যে কারণে সড়কে মৃত্যু কমছে না by মরিয়ম চম্পা
সড়কে
এতো মৃত্যু! প্রতিদিনই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে তালিকা। পাল্লা দিয়ে
বাড়ছে হাজারো পরিবারের দীর্ঘশ্বাস কান্না। মিটিং, মিছিল, মানববন্ধন,
আন্দোলন কোন কিছুই থামাতে পারছে না সড়কে মৃত্যুর মিছিল। সরকারের নানা
উদ্যোগের পরও কেন কমছে না সড়কে এ মৃত্যু? পুলিশ বলছে, সড়ক মহাসড়কে ছোট
যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া দুর্ঘটনা বাড়ার অন্যতম কারণ। দুর্ঘটনা ও
হতাহতের ঘটনা কমাতে ছোট গাড়ি কমিয়ে বড় যানবাহনের দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ
দিচ্ছে তারা।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে, দুর্ঘটনা রোধে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না বলেই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। এদিকে পুলিশ, বিআরটিএ এবং বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) গত চার বছরের পরিসংখ্যান বলছে, এ সময় সড়ক দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি দুটোই বেড়েছে। মহাসড়কে ২০১৫ সালে ১৭৭৩ জন, ২০১৬ সালে ১৭৬৯ জন, ২০১৭ সালে ১৬০১ জন এবং ২০১৮ সালে ১৪৩৯ জন দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে তথ্য দিচ্ছে এআরআই।
ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু কমেনি।
গত এক বছরে ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৯৭ জন। নিহত ব্যক্তিদের প্রায় ৩৮ শতাংশই পথচারী। সড়কে মৃত্যুর এই হিসাব দিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই)। ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ১ জুলাই পর্যন্ত ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য পর্যালোচনা করে প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ এই হিসাব দিয়েছে। আর এসব মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া মামলার তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এই সময়ে শুধু বিমানবন্দর সড়কে মারা গেছেন ৪৬ জন। গত বছর ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর বাস তুলে দিয়েছিলেন বেপরোয়া চালক। এতে নিহত হয় কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীব। এ ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামেন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তখন সড়কে নৈরাজ্য বন্ধে পুলিশ ও সরকারের অন্যান্য সংস্থা নানা উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলেন। আন্দোলনের এক বছর পার হলেও সেগুলোর পুরোপুরি আলোর মুখ দেখেনি। ফেরেনি সড়কে শৃঙ্খলা।
শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে তদন্ত কমিটি হয়। বুয়েটের এআরআইয়ের পরিচালক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে বলা হয়, ঢাকার সড়ক দুর্ঘটনার জন্য বিদ্যমান গণপরিবহন ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা দায়ী। গণপরিবহন কমলেও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাসের একাধিক রুট বিদ্যমান, যা বিজ্ঞানসম্মত নয়। নিয়োগপত্র ছাড়াই দৈনিক চুক্তির ভিত্তিতে চালক নিয়োগ দেয়া হয়। দিন শেষে তেলসহ নানা আনুষঙ্গিক খরচ মেটাতে গিয়ে মারাত্মক চাপে পড়েন চালকরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) হিসাব অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ লোকের মধ্যে ১৫ দশমিক ৩ জনের মৃত্যু হয় সড়ক দুর্ঘটনায়। এ হিসাবে প্রতিবছর বাংলাদেশে সড়কে মৃত্যু হয় প্রায় ২৪ হাজার ৯৫৪ জনের। জাতিসংঘ ঘোষিত পঞ্চম বিশ্ব নিরাপদ সড়ক সপ্তাহ উপলক্ষে বাংলাদেশে জাতিসংঘ কার্যালয় তাদের ফেসবুক পেজে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি ‘ইন্টারেকটিভ রিপোর্ট’ প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ‘এক গুচ্ছ ধারাবাহিক জাতীয় সড়ক নিরাপত্তার কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং সমপ্রতি সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে।’
ডাব্লিউএইচও বলেছে, মানসম্মত হেলমেট সঠিকভাবে পরলে মৃত্যুর ঝুঁকি ৪০ শতাংশ এবং গুরুতর আহত হওয়ার ঝুঁকি ৭০ শতাংশ কমবে। বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের সব আরোহীর জন্য মানসম্মত হেলমেট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা যথাযথভাবে মানা হয় না বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ মানবজমিনকে বলেন, রোড সেফটিতে সরকারের আলাদা করে সেফটি রিলেটেড কোনো ন্যাশনাল প্রোগ্রাম নেই। আমাদের টার্গেট আছে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে কমাতে হবে। কিন্তু সরকারের রোড সেফটি নিয়ে বড় কোনো আলাদা প্রোগ্রাম নেই। ছোট খাটো দু’একটি প্রোগ্রাম থাকলেও ওভাবে ডায়াগ্রাম আকারে নেই। এটার ওপর যে ফান্ড বা খরচ করার প্রক্রিয়া ট্রেনিং, গবেষণায়, যে বাজেট থাকার কথা সেটা কিন্তু নেই। কিছু কিছু এখন শুরু হচ্ছে। টুকটাক কিছু চলমান আছে এতোটুকুই। এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় বরাদ্দ নেই।
বুয়েটের এই শিক্ষক মনে করেণ, এক্ষেত্রে একটি কর্ম সফল করতে হলে একটি জাতীয় প্রোগ্রামের উদ্যেগ নিতে হবে। বাজেট দিতে হবে। গবেষণা শুরু করতে হবে। চালককে বেতন কাঠামোর আওতায় নিয়ে আসতে হবে। চুক্তিভিক্তিক চালনা বন্ধ করতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণের এডিসি ট্রাফিক সাউথ মেহেদী হাসান বলেন, এখানে বাস-ট্রাক চালকদের একধরনের দায়িত্ব থাকে। সাধারণ জনগনের, ট্রাফিক পুলিশের এক ধরনের দায়িত্ব থাকে। সকলের সম্মিলিত প্রোয়াসের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সবাই যদি আইন সম্পর্কে সচেতন হয় এবং যারা পথচারি তারা যদি তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয় তাহলে একত্রে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাছাড়া শুধু ট্রাফিক পুলিশ বা বিআরটিএ-এর পক্ষে এককভাবে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।
তিনি বলেন, চালকদের প্রোপার ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে। তাদেরকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আইন সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। একইসঙ্গে আমরা যারা পথচারি তারা যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ট্রাফিক আইন মেনে চলি তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে আমরা পথচারিদের সচেতন করতে সাধারণ জনগনকে নিয়ে প্রচুর মিটিং করি। জেব্রা ক্রোসিং, রেড লাইট ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করি। আমরা এখন অনেক মামলা করি যে সকল গাড়ির কাগজপত্র এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠিক নেই তাদের বিরুদ্ধে। আমরা আমাদের মতো সচেতন করার চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলছেন, আমাদের সড়কের যে সার্বিক ব্যবস্থাপনা সেখানে দৃশ্যমান কোনো কাজ না করেই মনে করি রাতারাতি সড়ক দুর্ঘটনা কমবে। এই প্রত্যাশাটা পুরণ হওয়া সহজ নয়। আমরা যদি মোটাদাগে বলার চেষ্টা করি তাহলে বলতে হয়, সড়কে আইন প্রয়োগের সিথিলতা বা গাফলতি আছে। যে যার যার আইডেন্টি কার্ড বা পরিচয়পত্র ব্যবহার করে চলছে। সাংবাদিক গাড়িতে তার স্টিকার লাগিয়ে চলছে। আইনজীবী তার স্টিকার লাগিয়ে চলছে। এ্যাটর্নি জেনারেল সে তার পরিচয়পত্র ব্যবহার করে চলছে। কিন্তু সড়কে চলার ক্ষেত্রে সবার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকার কথা। এক্ষেত্রে নিজের পরিচয় সংক্রান্ত স্টিকার গাড়িতে লাগিয়ে কারো সুবিধা নেয়ার কথা নয়। অন্যদিকে যারা এনফোর্সমেন্টকারী প্রতিষ্ঠান তারা কাউকে অনেক সময় ছাড় দিচ্ছে।
আমরা দেখেছি যে হেলপার থেকে চালক তৈরি হচ্ছে। রাস্তার একপাশ তৈরি হলে অপরপাশ থেকে কার্পেট উঠে যাচ্ছে। যানবাহনের ক্ষেত্রে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, নসিমন-করিমন ইজিবাইক যেগুলো মহাসড়কে চলার কথা নয় সেগুলো দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে একত্রে পাল্লা দিয়ে চলছে। কাজেই সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হওয়ার জন্য যে সমস্ত উপাদানগুলো প্রোয়োজন তার সবগুলো উপাদান মহাসড়কে নিশ্চিত রেখে আমরা যদি প্রত্যাশা করি রাতারাতি দুর্ঘটনা কমবে তাহলে যা হওয়ার তাই হবে। এটার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ, মনিটরিং, আইনের কঠোরতম প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরী। মহাসড়ক থেকে অবান্তর যানবাহনগুলো উচ্ছেদ করা জরুরী। এটার প্রধান অন্তরায় একবাক্যে যদি বলা হয় সেটা হচ্ছে, আইন প্রয়োগের সিথিলতা বা গাফলতি। আইনের সঠিক প্রয়োগ থাকলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। উন্নত বিশ্বে এভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে, দুর্ঘটনা রোধে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না বলেই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। এদিকে পুলিশ, বিআরটিএ এবং বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) গত চার বছরের পরিসংখ্যান বলছে, এ সময় সড়ক দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি দুটোই বেড়েছে। মহাসড়কে ২০১৫ সালে ১৭৭৩ জন, ২০১৬ সালে ১৭৬৯ জন, ২০১৭ সালে ১৬০১ জন এবং ২০১৮ সালে ১৪৩৯ জন দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে তথ্য দিচ্ছে এআরআই।
ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু কমেনি।
গত এক বছরে ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৯৭ জন। নিহত ব্যক্তিদের প্রায় ৩৮ শতাংশই পথচারী। সড়কে মৃত্যুর এই হিসাব দিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই)। ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ১ জুলাই পর্যন্ত ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য পর্যালোচনা করে প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ এই হিসাব দিয়েছে। আর এসব মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া মামলার তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এই সময়ে শুধু বিমানবন্দর সড়কে মারা গেছেন ৪৬ জন। গত বছর ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর বাস তুলে দিয়েছিলেন বেপরোয়া চালক। এতে নিহত হয় কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীব। এ ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামেন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তখন সড়কে নৈরাজ্য বন্ধে পুলিশ ও সরকারের অন্যান্য সংস্থা নানা উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলেন। আন্দোলনের এক বছর পার হলেও সেগুলোর পুরোপুরি আলোর মুখ দেখেনি। ফেরেনি সড়কে শৃঙ্খলা।
শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে তদন্ত কমিটি হয়। বুয়েটের এআরআইয়ের পরিচালক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে বলা হয়, ঢাকার সড়ক দুর্ঘটনার জন্য বিদ্যমান গণপরিবহন ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা দায়ী। গণপরিবহন কমলেও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাসের একাধিক রুট বিদ্যমান, যা বিজ্ঞানসম্মত নয়। নিয়োগপত্র ছাড়াই দৈনিক চুক্তির ভিত্তিতে চালক নিয়োগ দেয়া হয়। দিন শেষে তেলসহ নানা আনুষঙ্গিক খরচ মেটাতে গিয়ে মারাত্মক চাপে পড়েন চালকরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) হিসাব অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ লোকের মধ্যে ১৫ দশমিক ৩ জনের মৃত্যু হয় সড়ক দুর্ঘটনায়। এ হিসাবে প্রতিবছর বাংলাদেশে সড়কে মৃত্যু হয় প্রায় ২৪ হাজার ৯৫৪ জনের। জাতিসংঘ ঘোষিত পঞ্চম বিশ্ব নিরাপদ সড়ক সপ্তাহ উপলক্ষে বাংলাদেশে জাতিসংঘ কার্যালয় তাদের ফেসবুক পেজে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি ‘ইন্টারেকটিভ রিপোর্ট’ প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ‘এক গুচ্ছ ধারাবাহিক জাতীয় সড়ক নিরাপত্তার কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং সমপ্রতি সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে।’
ডাব্লিউএইচও বলেছে, মানসম্মত হেলমেট সঠিকভাবে পরলে মৃত্যুর ঝুঁকি ৪০ শতাংশ এবং গুরুতর আহত হওয়ার ঝুঁকি ৭০ শতাংশ কমবে। বাংলাদেশে মোটরসাইকেলের সব আরোহীর জন্য মানসম্মত হেলমেট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা যথাযথভাবে মানা হয় না বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ মানবজমিনকে বলেন, রোড সেফটিতে সরকারের আলাদা করে সেফটি রিলেটেড কোনো ন্যাশনাল প্রোগ্রাম নেই। আমাদের টার্গেট আছে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে কমাতে হবে। কিন্তু সরকারের রোড সেফটি নিয়ে বড় কোনো আলাদা প্রোগ্রাম নেই। ছোট খাটো দু’একটি প্রোগ্রাম থাকলেও ওভাবে ডায়াগ্রাম আকারে নেই। এটার ওপর যে ফান্ড বা খরচ করার প্রক্রিয়া ট্রেনিং, গবেষণায়, যে বাজেট থাকার কথা সেটা কিন্তু নেই। কিছু কিছু এখন শুরু হচ্ছে। টুকটাক কিছু চলমান আছে এতোটুকুই। এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় বরাদ্দ নেই।
বুয়েটের এই শিক্ষক মনে করেণ, এক্ষেত্রে একটি কর্ম সফল করতে হলে একটি জাতীয় প্রোগ্রামের উদ্যেগ নিতে হবে। বাজেট দিতে হবে। গবেষণা শুরু করতে হবে। চালককে বেতন কাঠামোর আওতায় নিয়ে আসতে হবে। চুক্তিভিক্তিক চালনা বন্ধ করতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণের এডিসি ট্রাফিক সাউথ মেহেদী হাসান বলেন, এখানে বাস-ট্রাক চালকদের একধরনের দায়িত্ব থাকে। সাধারণ জনগনের, ট্রাফিক পুলিশের এক ধরনের দায়িত্ব থাকে। সকলের সম্মিলিত প্রোয়াসের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সবাই যদি আইন সম্পর্কে সচেতন হয় এবং যারা পথচারি তারা যদি তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয় তাহলে একত্রে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাছাড়া শুধু ট্রাফিক পুলিশ বা বিআরটিএ-এর পক্ষে এককভাবে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।
তিনি বলেন, চালকদের প্রোপার ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে। তাদেরকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আইন সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। একইসঙ্গে আমরা যারা পথচারি তারা যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ট্রাফিক আইন মেনে চলি তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে আমরা পথচারিদের সচেতন করতে সাধারণ জনগনকে নিয়ে প্রচুর মিটিং করি। জেব্রা ক্রোসিং, রেড লাইট ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করি। আমরা এখন অনেক মামলা করি যে সকল গাড়ির কাগজপত্র এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠিক নেই তাদের বিরুদ্ধে। আমরা আমাদের মতো সচেতন করার চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলছেন, আমাদের সড়কের যে সার্বিক ব্যবস্থাপনা সেখানে দৃশ্যমান কোনো কাজ না করেই মনে করি রাতারাতি সড়ক দুর্ঘটনা কমবে। এই প্রত্যাশাটা পুরণ হওয়া সহজ নয়। আমরা যদি মোটাদাগে বলার চেষ্টা করি তাহলে বলতে হয়, সড়কে আইন প্রয়োগের সিথিলতা বা গাফলতি আছে। যে যার যার আইডেন্টি কার্ড বা পরিচয়পত্র ব্যবহার করে চলছে। সাংবাদিক গাড়িতে তার স্টিকার লাগিয়ে চলছে। আইনজীবী তার স্টিকার লাগিয়ে চলছে। এ্যাটর্নি জেনারেল সে তার পরিচয়পত্র ব্যবহার করে চলছে। কিন্তু সড়কে চলার ক্ষেত্রে সবার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকার কথা। এক্ষেত্রে নিজের পরিচয় সংক্রান্ত স্টিকার গাড়িতে লাগিয়ে কারো সুবিধা নেয়ার কথা নয়। অন্যদিকে যারা এনফোর্সমেন্টকারী প্রতিষ্ঠান তারা কাউকে অনেক সময় ছাড় দিচ্ছে।
আমরা দেখেছি যে হেলপার থেকে চালক তৈরি হচ্ছে। রাস্তার একপাশ তৈরি হলে অপরপাশ থেকে কার্পেট উঠে যাচ্ছে। যানবাহনের ক্ষেত্রে ফিটনেসবিহীন যানবাহন, নসিমন-করিমন ইজিবাইক যেগুলো মহাসড়কে চলার কথা নয় সেগুলো দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে একত্রে পাল্লা দিয়ে চলছে। কাজেই সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হওয়ার জন্য যে সমস্ত উপাদানগুলো প্রোয়োজন তার সবগুলো উপাদান মহাসড়কে নিশ্চিত রেখে আমরা যদি প্রত্যাশা করি রাতারাতি দুর্ঘটনা কমবে তাহলে যা হওয়ার তাই হবে। এটার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ, মনিটরিং, আইনের কঠোরতম প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরী। মহাসড়ক থেকে অবান্তর যানবাহনগুলো উচ্ছেদ করা জরুরী। এটার প্রধান অন্তরায় একবাক্যে যদি বলা হয় সেটা হচ্ছে, আইন প্রয়োগের সিথিলতা বা গাফলতি। আইনের সঠিক প্রয়োগ থাকলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। উন্নত বিশ্বে এভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে।
No comments