বাইকে ছোটে সুরাইয়ার স্বপ্ন by তারিকুর রহমান খান
১২
জুন দুপুরে ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের নির্দিষ্ট সময়ের
কিছুটা পরেই এলেন সুরাইয়া আক্তার। ‘একজন যাত্রীকে নামিয়ে আসতে একটু দেরি
হলে গেল।’ বললেন সুরাইয়া। তিনি একজন বাইকার, মোটরসাইকেলে করে যাত্রীদের
গন্তব্যে পৌঁছে দেন। মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির এই
ছাত্রী শোনালেন তাঁর বাইকার হওয়ার গল্প।
শুরুর কথা
ছোটবেলা থেকেই সুরাইয়া আক্তারের স্বপ্ন ছিল স্কুটি চালানোর। কিন্তু পরিবারের কথা ভেবে স্বপ্নটা শুধুই ইচ্ছেতেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু হঠাৎ স্বপ্নপূরণের সুযোগ আসে। ‘আমি একটা পূর্ণকালীন (ফুলটাইম) চাকরি করতাম। কিন্তু চাকরির ফলে পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছিল। চাকরি ছেড়ে দিই।’ এরপর খণ্ডকালীন কাজের জন্য একটা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন সুরাইয়া। স্ট্যাটাসে একজনের কমেন্টে জানতে পারে অ্যাপভিত্তিক পরিবহনসেবা ‘ও বোন’ মেয়েদের বাইক চালানো শিখিয়ে চাকরির সুযোগ দেয়।
ও বোন এমজিএইচ গ্রুপের একটি উদ্যোগ। গ্রুপটির ব্যবসা উন্নয়ন কর্মকর্তা জেবা আদিবা জানান, ‘কেউ যদি বাইক চালাতে আগ্রহ প্রকাশ করে তখন আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বাইক শেখানোর ব্যবস্থা করি। যত দিন পর্যন্ত চালক ভালোভাবে না শেখে, তত দিন পর্যন্ত আমরা নতুনদের চালানো শেখাই। তারপর পরীক্ষা নিয়ে লাইসেন্স করিয়ে ওই নারীর হাতে বাইক তুলে দিই। চাইলে সে নারী চাকরিও করতে পারে।’
দৃঢ় আত্মবিশ্বাস
‘আমার দৃঢ়বিশ্বাস ছিল আমি বাইক চালাতে পারব। কিন্তু বাইক চালানোর কথা বললে বাড়ি থেকে বাধা দেবে এবং চালানো শিখতে দেবে না। এ জন্য আগে বাড়ির কাউকে জানাইনি।’ সুরাইয়ার সহজ জবাব। এই কাজে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পর বাসায় জানান সুরাইয়া। প্রথমে সহজভাবে বিষয়টি মেনে নেয়নি তাঁর পরিবার। পরিবার স্কুটি চালানোর বিষয়টা জানার পরে কয়েক দিন কেউ কথা বলেনি সুরাইয়ার সঙ্গে। এটা মেয়েদের জন্য নিরাপদ নয়। একটা মেয়ে স্কুটি চালাবে, এটা কেমন কথা। বাইক একটা ছেলে চালাতে পারে, মেয়ে কীভাবে চালাবে। এমনই ছিল তাঁর পরিবারের সদস্যদের কথা।
কিন্তু সুরাইয়ার দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের কাছে সবাই হার মানে। সুরাইয়া আক্তার জানান, ‘পরে ধীরে ধীরে বিষয়টা মেয়ে নিয়েছে সবাই। কারণ আমি তো মেয়েদের সার্ভিস দিচ্ছি। কোনো ছেলেকে তো বাইকে পরিবহন করছি না।’
মায়ের হাতে আয়ের টাকা
সুরাইয়া আক্তার গত জানুয়ারি মাসে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। এক মাস প্রশিক্ষণের পর ফেব্রুয়ারিতে প্রথম বাণিজ্যিক রাইড শুরু করেন সুরাইয়া। ‘মাস শেষে বেতন পাওয়ার পর মায়ের হাতে টাকা তুলে দিই। তখন মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন। এর আগে এভাবে কোনো দিনও তাঁদের হাতে টাকা তুলে দিতে পারিনি। পরিবারকে একটু সাহায্য করতে পারা আমার জন্য অনেক বড় একটি পাওয়া। এটি আমি ও বোনের মাধ্যমে করতে পেরেছি।’ বললেন সুরাইয়া আক্তার।
প্রথম যাত্রা
মোটরবাইকে যাত্রী নিয়ে সুরাইয়ার প্রথম যাত্রা ছিল রাজধানীর বনশ্রী থেকে বনানী পর্যন্ত। ‘প্রথম রাইডে আমার অন্য রকম একটা ভালো লাগার অনুভূতি ছিল। মনে হচ্ছিল আমার যদি কোনো সমস্যা হয়ও তারপর আমার সহযাত্রীকে ঠিকমতো নিয়ে যাব। প্রথম রাইডটা আমি ভালোভাবেই শেষ করেছিলাম। প্রথম রাইডে ভাড়া পেয়েছিলাম ১৫০ টাকার মতো।’ এই কয়েক মাসে সুরাইয়া আক্তার প্রায় এক হাজারের মতো বাইক রাইড দিয়েছে।
বাধাও কম নয়
ঢাকা শহরে নারীদের বাইক চালানো বা রাইডার হওয়ার চ্যালেঞ্জ অনেক। প্রতিবন্ধকতা জানাতে গিয়ে সুরাইয়া জানান, ‘হঠাৎ হঠাৎ গাড়ি বা সিএনজি চাপ দেয়। পেছন থেকে বারবার হর্ন দেয়। মাঝেমধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কিছু লোক, পাশের বাইকার, সিএনজি, বাস এমনকি গাড়িচালকেরাও উত্ত্যক্ত করে। এটা খুবই ভয়ের ও বিরক্তিকর।’
মেলুক ইচ্ছেডানা
নারী বাইকার তাদের নিজেদের চাহিদামতো ‘ও বোন’ চালাতে পারবে। জেবা আদিবা জানান, বাইক চালানোর সবকিছু শেখার পর এবং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আমরা ব্যবহারকারীদের একটা বাইক দিই। একই সঙ্গে তেল ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচও দেওয়া হয়। কেউ চাইলে নিজের বাইক দিয়ে ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও চালাতে পারে।’ এ ছাড়া ও বোনে পূর্ণকালীন চাকরিজীবীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮ ঘণ্টা এবং খণ্ডকালীনদের জন্য ৫ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। ৮ ঘণ্টা যারা কাজ করে তাদের জন্য ‘ও বোন’ ২০ হাজার আর ৫ ঘণ্টা যারা কাজ করে তাদের ১২ হাজার টাকা দেয়।
নারীদের জন্য ও বোন
ও বোন শুধু নারীদের জন্য। আবার বাইকের ইউজারও নারী। একজন নারী বাইকারের বাইকে উঠে কি যাত্রীরা নিরাপদ বোধ করে? এ বিষয় সুরাইয়া আক্তার বলেন, ইউজারদের নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই। বরং ছেলে বাইকাদের চেয়ে নারী বাইকারদের পেছনে যাত্রী বেশি স্বস্তিতে থাকে। কারণ ছেলে বাইকারদের ধরে বসা যায় না। ছেলেদের পেছনে আরামদায়কভাবে বসা যায় না। ব্রেক করলে দেখা যায় বাইকারের গায়ে ধাক্কা লাগছে। এটা নারীদের জন্য কিছুটা বিব্রতকর।
এগিয়ে যাওয়ার প্রথম ধাপ
সুরাইয়া আক্তার জানান, ‘যত দিন আছি ও বোন বাইক চালাতে চাই। এটা আমি চাকরি হিসেবে দেখি না। আমি আমার আরেকজন বোনকে সাহায্য করছি। এই মানসিকতা নিয়ে আমি বাইক চালাচ্ছি। আর্থিক সুবিধা পাওয়া, পাশাপাশি নারীদের সাহায্য করতে পারছি।’ ও বোন-চালকদের ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। জেবা আদিবা জানান, ও বোনের রাইডার থেকে মাস্টার রাইডার। মাস্টার রাইডার থেকে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপকসহ বিভিন্ন পদে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
শুরুর কথা
ছোটবেলা থেকেই সুরাইয়া আক্তারের স্বপ্ন ছিল স্কুটি চালানোর। কিন্তু পরিবারের কথা ভেবে স্বপ্নটা শুধুই ইচ্ছেতেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু হঠাৎ স্বপ্নপূরণের সুযোগ আসে। ‘আমি একটা পূর্ণকালীন (ফুলটাইম) চাকরি করতাম। কিন্তু চাকরির ফলে পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছিল। চাকরি ছেড়ে দিই।’ এরপর খণ্ডকালীন কাজের জন্য একটা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন সুরাইয়া। স্ট্যাটাসে একজনের কমেন্টে জানতে পারে অ্যাপভিত্তিক পরিবহনসেবা ‘ও বোন’ মেয়েদের বাইক চালানো শিখিয়ে চাকরির সুযোগ দেয়।
ও বোন এমজিএইচ গ্রুপের একটি উদ্যোগ। গ্রুপটির ব্যবসা উন্নয়ন কর্মকর্তা জেবা আদিবা জানান, ‘কেউ যদি বাইক চালাতে আগ্রহ প্রকাশ করে তখন আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বাইক শেখানোর ব্যবস্থা করি। যত দিন পর্যন্ত চালক ভালোভাবে না শেখে, তত দিন পর্যন্ত আমরা নতুনদের চালানো শেখাই। তারপর পরীক্ষা নিয়ে লাইসেন্স করিয়ে ওই নারীর হাতে বাইক তুলে দিই। চাইলে সে নারী চাকরিও করতে পারে।’
দৃঢ় আত্মবিশ্বাস
‘আমার দৃঢ়বিশ্বাস ছিল আমি বাইক চালাতে পারব। কিন্তু বাইক চালানোর কথা বললে বাড়ি থেকে বাধা দেবে এবং চালানো শিখতে দেবে না। এ জন্য আগে বাড়ির কাউকে জানাইনি।’ সুরাইয়ার সহজ জবাব। এই কাজে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পর বাসায় জানান সুরাইয়া। প্রথমে সহজভাবে বিষয়টি মেনে নেয়নি তাঁর পরিবার। পরিবার স্কুটি চালানোর বিষয়টা জানার পরে কয়েক দিন কেউ কথা বলেনি সুরাইয়ার সঙ্গে। এটা মেয়েদের জন্য নিরাপদ নয়। একটা মেয়ে স্কুটি চালাবে, এটা কেমন কথা। বাইক একটা ছেলে চালাতে পারে, মেয়ে কীভাবে চালাবে। এমনই ছিল তাঁর পরিবারের সদস্যদের কথা।
কিন্তু সুরাইয়ার দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের কাছে সবাই হার মানে। সুরাইয়া আক্তার জানান, ‘পরে ধীরে ধীরে বিষয়টা মেয়ে নিয়েছে সবাই। কারণ আমি তো মেয়েদের সার্ভিস দিচ্ছি। কোনো ছেলেকে তো বাইকে পরিবহন করছি না।’
মায়ের হাতে আয়ের টাকা
সুরাইয়া আক্তার গত জানুয়ারি মাসে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। এক মাস প্রশিক্ষণের পর ফেব্রুয়ারিতে প্রথম বাণিজ্যিক রাইড শুরু করেন সুরাইয়া। ‘মাস শেষে বেতন পাওয়ার পর মায়ের হাতে টাকা তুলে দিই। তখন মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন। এর আগে এভাবে কোনো দিনও তাঁদের হাতে টাকা তুলে দিতে পারিনি। পরিবারকে একটু সাহায্য করতে পারা আমার জন্য অনেক বড় একটি পাওয়া। এটি আমি ও বোনের মাধ্যমে করতে পেরেছি।’ বললেন সুরাইয়া আক্তার।
প্রথম যাত্রা
মোটরবাইকে যাত্রী নিয়ে সুরাইয়ার প্রথম যাত্রা ছিল রাজধানীর বনশ্রী থেকে বনানী পর্যন্ত। ‘প্রথম রাইডে আমার অন্য রকম একটা ভালো লাগার অনুভূতি ছিল। মনে হচ্ছিল আমার যদি কোনো সমস্যা হয়ও তারপর আমার সহযাত্রীকে ঠিকমতো নিয়ে যাব। প্রথম রাইডটা আমি ভালোভাবেই শেষ করেছিলাম। প্রথম রাইডে ভাড়া পেয়েছিলাম ১৫০ টাকার মতো।’ এই কয়েক মাসে সুরাইয়া আক্তার প্রায় এক হাজারের মতো বাইক রাইড দিয়েছে।
বাধাও কম নয়
ঢাকা শহরে নারীদের বাইক চালানো বা রাইডার হওয়ার চ্যালেঞ্জ অনেক। প্রতিবন্ধকতা জানাতে গিয়ে সুরাইয়া জানান, ‘হঠাৎ হঠাৎ গাড়ি বা সিএনজি চাপ দেয়। পেছন থেকে বারবার হর্ন দেয়। মাঝেমধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা কিছু লোক, পাশের বাইকার, সিএনজি, বাস এমনকি গাড়িচালকেরাও উত্ত্যক্ত করে। এটা খুবই ভয়ের ও বিরক্তিকর।’
মেলুক ইচ্ছেডানা
নারী বাইকার তাদের নিজেদের চাহিদামতো ‘ও বোন’ চালাতে পারবে। জেবা আদিবা জানান, বাইক চালানোর সবকিছু শেখার পর এবং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আমরা ব্যবহারকারীদের একটা বাইক দিই। একই সঙ্গে তেল ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচও দেওয়া হয়। কেউ চাইলে নিজের বাইক দিয়ে ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও চালাতে পারে।’ এ ছাড়া ও বোনে পূর্ণকালীন চাকরিজীবীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮ ঘণ্টা এবং খণ্ডকালীনদের জন্য ৫ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। ৮ ঘণ্টা যারা কাজ করে তাদের জন্য ‘ও বোন’ ২০ হাজার আর ৫ ঘণ্টা যারা কাজ করে তাদের ১২ হাজার টাকা দেয়।
নারীদের জন্য ও বোন
ও বোন শুধু নারীদের জন্য। আবার বাইকের ইউজারও নারী। একজন নারী বাইকারের বাইকে উঠে কি যাত্রীরা নিরাপদ বোধ করে? এ বিষয় সুরাইয়া আক্তার বলেন, ইউজারদের নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই। বরং ছেলে বাইকাদের চেয়ে নারী বাইকারদের পেছনে যাত্রী বেশি স্বস্তিতে থাকে। কারণ ছেলে বাইকারদের ধরে বসা যায় না। ছেলেদের পেছনে আরামদায়কভাবে বসা যায় না। ব্রেক করলে দেখা যায় বাইকারের গায়ে ধাক্কা লাগছে। এটা নারীদের জন্য কিছুটা বিব্রতকর।
এগিয়ে যাওয়ার প্রথম ধাপ
সুরাইয়া আক্তার জানান, ‘যত দিন আছি ও বোন বাইক চালাতে চাই। এটা আমি চাকরি হিসেবে দেখি না। আমি আমার আরেকজন বোনকে সাহায্য করছি। এই মানসিকতা নিয়ে আমি বাইক চালাচ্ছি। আর্থিক সুবিধা পাওয়া, পাশাপাশি নারীদের সাহায্য করতে পারছি।’ ও বোন-চালকদের ক্যারিয়ারে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। জেবা আদিবা জানান, ও বোনের রাইডার থেকে মাস্টার রাইডার। মাস্টার রাইডার থেকে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপকসহ বিভিন্ন পদে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
যাত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন বাইকচালক সুরাইয়া আক্তার। ছবি: সংগৃহীত |
No comments