‘রাখাইনকে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তকরণ’ প্রশ্নে রোহিঙ্গা অ্যাকটিভিস্টদের অবস্থান কী?
পাঁচ
বছর আগে ইংরেজি দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনে মিয়ানমারের সেনাশাসন নিয়ে একটি মতামত
প্রকাশ হয়েছিলো। সাংবাদিক জিশান খানের লেখা সে নিবন্ধটির প্রভাব এমন ছিল
যে মিয়ানমার সরকার ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে সে দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশি
রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিলেন। নিবন্ধে জিশান খান বলেছিলেন, বাংলাদেশ ও
মিয়ানমারের বাইরে রোহিঙ্গাদের একটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র থাকা উচিত।
এতদিন পরে এসে আবারও নতুন করে সেই আলোচনা সামনে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের
প্রতিনিধি পরিষদে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উপকমিটিতে
কংগ্রেসম্যান ব্র্যাড জেমস শেরমান রাখাইনকে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত করার
পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ৫ বছর আগে যখন জিশান খানের নিবন্ধকে ঘিরে বিতর্ক
সৃষ্টি হয়েছিল, রোহিঙ্গা অ্যাকটিভিস্টরা তখন মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বের
মধ্যেই নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা করতেন। তবে এখন এসে তাদের
ভাবনায় বদল ঘটেছে।
সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে এশিয়া প্রশান্ত-মহাসাগরীয় উপকমিটির চেয়ারম্যান ব্রাড শেরম্যান মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করার সম্ভাবনা বিবেচনায় নিতে পররাষ্ট্র দফতরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত ১৩ জুন কংগ্রেসের শুনানিতে শেরম্যান প্রশ্ন তোলেন, সুদান থেকে দক্ষিণ সুদানকে আলাদা করে একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে যুক্তরাষ্ট্র যদি সমর্থন করতে পারে, তাহলে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কেন একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না? শুনানিতে অংশ নেওয়া পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিনিধি এবং যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহায়তা প্রতিষ্ঠান, ইউএসএআইডির ভারপ্রাপ্ত প্রশাসকের উদ্দেশে তিনি পরে আবারও একই প্রশ্ন তোলেন। মিয়ানমারে সংঘটিত গণহত্যার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, তারা যদি রাখাইনের রোহিঙ্গা নাগরিকদের দায়িত্ব নিতে না পারে, তাহলে যে দেশ তাদের দায়িত্ব নিয়েছে, সেই বাংলাদেশের সঙ্গে রাখাইনকে জুড়ে দেওয়াই তো যৌক্তিক পদক্ষেপ।
জিশান খানের নিবন্ধকে ঘিরে যখন বিতর্ক উঠেছিল, সে সময় মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের মুখপাত্র ইয়ে তুত বলেছিলেন, ‘মিয়ানমার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। আমরা কখনও আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর এমন আঘাত মেনে নেবো না।’ তার সঙ্গে একমত ছিলেন অনেক রোহিঙ্গা অধিকারকর্মীরাও। অ্যাকটিভিস্ট নায় সান লুইন সে সময় বলেছিলেন, ‘এটা ভয়ানক। আমরা বার্মিজ, আমরা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। আমরা মিয়ানমারেরই অংশ এবং সবসময় তাদের অংশই থাকবো।’ সেই ঘটনার পর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে।
এবারও রাখাইন রাজ্যকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রশ্নে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যের প্রস্তাবকে অমূলক আখ্যা দিয়েছে মিয়ানমার। তবে এবার নায় সান লুইন বলছেন, ‘পাঁচ বছর আগে আমি এক রকম জবাব দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আমি সেই কথা বলবো না। কারণ পরিস্থিতি পাল্টেছে। তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। শতশত নারী ধর্ষিত হয়েছেন। আমাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অনেক বেড়ে গেছে এবং অপরাধীদের শাস্তি হয়নি।’ লুইন বলেন, মিয়ানমারকে ভাগ করে রাখাইন বাংলাদেশকে দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবটি সহজ নয়। তবে তিনি বাস্তবসম্মত চিন্তা করতে চান। ‘আমাদের দাবি দাওয়া মেনে নেওয়ার কোনও ইচ্ছে মিয়ানমারের নাই। তারা আমাদের এমন কোনও নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম হয়নি যার মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদেরকে নিরাপদ ভাবতে পারি।’ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা কখনও আলাদা হতে চাইনি। সরকারই আমাদের রাষ্ট্রহীন করে নিজেদের জন্মভূমি থেকে ছিন্ন করেছে। তারা আমাদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।’
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য কুইন্ট এ লেখা এক নিবন্ধে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শফিউর রহমান বলেন, এটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। যেকোনও সময় নায় সান লুইন বলে উঠতে পারেন, ‘‘অনেক হয়েছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করে আমাদের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে চায় আমরা মেনে নিবো। আমরা শুধু চাই আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার। কে আমাদের দেশ চালাচ্ছে তা নিয়ে মাথা ব্যাথায় নেই আমাদের।
আরেকজন বিশিষ্ট রোহিঙ্গা এক্টিভিস্ট তুন খিন বলেন, রোহিঙ্গারা কখনোই আলাদা হতে চায়নি। বর্তমানে রোহিঙ্গারা মনে করছে সরকার ব্যর্থ হয়েছে, পুরো জাতিসংঘ ব্যর্থ হয়েছে এবং সেজন্য কংগ্রেসম্যানের প্রস্তাবকে একটা সমাধান হিসেবে তারা ভাবতে পারে।
তবে ভিন্নমত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আন্তর্জাতিক নারী ও সাহসী পুরস্কার জেতা নারী রাজিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা এই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির একটি কৌশল। আমরা রোহিঙ্গারা কখনও নিজ দেশ থেকে আলাদা হয়ে অন্য দেশের সঙ্গে যোগ দিয়ে মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলতে চাই না।’
২০০৮ সালে প্রণীত মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী, দেশের কোনও অংশই অঞ্চল, রাজ্য কিংবা স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলমূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা হতে পারবে না। তবে ১৯৪৭ সালের সংবিধানের ধারা ছিলো একদমই ভিন্ন। সেখানে ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিলো।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। বর্তমানে বাংলাদেশে বাস করা রোহিঙ্গার সংখ্যা দশ লাখেরও বেশি। জাতিসংঘ এই সামরিক অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ বলে আখ্যা দেয়।
সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে এশিয়া প্রশান্ত-মহাসাগরীয় উপকমিটির চেয়ারম্যান ব্রাড শেরম্যান মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করার সম্ভাবনা বিবেচনায় নিতে পররাষ্ট্র দফতরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত ১৩ জুন কংগ্রেসের শুনানিতে শেরম্যান প্রশ্ন তোলেন, সুদান থেকে দক্ষিণ সুদানকে আলাদা করে একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে যুক্তরাষ্ট্র যদি সমর্থন করতে পারে, তাহলে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কেন একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না? শুনানিতে অংশ নেওয়া পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিনিধি এবং যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহায়তা প্রতিষ্ঠান, ইউএসএআইডির ভারপ্রাপ্ত প্রশাসকের উদ্দেশে তিনি পরে আবারও একই প্রশ্ন তোলেন। মিয়ানমারে সংঘটিত গণহত্যার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, তারা যদি রাখাইনের রোহিঙ্গা নাগরিকদের দায়িত্ব নিতে না পারে, তাহলে যে দেশ তাদের দায়িত্ব নিয়েছে, সেই বাংলাদেশের সঙ্গে রাখাইনকে জুড়ে দেওয়াই তো যৌক্তিক পদক্ষেপ।
জিশান খানের নিবন্ধকে ঘিরে যখন বিতর্ক উঠেছিল, সে সময় মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের মুখপাত্র ইয়ে তুত বলেছিলেন, ‘মিয়ানমার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। আমরা কখনও আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর এমন আঘাত মেনে নেবো না।’ তার সঙ্গে একমত ছিলেন অনেক রোহিঙ্গা অধিকারকর্মীরাও। অ্যাকটিভিস্ট নায় সান লুইন সে সময় বলেছিলেন, ‘এটা ভয়ানক। আমরা বার্মিজ, আমরা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। আমরা মিয়ানমারেরই অংশ এবং সবসময় তাদের অংশই থাকবো।’ সেই ঘটনার পর পাঁচ বছর পেরিয়ে গেছে।
এবারও রাখাইন রাজ্যকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রশ্নে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যের প্রস্তাবকে অমূলক আখ্যা দিয়েছে মিয়ানমার। তবে এবার নায় সান লুইন বলছেন, ‘পাঁচ বছর আগে আমি এক রকম জবাব দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আমি সেই কথা বলবো না। কারণ পরিস্থিতি পাল্টেছে। তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। শতশত নারী ধর্ষিত হয়েছেন। আমাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অনেক বেড়ে গেছে এবং অপরাধীদের শাস্তি হয়নি।’ লুইন বলেন, মিয়ানমারকে ভাগ করে রাখাইন বাংলাদেশকে দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবটি সহজ নয়। তবে তিনি বাস্তবসম্মত চিন্তা করতে চান। ‘আমাদের দাবি দাওয়া মেনে নেওয়ার কোনও ইচ্ছে মিয়ানমারের নাই। তারা আমাদের এমন কোনও নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম হয়নি যার মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদেরকে নিরাপদ ভাবতে পারি।’ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা কখনও আলাদা হতে চাইনি। সরকারই আমাদের রাষ্ট্রহীন করে নিজেদের জন্মভূমি থেকে ছিন্ন করেছে। তারা আমাদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।’
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য কুইন্ট এ লেখা এক নিবন্ধে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শফিউর রহমান বলেন, এটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। যেকোনও সময় নায় সান লুইন বলে উঠতে পারেন, ‘‘অনেক হয়েছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করে আমাদের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে চায় আমরা মেনে নিবো। আমরা শুধু চাই আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার। কে আমাদের দেশ চালাচ্ছে তা নিয়ে মাথা ব্যাথায় নেই আমাদের।
আরেকজন বিশিষ্ট রোহিঙ্গা এক্টিভিস্ট তুন খিন বলেন, রোহিঙ্গারা কখনোই আলাদা হতে চায়নি। বর্তমানে রোহিঙ্গারা মনে করছে সরকার ব্যর্থ হয়েছে, পুরো জাতিসংঘ ব্যর্থ হয়েছে এবং সেজন্য কংগ্রেসম্যানের প্রস্তাবকে একটা সমাধান হিসেবে তারা ভাবতে পারে।
তবে ভিন্নমত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আন্তর্জাতিক নারী ও সাহসী পুরস্কার জেতা নারী রাজিয়া সুলতানা। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা এই অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির একটি কৌশল। আমরা রোহিঙ্গারা কখনও নিজ দেশ থেকে আলাদা হয়ে অন্য দেশের সঙ্গে যোগ দিয়ে মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলতে চাই না।’
২০০৮ সালে প্রণীত মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী, দেশের কোনও অংশই অঞ্চল, রাজ্য কিংবা স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলমূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা হতে পারবে না। তবে ১৯৪৭ সালের সংবিধানের ধারা ছিলো একদমই ভিন্ন। সেখানে ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিলো।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। বর্তমানে বাংলাদেশে বাস করা রোহিঙ্গার সংখ্যা দশ লাখেরও বেশি। জাতিসংঘ এই সামরিক অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ বলে আখ্যা দেয়।
No comments