নেপালের রেলব্যবস্থা ঘিরে চীন-ভারত প্রতিদ্বন্দ্বিতা by বিশ্বাস বড়াল
কাঠমান্ডুতে
রেলপথ তৈরি নিয়ে নেপালে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়েছে দুই পুরনো
ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। নেপালের নতুন বাজেটে বলা হয় আগামী দুই বছরের
মধ্যে কাঠমান্ডু এবং রাক্সুল (ভারতীয় সীমান্ত) ও কেরুং (চীন সীমান্ত)-এর
মধ্যে রেলপথ তৈরি শুরু হবে। ভারত ও চীনের মধ্যে থাকা দেশটিকে একটি
অনুরণনশীল অর্থনৈতিক সেতুতে পরিণত করতে কমিউনিস্ট সরকার এই জোড়া-প্রকল্প
হাতে নিয়েছে। আগামীতে যদি ট্রেনে চড়ে কাঠমান্ডু থেকে নেপালিরা নয়া দিল্লি
বা বেইজিং যেতে পারে তার চেয়ে খুশির কিছু হবে না। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ
হতে এখনো অনেক পথ পারি দিতে হবে।
চীন থেকে শুরু হোক। ২০০৮ সালে বলা হলো কুইংঘি-তিব্বত রেলপথ কেরুং পর্যন্ত টানা হবে। তাহলে কাঠমান্ডু পর্যন্ত কেন নয়? নেপাল এ কথা বলার পর চীন নীতিগতভাবে রাজি হয়। ৭২ কিলোমিটার রেলপথ নিয়ে সাতটি প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হলো। দেখা গেলো সত্যিকারের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালানোর জন্যই দরকার হবে ৩৫ বিলিয়ন নেপালি রুপি। চীন চাইলো নেপাল এর বেশিটা দিক, আর নেপাল বললো চীনকে দিতে।
আরো দেখা গেলো, গোটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দরকার হবে ২৭৫ ট্রিলিয়ন নেপালি রুপি। বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গম অঞ্চল পারি দিতে হবে এই পথকে। ফলে একই সঙ্গে ব্যয়বহুল ও জটিল হবে এই প্রকল্প। বলতে গেলে পুরো পথটি টানেল ও ব্রিজের উপর দিয়ে নির্মাণ করতে হবে। হিমালয় পর্বতের নিচ দিয়ে ৪০-৫০ কিলোমিটার টানেল নির্মাণ করতে হবে।
নেপালের একদল প্রকৌশলী বলছেন প্রকল্পটি অসম্ভব, অন্যরা পথ খুঁজে পেতে চাইছেন। তবে তার জন্য মুক্তহস্তে খরচ করতে হবে নেপালকে। বেশিরভাগ খচর মঞ্জুরি হিসেবে দিতে চীন গররাজি। এখন নেপাল যদি চীনের ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তাহলে এর উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে নেপালীরা।
ভারত এরই মধ্যে ২৫ কিলোমিটার জনকপুর-জয়নগর রেলপথ নির্মাণ শেষ করেছে। কিন্তু যেই না চীন-নেপাল রেলপথ নির্মাণ নিয়ে আলোচনা শুরু হলো, তখনই নতুন রাক্সুল-কাঠমান্ডু রেলপথ নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হলো নয়া দিল্লি। এরই মধ্যে এর সম্ভাব্যতা যাচাই হয়ে গেছে। মূলত সমতল ভূমির মধ্য দিয়ে যাওয়া এই পথ কাঠমান্ডু-তিব্বত রেলপথের চেয়ে অনেক সস্তায় নির্মাণ করা যাবে।
কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে: ভারত চাচ্ছে রেলপথটি ব্রডগেজে নির্মাণ হোক। কিন্তু নেপাল বলছে তারা শুধু ন্যারো ‘স্টান্ডার্ড গেজ’ অনুমতি দেবে, যা চীন ব্যবহার করে। এতে ভারত খুশি হতে পারেনি। নেপাল বলছে, শুধু চীনকে খুশি করতে নয় সারা বিশ্বেই ‘স্টান্ডার্ড গেজ’ ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই এটি তুলনামূলক সস্তা।
নেপাল ভাবতে পারে ব্রডগেজ ব্যবহার করে ভারত রাক্সুল-কাঠমান্ডু লাইন তৈরি করলে ক্ষতি নেই। এতে ভাবিষ্যতে তারা চীন-নেপাল-ভারত রেলপথের উপর অধিকতর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। তা নাহলে চীনের ট্রেন হয়তো সরাসরি নেপালের উপর দিয়ে ভারতে চলে যাবে। নেপালের বলার কিছু থাকবে না।
এখন প্রশ্ন হলো ভারত বা চীনের রেলপথ কি আদৌ তৈরি হবে?
নেপালের সঙ্গে ভারতের সড়ক যোগাযোগ ভালো। নেপালের ভূমিকম্পপ্রবণতার সঙ্গে মিল রেখে এগুলো উন্নত ও সম্প্রসারণ করা যাবে সহজেই। যদিও তিব্বত হয়ে চীনের সঙ্গে নেপালের সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা অনেক কঠিন কিন্তু এরপরও তাতে আন্ত:সীমান্ত রেলপথ নির্মাণের চেয়ে কম খরচ হবে। তাই চীন ও ভারতের সঙ্গে রেলপথ নির্মাণে রাজি হওয়ায় সম্ভবত বিষয়গুলো এখন আর নেপালের হাতে নেই।
অন্তত কাগজে কলমে যদি ভারতীয় রেলপথ কাঠমান্ডুতে আগে পৌছে তাহলে খরচ বেশি হলেও কাঠামান্ডুতে পৌছার গরজ অনুভব করবে চীন। ভারত ও চীনের সঙ্গে নেপাল যুক্ত হলে তা চীন-ভারত বাণিজ্যের সহায়ক হবে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এসব রেলপথ নির্মাণের পেছনে ভূকৌশলগত বিষয়টিই কাজ করবে।
আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে ভারতের ভূমিকা ভালো চোখে দেখবে না বেইজিং। তারা নেপালকে পিভোটাল রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে চিত্রায়িত করতে চাচ্ছে সেটাও অনুমোদন করবে না। সম্প্রতি কাঠমান্ডুতে মার্কিন ও চীনা রাষ্ট্রদূতরা ‘ঋণফাঁদ’ নিয়ে বিতণ্ডায় পর্যন্ত লিপ্ত হয়েছেন।
কাঠমান্ডুর বিশ্লেষকরা মোদির দ্বিতীয় মেয়াদের ভারতের কাছ থেকে অধিকতর পেশীশক্তির পররাষ্ট্রনীতি আশঙ্কা করছেন। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের কারণে নেপালে চীনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা চালাবে বলে তাদের আশংকা। ফলে চীনও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
তবে কেউই শিগগিরই নেপালের কোন বড় শহরে ভারত বা চীনের রেলগাড়ি আশা করছেন না। সময়মতো প্রকল্প শেষ করতে না পারার ব্যাপারে নেপালে ভারতের কুখ্যাতি রয়েছে। অন্যদিকে তহবিল যোগান নিয়ে মনোস্থির করতে পারেনি চীন। কুইংঘি-তিব্বত রেললাইনটি নেপাল সীমান্ত পর্যন্ত সম্প্রসারণ আরো পাঁচ বছর দেরি হতে পারে বলে সম্প্রতি চীন আভাস দিয়েছে।
যদিও ভারতীয় বা চীনা রেলপথের উপযোগিতা নিয়ে নেপালিরা বিভক্ত। তবে অর্থনীতির উপর ভূরাজনীতি প্রাধান্য পাওয়ার সম্ভাবনা সবসময়ই থেকে যায়।
চীন থেকে শুরু হোক। ২০০৮ সালে বলা হলো কুইংঘি-তিব্বত রেলপথ কেরুং পর্যন্ত টানা হবে। তাহলে কাঠমান্ডু পর্যন্ত কেন নয়? নেপাল এ কথা বলার পর চীন নীতিগতভাবে রাজি হয়। ৭২ কিলোমিটার রেলপথ নিয়ে সাতটি প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা হলো। দেখা গেলো সত্যিকারের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালানোর জন্যই দরকার হবে ৩৫ বিলিয়ন নেপালি রুপি। চীন চাইলো নেপাল এর বেশিটা দিক, আর নেপাল বললো চীনকে দিতে।
আরো দেখা গেলো, গোটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দরকার হবে ২৭৫ ট্রিলিয়ন নেপালি রুপি। বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গম অঞ্চল পারি দিতে হবে এই পথকে। ফলে একই সঙ্গে ব্যয়বহুল ও জটিল হবে এই প্রকল্প। বলতে গেলে পুরো পথটি টানেল ও ব্রিজের উপর দিয়ে নির্মাণ করতে হবে। হিমালয় পর্বতের নিচ দিয়ে ৪০-৫০ কিলোমিটার টানেল নির্মাণ করতে হবে।
নেপালের একদল প্রকৌশলী বলছেন প্রকল্পটি অসম্ভব, অন্যরা পথ খুঁজে পেতে চাইছেন। তবে তার জন্য মুক্তহস্তে খরচ করতে হবে নেপালকে। বেশিরভাগ খচর মঞ্জুরি হিসেবে দিতে চীন গররাজি। এখন নেপাল যদি চীনের ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তাহলে এর উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে নেপালীরা।
ভারত এরই মধ্যে ২৫ কিলোমিটার জনকপুর-জয়নগর রেলপথ নির্মাণ শেষ করেছে। কিন্তু যেই না চীন-নেপাল রেলপথ নির্মাণ নিয়ে আলোচনা শুরু হলো, তখনই নতুন রাক্সুল-কাঠমান্ডু রেলপথ নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হলো নয়া দিল্লি। এরই মধ্যে এর সম্ভাব্যতা যাচাই হয়ে গেছে। মূলত সমতল ভূমির মধ্য দিয়ে যাওয়া এই পথ কাঠমান্ডু-তিব্বত রেলপথের চেয়ে অনেক সস্তায় নির্মাণ করা যাবে।
কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে: ভারত চাচ্ছে রেলপথটি ব্রডগেজে নির্মাণ হোক। কিন্তু নেপাল বলছে তারা শুধু ন্যারো ‘স্টান্ডার্ড গেজ’ অনুমতি দেবে, যা চীন ব্যবহার করে। এতে ভারত খুশি হতে পারেনি। নেপাল বলছে, শুধু চীনকে খুশি করতে নয় সারা বিশ্বেই ‘স্টান্ডার্ড গেজ’ ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই এটি তুলনামূলক সস্তা।
নেপাল ভাবতে পারে ব্রডগেজ ব্যবহার করে ভারত রাক্সুল-কাঠমান্ডু লাইন তৈরি করলে ক্ষতি নেই। এতে ভাবিষ্যতে তারা চীন-নেপাল-ভারত রেলপথের উপর অধিকতর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। তা নাহলে চীনের ট্রেন হয়তো সরাসরি নেপালের উপর দিয়ে ভারতে চলে যাবে। নেপালের বলার কিছু থাকবে না।
এখন প্রশ্ন হলো ভারত বা চীনের রেলপথ কি আদৌ তৈরি হবে?
নেপালের সঙ্গে ভারতের সড়ক যোগাযোগ ভালো। নেপালের ভূমিকম্পপ্রবণতার সঙ্গে মিল রেখে এগুলো উন্নত ও সম্প্রসারণ করা যাবে সহজেই। যদিও তিব্বত হয়ে চীনের সঙ্গে নেপালের সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা অনেক কঠিন কিন্তু এরপরও তাতে আন্ত:সীমান্ত রেলপথ নির্মাণের চেয়ে কম খরচ হবে। তাই চীন ও ভারতের সঙ্গে রেলপথ নির্মাণে রাজি হওয়ায় সম্ভবত বিষয়গুলো এখন আর নেপালের হাতে নেই।
অন্তত কাগজে কলমে যদি ভারতীয় রেলপথ কাঠমান্ডুতে আগে পৌছে তাহলে খরচ বেশি হলেও কাঠামান্ডুতে পৌছার গরজ অনুভব করবে চীন। ভারত ও চীনের সঙ্গে নেপাল যুক্ত হলে তা চীন-ভারত বাণিজ্যের সহায়ক হবে, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এসব রেলপথ নির্মাণের পেছনে ভূকৌশলগত বিষয়টিই কাজ করবে।
আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে ভারতের ভূমিকা ভালো চোখে দেখবে না বেইজিং। তারা নেপালকে পিভোটাল রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে চিত্রায়িত করতে চাচ্ছে সেটাও অনুমোদন করবে না। সম্প্রতি কাঠমান্ডুতে মার্কিন ও চীনা রাষ্ট্রদূতরা ‘ঋণফাঁদ’ নিয়ে বিতণ্ডায় পর্যন্ত লিপ্ত হয়েছেন।
কাঠমান্ডুর বিশ্লেষকরা মোদির দ্বিতীয় মেয়াদের ভারতের কাছ থেকে অধিকতর পেশীশক্তির পররাষ্ট্রনীতি আশঙ্কা করছেন। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের কারণে নেপালে চীনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা চালাবে বলে তাদের আশংকা। ফলে চীনও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
তবে কেউই শিগগিরই নেপালের কোন বড় শহরে ভারত বা চীনের রেলগাড়ি আশা করছেন না। সময়মতো প্রকল্প শেষ করতে না পারার ব্যাপারে নেপালে ভারতের কুখ্যাতি রয়েছে। অন্যদিকে তহবিল যোগান নিয়ে মনোস্থির করতে পারেনি চীন। কুইংঘি-তিব্বত রেললাইনটি নেপাল সীমান্ত পর্যন্ত সম্প্রসারণ আরো পাঁচ বছর দেরি হতে পারে বলে সম্প্রতি চীন আভাস দিয়েছে।
যদিও ভারতীয় বা চীনা রেলপথের উপযোগিতা নিয়ে নেপালিরা বিভক্ত। তবে অর্থনীতির উপর ভূরাজনীতি প্রাধান্য পাওয়ার সম্ভাবনা সবসময়ই থেকে যায়।
No comments