নেই। শরণার্থীরা নড়বড়ে বাঁশের কুঁড়েতে থাকছে। কাজ বা শিক্ষার খুব সামান্যই সুযোগ আছে তাদের এবং তারা সম্পূর্ণভাবে ত্রাণ সংস্থাগুলোর উপর নির্ভরশীল। ক্যাম্পে জীবনকে এগিয়ে নেয়ার কোন সুযোগই কার্যত তাদের নেই। এই কারণেই তাদেরকে দ্রুত মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়াটা দরকার।
মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধানী মিশন তাদের তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। গত আগস্টে তারা বলেছিল যে, সামরিক বাহিনী গণহত্যার উদ্দেশ্য রাখাইনে অভিযান চালিয়েছিল এবং সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।
মালয়েশিয়া যদিও রোহিঙ্গাদের শক্ত সমর্থন দিয়েছে, কিন্তু আসিয়ানে এটা নিয়ে খুব সামান্যই আলোচনা হয়েছে। অতি সম্প্রতি, আসিয়ানের নেতারা ৩৪তম আসিয়ান সম্মেলন উপলক্ষ্যে ব্যাংককে মিলিত হয়েছিলেন। সেখানে মিয়ানমারকে মানবিক সহায়তা দেয়া, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
এই ধরনের নীতির কারণে আসিয়ান এখন মিয়ানমারের সাথে বিনিময় অব্যাহত রাখতে পেরেছে, তবে রিপোর্টে প্রাপ্ত তথ্য এবং প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মধ্যে বহু ফারাক রয়ে গেছে। প্রত্যাবাসন সত্যিই করতে হলে আসিয়ানকে অবশ্যই মিয়ানমারকে রাজি করানোর জন্য আরও সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সাথে মিলে কাজ করতে হবে।
মিয়ানমারকে কক্সবাজারের শরণার্থীদের সাথেও যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। শরণার্থীদের যদি মনে করে যে, রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, তখনই কেবল তারা দেশে ফেরার কথা ভাবতে পারে।
আসিয়ান এখন এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে, যেখানে তাদের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে। মিয়ানমারের বর্বরতার ব্যাপারে এখনও কি তারা চোখ বন্ধ করে পাড় পেয়ে যাবে, যেখানে এক মিলিয়নের বেশি শরণার্থী বাংলাদেশে অবস্থান করছে এবং বিশ্বের আরও বহু জায়গায় রোহিঙ্গারা রয়েছে।
শেষ বিচারে, আসিয়ান কিভাবে রিপোর্টের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানায় এবং তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আরও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দেখতে চায় কি না, সেটার মাধ্যমেই বোঝা যাবে আগামী বছরগুলোতে তারা কি ভূমিকা রাখতে চায়।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের কারণে তারা রাষ্ট্রহীন হয়ে আছে, তাদের কোন অধিকার নেই। সত্তর ও নব্বইয়ের দশকেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল।
বাংলাদেশে আগে থেকেই প্রায় তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী ছিল। এর সাথে সাম্প্রতিক ঘটনা যুক্ত হয়ে বাংলাদেশে এখন রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা এক মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে, যাদের বেশির ভাগই এখন বাস করছে কক্সবাজার জেলায়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্প এখন এই কক্সবাজারে। এটা বাংলাদেশের বদান্যতা যে প্রচুর রোহিঙ্গা ঘাড়ের উপরে থাকা সত্বেও তারা কাউকে ফিরিয়ে দেয়নি।
কিন্তু বাংলাদেশের ধৈর্য আর সম্পদ সীমাহীন নয় এবং এর চাপটা আস্তে আস্তে বোঝা যেতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি পার্লামেন্টে বলেছেন যে, দেশের সম্পদ সীমিত হয়ে আসছে এবং উত্তেজনা বাড়ছে। কিভাবে এই পরিস্থিতি সবচেয়ে ভালোভাবে কাটিয়ে উঠা যায়, সেই চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।
যারাই কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পগুলো দেখেছেন, যেখানে আমি সম্প্রতি গিয়েছিলাম, তারা সবাই জানেন যে, ক্যাম্পগুলোর অবস্থা বিপর্যস্ত এবং দীর্ঘসময় টিকে থাকার উপযোগী নয়। একদিকে পরিকল্পনাহীনতার কারণে সেখানে সংক্রামক রোগ ব্যাধি ছড়িয়ে পড়তে পারে, অন্যদিকে গাছপালা উজার হওয়ার কারণে সেখানে পাহাড় ধসের আশঙ্কাও বেড়ে গেছে।
আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা, পানি ও পয়োনিষ্কাষণের মৌলিক চাহিদাগুলো ঠিকমতো পূরণের ব্যবস্থা নেই। শরণার্থীরা নড়বড়ে বাঁশের কুঁড়েতে থাকছে। কাজ বা শিক্ষার খুব সামান্যই সুযোগ আছে তাদের এবং তারা সম্পূর্ণভাবে ত্রাণ সংস্থাগুলোর উপর নির্ভরশীল। ক্যাম্পে জীবনকে এগিয়ে নেয়ার কোন সুযোগই কার্যত তাদের নেই। এই কারণেই তাদেরকে দ্রুত মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়াটা দরকার।
মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধানী মিশন তাদের তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। গত আগস্টে তারা বলেছিল যে, সামরিক বাহিনী গণহত্যার উদ্দেশ্য রাখাইনে অভিযান চালিয়েছিল এবং সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।
মালয়েশিয়া যদিও রোহিঙ্গাদের শক্ত সমর্থন দিয়েছে, কিন্তু আসিয়ানে এটা নিয়ে খুব সামান্যই আলোচনা হয়েছে। অতি সম্প্রতি, আসিয়ানের নেতারা ৩৪তম আসিয়ান সম্মেলন উপলক্ষ্যে ব্যাংককে মিলিত হয়েছিলেন। সেখানে মিয়ানমারকে মানবিক সহায়তা দেয়া, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
এই ধরনের নীতির কারণে আসিয়ান এখন মিয়ানমারের সাথে বিনিময় অব্যাহত রাখতে পেরেছে, তবে রিপোর্টে প্রাপ্ত তথ্য এবং প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মধ্যে বহু ফারাক রয়ে গেছে। প্রত্যাবাসন সত্যিই করতে হলে আসিয়ানকে অবশ্যই মিয়ানমারকে রাজি করানোর জন্য আরও সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সাথে মিলে কাজ করতে হবে।
মিয়ানমারকে কক্সবাজারের শরণার্থীদের সাথেও যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। শরণার্থীদের যদি মনে করে যে, রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, তখনই কেবল তারা দেশে ফেরার কথা ভাবতে পারে।
আসিয়ান এখন এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে, যেখানে তাদের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে। মিয়ানমারের বর্বরতার ব্যাপারে এখনও কি তারা চোখ বন্ধ করে পাড় পেয়ে যাবে, যেখানে এক মিলিয়নের বেশি শরণার্থী বাংলাদেশে অবস্থান করছে এবং বিশ্বের আরও বহু জায়গায় রোহিঙ্গারা রয়েছে।
শেষ বিচারে, আসিয়ান কিভাবে রিপোর্টের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানায় এবং তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আরও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দেখতে চায় কি না, সেটার মাধ্যমেই বোঝা যাবে আগামী বছরগুলোতে তারা কি ভূমিকা রাখতে চায়।
No comments