সিলেটে রঙ্গশালা থেকে যেভাবে গ্রেপ্তার মিনারা ও হেনা by ওয়েছ খছরু
যুব
মহিলা লীগ নেত্রী মিনারা। আর জাপানেত্রী হেনা। দু’জন রঙ্গশালা গড়ে
তুলেছিলেন সিলেট শহরতলীর ঘাটের ছটিতে। ফ্ল্যাট বাসা নিয়ে দাপটের সঙ্গে
চালিয়ে যাচ্ছিলেন অসামাজিক কাজ। পাপ পথে তাদের বিচরণ অনেক আগে থেকেই। যৌবন
পেরিয়ে এখন তারা দু’জনই মধ্য বয়সী। সিলেটে তাদের স্ক্যান্ডালের অন্ত নেই।
অনেকবার হয়েছেন পত্রিকার শিরোনাম।
কিন্তু পাপপথ ত্যাগ করেননি তারা। বরং রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে মিনারা ও হেনা হয়ে উঠেন আরো বেপরোয়া। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না তাদের। তাদের অসামাজিক কাজের বিরুদ্ধে ফুটে উঠেছিলো ঘাটের ছটি গ্রামের মানুষ। প্রতিবাদী হয়ে উঠে। রোববার তখন মধ্যরাত। অচেনা-অজানা যুবকরা এসে আড্ডা জমিয়েছে মিনারা ও হেনার আস্তানায়। প্রতিবাদী লোকজন ঘেরাও করে বাসা। অসামাজিক কার্যকলাপের প্রতিবাদ জানায় তারা। অভিযোগ করেন- ইয়াবা বিক্রির হাটও হচ্ছে মিনারার আস্তানায়। খবর পেয়ে ছুটে যান জনপ্রতিনিধিরা। আসে পুলিশও। এলাকাবাসীর সামনেই পুলিশ ১৬ খদ্দের সহ মিনারা, হেনা এবং লিমা নামের আরো এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে গতকাল তাদের আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। এক সময় নাম ছিলো মিনারা বেগম। এখন নতুন নাম মিনারা চৌধুরী। বাড়ি সিলেটের জৈন্তাপুরে বনপাড়া দক্ষিণ গ্রামে। স্বামী আজিজুর রহমান। সিলেট জেলা যুব মহিলা লীগের অর্থ সম্পাদিকা তিনি। কিন্তু মিনারাকে নিয়ে অসংখ্য স্ক্যান্ডাল সিলেটে। নানা ঘটনায় একাধিকবার মিনারা আলোচিত হয়েছেন। তাকে নিয়ে বিব্রতও আওয়ামী লীগ নেতারা। সর্বশেষ মিরাবাজারে রোকেয়া ও তার ছেলের খুনের ঘটনার পর মিনারার নাম আলোচনায় এসেছিলো। রোকেয়ার সঙ্গেও মিনারার সম্পর্ক ছিল। আর হেনা বেগম সিলেট জেলা মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদিকা। নানা স্ক্যান্ডালে হেনাও আগে বহুবার বিতর্কিত হয়েছেন। হেনার পাপ পথের খবরও অনেকেরই জানা। নগরীর মীরবক্সটুলায় বর্তমানে বাসা। জাতীয় পার্টিতেও তাকে নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই। সিলেটের পশ্চিম জিন্দাবাজারে হেনার রয়েছে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এর আগে হেনা সিলেট সদর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়াই করেছিলেন। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর ঠিকানা দিয়েছে টুকেরবাজারের। স্বামীর নাম মোহাম্মদ হোসেন। সিলেট জেলা মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদিকা হলেও কয়েক বছর ধরে হেনা বেগম রাজনীতিতে নীরব। তবে- মিনারা ও হেনার সংখ্য বেশ পুরনো। তাদের যৌথ পথচলায় সিলেটে গড়ে উঠেছে একটি নারী সিন্ডিকেট। তাদের বেশির ভাগই অসামাজিক কাজ ও মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত। সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার একটি গ্রাম ঘাটেরছটি। সেটি সিলেট সদরের পাশেই। বলতে গেলে সিলেট শহরতলী এলাকা। বটেশ্বর লাগোয়া গ্রাম। এ গ্রামে উপহার কমিউনিটি সেন্টার। পাশেই হচ্ছে প্রবাসী ফারুক আহমদের দোতলা বাসা। এই বাসার নিচতলায় বসবাস করেন ফারুক আহমদের পরিবার। আর দুইতলায় প্রায় একবছর আগে ভাড়া নেন মিনারা বেগম। সঙ্গে হেনাও। নিজেরা বসবাসের কথা বলে তারা ভাড়া নেন। কিন্তু এই বাসায় বাইরের পুরুষের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। সিলেট শহর থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে যুবকরা মিনারার বাসায় যায়। সেখানে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়ে চলে আসে। যুব মহিলা লীগের নেত্রী হওয়ার কারণে মিনারা সব সময় দাপট দেখায়। তার দাপটের কারণে এলাকার মানুষ মুখ বুজে সহ্য করতেন। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস পাননি তারা। ফারুক আহমদের পরিবারও তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল। তারা জানান- মিনারার বাসায় অচেনা মহিলা আসতো। এবং তারা দিনের পর দিন থাকতো। সেই সঙ্গে পুরুষরাও এসে সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাতো। এসব ঘটনা জানতে চাইলে তাদের হুমকি দেয়া হতো। এদিকে- মাসখানিক আগে জৈন্তাপুরের বনপাড়া দক্ষিণ গ্রামের আবদুর রশিদ এর মেয়ে লিমা বেগমকে কাজের কথা বলে তার বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন মিনারা ও হেনা। তারা ওই বাসাতে এনে লিমাকে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসায় বাধ্য করে। বাসা থেকে রেখেই লিমাকে খদ্দেরের মুখে ঠেলে দেয়া হতো। এতে প্রতিবাদও জানিয়েছিল লিমা বেগম। কিন্তু তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। গত শনিবার মেয়েকে দেখতে মিনারার সন্ধানে ঘাটের ছটিতে আসেন লিমার মা। তিনি এসে মেয়েকে দেখতে চাইলে মিনারা ও হেনা তাকে গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেয়। এ সময় মেয়ের খোঁজ না করতে হুমকিও দেয়। মেয়ের খোঁজ করতে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসীর শরণাপন্ন হন লিমার মা। এলাকার লোকজন লিমার মায়ের মুখ থেকে বর্ণনা শুনে মিনারার কাছে জানতে আসেন। বাসায় এসে তারা দেখেন মহিলাদের হাট। মিনারা ও হেনা ছাড়াও ওই বাসায় আরো ৫-৬ জন মহিলা ছিল। তাদের বেশ-ভুসা দেখে এলাকার মানুষের সন্দেহও হয়। ইয়াবা সেবনের দৃশ্য দেখে ফেলেন কেউ কেউ। তবে- এ নিয়ে তারা কোনো কথা না বাড়িয়ে লিমার প্রসঙ্গে মিনারা ও হেনার মুখোমুখি হন। এ সময় মিনারা বেগম এলাকার মানুষের সামনেই মারধর করে লিমার মা’কে। এ দৃশ্য দেখে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হলে মিনারা ক্ষমা চায়। এবং হাতে তুলে দেয় ৫ হাজার টাকা। এ ঘটনার পর গতকাল দুপুরে মিনারা ও হেনা বেগম বাসার পাশে দোকানে গিয়ে এলাকার মানুষকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে এলাকার মানুষকে শায়েস্তা করতে পুলিশও ডেকে আনে। পরে এলাকার মানুষের মুখ থেকে ঘটনা শুনে পুলিশ চলে যায়। এদিকে- রাত ১০টার দিকে ৭-৮টি মোটরসাইকেল নিয়ে যুবকদের একটি দল আসে। তারা এসে রাতে এলাকায় মোটরসাইকেল মহড়া দেয়। একপর্যায়ে তারা মিনারার বাসায় অবস্থান নেয়। মিনারার রঙ্গশালায় বসে তারা অসামাজিক কাজ ও ইয়াবা সেবনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মধ্যরাত পর্যন্ত ওই যুবকরা বাসাতে অবস্থান করায় এলাকার মানুষের সন্দেহ হয়। এরপর এলাকার মানুষ ওই বাসা ঘেরাও করে। খবর পেয়ে পুলিশ মিনারা, হেনা ও লিমা সহ খদ্দেরদের ধরে থানায় নিয়ে যায়। স্থানীয় এলাকার সাবেক মেম্বার হাফিজ আবদুুল মছব্বির ফরিদ জানিয়েছেন- জৈন্তাপুর ধর্মীয় অনুশাসনের এলাকা। এখানে অসামাজিক কাজ কেউ মেনে নেয়নি। এ কারণে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হলে পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়। তিনি জানান- তার বাসায় ইয়াবা সেবন করা হতো। ইয়াবা বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে। জৈন্তাপুর থানার ওসি শ্যামল বণিক গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- অসামাজিক কাজে জড়িত থাকায় এলাকাবাসী তাদেরকে আটক করে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে আমার নেতৃত্বে পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌঁছালে এলাকাবাসী তাদেরকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। আমরা আটককৃতদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেছি। অপরাধ দমনে এলাকাবাসীর এমন সহযোগিতার কারণে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
১৬ পুরুষ গ্রেপ্তার: এরা হলো, জৈন্তাপুর উপজেলার পশ্চিম ঠাকুরের মাটি এলাকার ফারুক মিয়ার ভাড়াটিয়া শাহ্পরাণ থানার পীরের চক গ্রামের মৃত আবদুল কাদিরের ছেলে মাহতাব আহমদ, শাহ্পরাণ থানার পীরের বাজার হাতুড়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে আলী হোসেন, জৈন্তাপুর থানার পাঠনীপাড়া গ্রামের বর্তমান খাদিমপাড়া ২নং রোডের বাসিন্দা মো. জয়নালের ছেলে মো. আলকাছ, খাদিমপাড়া চামেলীবাগ গ্রামের আবদুল গফ্ফারের মো. শাকিল শাহ, বাউল টিলা গ্রামের মৃত আলকাছ মিয়ার ছেলে মো. সাজু, খাদিমপাড়া ২নং রোড গ্রামের মীর হোসেনের ছেলে সানি আহমদ (২১), জালালনগর গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে ইমন আহমদ, শাহ্পরাণ আল-বারাকা বিআইডিসি গ্রামের সোহেল আহমদের ছেলে হৃদয় আহমদ ওরফে রায়হান, মৌলভী বাজার জেলার কুলাউড়া থানার পুরশাহ গ্রামের মতিন মিয়ার ছেলে শোয়েব আহমদ, শিবগঞ্জ সাদিপুর গ্রামের মৃত আবদুল আউয়ালের ছেলে মোস্তাকিন, ৪নং রোড খাদিমপাড়া গ্রামের দ্বীন ইসলামের ছেলে রুহুল আমীন, মেজরটিলা সৈয়দপুর গ্রামের শহীদ আহমদের ছেলে শাহিন আহমদ, ৬নং রোড খাদিমপাড়া গ্রামের আবদুল গফুরের ছেলে জুনাইদ আহমদ, শাহ্পরাণ বাহুবল গ্রামের জাবেদ আহমদের ছেলে ইমরান আহমদ, শাহ্পরাণ রুস্তুমপুর গ্রামের মো. মিন্টু মিয়ার ছেলে মো. আরিফ হোসেন, শাহ্পরাণ মোহাম্মদপুর আ/এ বাসিন্দা জকিগঞ্জ থানার বিয়ারাইল গ্রামের মৃত ইলিয়াছ মিয়ার ছেলে রাজু আহমদ।
কিন্তু পাপপথ ত্যাগ করেননি তারা। বরং রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে মিনারা ও হেনা হয়ে উঠেন আরো বেপরোয়া। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না তাদের। তাদের অসামাজিক কাজের বিরুদ্ধে ফুটে উঠেছিলো ঘাটের ছটি গ্রামের মানুষ। প্রতিবাদী হয়ে উঠে। রোববার তখন মধ্যরাত। অচেনা-অজানা যুবকরা এসে আড্ডা জমিয়েছে মিনারা ও হেনার আস্তানায়। প্রতিবাদী লোকজন ঘেরাও করে বাসা। অসামাজিক কার্যকলাপের প্রতিবাদ জানায় তারা। অভিযোগ করেন- ইয়াবা বিক্রির হাটও হচ্ছে মিনারার আস্তানায়। খবর পেয়ে ছুটে যান জনপ্রতিনিধিরা। আসে পুলিশও। এলাকাবাসীর সামনেই পুলিশ ১৬ খদ্দের সহ মিনারা, হেনা এবং লিমা নামের আরো এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে গতকাল তাদের আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। এক সময় নাম ছিলো মিনারা বেগম। এখন নতুন নাম মিনারা চৌধুরী। বাড়ি সিলেটের জৈন্তাপুরে বনপাড়া দক্ষিণ গ্রামে। স্বামী আজিজুর রহমান। সিলেট জেলা যুব মহিলা লীগের অর্থ সম্পাদিকা তিনি। কিন্তু মিনারাকে নিয়ে অসংখ্য স্ক্যান্ডাল সিলেটে। নানা ঘটনায় একাধিকবার মিনারা আলোচিত হয়েছেন। তাকে নিয়ে বিব্রতও আওয়ামী লীগ নেতারা। সর্বশেষ মিরাবাজারে রোকেয়া ও তার ছেলের খুনের ঘটনার পর মিনারার নাম আলোচনায় এসেছিলো। রোকেয়ার সঙ্গেও মিনারার সম্পর্ক ছিল। আর হেনা বেগম সিলেট জেলা মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদিকা। নানা স্ক্যান্ডালে হেনাও আগে বহুবার বিতর্কিত হয়েছেন। হেনার পাপ পথের খবরও অনেকেরই জানা। নগরীর মীরবক্সটুলায় বর্তমানে বাসা। জাতীয় পার্টিতেও তাকে নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই। সিলেটের পশ্চিম জিন্দাবাজারে হেনার রয়েছে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এর আগে হেনা সিলেট সদর উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়াই করেছিলেন। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর ঠিকানা দিয়েছে টুকেরবাজারের। স্বামীর নাম মোহাম্মদ হোসেন। সিলেট জেলা মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদিকা হলেও কয়েক বছর ধরে হেনা বেগম রাজনীতিতে নীরব। তবে- মিনারা ও হেনার সংখ্য বেশ পুরনো। তাদের যৌথ পথচলায় সিলেটে গড়ে উঠেছে একটি নারী সিন্ডিকেট। তাদের বেশির ভাগই অসামাজিক কাজ ও মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত। সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার একটি গ্রাম ঘাটেরছটি। সেটি সিলেট সদরের পাশেই। বলতে গেলে সিলেট শহরতলী এলাকা। বটেশ্বর লাগোয়া গ্রাম। এ গ্রামে উপহার কমিউনিটি সেন্টার। পাশেই হচ্ছে প্রবাসী ফারুক আহমদের দোতলা বাসা। এই বাসার নিচতলায় বসবাস করেন ফারুক আহমদের পরিবার। আর দুইতলায় প্রায় একবছর আগে ভাড়া নেন মিনারা বেগম। সঙ্গে হেনাও। নিজেরা বসবাসের কথা বলে তারা ভাড়া নেন। কিন্তু এই বাসায় বাইরের পুরুষের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। সিলেট শহর থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে যুবকরা মিনারার বাসায় যায়। সেখানে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়ে চলে আসে। যুব মহিলা লীগের নেত্রী হওয়ার কারণে মিনারা সব সময় দাপট দেখায়। তার দাপটের কারণে এলাকার মানুষ মুখ বুজে সহ্য করতেন। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস পাননি তারা। ফারুক আহমদের পরিবারও তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল। তারা জানান- মিনারার বাসায় অচেনা মহিলা আসতো। এবং তারা দিনের পর দিন থাকতো। সেই সঙ্গে পুরুষরাও এসে সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাতো। এসব ঘটনা জানতে চাইলে তাদের হুমকি দেয়া হতো। এদিকে- মাসখানিক আগে জৈন্তাপুরের বনপাড়া দক্ষিণ গ্রামের আবদুর রশিদ এর মেয়ে লিমা বেগমকে কাজের কথা বলে তার বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন মিনারা ও হেনা। তারা ওই বাসাতে এনে লিমাকে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসায় বাধ্য করে। বাসা থেকে রেখেই লিমাকে খদ্দেরের মুখে ঠেলে দেয়া হতো। এতে প্রতিবাদও জানিয়েছিল লিমা বেগম। কিন্তু তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়। পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। গত শনিবার মেয়েকে দেখতে মিনারার সন্ধানে ঘাটের ছটিতে আসেন লিমার মা। তিনি এসে মেয়েকে দেখতে চাইলে মিনারা ও হেনা তাকে গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেয়। এ সময় মেয়ের খোঁজ না করতে হুমকিও দেয়। মেয়ের খোঁজ করতে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসীর শরণাপন্ন হন লিমার মা। এলাকার লোকজন লিমার মায়ের মুখ থেকে বর্ণনা শুনে মিনারার কাছে জানতে আসেন। বাসায় এসে তারা দেখেন মহিলাদের হাট। মিনারা ও হেনা ছাড়াও ওই বাসায় আরো ৫-৬ জন মহিলা ছিল। তাদের বেশ-ভুসা দেখে এলাকার মানুষের সন্দেহও হয়। ইয়াবা সেবনের দৃশ্য দেখে ফেলেন কেউ কেউ। তবে- এ নিয়ে তারা কোনো কথা না বাড়িয়ে লিমার প্রসঙ্গে মিনারা ও হেনার মুখোমুখি হন। এ সময় মিনারা বেগম এলাকার মানুষের সামনেই মারধর করে লিমার মা’কে। এ দৃশ্য দেখে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হলে মিনারা ক্ষমা চায়। এবং হাতে তুলে দেয় ৫ হাজার টাকা। এ ঘটনার পর গতকাল দুপুরে মিনারা ও হেনা বেগম বাসার পাশে দোকানে গিয়ে এলাকার মানুষকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে এলাকার মানুষকে শায়েস্তা করতে পুলিশও ডেকে আনে। পরে এলাকার মানুষের মুখ থেকে ঘটনা শুনে পুলিশ চলে যায়। এদিকে- রাত ১০টার দিকে ৭-৮টি মোটরসাইকেল নিয়ে যুবকদের একটি দল আসে। তারা এসে রাতে এলাকায় মোটরসাইকেল মহড়া দেয়। একপর্যায়ে তারা মিনারার বাসায় অবস্থান নেয়। মিনারার রঙ্গশালায় বসে তারা অসামাজিক কাজ ও ইয়াবা সেবনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মধ্যরাত পর্যন্ত ওই যুবকরা বাসাতে অবস্থান করায় এলাকার মানুষের সন্দেহ হয়। এরপর এলাকার মানুষ ওই বাসা ঘেরাও করে। খবর পেয়ে পুলিশ মিনারা, হেনা ও লিমা সহ খদ্দেরদের ধরে থানায় নিয়ে যায়। স্থানীয় এলাকার সাবেক মেম্বার হাফিজ আবদুুল মছব্বির ফরিদ জানিয়েছেন- জৈন্তাপুর ধর্মীয় অনুশাসনের এলাকা। এখানে অসামাজিক কাজ কেউ মেনে নেয়নি। এ কারণে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হলে পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়। তিনি জানান- তার বাসায় ইয়াবা সেবন করা হতো। ইয়াবা বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে। জৈন্তাপুর থানার ওসি শ্যামল বণিক গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- অসামাজিক কাজে জড়িত থাকায় এলাকাবাসী তাদেরকে আটক করে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে আমার নেতৃত্বে পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌঁছালে এলাকাবাসী তাদেরকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। আমরা আটককৃতদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেছি। অপরাধ দমনে এলাকাবাসীর এমন সহযোগিতার কারণে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
১৬ পুরুষ গ্রেপ্তার: এরা হলো, জৈন্তাপুর উপজেলার পশ্চিম ঠাকুরের মাটি এলাকার ফারুক মিয়ার ভাড়াটিয়া শাহ্পরাণ থানার পীরের চক গ্রামের মৃত আবদুল কাদিরের ছেলে মাহতাব আহমদ, শাহ্পরাণ থানার পীরের বাজার হাতুড়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে আলী হোসেন, জৈন্তাপুর থানার পাঠনীপাড়া গ্রামের বর্তমান খাদিমপাড়া ২নং রোডের বাসিন্দা মো. জয়নালের ছেলে মো. আলকাছ, খাদিমপাড়া চামেলীবাগ গ্রামের আবদুল গফ্ফারের মো. শাকিল শাহ, বাউল টিলা গ্রামের মৃত আলকাছ মিয়ার ছেলে মো. সাজু, খাদিমপাড়া ২নং রোড গ্রামের মীর হোসেনের ছেলে সানি আহমদ (২১), জালালনগর গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে ইমন আহমদ, শাহ্পরাণ আল-বারাকা বিআইডিসি গ্রামের সোহেল আহমদের ছেলে হৃদয় আহমদ ওরফে রায়হান, মৌলভী বাজার জেলার কুলাউড়া থানার পুরশাহ গ্রামের মতিন মিয়ার ছেলে শোয়েব আহমদ, শিবগঞ্জ সাদিপুর গ্রামের মৃত আবদুল আউয়ালের ছেলে মোস্তাকিন, ৪নং রোড খাদিমপাড়া গ্রামের দ্বীন ইসলামের ছেলে রুহুল আমীন, মেজরটিলা সৈয়দপুর গ্রামের শহীদ আহমদের ছেলে শাহিন আহমদ, ৬নং রোড খাদিমপাড়া গ্রামের আবদুল গফুরের ছেলে জুনাইদ আহমদ, শাহ্পরাণ বাহুবল গ্রামের জাবেদ আহমদের ছেলে ইমরান আহমদ, শাহ্পরাণ রুস্তুমপুর গ্রামের মো. মিন্টু মিয়ার ছেলে মো. আরিফ হোসেন, শাহ্পরাণ মোহাম্মদপুর আ/এ বাসিন্দা জকিগঞ্জ থানার বিয়ারাইল গ্রামের মৃত ইলিয়াছ মিয়ার ছেলে রাজু আহমদ।
No comments