ভুলের জালে বিএনপি
ক্ষমতার
বাইরে থাকার এক যুগের বেশি সময় অতিক্রম করেছে বিএনপি। আগামী অক্টোবরে
ক্ষমতা ছাড়ার ১৩ বছর পূর্ণ হবে। গত ১৩ বছরে দলটির নেতৃত্ব ধীরে ধীরে
দুর্বলতর বা শূন্য হয়ে পড়ছে। যথাসময়ে যথাসিদ্ধান্ত না নিতে পারাই সব থেকে
বেশি চোখে লাগছে। উল্টাপাল্টা সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে দলটির মাঠ পর্যায়ের
নেতাকর্মীরা মাঝেমধ্যেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তারা দেখছে, ভুলের নেশায় পেয়ে
বসেছে বিএনপিকে। একটার পর একটা ভুল করছে তারা। অনেকে বলেন, ২০০৬ সালে
ক্ষমতা ছাড়ার আগে তারা প্রচুর ভুল করেছিল।
কিন্তু সেই ভুলের পাকচক্র থেকে তারা আর বেরুতে পারেনি। বরং আরো বেশি ভুলের চোরাবালিতে আটকা পড়েছে। কেউ বলেন, রাজনীতি আর খেলার মাঠে তফাৎ নেই। মাঠে ভুল হলে তা আর সংশোধন করা যায় না। খেসারত দিতেই হবে। এটা ঠিক যে, তারা অভাবনীয় চাপের সম্মুখীন। বাংলাদেশের মাটিতে এরকমভাবে কোনো রাজনৈতিক দলকে চাপে রাখা সম্ভব, তা এর আগে ভাবা যায়নি। কিন্তু সেই দোহাই দিয়ে বিএনপির ভুল রাজনীতিকে যথার্থতা দেয়া যাবে না।
অনেকের মতে বিএনপি জন্মকালে ঠেকায় পড়ে শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করেছিল। সেই যে, তাদের ট্যাগ লাগলো স্বাধীনতা বিরোধীদের মিত্র করার। এরপর আর কখনই দলটি এই ইমেজ ভাঙার চেষ্টা করলো না। আজ এতকিছুর পরও তারা ভুলের রাজনীতিতে খাবি খাচ্ছে। তারা জামায়াত সঙ্গ ত্যাগ করতে পারছে না। তারা বলেছে বটে- তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছে। কিন্তু তা বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটে ভুগছে। তারা বলেছে বটে, জামায়াতের সঙ্গে তাদের আদর্শগত সম্পর্ক নেই। কিন্তু তাও একই সংকটে ভুগছে। ১৯৯১ সালের সংসদে তারা ইনডেমনিটি বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েও সরে এসেছে। জিয়াউর রহমান দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করেননি। অথচ এই অপবাদ তাকে নিতে হয়েছে। বিএনপি নেতারা কখনো বিষয়টি পরিষ্কার করেননি। জিয়াউর রহমান কর্নেল ফারুক-রশীদকে রাজনীতি করতে দেননি। দিয়েছেন এরশাদ। জিয়া ফারুককে কোর্ট মার্শালে ৫ বছর জেল ও এক লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি এই তথ্য কোনোদিন প্রচার করেনি।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে বাংলাদেশ পরপর তিনবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু দুর্নীতির দায়ে দলে তারা শুদ্ধি অভিযান চালায়নি। এমনকি কোনো উদ্যোগও নেয়নি। এরপর নিজেরা ২০০৪ সালের ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার পরে যা যা করণীয় ছিল তা তারা করেনি। বরং জজ মিয়া নাটকের জন্ম দিয়েছে। এই গ্রেনেড হামলার বিষয়ে বিএনপি কোনো বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারেনি। যদিও বিএনপি বিশ্বাস করে যে, গ্রেনেড হামলায় সংগঠনগতভাবে বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কিন্তু মানুষের কাছে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিনের ওপর ভরসা করে তারা ভুল করেছিল। বরং তিনি এমন প্রক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টা হলেন যা পরে কেয়ারটেকার সরকার বাতিলের অপরাজনীতিকে বৈধতা দেয়ার কাজে লেগেছে। সবশেষ তারা ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করেছিল বলেই অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করেন। কিন্তু সেই বয়কট ভুল ছিল কি ঠিক ছিল- সে বিষয়ে বিএনপি বিভক্ত থেকে গেছে। তারা এক সুর ধারণ করতে পারেনি। ২০১৩-২০১৪ সালে পেট্রলবোমার নাশকতায় বিএনপির ভূমিকা কি ছিল, সে বিষয়ে তারা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারেনি। গ্রেনেড হামলার পরে পেট্রলবোমা হামলার বিষয়ে তারা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে না পারার কারণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ বর্তমান রূপে পাল্টে দেয়ার একটা যোগসূত্র অনেকেই স্বীকার করেন।
অনেকের মতে, সর্বশেষ গত নির্বাচনে যেতে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারা। ‘মিত্রদের’ সঙ্গে হঠাৎ জোট গঠন করা, গণভবনে সংলাপে যাওয়া, প্রধানমন্ত্রীর কাছে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের একটি তালিকা ধরিয়ে দেয়া। কিন্তু তা থেকে কৌশলগত কোনো জয় অর্জন করতে না পারা। আবার ২৯শে ডিসেম্বরের ঘটনা সম্পর্কে কোনো ধরনের আঁচটি পর্যন্ত করতে না পারা। আবার সংসদে যোগদান প্রশ্নে একবার না একবার হ্যাঁ, মির্জা ফখরুলের যোগদান না করা, ভোটের পরে ‘ঐক্যফ্রন্টের রাজনীতি’কে বিসর্জন দেয়া, এমন সবকিছু মিলিয়ে এটা খুব পরিষ্কার যে, সাধারণ মানুষ তাদের ওপর খুব একটা ভরসা রাখতে পারছে না। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পরস্পরের বিরুদ্ধে মুখ খোলা বা অনুরাগ-বীতরাগ প্রকাশ করার মধ্যেও দলটির দুর্বলতার লক্ষণ স্পষ্ট।
অনেক পর্যবেক্ষক আক্ষেপ করে বলছেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় যেখানে প্রায় প্রত্যেকটি পদক্ষেপ হতে হবে সঠিক, সেখানে প্রায় প্রত্যেকটি পদক্ষেপ ভুল বা বিভ্রান্তিকর হচ্ছে। কেউ বলছেন, ব্যর্থতার জন্য কে দায়ী, সেটা বড় কথা নয়। বিএনপির নেয়া পদক্ষেপগুলো সঠিক, সাহসী, মোক্ষম ও তাৎক্ষণিক বা কৌশলগত হওয়া থেকে অনেক দূরে আছে, সেটাই বড় ব্যাপার। অবশ্য কেউ কেউ বলছেন, টানা এক যুগের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির এমনই হওয়ার কথা। এতে খুব বেশি আপসেট হওয়ার কারণ নেই। আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। তারা ফিরে এসেছে। আবার বিদায় নিয়েছে। আবার ফিরে এসেছে।
অনেকেই হয়তো ভুলে গেছেন যে, একুশ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একটি অংশ এডাল থেকে ওডালে দাপাদাপি যে করেননি তাতো নয়। বিএনপিও সেই উপসর্গ থেকে মুক্ত নয়। সুদিন এলে বিএনপির পক্ষেও আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠা বিচিত্র নয়। তবে নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা বলছেন, ওই ২১ বছরে প্রধান বিরোধী দল যেভাবে যেটুকু অধিকার ভোগ করেছে, সেটা তো গত ১২ বছর অনুপস্থিত। আগামী ৯ বছর কীভাবে কাটবে সেই চিত্র আরো ধূসর।
২১ বছরের (১৯৭৫-১৯৯৬) ব্যবধানে নেতৃত্বের হাল ধরেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ রাজনীতিতে উত্তরাধিকার রাজনীতির দ্বিতীয় রাউন্ড চলছে। প্রথম রাউন্ডে উভয় পরিবারের উত্তরাধিকারীরা সাফল্যের উদাহরণ তৈরি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর পরে শেখ হাসিনা, জেনারেল জিয়ার পরে তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ফিরেছেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে আছে জিয়া পরিবার। মন্ত্রীরা ঘোষণা দিয়েছেন, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার আপিলের শুনানি এ বছরে হবে। আর তারেকের সর্বোচ্চ শাস্তি চাওয়া হবে। বিশ্লেষকরা আদালতের সম্ভাব্য ফলাফল বিষয়ে অতীতে ক্ষমতাসীনদের অভিপ্রায় ও বাস্তবতা মিলিয়ে নিচ্ছেন। আর তাই অনেকেই বলছেন, তারেক রহমানের যাবজ্জীবন সাজা মৃত্যুদণ্ডে উন্নীত হলে তার একটা প্রভাব বিএনপির রাজনীতিতে দৃশ্যমান হতে পারে। এই মুহূর্তে এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ কম যে, জেনারেল জিয়ার সব থেকে দুই প্রভাবশালী উত্তরাধিকার বেগম খালেদা জিয়ার জামিন অনিশ্চিত। তারেক রহমানের দেশে ফেরা অনিশ্চিত।
প্রশ্ন উঠেছে, বর্তমানে যে অবস্থা চলছে, সেই অবস্থা ধরে রেখে তারা আগামী সাধারণ নির্বাচনে কি করবে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মওদুদ আহমেদ, ড. মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কী ভূমিকা রাখছেন- দলটির নেতাকর্মীদের কাছেও সেটা স্পষ্ট নয়। ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে সময় ঠিকই খসে পড়ছে। বিএনপি নেতারা ভাব নেন, তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেকের প্রত্যাবর্তন এবং সাধারণ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। বাস্তবতা তা বলে না। অবশ্য অনেকে বলেন, বিএনপির কোনো নেতৃত্বই এর উত্তর জানেন না বা খোঁজেন না।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছিলেন, তাদের নেতা জেলে যাওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীরা আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ। মামলাও বিএনপির বেশি ক্ষতি করতে পারবে না।’ কিন্তু এই ঐক্য থাকলেও তা কি ফল দিয়েছে, তার সদুত্তর মির্জার জানা নেই। মামলা বিএনপির ক্ষতি যা করার করেছে। এবং করে চলছে। কোনো প্রতিরোধ তারা গড়ে তুলতে পারেননি। এখন মামলা করে করে ক্লান্ত প্রশাসন কিছুটা জিরিয়ে নিচ্ছে। মির্জা ওই সময়ে বিবিসিকে বলেছিলেন, খালেদাকে কারাগারে বেশিদিন রাখতে পারবে না। দল অটুট আছে, অটুট থাকবে। তিনি ভদ্রলোক, সজ্জন, কিন্তু ভিতু। দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০টি জেলাও সফর করেননি। মির্জা হয়তো বিশ্বাস করেন, বিএনপির কর্মীবাহিনী, জনগণ সরকারি ‘নিপীড়ন’ মোকাবিলা করেই রাজনৈতিক লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারবে।’ কিন্তু কি সেই রাজনৈতিক লক্ষ্য তারা কারো কাছে খুব পরিষ্কার নয়। মুক্তি, প্রত্যাবর্তন বা নির্বাচন ছাড়া কোনো পরিবর্তন অর্থবহ মনে করতে পারেন না দলের নেতাকর্মীরা।
বেগম খালেদা জিয়া আপসহীন। বলা হচ্ছে, তিনি চাইলে মুক্তি নিতে পারতেন। কিন্তু তার এই ত্যাগের মহিমা ম্লান। কারণ এটা কমই মনে করা হয় যে, তিনি মুক্তি পেলে বিরাট আন্দোলন হবে। কিংবা চলমান রাজনৈতিক স্থিতাবস্থার কোনো ‘বেইল আউট’ ঘটবে। বরং দলটির বিদেশি মিত্ররা- যারা একদা বিএনপির কাছে পরীক্ষিত ছিল, তারা বদলে গেছে। ওই ভাবনায় নানা চিড় ধরেছে। চীন ও সৌদি আরবের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বর্তমান সম্পর্কটা বিএনপির সাবেক সম্পর্কের সঙ্গে তুলনা করলেই বিষয়টি জলবৎ তরলং হয়ে ওঠে। সুতরাং বিএনপি নেতৃত্বের সামনে প্রশ্ন তারা স্বল্পমেয়াদে, মধ্যমেয়াদে বা দীর্ঘমেয়াদে কি করবে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, ‘দেশে সামন্ত ধাঁচের মানসিকতা প্রবল। তাই আমরা পরিবারগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। জিয়া পরিবার থেকে একটা বিকল্প কাউকে বের করতে হবে। কারণ পরিবারের বাইরে নেতৃত্ব তো যাবে না। স্ট্যান্ডিং কমিটির যে অবস্থা কেউ কাউকে মানে না।’
অথচ বেগম খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের বাইরে পরিবারের কাউকে সামনে আনার বিষয়টি একেবারেই আলোচনায় নেই। সংরক্ষিত মহিলা আসনে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার অভিষেক পর্বে পর্দার আড়ালে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রীর নাম জানা গিয়েছিল। কিন্তু সেটা পর্দার আড়ালেই থাকলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমদে বলেন, আমরা যদি উপমহাদেশীয় উত্তরাধিকারী রাজনীতির দিকে তাকাই তাহলে রাজার ছেলে রাজা হবে, সেটা কিন্তু ট্রেন্ড নয়। বরং ট্রেন্ড এটাই যে, ভয়ানক কোনো বিয়োগান্তক অধ্যায়ের অব্যবহিত পরেই কেবল পরিবারের কারো উত্থান ঘটে। খুব বেশি দেরি হলে মানুষ ভুলে যায়। অন্তত উল্লেখেেযাগ্য সহানুভূতি মেলে না। এটা হারিয়ে যায়। ইন্দিরা গান্ধী হত্যাকাণ্ডের পর তার ছেলে রাজীব কেবল একবারই চান্স পেয়েছেন। ভুট্টোর ফাঁসির পরে বেনজির এবং বেনজির হত্যাকাণ্ডের পরে তার স্বামী সুযোগ নিয়েছেন। রাহুল পারল না বলে প্রিয়াঙ্কা এলো, তা কাজ দিলো না। বিলওয়াল ভুট্টো মায়ের হত্যাকাণ্ডের সহানুভূতির ভোট পাবেন, কিন্তু সেটাই ক্ষমতায় নেবে না। অবশ্য অনেক বিশ্লেষক বলেন, বিএনপিকে টিকতে হলে পরিবারের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। বর্তমান পরিবেশে তারা কেউ এসে হাল ধরার অবস্থায় নেই। কেউ এলেও তিনি হয়তো একজন নারী হবেন। কিন্তু বাস্তবতা তাকে স্বাগত জানাবে না। সুতরাং বিএনপিকে টিকতে হলে তার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। রাজধানী ঢাকাই বিরোধী দলের প্রধান ঘাঁটি। কিন্তু ঢাকাকে ১৫টি ভাগে ভাগ করে শক্তিশালী সাংগঠনিক কমিটি গঠন বিষয়টি স্বপ্ন হয়েই থাকছে। স্থায়ী কমিটির অনেক সদস্যই শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছেন। তারা নিয়মিত সভায় আসতে পারেন না। পারেন না কার্যকরভাবে আলোচনায় অংশ নিতে।
দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন, মানবাধিকার কমিশনে দুর্বল ভূমিকা পালন, মাদক যুদ্ধে কয়েক শত লোকের মৃত্যু, ৩০ লাখের বেশি মামলাজট, সড়কে প্রতিদিন ২০ জনের বেশি মানুষের লাশ হওয়া, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, খাদ্যে ভেজাল, ব্যাংকে তারল্য সংকট, যানজট, ঘুষ-দুর্নীতি বেড়ে যাওয়া, পুঁজিবাজার ধ্বংস করে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীকে নিঃস্ব করা, লাখো শিক্ষিত বেকারের চাকরি না হওয়া, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি দেয়া ইত্যাদি বিষয়ে বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব কি বলছে- এসব বিষয় জানতে দেশের মানুষের আগ্রহ ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে।
বিএনপির সংকট গভীরতর। তার সংকটের কারণ পরিষ্কার। কিন্তু তা দূর করার সামর্থ্য নেতাদের নেই। এই প্রেক্ষাপটে অনেকে শঙ্কিত হয়ে বলছেন, সরকারি দলেরই উচিত দেশের স্বার্থে, ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে প্রধান বিরোধী দলকে স্পেস করে দেয়া। রোহিঙ্গা সংকটের পর আসাম সংকট এবং পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকারের সম্ভাব্য উত্থান- সবমিলিয়ে একটা নতুন সংকট। এই মুহূর্তে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির নিজেকে তৈরি করা দেশের বৃহত্তর স্বার্থেও জরুরি।
কিন্তু সেই ভুলের পাকচক্র থেকে তারা আর বেরুতে পারেনি। বরং আরো বেশি ভুলের চোরাবালিতে আটকা পড়েছে। কেউ বলেন, রাজনীতি আর খেলার মাঠে তফাৎ নেই। মাঠে ভুল হলে তা আর সংশোধন করা যায় না। খেসারত দিতেই হবে। এটা ঠিক যে, তারা অভাবনীয় চাপের সম্মুখীন। বাংলাদেশের মাটিতে এরকমভাবে কোনো রাজনৈতিক দলকে চাপে রাখা সম্ভব, তা এর আগে ভাবা যায়নি। কিন্তু সেই দোহাই দিয়ে বিএনপির ভুল রাজনীতিকে যথার্থতা দেয়া যাবে না।
অনেকের মতে বিএনপি জন্মকালে ঠেকায় পড়ে শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করেছিল। সেই যে, তাদের ট্যাগ লাগলো স্বাধীনতা বিরোধীদের মিত্র করার। এরপর আর কখনই দলটি এই ইমেজ ভাঙার চেষ্টা করলো না। আজ এতকিছুর পরও তারা ভুলের রাজনীতিতে খাবি খাচ্ছে। তারা জামায়াত সঙ্গ ত্যাগ করতে পারছে না। তারা বলেছে বটে- তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছে। কিন্তু তা বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটে ভুগছে। তারা বলেছে বটে, জামায়াতের সঙ্গে তাদের আদর্শগত সম্পর্ক নেই। কিন্তু তাও একই সংকটে ভুগছে। ১৯৯১ সালের সংসদে তারা ইনডেমনিটি বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েও সরে এসেছে। জিয়াউর রহমান দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করেননি। অথচ এই অপবাদ তাকে নিতে হয়েছে। বিএনপি নেতারা কখনো বিষয়টি পরিষ্কার করেননি। জিয়াউর রহমান কর্নেল ফারুক-রশীদকে রাজনীতি করতে দেননি। দিয়েছেন এরশাদ। জিয়া ফারুককে কোর্ট মার্শালে ৫ বছর জেল ও এক লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি এই তথ্য কোনোদিন প্রচার করেনি।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে বাংলাদেশ পরপর তিনবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কিন্তু দুর্নীতির দায়ে দলে তারা শুদ্ধি অভিযান চালায়নি। এমনকি কোনো উদ্যোগও নেয়নি। এরপর নিজেরা ২০০৪ সালের ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার পরে যা যা করণীয় ছিল তা তারা করেনি। বরং জজ মিয়া নাটকের জন্ম দিয়েছে। এই গ্রেনেড হামলার বিষয়ে বিএনপি কোনো বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারেনি। যদিও বিএনপি বিশ্বাস করে যে, গ্রেনেড হামলায় সংগঠনগতভাবে বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কিন্তু মানুষের কাছে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিনের ওপর ভরসা করে তারা ভুল করেছিল। বরং তিনি এমন প্রক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টা হলেন যা পরে কেয়ারটেকার সরকার বাতিলের অপরাজনীতিকে বৈধতা দেয়ার কাজে লেগেছে। সবশেষ তারা ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করেছিল বলেই অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করেন। কিন্তু সেই বয়কট ভুল ছিল কি ঠিক ছিল- সে বিষয়ে বিএনপি বিভক্ত থেকে গেছে। তারা এক সুর ধারণ করতে পারেনি। ২০১৩-২০১৪ সালে পেট্রলবোমার নাশকতায় বিএনপির ভূমিকা কি ছিল, সে বিষয়ে তারা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারেনি। গ্রেনেড হামলার পরে পেট্রলবোমা হামলার বিষয়ে তারা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে না পারার কারণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ বর্তমান রূপে পাল্টে দেয়ার একটা যোগসূত্র অনেকেই স্বীকার করেন।
অনেকের মতে, সর্বশেষ গত নির্বাচনে যেতে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারা। ‘মিত্রদের’ সঙ্গে হঠাৎ জোট গঠন করা, গণভবনে সংলাপে যাওয়া, প্রধানমন্ত্রীর কাছে গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের একটি তালিকা ধরিয়ে দেয়া। কিন্তু তা থেকে কৌশলগত কোনো জয় অর্জন করতে না পারা। আবার ২৯শে ডিসেম্বরের ঘটনা সম্পর্কে কোনো ধরনের আঁচটি পর্যন্ত করতে না পারা। আবার সংসদে যোগদান প্রশ্নে একবার না একবার হ্যাঁ, মির্জা ফখরুলের যোগদান না করা, ভোটের পরে ‘ঐক্যফ্রন্টের রাজনীতি’কে বিসর্জন দেয়া, এমন সবকিছু মিলিয়ে এটা খুব পরিষ্কার যে, সাধারণ মানুষ তাদের ওপর খুব একটা ভরসা রাখতে পারছে না। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পরস্পরের বিরুদ্ধে মুখ খোলা বা অনুরাগ-বীতরাগ প্রকাশ করার মধ্যেও দলটির দুর্বলতার লক্ষণ স্পষ্ট।
অনেক পর্যবেক্ষক আক্ষেপ করে বলছেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় যেখানে প্রায় প্রত্যেকটি পদক্ষেপ হতে হবে সঠিক, সেখানে প্রায় প্রত্যেকটি পদক্ষেপ ভুল বা বিভ্রান্তিকর হচ্ছে। কেউ বলছেন, ব্যর্থতার জন্য কে দায়ী, সেটা বড় কথা নয়। বিএনপির নেয়া পদক্ষেপগুলো সঠিক, সাহসী, মোক্ষম ও তাৎক্ষণিক বা কৌশলগত হওয়া থেকে অনেক দূরে আছে, সেটাই বড় ব্যাপার। অবশ্য কেউ কেউ বলছেন, টানা এক যুগের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির এমনই হওয়ার কথা। এতে খুব বেশি আপসেট হওয়ার কারণ নেই। আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। তারা ফিরে এসেছে। আবার বিদায় নিয়েছে। আবার ফিরে এসেছে।
অনেকেই হয়তো ভুলে গেছেন যে, একুশ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একটি অংশ এডাল থেকে ওডালে দাপাদাপি যে করেননি তাতো নয়। বিএনপিও সেই উপসর্গ থেকে মুক্ত নয়। সুদিন এলে বিএনপির পক্ষেও আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠা বিচিত্র নয়। তবে নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা বলছেন, ওই ২১ বছরে প্রধান বিরোধী দল যেভাবে যেটুকু অধিকার ভোগ করেছে, সেটা তো গত ১২ বছর অনুপস্থিত। আগামী ৯ বছর কীভাবে কাটবে সেই চিত্র আরো ধূসর।
২১ বছরের (১৯৭৫-১৯৯৬) ব্যবধানে নেতৃত্বের হাল ধরেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ রাজনীতিতে উত্তরাধিকার রাজনীতির দ্বিতীয় রাউন্ড চলছে। প্রথম রাউন্ডে উভয় পরিবারের উত্তরাধিকারীরা সাফল্যের উদাহরণ তৈরি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর পরে শেখ হাসিনা, জেনারেল জিয়ার পরে তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ফিরেছেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে আছে জিয়া পরিবার। মন্ত্রীরা ঘোষণা দিয়েছেন, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার আপিলের শুনানি এ বছরে হবে। আর তারেকের সর্বোচ্চ শাস্তি চাওয়া হবে। বিশ্লেষকরা আদালতের সম্ভাব্য ফলাফল বিষয়ে অতীতে ক্ষমতাসীনদের অভিপ্রায় ও বাস্তবতা মিলিয়ে নিচ্ছেন। আর তাই অনেকেই বলছেন, তারেক রহমানের যাবজ্জীবন সাজা মৃত্যুদণ্ডে উন্নীত হলে তার একটা প্রভাব বিএনপির রাজনীতিতে দৃশ্যমান হতে পারে। এই মুহূর্তে এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ কম যে, জেনারেল জিয়ার সব থেকে দুই প্রভাবশালী উত্তরাধিকার বেগম খালেদা জিয়ার জামিন অনিশ্চিত। তারেক রহমানের দেশে ফেরা অনিশ্চিত।
প্রশ্ন উঠেছে, বর্তমানে যে অবস্থা চলছে, সেই অবস্থা ধরে রেখে তারা আগামী সাধারণ নির্বাচনে কি করবে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মওদুদ আহমেদ, ড. মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কী ভূমিকা রাখছেন- দলটির নেতাকর্মীদের কাছেও সেটা স্পষ্ট নয়। ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে সময় ঠিকই খসে পড়ছে। বিএনপি নেতারা ভাব নেন, তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেকের প্রত্যাবর্তন এবং সাধারণ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। বাস্তবতা তা বলে না। অবশ্য অনেকে বলেন, বিএনপির কোনো নেতৃত্বই এর উত্তর জানেন না বা খোঁজেন না।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছিলেন, তাদের নেতা জেলে যাওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীরা আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ। মামলাও বিএনপির বেশি ক্ষতি করতে পারবে না।’ কিন্তু এই ঐক্য থাকলেও তা কি ফল দিয়েছে, তার সদুত্তর মির্জার জানা নেই। মামলা বিএনপির ক্ষতি যা করার করেছে। এবং করে চলছে। কোনো প্রতিরোধ তারা গড়ে তুলতে পারেননি। এখন মামলা করে করে ক্লান্ত প্রশাসন কিছুটা জিরিয়ে নিচ্ছে। মির্জা ওই সময়ে বিবিসিকে বলেছিলেন, খালেদাকে কারাগারে বেশিদিন রাখতে পারবে না। দল অটুট আছে, অটুট থাকবে। তিনি ভদ্রলোক, সজ্জন, কিন্তু ভিতু। দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০টি জেলাও সফর করেননি। মির্জা হয়তো বিশ্বাস করেন, বিএনপির কর্মীবাহিনী, জনগণ সরকারি ‘নিপীড়ন’ মোকাবিলা করেই রাজনৈতিক লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারবে।’ কিন্তু কি সেই রাজনৈতিক লক্ষ্য তারা কারো কাছে খুব পরিষ্কার নয়। মুক্তি, প্রত্যাবর্তন বা নির্বাচন ছাড়া কোনো পরিবর্তন অর্থবহ মনে করতে পারেন না দলের নেতাকর্মীরা।
বেগম খালেদা জিয়া আপসহীন। বলা হচ্ছে, তিনি চাইলে মুক্তি নিতে পারতেন। কিন্তু তার এই ত্যাগের মহিমা ম্লান। কারণ এটা কমই মনে করা হয় যে, তিনি মুক্তি পেলে বিরাট আন্দোলন হবে। কিংবা চলমান রাজনৈতিক স্থিতাবস্থার কোনো ‘বেইল আউট’ ঘটবে। বরং দলটির বিদেশি মিত্ররা- যারা একদা বিএনপির কাছে পরীক্ষিত ছিল, তারা বদলে গেছে। ওই ভাবনায় নানা চিড় ধরেছে। চীন ও সৌদি আরবের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বর্তমান সম্পর্কটা বিএনপির সাবেক সম্পর্কের সঙ্গে তুলনা করলেই বিষয়টি জলবৎ তরলং হয়ে ওঠে। সুতরাং বিএনপি নেতৃত্বের সামনে প্রশ্ন তারা স্বল্পমেয়াদে, মধ্যমেয়াদে বা দীর্ঘমেয়াদে কি করবে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, ‘দেশে সামন্ত ধাঁচের মানসিকতা প্রবল। তাই আমরা পরিবারগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। জিয়া পরিবার থেকে একটা বিকল্প কাউকে বের করতে হবে। কারণ পরিবারের বাইরে নেতৃত্ব তো যাবে না। স্ট্যান্ডিং কমিটির যে অবস্থা কেউ কাউকে মানে না।’
অথচ বেগম খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের বাইরে পরিবারের কাউকে সামনে আনার বিষয়টি একেবারেই আলোচনায় নেই। সংরক্ষিত মহিলা আসনে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার অভিষেক পর্বে পর্দার আড়ালে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রীর নাম জানা গিয়েছিল। কিন্তু সেটা পর্দার আড়ালেই থাকলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমদে বলেন, আমরা যদি উপমহাদেশীয় উত্তরাধিকারী রাজনীতির দিকে তাকাই তাহলে রাজার ছেলে রাজা হবে, সেটা কিন্তু ট্রেন্ড নয়। বরং ট্রেন্ড এটাই যে, ভয়ানক কোনো বিয়োগান্তক অধ্যায়ের অব্যবহিত পরেই কেবল পরিবারের কারো উত্থান ঘটে। খুব বেশি দেরি হলে মানুষ ভুলে যায়। অন্তত উল্লেখেেযাগ্য সহানুভূতি মেলে না। এটা হারিয়ে যায়। ইন্দিরা গান্ধী হত্যাকাণ্ডের পর তার ছেলে রাজীব কেবল একবারই চান্স পেয়েছেন। ভুট্টোর ফাঁসির পরে বেনজির এবং বেনজির হত্যাকাণ্ডের পরে তার স্বামী সুযোগ নিয়েছেন। রাহুল পারল না বলে প্রিয়াঙ্কা এলো, তা কাজ দিলো না। বিলওয়াল ভুট্টো মায়ের হত্যাকাণ্ডের সহানুভূতির ভোট পাবেন, কিন্তু সেটাই ক্ষমতায় নেবে না। অবশ্য অনেক বিশ্লেষক বলেন, বিএনপিকে টিকতে হলে পরিবারের দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। বর্তমান পরিবেশে তারা কেউ এসে হাল ধরার অবস্থায় নেই। কেউ এলেও তিনি হয়তো একজন নারী হবেন। কিন্তু বাস্তবতা তাকে স্বাগত জানাবে না। সুতরাং বিএনপিকে টিকতে হলে তার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। রাজধানী ঢাকাই বিরোধী দলের প্রধান ঘাঁটি। কিন্তু ঢাকাকে ১৫টি ভাগে ভাগ করে শক্তিশালী সাংগঠনিক কমিটি গঠন বিষয়টি স্বপ্ন হয়েই থাকছে। স্থায়ী কমিটির অনেক সদস্যই শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছেন। তারা নিয়মিত সভায় আসতে পারেন না। পারেন না কার্যকরভাবে আলোচনায় অংশ নিতে।
দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন, মানবাধিকার কমিশনে দুর্বল ভূমিকা পালন, মাদক যুদ্ধে কয়েক শত লোকের মৃত্যু, ৩০ লাখের বেশি মামলাজট, সড়কে প্রতিদিন ২০ জনের বেশি মানুষের লাশ হওয়া, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, খাদ্যে ভেজাল, ব্যাংকে তারল্য সংকট, যানজট, ঘুষ-দুর্নীতি বেড়ে যাওয়া, পুঁজিবাজার ধ্বংস করে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীকে নিঃস্ব করা, লাখো শিক্ষিত বেকারের চাকরি না হওয়া, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি দেয়া ইত্যাদি বিষয়ে বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব কি বলছে- এসব বিষয় জানতে দেশের মানুষের আগ্রহ ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে।
বিএনপির সংকট গভীরতর। তার সংকটের কারণ পরিষ্কার। কিন্তু তা দূর করার সামর্থ্য নেতাদের নেই। এই প্রেক্ষাপটে অনেকে শঙ্কিত হয়ে বলছেন, সরকারি দলেরই উচিত দেশের স্বার্থে, ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে প্রধান বিরোধী দলকে স্পেস করে দেয়া। রোহিঙ্গা সংকটের পর আসাম সংকট এবং পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সরকারের সম্ভাব্য উত্থান- সবমিলিয়ে একটা নতুন সংকট। এই মুহূর্তে শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির নিজেকে তৈরি করা দেশের বৃহত্তর স্বার্থেও জরুরি।
No comments