রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়ার নেপথ্যে by মিজানুর রহমান
দুই
বছরের চেষ্টায় একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি। ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ঢলের
দু’বছরপূর্তির দু’দিন আগে প্রত্যাবাসন শুরুর সর্বশেষ চেষ্টা হয়েছে।
কিন্তু সেটাও ব্যর্থ। প্রশ্ন ওঠেছে এর নেপথ্যে কি এমন কারণ যে আগাগোড়ায়
চীনের মধ্যস্থতা ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের ক্যাম্প এলাকায় উপস্থিত থাকার
পরও কেন একজন রোহিঙ্গাও ফিরতে রাজী হলো না? এখানে বাংলাদেশের দায় বা
দায়িত্বে কোন অবহেলা বা গাফলতি ছিল কি? বাংলাদেশ সরকার, পেশাদার কূটনীতিক ও
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা প্রত্যাবাসন চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর
চিন্তিত পুঞ্জিভূত এ সঙ্কটের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আগামীতে এটি কোন দিকে মোড় নেবে এ
নিয়ে চিন্তিত তারা। হতাশাগ্রস্থ রোহিঙ্গারা উগ্রবাদের বড় ক্ষেত্র হচ্ছে
কি-না? তা নিয়েও উদ্বিগ্ন বিশ্ব সম্প্রদায়। এটি গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তার
হুমকি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কায় বাংলাদেশ সরকারসহ স্থানীয় নাগরিকরা।
কিন্তু এই যখন অবস্থা তখন রোহিঙ্গা সঙ্কটের সৃষ্টি যেখানে সেই মিয়ানমার দোষারোপ করছে বাংলাদেশকে।
তারা পুরনো সেই ‘ব্লেমগেম’-এর বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না। বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীলরা বলছেন, এটা ব্লেমগেমের বিষয় নয়। ঢাকা যা করছে বা করেছে তা সারা দুনিয়ার সামনে স্বচ্ছ। বাস্তবতার নিরিখে এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তি মতে প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের যে কাজ তার সবটুকুই করছে ঢাকা। এতে একটুও গাফলতি ছিল না। তাছাড়া প্রত্যাবাসনে এবারের চেষ্টার মধ্যস্থতায় ছিল চীন, সেই চীনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেই সব করেছে বাংলাদেশ। প্রস্তুতির সব কিছু দেখেছেন মিয়ানমারের প্রতিনিধিও। তারপরও মিয়ানমারের এ নিয়ে বাংলাদেশকে দোষারোপ কেবল অযৌক্তিক নয়, এটা অন্যায়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি অর্থাৎ বিরোধী মহল থেকে সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতার অভিযোগ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে সরকার কূটনৈতিকভাবে ‘শক্ত’ অবস্থান নিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রত্যাবাসন হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন অবশ্য এর জবাব দিয়েছেন। তিনি গাফলতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে বলেছেন আগামী দিনে এ ইস্যুতে ‘শক্ত’ অবস্থান নেবে সরকার। তিনি এটাও বলেছেন, রোহিঙ্গাদের আরাম আয়েশ থাকবে না। ক্যাম্পে প্রত্যাবাসন বিরোধী এনজিওদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার।
মন্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলেয়ে প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, কিছু সমস্যা আছে ক্যাম্পে কাজ করা এনজিওগুলোর মধ্যে। এটা দূর করা হবে। এদের বিরুদ্ধে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু বড় প্রশ্ন হচ্ছে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার কতটা আন্তরিক? তারা কি আদৌ এদের ফেরাতে চায়, নাকী বৈশ্বিক চাপ সামলাতে নানা অজুহাত খুঁজছে, যার একটি হচ্ছে ‘আমরা প্রস্তুত, বাংলাদেশ ফেরত পাঠাতে পারছে না’ এমন ক্যাম্পেইন। প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানে যে মূখ্য তা হল- আস্থার সঙ্কট। রোহিঙ্গাদের সব দাবি যৌক্তিক নয়, কিন্তু কিছু বিষয় আছে যা মৌলিক, সেটি মিয়ানমারকে অ্যাড্রেস করতে হবে।
প্রথমতঃ রাখাইনে ফেরার জন্য তাদের নিরাপত্তা ও বসবাসের জন্য কি আয়োজন করেছে মিয়ানমার তা বাংলাদেশ সরকার তথা দুনিয়াকে দেখাতে হবে। তারা কি এটা দেখিয়েছে? আদতে তা এখনও দেখায়নি। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা রাখাইন ঘুরে এসেছেন। সেখানে তাদের রিসিভিং সেন্টার, যেখানে কেউ ফিরে গেলে রাখা হবে, সেটা দেখানো হয়েছে। কিন্তু ওই সেন্টারে তারা থাকবে এক বা দু’দিন। এর পর তাদের যেখানে নিয়ে যাওয়া হবে তা কাউকেই দেখায়নি মিয়ানমার। বলা হচ্ছে- ভারত ২৫০ বাড়িঘর তৈরি করে দিয়েছে। চীন প্রায় ১ হাজার বাড়ি তৈরি করছে। কিন্তু সেটা রাখাইনের কোথায়, কি অবস্থায় আছে সে বিষয়ে খোলাসা করে বলছে না মিয়ানমার।
ফলে এ সম্পর্কে না বাংলাদেশ জানে, না জানে বিশ্ব। রোহিঙ্গারা তো পুরোপুরি অন্ধকারে। দ্বিতীয়তঃ ওই এলাকায় তারা ফেরার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রবেশাধিকার থাকবে কি-না? রোহিঙ্গারা মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারবে কি-না? রাখাইনে এখনও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রবেশাধিকার পুরোপুরি উন্মুক্ত করেনি মিয়ানমার। এটাও একটা বড় ভয়, যে সেখানে ফেরার পর তাদের ফের আইডিবি ক্যাম্পের আদলেই বন্দি জীবন কাটাতে হবে কি-না? মিয়ানমার তাও স্পষ্ট করেনি। রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব এবং তাদের ওপর চলা বর্বরতার বিচারের দাবি করছে। যেটুকু খবর পাওয়া গেছে, বাংলাদেশ এ ইস্যুতে চীনের সঙ্গে আলোচনা করেছে। চীন যেটা বোঝানোর চেষ্টা করেছে তা হল নাগরিকত্ব, এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া, মিয়ানমার যেটা বলছে তাতেই ঢাকাকে আস্থা রাখতে হবে, প্রত্যাবাসন শুরু করতে হবে। বাস্তুচ্যুতরা ফিরে যাওয়ার পর একটা কার্ড পাবে। পরবর্তীতে আইন সংশোধন এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। বাংলাদেশ এতদিন এ নিয়ে দরকষাকষি করলেও চীনের মধ্যস্থতায় ঢাকা এখন এতে খানিকটা ছাড় দিচ্ছে, প্রত্যাবাসন শুরুর বৃহত্তর স্বার্থে। কিন্তু রোহিঙ্গারা এটা ছাড়তে নারাজ। তারা এখানে থেকেই ওই দাবি আদায় করতে চায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন যেটা বলেছেন সেটা মিয়ানমারও তার প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের তথ্য মতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনকে উদ্বৃত করে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের তরফে বলা হয়েছে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্বের দাবি আদায়ে বাংলাদেশকে জিম্মি করার চেষ্টায় রয়েছে। মন্ত্রী মোমেন ঢাকার ব্রিফিংয়ে এটা নাকচ করেছেন যে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের প্রশ্নে কোন দরকষাকষি করবে না। এটা তারা রাখাইনে ফিরে যাওয়ার পর মিয়ানমারের বিদ্যমান আইন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দেশটির যে কমিটমেন্ট বা অঙ্গীকার তার মধ্য দিয়ে অর্জন করবে। এটা বাংলাদেশের বিষয় নয়। তবে প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশের কর্মকর্তারা, যারা মিয়ানমারে কাজ করেছে বা করছেন তারা বলছেন, বিদ্যমান আইনেই মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে পারে। এখানে তাদের সদিচ্ছা মূখ্য, আইন কোন বাধা নয়।
কিন্তু রোহিঙ্গারা নাগরিত্ব না দিলে ফেরত যাবে না বলে যে শর্ত দিচ্ছে এটা মানতে নারাজ বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, এটা বাংলাদেশ থেকে অর্জনের বিষয় নয়। এটা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার সঙ্গে রাখাইনে ফিরে গিয়েই অর্জন করতে হবে। ওই কর্মকর্তারা যেটা বলার চেষ্টা করেন তা হল- রোহিঙ্গাদের দাবির শতভাগ মেনে স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন অসম্ভব। কিন্তু তাদের মৌলিক বা যৌক্তিক দাবিগুলোর প্রতি মিয়ানমারকে আন্তরিকতা দেখাতে হবে। এটার নিশ্চয়তা বা দৃশ্যমান পদেক্ষেপ থাকতে হবে। যা একই সঙ্গে বিশ্ব সম্প্রদায় দেখবে আবার রোহিঙ্গারাও দেখবে এবং আশ্বস্থ হবে। কিন্তু মিয়ানমার এখনও এ নিয়ে কোন উদ্যোগ নেয়নি। গত মে মাসে যৌথ কার্যকরি দলের চুতুর্থ বৈঠকে বাংলাদেশ মোটা দাগে দুটি প্রস্তাব দিয়েছিল। প্রথমতঃ কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গা নেতা বা মাঝিদের নিয়ে রাখাইনে তাদের প্রত্যাবাসনে কী করা হয়েছে তা দেখানো। দ্বিতীয়তঃ বাংলাদেশ তথা প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের রাখাইনে নিয়ে যাওয়ার আয়োজন করা। এতে সত্যিকার অর্থে সেখান কি উন্নতি হয়েছে বা হচ্ছে সেটি দুনিয়ায় প্রচার পেলে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফেরা সহজ হবে। কিন্তু না মিয়ানমার সেটি এতদিনেও করেনি। অবশ্য সেই বৈঠকে বা তারও আগে তারা যে অঙ্গীকার করেছিল ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গাদের বোঝানো, সেটি তারা করেছে। বাংলাদেশ বলছে এখন সেই ডায়ালগ আরও হতে হবে। এবং এটি দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে। এটি তাদের রাজী করানোর একমাত্র পথ নয়, তবে সহায়ক পথ হবে- এটাই মনে করে বাংলাদেশ।
কিন্তু এই যখন অবস্থা তখন রোহিঙ্গা সঙ্কটের সৃষ্টি যেখানে সেই মিয়ানমার দোষারোপ করছে বাংলাদেশকে।
তারা পুরনো সেই ‘ব্লেমগেম’-এর বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না। বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীলরা বলছেন, এটা ব্লেমগেমের বিষয় নয়। ঢাকা যা করছে বা করেছে তা সারা দুনিয়ার সামনে স্বচ্ছ। বাস্তবতার নিরিখে এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তি মতে প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের যে কাজ তার সবটুকুই করছে ঢাকা। এতে একটুও গাফলতি ছিল না। তাছাড়া প্রত্যাবাসনে এবারের চেষ্টার মধ্যস্থতায় ছিল চীন, সেই চীনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতেই সব করেছে বাংলাদেশ। প্রস্তুতির সব কিছু দেখেছেন মিয়ানমারের প্রতিনিধিও। তারপরও মিয়ানমারের এ নিয়ে বাংলাদেশকে দোষারোপ কেবল অযৌক্তিক নয়, এটা অন্যায়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি অর্থাৎ বিরোধী মহল থেকে সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতার অভিযোগ করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে সরকার কূটনৈতিকভাবে ‘শক্ত’ অবস্থান নিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রত্যাবাসন হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন অবশ্য এর জবাব দিয়েছেন। তিনি গাফলতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে বলেছেন আগামী দিনে এ ইস্যুতে ‘শক্ত’ অবস্থান নেবে সরকার। তিনি এটাও বলেছেন, রোহিঙ্গাদের আরাম আয়েশ থাকবে না। ক্যাম্পে প্রত্যাবাসন বিরোধী এনজিওদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার।
মন্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলেয়ে প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, কিছু সমস্যা আছে ক্যাম্পে কাজ করা এনজিওগুলোর মধ্যে। এটা দূর করা হবে। এদের বিরুদ্ধে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু বড় প্রশ্ন হচ্ছে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার কতটা আন্তরিক? তারা কি আদৌ এদের ফেরাতে চায়, নাকী বৈশ্বিক চাপ সামলাতে নানা অজুহাত খুঁজছে, যার একটি হচ্ছে ‘আমরা প্রস্তুত, বাংলাদেশ ফেরত পাঠাতে পারছে না’ এমন ক্যাম্পেইন। প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানে যে মূখ্য তা হল- আস্থার সঙ্কট। রোহিঙ্গাদের সব দাবি যৌক্তিক নয়, কিন্তু কিছু বিষয় আছে যা মৌলিক, সেটি মিয়ানমারকে অ্যাড্রেস করতে হবে।
প্রথমতঃ রাখাইনে ফেরার জন্য তাদের নিরাপত্তা ও বসবাসের জন্য কি আয়োজন করেছে মিয়ানমার তা বাংলাদেশ সরকার তথা দুনিয়াকে দেখাতে হবে। তারা কি এটা দেখিয়েছে? আদতে তা এখনও দেখায়নি। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা রাখাইন ঘুরে এসেছেন। সেখানে তাদের রিসিভিং সেন্টার, যেখানে কেউ ফিরে গেলে রাখা হবে, সেটা দেখানো হয়েছে। কিন্তু ওই সেন্টারে তারা থাকবে এক বা দু’দিন। এর পর তাদের যেখানে নিয়ে যাওয়া হবে তা কাউকেই দেখায়নি মিয়ানমার। বলা হচ্ছে- ভারত ২৫০ বাড়িঘর তৈরি করে দিয়েছে। চীন প্রায় ১ হাজার বাড়ি তৈরি করছে। কিন্তু সেটা রাখাইনের কোথায়, কি অবস্থায় আছে সে বিষয়ে খোলাসা করে বলছে না মিয়ানমার।
ফলে এ সম্পর্কে না বাংলাদেশ জানে, না জানে বিশ্ব। রোহিঙ্গারা তো পুরোপুরি অন্ধকারে। দ্বিতীয়তঃ ওই এলাকায় তারা ফেরার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রবেশাধিকার থাকবে কি-না? রোহিঙ্গারা মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারবে কি-না? রাখাইনে এখনও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রবেশাধিকার পুরোপুরি উন্মুক্ত করেনি মিয়ানমার। এটাও একটা বড় ভয়, যে সেখানে ফেরার পর তাদের ফের আইডিবি ক্যাম্পের আদলেই বন্দি জীবন কাটাতে হবে কি-না? মিয়ানমার তাও স্পষ্ট করেনি। রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব এবং তাদের ওপর চলা বর্বরতার বিচারের দাবি করছে। যেটুকু খবর পাওয়া গেছে, বাংলাদেশ এ ইস্যুতে চীনের সঙ্গে আলোচনা করেছে। চীন যেটা বোঝানোর চেষ্টা করেছে তা হল নাগরিকত্ব, এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া, মিয়ানমার যেটা বলছে তাতেই ঢাকাকে আস্থা রাখতে হবে, প্রত্যাবাসন শুরু করতে হবে। বাস্তুচ্যুতরা ফিরে যাওয়ার পর একটা কার্ড পাবে। পরবর্তীতে আইন সংশোধন এবং অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। বাংলাদেশ এতদিন এ নিয়ে দরকষাকষি করলেও চীনের মধ্যস্থতায় ঢাকা এখন এতে খানিকটা ছাড় দিচ্ছে, প্রত্যাবাসন শুরুর বৃহত্তর স্বার্থে। কিন্তু রোহিঙ্গারা এটা ছাড়তে নারাজ। তারা এখানে থেকেই ওই দাবি আদায় করতে চায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন যেটা বলেছেন সেটা মিয়ানমারও তার প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারের তথ্য মতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনকে উদ্বৃত করে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের তরফে বলা হয়েছে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্বের দাবি আদায়ে বাংলাদেশকে জিম্মি করার চেষ্টায় রয়েছে। মন্ত্রী মোমেন ঢাকার ব্রিফিংয়ে এটা নাকচ করেছেন যে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের প্রশ্নে কোন দরকষাকষি করবে না। এটা তারা রাখাইনে ফিরে যাওয়ার পর মিয়ানমারের বিদ্যমান আইন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দেশটির যে কমিটমেন্ট বা অঙ্গীকার তার মধ্য দিয়ে অর্জন করবে। এটা বাংলাদেশের বিষয় নয়। তবে প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশের কর্মকর্তারা, যারা মিয়ানমারে কাজ করেছে বা করছেন তারা বলছেন, বিদ্যমান আইনেই মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে পারে। এখানে তাদের সদিচ্ছা মূখ্য, আইন কোন বাধা নয়।
কিন্তু রোহিঙ্গারা নাগরিত্ব না দিলে ফেরত যাবে না বলে যে শর্ত দিচ্ছে এটা মানতে নারাজ বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, এটা বাংলাদেশ থেকে অর্জনের বিষয় নয়। এটা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার সঙ্গে রাখাইনে ফিরে গিয়েই অর্জন করতে হবে। ওই কর্মকর্তারা যেটা বলার চেষ্টা করেন তা হল- রোহিঙ্গাদের দাবির শতভাগ মেনে স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন অসম্ভব। কিন্তু তাদের মৌলিক বা যৌক্তিক দাবিগুলোর প্রতি মিয়ানমারকে আন্তরিকতা দেখাতে হবে। এটার নিশ্চয়তা বা দৃশ্যমান পদেক্ষেপ থাকতে হবে। যা একই সঙ্গে বিশ্ব সম্প্রদায় দেখবে আবার রোহিঙ্গারাও দেখবে এবং আশ্বস্থ হবে। কিন্তু মিয়ানমার এখনও এ নিয়ে কোন উদ্যোগ নেয়নি। গত মে মাসে যৌথ কার্যকরি দলের চুতুর্থ বৈঠকে বাংলাদেশ মোটা দাগে দুটি প্রস্তাব দিয়েছিল। প্রথমতঃ কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গা নেতা বা মাঝিদের নিয়ে রাখাইনে তাদের প্রত্যাবাসনে কী করা হয়েছে তা দেখানো। দ্বিতীয়তঃ বাংলাদেশ তথা প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের রাখাইনে নিয়ে যাওয়ার আয়োজন করা। এতে সত্যিকার অর্থে সেখান কি উন্নতি হয়েছে বা হচ্ছে সেটি দুনিয়ায় প্রচার পেলে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ফেরা সহজ হবে। কিন্তু না মিয়ানমার সেটি এতদিনেও করেনি। অবশ্য সেই বৈঠকে বা তারও আগে তারা যে অঙ্গীকার করেছিল ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গাদের বোঝানো, সেটি তারা করেছে। বাংলাদেশ বলছে এখন সেই ডায়ালগ আরও হতে হবে। এবং এটি দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে। এটি তাদের রাজী করানোর একমাত্র পথ নয়, তবে সহায়ক পথ হবে- এটাই মনে করে বাংলাদেশ।
No comments