কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তিন কুতুব by রোকনুজ্জামান পিয়াস
তিন
কুতুবের কাছে জিম্মি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। খামারবাড়ির এই অধিদপ্তরের
সার্বিক কার্যক্রম তারাই দেখভাল করেন। অনেক সময় নিজের কাজের গন্ডি ছাড়িয়ে
অন্য দপ্তরে হস্তক্ষেপ করেন তারা। নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, টেন্ডার সবকিছুতেই
রয়েছে তাদের হাত। নিয়োগ-বদলি-পদায়নে একচ্ছত্র প্রভাব থাকায় বেশিরভাগ নিয়োগই
হয় তাদের নিজের এলাকা থেকে। অভিযোগ রয়েছে, এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে
তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অধিদপ্তরের এই তিন কুতুব হলেন,
প্রশাসন ও অর্থ শাখার উপ-পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রশাসন শাখার উপ
পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান এবং প্রশাসন শাখার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. বনি
আমিন।
এই তিনজন প্রত্যেকেই ৪ থেকে ৫ বছর ধরে প্রশাসন শাখায় নিয়োজিত।
অধিদপ্তরের ৩০-৩২ জন কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্টতা বজায় রেখে গড়ে তুলেছেন বিশাল সিন্ডিকেট। তাই তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস নেই কারো। গত তিনবছরে বেশির ভাগ নিয়োগ, পদায়ন হয়েছে তাদের ইচ্ছামাফিক, তাদের নিজের এলাকার লোকজন, আত্মীয়-স্বজনদের। নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ-পদোন্নতি বাণিজ্য চলছেই। এছাড়া নন রেসপনসিভ কোম্পানিকে টেন্ডার পাইয়ে দিতেও তাদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রাপ্ত নথিতে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের ১লা নভেম্বর ১২১ কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ পাওয়া এসব কর্মচারী ময়মনসিংহ অঞ্চলের। উপ-পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেনের বাড়ি জামালপুরে হওয়ায় তিনি ওই অঞ্চলের লোকজনকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। নিজের ঘনিষ্ট আত্মীয়-স্বজনও রয়েছেন নিয়োগ পাওয়াদের তালিকায়। বাকিরা নিয়োগ পেয়েছেন প্রশাসন শাখার আরেক উপ-পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বনি আমিনের মাধ্যমে। তাদের বাড়ি টাঙ্গাইলে।
জানা যায়, নিয়োগসহ প্রত্যেকটি কার্যক্রম কৃষি অধিদপ্তরের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এ নিয়োগের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি। বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, এই ১২১ জন কর্মচারীর ৬০ শতাংশ মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ৪০ শতাংশ মাহবুব ও বনি আমিনের কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন। পরীক্ষায় ভালো করেও নিয়োগ পাননি অনেকে। অথচ পেছনের সারি থেকে এসে অনেকে চাকরি করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ বলেই এটি তারা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেনি। ওই সময় নিয়োগের বিষয়টি খামারবাড়িতে ব্যাপক আলোচিত হলে মহাপরিচালকের পক্ষে তৎকালীন অর্থ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক আবদুল আজিজ এ ব্যাপারে ২০১৭ সালের ২২শে জুন একটি গণবিজ্ঞপ্তি দেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক চলমান বিভিন্ন পদের নিয়োগ কার্যক্রমসহ মাঠ পর্যায়ে অত্র অধিদপ্তর তথা বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে একশ্রেণীর প্রতারকচক্র সক্রিয় রয়েছে। এমতাবস্থায় এ ধরনের প্রতারকচক্র কর্তৃক আর্থিক প্রস্তাব প্রদান অথবা মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমকে ব্যহত করে এমন কোন অপতৎপরতা চালালে তা দ্রুত তাকে অথবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করতে সকলকে অনুরোধ জানানো হলো।’ অনেকে মনে করেন, এই অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে এমন একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন আবদুল আজিজ।
শুধু নিয়োগ নয়, পদোন্নতিতেও কৃষি অধিদপ্তরে যথাযথ আইন মানা হয়নি। চলছে স্বেচ্ছাচারিতা। অতি স্বল্প সময়ে তিনটি পদোন্নতি পেয়েছেন এমন উদাহরণও রয়েছে অনেক।
এছাড়া ব্লক পোস্ট অর্থ্যাৎ যেসব পদ থেকে পদোন্নতির নিয়ম নেই সেসব পদেও একাধিক পদোন্নতি হয়েছে। বিধি অনুযায়ী ঝাড়ুদার ও নৈশ প্রহরী পদ থেকে কোন পদোন্নতি হয় না। কিন্তু ১৯৮৯ সালের ১লা নভেম্বর ২০তম গ্রেডে ঝাড়ুদার পদে নিয়োগ পাওয়া অর্থকরী ফসল উইংয়ের মো. রফিকুল ইসলাম কয়েকটি পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৪ তম গ্রেডে উচ্চমান সহকারী পদে উন্নীত হয়েছেন। এমএলএসএস আমির হোসেন। তার নিয়োগ ক্রপস উইংয়ে। কিন্তু তিনি কাজ করেন উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ে। যদিও এ উইংয়ে কাজ করার জন্য ৩ জন এডিডি (কিউসি), ৩ জন রসায়নবিদ, উচ্চমান সহকারি, প্রধান সহকারি রয়েছেন। তাদের মাসিক বেতন প্রায় ৭ লাখ টাকা। কিন্তু তারা কেউ কীটনাশক সংক্রান্ত রাসায়নিক পরীক্ষা করেন না। ক্রপস উইং থেকে এসে এ সকল কাজ করেন পিয়ন আমির হোসেন। এছাড়া রেজিস্ট্রেশন, লাইসেন্স নবায়নও তিনিই করেন। উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের উপ-পরিচালক মো. ফখরুল হাছানের ছত্রছায়ায় তিনি এসব কাজ করেন। এখানে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেন হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আমির হোসেন তার স্ত্রীর নামে সারাদেশে বিসিআইসি’র সার ডিলারের অনুমোদন নিয়ে দিয়েছেন। উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ে মো. আমিনুর রহমান, মো. রিপন মিয়া, প্রশাসন ও পার্সোনাল ইউংয়ের মো. মোফাজ্জেল হোসেন, সরজমিন উইংয়ের মো. সাইফুল ইসলাম অফিস সহকারি বনাম মুদ্রাক্ষরিক (১৫ তম গ্রেড) হিসেবে ২০০৪ সালে নিয়োগ পান। তারা পদোন্নতি পেয়ে প্রধান সহকারি (১৩ তম গ্রেড) হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ রয়েছে। অথচ অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও ২০০০ সালের আগে যোগদান করা অনেকেই তাদের মতো তিনটি পদোন্নতি পাননি।
প্রশাসন ও পর্সোনাল উইংয়ের ফারুক মিয়া পিয়ন (২০ তম গ্রেড) থেকে পদোন্নতি পেয়ে প্রধান সহকারি (১৩তম গ্রেড) এবং উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের মো. নাসির উদ্দিন পিয়ন পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে উচ্চমান সহকারি (১৪তম গ্রেড) হয়েছেন। প্রশাসনিক শাখায় এদের ব্যাপারে কোন তথ্য নেই, তবে সার্ভিস বুকে আছে। তাদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি এক টেন্ডার নিয়ে বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে কৃষি অধিদপ্তরে। ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের বিভিন্নস্থানে সৌরশক্তি এবং আধুনিক জল সংরক্ষণ প্রযুক্তির সমপ্রসারণে প্রায় ২৫ কোটি টাকার একটি ই-জিপি টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এতে ৫টি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার দাখিল করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, মেসার্স হক ইন্টারন্যাশনাল, মো. শামীম আহমেদ, মোহাম্মদ বিল্ডার্স, এমএস জিয়াউল ট্রেডার্স এবং মুশফিরা ট্রেডার্স। সব শর্ত পূরণ না করতে পারায় টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির বিবেচনায় একমাত্র এমএস জিয়াউল ট্রেডার্স ছাড়া বাকি চারটি অবৈধ (টেকনিক্যালি নন-রেসপনসিভ) ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু মূল্যায়ন কমিটির মতামতকে বিবেচনায় না নিয়ে মেসার্স হক ইন্টারন্যাশনালকে কাজটি দিতে সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও তারা মূল্যায়ন কমিটির বিবেচনায় টেকনিক্যালি নন-রেসপনসিভ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এছাড়া এ কাজে তাদের পূর্ব অভিজ্ঞাতাও নেই। সূত্র জানিয়েছে, এ প্রতিষ্ঠানটির মালিকের বাড়ি টাঙ্গাইলে। এই টেন্ডার পাইয়ে দিতে, প্রশাসন ও অর্থ শাখার উপ-পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রশাসন শাখার উপ পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান এবং প্রশাসন শাখার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. বনি আমিনের হাত রয়েছে।
এ ব্যাপারে খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহ আলম বলেন, আমি নতুন এসেছি। তাই এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মীর নূরুল আলম বলেন, ওই নিয়োগের সময় আমি ছিলাম না। গত জানুয়ারিতে এখানে এসেছি। তবে যতটুকু জানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-এর মাধ্যমে পরীক্ষা হয়েছে। খাতাও উনারা দেখছেন। কে খাতা দেখছেন তা কেউ জানে না। আর এই কমিটিতে যখন ভাইভা হয়, তখন মন্ত্রণালয়ের লোকজন ছিলেন, বাইরের লোকজন ছিলেন, আমাদের ডিপার্টমেন্টের লোকজন ছিলেন। আমার জানামতে, অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। পদোন্নতি নিয়ে যেসব অভিযোগ সেসব ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিবেন বলেও জানান মহাপরিচালক। এছাড়া, টেন্ডারের ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে অনেক আলোচনা হয়েছে। ওই প্রজেক্টের সংশ্লিষ্ট পিডিকে সরিয়ে নতুন পিডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এটা আবার রিটেন্ডার হবে বলেও জানান মীর নূরুল আলম।
এই তিনজন প্রত্যেকেই ৪ থেকে ৫ বছর ধরে প্রশাসন শাখায় নিয়োজিত।
অধিদপ্তরের ৩০-৩২ জন কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্টতা বজায় রেখে গড়ে তুলেছেন বিশাল সিন্ডিকেট। তাই তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস নেই কারো। গত তিনবছরে বেশির ভাগ নিয়োগ, পদায়ন হয়েছে তাদের ইচ্ছামাফিক, তাদের নিজের এলাকার লোকজন, আত্মীয়-স্বজনদের। নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ-পদোন্নতি বাণিজ্য চলছেই। এছাড়া নন রেসপনসিভ কোম্পানিকে টেন্ডার পাইয়ে দিতেও তাদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রাপ্ত নথিতে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের ১লা নভেম্বর ১২১ কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ পাওয়া এসব কর্মচারী ময়মনসিংহ অঞ্চলের। উপ-পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেনের বাড়ি জামালপুরে হওয়ায় তিনি ওই অঞ্চলের লোকজনকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। নিজের ঘনিষ্ট আত্মীয়-স্বজনও রয়েছেন নিয়োগ পাওয়াদের তালিকায়। বাকিরা নিয়োগ পেয়েছেন প্রশাসন শাখার আরেক উপ-পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বনি আমিনের মাধ্যমে। তাদের বাড়ি টাঙ্গাইলে।
জানা যায়, নিয়োগসহ প্রত্যেকটি কার্যক্রম কৃষি অধিদপ্তরের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু এ নিয়োগের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি। বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, এই ১২১ জন কর্মচারীর ৬০ শতাংশ মোয়াজ্জেম হোসেন এবং ৪০ শতাংশ মাহবুব ও বনি আমিনের কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন। পরীক্ষায় ভালো করেও নিয়োগ পাননি অনেকে। অথচ পেছনের সারি থেকে এসে অনেকে চাকরি করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ বলেই এটি তারা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেনি। ওই সময় নিয়োগের বিষয়টি খামারবাড়িতে ব্যাপক আলোচিত হলে মহাপরিচালকের পক্ষে তৎকালীন অর্থ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক আবদুল আজিজ এ ব্যাপারে ২০১৭ সালের ২২শে জুন একটি গণবিজ্ঞপ্তি দেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক চলমান বিভিন্ন পদের নিয়োগ কার্যক্রমসহ মাঠ পর্যায়ে অত্র অধিদপ্তর তথা বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে একশ্রেণীর প্রতারকচক্র সক্রিয় রয়েছে। এমতাবস্থায় এ ধরনের প্রতারকচক্র কর্তৃক আর্থিক প্রস্তাব প্রদান অথবা মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমকে ব্যহত করে এমন কোন অপতৎপরতা চালালে তা দ্রুত তাকে অথবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করতে সকলকে অনুরোধ জানানো হলো।’ অনেকে মনে করেন, এই অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে এমন একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন আবদুল আজিজ।
শুধু নিয়োগ নয়, পদোন্নতিতেও কৃষি অধিদপ্তরে যথাযথ আইন মানা হয়নি। চলছে স্বেচ্ছাচারিতা। অতি স্বল্প সময়ে তিনটি পদোন্নতি পেয়েছেন এমন উদাহরণও রয়েছে অনেক।
এছাড়া ব্লক পোস্ট অর্থ্যাৎ যেসব পদ থেকে পদোন্নতির নিয়ম নেই সেসব পদেও একাধিক পদোন্নতি হয়েছে। বিধি অনুযায়ী ঝাড়ুদার ও নৈশ প্রহরী পদ থেকে কোন পদোন্নতি হয় না। কিন্তু ১৯৮৯ সালের ১লা নভেম্বর ২০তম গ্রেডে ঝাড়ুদার পদে নিয়োগ পাওয়া অর্থকরী ফসল উইংয়ের মো. রফিকুল ইসলাম কয়েকটি পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৪ তম গ্রেডে উচ্চমান সহকারী পদে উন্নীত হয়েছেন। এমএলএসএস আমির হোসেন। তার নিয়োগ ক্রপস উইংয়ে। কিন্তু তিনি কাজ করেন উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ে। যদিও এ উইংয়ে কাজ করার জন্য ৩ জন এডিডি (কিউসি), ৩ জন রসায়নবিদ, উচ্চমান সহকারি, প্রধান সহকারি রয়েছেন। তাদের মাসিক বেতন প্রায় ৭ লাখ টাকা। কিন্তু তারা কেউ কীটনাশক সংক্রান্ত রাসায়নিক পরীক্ষা করেন না। ক্রপস উইং থেকে এসে এ সকল কাজ করেন পিয়ন আমির হোসেন। এছাড়া রেজিস্ট্রেশন, লাইসেন্স নবায়নও তিনিই করেন। উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের উপ-পরিচালক মো. ফখরুল হাছানের ছত্রছায়ায় তিনি এসব কাজ করেন। এখানে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেন হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আমির হোসেন তার স্ত্রীর নামে সারাদেশে বিসিআইসি’র সার ডিলারের অনুমোদন নিয়ে দিয়েছেন। উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ে মো. আমিনুর রহমান, মো. রিপন মিয়া, প্রশাসন ও পার্সোনাল ইউংয়ের মো. মোফাজ্জেল হোসেন, সরজমিন উইংয়ের মো. সাইফুল ইসলাম অফিস সহকারি বনাম মুদ্রাক্ষরিক (১৫ তম গ্রেড) হিসেবে ২০০৪ সালে নিয়োগ পান। তারা পদোন্নতি পেয়ে প্রধান সহকারি (১৩ তম গ্রেড) হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ রয়েছে। অথচ অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও ২০০০ সালের আগে যোগদান করা অনেকেই তাদের মতো তিনটি পদোন্নতি পাননি।
প্রশাসন ও পর্সোনাল উইংয়ের ফারুক মিয়া পিয়ন (২০ তম গ্রেড) থেকে পদোন্নতি পেয়ে প্রধান সহকারি (১৩তম গ্রেড) এবং উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ের মো. নাসির উদ্দিন পিয়ন পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে উচ্চমান সহকারি (১৪তম গ্রেড) হয়েছেন। প্রশাসনিক শাখায় এদের ব্যাপারে কোন তথ্য নেই, তবে সার্ভিস বুকে আছে। তাদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি এক টেন্ডার নিয়ে বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে কৃষি অধিদপ্তরে। ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের বিভিন্নস্থানে সৌরশক্তি এবং আধুনিক জল সংরক্ষণ প্রযুক্তির সমপ্রসারণে প্রায় ২৫ কোটি টাকার একটি ই-জিপি টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এতে ৫টি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার দাখিল করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, মেসার্স হক ইন্টারন্যাশনাল, মো. শামীম আহমেদ, মোহাম্মদ বিল্ডার্স, এমএস জিয়াউল ট্রেডার্স এবং মুশফিরা ট্রেডার্স। সব শর্ত পূরণ না করতে পারায় টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির বিবেচনায় একমাত্র এমএস জিয়াউল ট্রেডার্স ছাড়া বাকি চারটি অবৈধ (টেকনিক্যালি নন-রেসপনসিভ) ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু মূল্যায়ন কমিটির মতামতকে বিবেচনায় না নিয়ে মেসার্স হক ইন্টারন্যাশনালকে কাজটি দিতে সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও তারা মূল্যায়ন কমিটির বিবেচনায় টেকনিক্যালি নন-রেসপনসিভ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এছাড়া এ কাজে তাদের পূর্ব অভিজ্ঞাতাও নেই। সূত্র জানিয়েছে, এ প্রতিষ্ঠানটির মালিকের বাড়ি টাঙ্গাইলে। এই টেন্ডার পাইয়ে দিতে, প্রশাসন ও অর্থ শাখার উপ-পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রশাসন শাখার উপ পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান এবং প্রশাসন শাখার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. বনি আমিনের হাত রয়েছে।
এ ব্যাপারে খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহ আলম বলেন, আমি নতুন এসেছি। তাই এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মীর নূরুল আলম বলেন, ওই নিয়োগের সময় আমি ছিলাম না। গত জানুয়ারিতে এখানে এসেছি। তবে যতটুকু জানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-এর মাধ্যমে পরীক্ষা হয়েছে। খাতাও উনারা দেখছেন। কে খাতা দেখছেন তা কেউ জানে না। আর এই কমিটিতে যখন ভাইভা হয়, তখন মন্ত্রণালয়ের লোকজন ছিলেন, বাইরের লোকজন ছিলেন, আমাদের ডিপার্টমেন্টের লোকজন ছিলেন। আমার জানামতে, অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। পদোন্নতি নিয়ে যেসব অভিযোগ সেসব ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিবেন বলেও জানান মহাপরিচালক। এছাড়া, টেন্ডারের ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে অনেক আলোচনা হয়েছে। ওই প্রজেক্টের সংশ্লিষ্ট পিডিকে সরিয়ে নতুন পিডি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এটা আবার রিটেন্ডার হবে বলেও জানান মীর নূরুল আলম।
No comments