রাহুল ও কংগ্রেসের ব্যর্থতা নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'র 'পোস্টমর্টেম'
*১৮টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা শূন্য আর কেবলমাত্র কেরালাতেই এই সংখ্যা দশকের ঘরে পৌঁছাতে পেরেছে।
*উত্তর প্রদেশে বিজেপিকে হারাতে বিলম্বে হলেও কংগ্রেস তুরুপের তাস হিসেবে প্রচারণায় নামিয়েছিল প্রিয়াংকা গান্ধীকে। সেখানে দলের ভোট আগের ৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ থেকে কমে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মোট ভোটের হিসাবে এর সংখ্যা ৬০ লাখা ৬১ হাজার থেকে কমে ৫৪ লাখ ৫৭ হাজারে দাঁড়িয়েছে।
*২০০৯ সালে উত্তর প্রদেশে ২২ আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। এবারে ওই আসনগুলোতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে সেখানেও ২০১৪ সালের তুলনায় ১৪টি আসনে ভোট কমেছে। ভোট হারানো বড় বড় প্রার্থীদের মধ্যে আছেন সালমান খুরশিদ, আর পি এন সিং, আন্নু ট্যান্ডন ও জিতিন প্রসাদ।
*মাত্র পাঁচ মাস আগে বিজেপিকে হারিয়ে যে মধ্য প্রদেশ হস্তগত করেছিল কংগ্রেস সেখানেও ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের থেকেও এবারে ভোট কমেছে দলটির। ভোট কমেছে কর্নাটকেও। সেখানেও রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা দলটির ভোট কমেছে দশ শতাংশ।
*দলের ভোট আর ভোট পাওয়ার হার কমেছে মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং হিমাচল প্রদেশের ১১৫টি আসনেও।
*কেন্দ্র শাসিত কয়েকটি অঞ্চল, পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের কয়েকটি ছোট রাজ্য ও গোয়া বাদে কংগ্রেসের ভোটের ভাগ ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে কেবল পাঞ্জাব ও ছত্তিশগড়ে।
*এই সব সংখ্যাই মিথ্যা করে দেয় সেই সব ব্যাখ্যা যাতে বলা হচ্ছে নরেন্দ্র মোদি ঝড় ২.০ কংগ্রেসের বিশালতা আর ব্যাপ্তির পতন হয়েছে।
*উত্তর প্রদেশে বিজেপিকে হারাতে বিলম্বে হলেও কংগ্রেস তুরুপের তাস হিসেবে প্রচারণায় নামিয়েছিল প্রিয়াংকা গান্ধীকে। সেখানে দলের ভোট আগের ৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ থেকে কমে ৬ দশমিক ৩১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মোট ভোটের হিসাবে এর সংখ্যা ৬০ লাখা ৬১ হাজার থেকে কমে ৫৪ লাখ ৫৭ হাজারে দাঁড়িয়েছে।
*২০০৯ সালে উত্তর প্রদেশে ২২ আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। এবারে ওই আসনগুলোতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে সেখানেও ২০১৪ সালের তুলনায় ১৪টি আসনে ভোট কমেছে। ভোট হারানো বড় বড় প্রার্থীদের মধ্যে আছেন সালমান খুরশিদ, আর পি এন সিং, আন্নু ট্যান্ডন ও জিতিন প্রসাদ।
*মাত্র পাঁচ মাস আগে বিজেপিকে হারিয়ে যে মধ্য প্রদেশ হস্তগত করেছিল কংগ্রেস সেখানেও ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের থেকেও এবারে ভোট কমেছে দলটির। ভোট কমেছে কর্নাটকেও। সেখানেও রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা দলটির ভোট কমেছে দশ শতাংশ।
*দলের ভোট আর ভোট পাওয়ার হার কমেছে মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং হিমাচল প্রদেশের ১১৫টি আসনেও।
*কেন্দ্র শাসিত কয়েকটি অঞ্চল, পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের কয়েকটি ছোট রাজ্য ও গোয়া বাদে কংগ্রেসের ভোটের ভাগ ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে কেবল পাঞ্জাব ও ছত্তিশগড়ে।
*এই সব সংখ্যাই মিথ্যা করে দেয় সেই সব ব্যাখ্যা যাতে বলা হচ্ছে নরেন্দ্র মোদি ঝড় ২.০ কংগ্রেসের বিশালতা আর ব্যাপ্তির পতন হয়েছে।
১৩৪
বছরের পুরনো দলটির ইতিহাসে দ্বিতীয় শোচনীয় পরাজয়ের আসল কারণ কী? এমন
প্রশ্নে মোদি ম্যাজিকের মাত্রাধিক ক্ষমতার ওপর দায় চাপানো হলেও সত্য হলো
কংগ্রেসের হারের নেপথ্যে গত পাঁচ বছরে দলটির কিছু ভুল পদক্ষেপ, সাংগঠনিক
অদক্ষতা, ভুল নীতি, কৌশলগত বিপর্যয় এবং বার্তা দেওয়ার নড়বড়ে পরিস্থিতিও
তাদের ভূমিকা রেখেছে। ২০১৪ সালে মোদির বিরুদ্ধে নির্বাচনি প্রচারণায় দলের
নেতৃত্ব দেওয়া রাহুল গান্ধী ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কংগ্রেস প্রধানের দায়িত্ব
নেন। দলের পরাজয়ের এইসব কারণের অনেক কিছুর দায় তাকেই নিতে হবে।
এর ফলেই গত ২৫ মে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সভার ওপরে নজর ছিল সবার। রাহুল গান্ধী কি পদত্যাগ করবেন? নাকি তিনি অতি প্রয়োজনীয় সেই ধরনের পরিবর্তন আনবেন যা তিনি ২০১৩ সালে দিল্লির নির্বাচনে আম আদমি পার্টির কাছে দলের পরাজয়ের পর দিয়েছিলেন? ওই নির্বাচনে হারার পর রাহুল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দলে এমন পরিবর্তন আনা হবে যা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।
কিন্তু দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী বৈঠকে বিস্মিত হওয়ার মতো কিছুই ঘটেনি। রাহুল পদত্যাগের প্রস্তাব দিলেও ওয়ার্কিং কমিটিতে সর্ব সম্মতভাবে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান হয়েছে। আর তাকেই দল ঢেলে সাজানো ও সব পর্যায় পুনর্গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ইতিহাসের দ্বিতীয় শোচনীয় হারে মাত্র ৫২ আসন পেয়েছে কংগ্রেস। এই ফলাফলেই স্পষ্ট যে, বিজয়ী বিজেপির শক্তির সঙ্গে দলটি খাপ খাওয়াতে পারেনি। শক্তিশালী সংগঠন ও বার্তা পাঠানোর ক্ষমতা যদি বিজেপির শক্তি যদি হয় তাহলে কংগ্রেস দুটি ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আছে। আর কোনও নির্বাচনে জিততে এই দুটিতেই এগিয়ে থাকা জরুরি। একগুচ্ছ নির্বাচনে পিছিয়ে পড়া আর ধারাবাহিকভাবে ভোটের ভাগ কমতে থাকার পরও কংগ্রেস নতুন আখ্যান লিখতে ব্যর্থ হয়েছে। কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি এখন রাহুল গান্ধীকেই দল ঢেলে সাজানোর ক্ষমতা দিচ্ছে। কিন্তু এটাও একটা পুরনো প্রবণতা।
২০১৪ সালেও একই ধরণের আখ্যান দেখা গিয়েছিল। ওই নির্বাচনে পরাজয়ের পর সোনিয়া ও রাহুল গান্ধী দুজনেই পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। ওয়ার্কিং কমিটি যথারীতি তা প্রত্যাখান করেছিল। সেবারও পরিবর্তন ও পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু অল্প কয়েকটি পরিবর্তন ছাড়া কংগ্রেস একইরকম থেকে গেছে।
এর ফলেই গত ২৫ মে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সভার ওপরে নজর ছিল সবার। রাহুল গান্ধী কি পদত্যাগ করবেন? নাকি তিনি অতি প্রয়োজনীয় সেই ধরনের পরিবর্তন আনবেন যা তিনি ২০১৩ সালে দিল্লির নির্বাচনে আম আদমি পার্টির কাছে দলের পরাজয়ের পর দিয়েছিলেন? ওই নির্বাচনে হারার পর রাহুল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দলে এমন পরিবর্তন আনা হবে যা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।
কিন্তু দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী বৈঠকে বিস্মিত হওয়ার মতো কিছুই ঘটেনি। রাহুল পদত্যাগের প্রস্তাব দিলেও ওয়ার্কিং কমিটিতে সর্ব সম্মতভাবে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান হয়েছে। আর তাকেই দল ঢেলে সাজানো ও সব পর্যায় পুনর্গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ইতিহাসের দ্বিতীয় শোচনীয় হারে মাত্র ৫২ আসন পেয়েছে কংগ্রেস। এই ফলাফলেই স্পষ্ট যে, বিজয়ী বিজেপির শক্তির সঙ্গে দলটি খাপ খাওয়াতে পারেনি। শক্তিশালী সংগঠন ও বার্তা পাঠানোর ক্ষমতা যদি বিজেপির শক্তি যদি হয় তাহলে কংগ্রেস দুটি ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আছে। আর কোনও নির্বাচনে জিততে এই দুটিতেই এগিয়ে থাকা জরুরি। একগুচ্ছ নির্বাচনে পিছিয়ে পড়া আর ধারাবাহিকভাবে ভোটের ভাগ কমতে থাকার পরও কংগ্রেস নতুন আখ্যান লিখতে ব্যর্থ হয়েছে। কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি এখন রাহুল গান্ধীকেই দল ঢেলে সাজানোর ক্ষমতা দিচ্ছে। কিন্তু এটাও একটা পুরনো প্রবণতা।
২০১৪ সালেও একই ধরণের আখ্যান দেখা গিয়েছিল। ওই নির্বাচনে পরাজয়ের পর সোনিয়া ও রাহুল গান্ধী দুজনেই পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। ওয়ার্কিং কমিটি যথারীতি তা প্রত্যাখান করেছিল। সেবারও পরিবর্তন ও পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু অল্প কয়েকটি পরিবর্তন ছাড়া কংগ্রেস একইরকম থেকে গেছে।
দুর্বল প্রচারণা
২০১৮ সালের গ্রীষ্মকাল। প্রত্যেক এমপি, রাজনীতিবিদ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সবাই পার্লামেন্টে নরেন্দ্র মোদিকে রাহুল গান্ধীর জড়িয়ে ধরা নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। ওই বছরের ১৯ জুলাই পার্লামেন্ট বিতর্কের এক পর্যায়ে উঠে গিয়ে মোদির সঙ্গে কোলাকুলি করেন রাহুল। পার্লামেন্টে নিজের কার্যালয়ে এক সিনিয়র নেতার তখন অকপট পর্যবেক্ষণ ছিল, ‘যতটা বাস্তবায়ন করা যাবে ততটাই ভালো এই আইডিয়া।’
ওই
নেতা বলেন, ঘৃণা ও ক্ষোভের বিরুদ্ধে ভালোবাসা- একটি শক্তিশালী আইডিয়া। এই
আইডিয়া এমন একজন মানুষের কাছ থেকে এসেছে যিনি তার দাদী ও বাবাকে খুন হতে
দেখেছেন। ‘কিন্তু বাস্তবায়নে গিয়ে হারিয়ে গেল ওই বার্তা। আমরা সবাই জানি
বিজেপি, আরএসএস এবং মোদি সবাই ঘৃণা ছড়িয়েছেন। কিন্তু উঠে গিয়ে মোদিকে জড়িয়ে
ধরায় এই অনন্য মেসেজটি গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছিল’- এই ঘটনার কয়েক দিন পর
বলছিলেন সাবেক ওই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
পেছনে ফিরে তাকিয়ে আর পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করে ওই একই নেতা বলেন, ‘আমাদের প্রচারণা ছিল খুবই দুর্বল। তিন তালাক আইন বা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও বালাকোটের হামলার মতো আবেগি বিষয়গুলোতে আমাদের প্রচারণা অনেক সময়ই নির্মিত বলে উপস্থাপিত হয়েছে। আমরা প্রায়ই জনগণের আবেগ ও মনোভাবের বিপরীতে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেছি। কেবলমাত্র ৯০ দিনের প্রচারণায় খুব কম নির্বাচনই জেতা যায়। এতে কেবল একক ব্যক্তিকে বিশ্লেষণ করা যায় আর খুব বেশি হলে তাতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকা ভোটারদের সামান্য অংশকে প্রভাবিত করা যায়। আমরা হয়তো লড়াই শুরুর আগেই হেরে গেছি’।
ভরাডুবির পর হতভম্ব কংগ্রেস নেতারা বলছেন, পারিবারিক মত গঠনে ক্রমাগত ভূমিকা রাখতে থাকা তরুণদের উদ্দেশে দলের পাঠানো নির্দেশনা স্পষ্ট ছিল না। গান্ধী হয়তো বেকারত্ব ও রুটি-রুজির ইস্যুর বীণা বাজিয়ে গেছেন তবে অনেক সিনিয়র নেতাই মনে করেন, এর প্রভাব সীমিত। যেখানে বিজেপি’র আগ্রাসী ও আবেগী জাতীয়তাবাদের খেলা চলছে সেখানে ওই বীণা কাজ করেনি। তারা আরও বলছেন, এসব তরুণদের অনেকেই বংশানুক্রমিক রাজনীতির ওপর অসহিষ্ণু। এসব তরুণদের অনেকেই এই রাজনীতি পরিবর্তনের মনোভাব পোষণ করেন।
আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈই বলেন, ‘আবেগ ভারতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটা একটা বড় ফ্যাক্টর। আমাদের এটা বুঝতে হবে আর এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই আমাদের কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে’। সাবেক আরেক কেন্দ্রীয় নেতা মনে করেন, কেবল আবেগী ইস্যুতে কংগ্রেস ব্যর্থ হয়েছে তেমন না। পণ্য ও পরিষেবা শুল্ক বিল জিএসটিকে গব্বার সিং ট্যাক্স বলে আমরা কী বার্তা পাঠাচ্ছি? কঠোর পরিশ্রম করার পরও কংগ্রেস সভাপতি ভাবগাম্ভীর্য বর্জিত রাজনীতিবিদে পরিণত হয়েছেন।
পেছনে ফিরে তাকিয়ে আর পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করে ওই একই নেতা বলেন, ‘আমাদের প্রচারণা ছিল খুবই দুর্বল। তিন তালাক আইন বা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও বালাকোটের হামলার মতো আবেগি বিষয়গুলোতে আমাদের প্রচারণা অনেক সময়ই নির্মিত বলে উপস্থাপিত হয়েছে। আমরা প্রায়ই জনগণের আবেগ ও মনোভাবের বিপরীতে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেছি। কেবলমাত্র ৯০ দিনের প্রচারণায় খুব কম নির্বাচনই জেতা যায়। এতে কেবল একক ব্যক্তিকে বিশ্লেষণ করা যায় আর খুব বেশি হলে তাতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকা ভোটারদের সামান্য অংশকে প্রভাবিত করা যায়। আমরা হয়তো লড়াই শুরুর আগেই হেরে গেছি’।
ভরাডুবির পর হতভম্ব কংগ্রেস নেতারা বলছেন, পারিবারিক মত গঠনে ক্রমাগত ভূমিকা রাখতে থাকা তরুণদের উদ্দেশে দলের পাঠানো নির্দেশনা স্পষ্ট ছিল না। গান্ধী হয়তো বেকারত্ব ও রুটি-রুজির ইস্যুর বীণা বাজিয়ে গেছেন তবে অনেক সিনিয়র নেতাই মনে করেন, এর প্রভাব সীমিত। যেখানে বিজেপি’র আগ্রাসী ও আবেগী জাতীয়তাবাদের খেলা চলছে সেখানে ওই বীণা কাজ করেনি। তারা আরও বলছেন, এসব তরুণদের অনেকেই বংশানুক্রমিক রাজনীতির ওপর অসহিষ্ণু। এসব তরুণদের অনেকেই এই রাজনীতি পরিবর্তনের মনোভাব পোষণ করেন।
আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈই বলেন, ‘আবেগ ভারতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটা একটা বড় ফ্যাক্টর। আমাদের এটা বুঝতে হবে আর এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই আমাদের কৌশলে পরিবর্তন আনতে হবে’। সাবেক আরেক কেন্দ্রীয় নেতা মনে করেন, কেবল আবেগী ইস্যুতে কংগ্রেস ব্যর্থ হয়েছে তেমন না। পণ্য ও পরিষেবা শুল্ক বিল জিএসটিকে গব্বার সিং ট্যাক্স বলে আমরা কী বার্তা পাঠাচ্ছি? কঠোর পরিশ্রম করার পরও কংগ্রেস সভাপতি ভাবগাম্ভীর্য বর্জিত রাজনীতিবিদে পরিণত হয়েছেন।
মাঠ পর্যায়ে কাজের ঘাটতি
২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ওই নির্বাচনে পরাজয়ের পর কংগ্রেস নেতারা কেউ ইচ্ছায় আবার কেউ অনিচ্ছায় এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হন। অনেকেই নতুন প্রজন্মের যোগাযোগমাধ্যমের ক্ষমতা মেনে নেন। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব প্ল্যাটফর্মে নিজেদের প্রতি সাড়া দেখে বহু কংগ্রেস নেতারা এই সত্যই ভুলে গিয়েছিলেন যে, সত্যিকার মাঠপর্যায়ের কাজের কোনও বিকল্প নেই।
‘মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে যেখানে দৃশ্যত কমিউনিস্টদের খুব কম বা উপস্থিতি নেই বললেই চলে সেখানে তারা কৃষাণ মার্চের আয়োজন করতে পারে। আর আমরা কী করছি? অন্ধ্র প্রদেশে জগন (মোহন) রেড্ডির দিকে তাকান। মাসের পর মাস তিনি রাস্তায় রয়েছেন। আমার মনে হয় তার পদযাত্রা প্রতিটি জেলা ছুঁয়ে গিয়েছিল আর ফলাফল দেখেন। ডিএমকে’র স্টালিনও মাঠে সক্রিয় ছিলেন’, বলছিলেন সর্ব ভারতীয় কংগ্রেস কমিটির এক সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
দলের অনেক নেতার বিশ্বাস দিল্লির নেতারা বসে থাকেন, আর মানুষের ক্ষোভ ও চলমান আন্দোলনের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন বাদ দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা আর টুইটারে মতামত দেওয়াতেই কাজ সারেন। ‘কৃষি সংকট, দলিত অস্থিরতা, ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ চলেছে। আর মাঠে আমাদের দেখা যায়নি। রাজপথে বিক্ষোভ আয়োজন, সোস্যাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড আর সংবাদপত্রের কাটা অংশ পরের দিন সকালে দিল্লি পাঠাতেই আগ্রহী ছিলেন বেশিরভাগ প্রাদেশিক সভাপতি। কিন্তু সেগুলোর কোনওটাই সত্যিকার জনগণের আন্দোলন ছিল না’, বলেন সাবেক এক মুখ্যমন্ত্রী। তবে এই মুখ্যমন্ত্রী এখন দলের অভ্যন্তরে আর প্রিয়পাত্র নন।
মধ্যপ্রদেশের এক সিনিয়র নেতা বলেন, আমরা গুজরাটে জিগনেস মিওয়ানি, উত্তর প্রদেশে চন্দ্রশেখর আজাদ ও মহারাষ্ট্রে প্রকাশ আম্বেদকরের কাছে জায়গা ছেড়ে দিয়েই খুশি ছিলাম। এমনকি মধ্য প্রদেশেও লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নের সময় আমরা কৃষক বিক্ষোভের নায়ক কেদার সিরোহী ও ডি পি দাকাদকে অবহেলা করেছি। তার ফলাফল? মন্দসুরের মতো জায়গায় চরি আসনের তিনটিতেই হেরেছি আর নিমুকের তিনটির সবগুলোই গেছে। আমরা তাদেরকে দলে টেনে নিতে পারতাম।’
সাংগঠনিক অদক্ষতা
বহু কংগ্রেস নেতা অবাক হয়েছিলেন রাহুল গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতির রাজ্য গুজরাটের দায়িত্ব প্রথমবারের মতো এমপি হওয়া ৪৫ বছরের রাজিব সত্যবের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। অনেকেই তার উত্থান মেনে নিতে পারেনি। ফলে এই ক্ষোভের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিশ্চিতভাবেই ছিল। অনেক সিনিয়র নেতা বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন তিনি কী মোদি-অমিত জুটির বিরুদ্ধে থেকে দল চালাতে পারবেন?
এর মধ্যে আসে আরেকটি বড় চমক। নির্বাচনের মাত্র তিনমাস আগে রাহুল তার বোন সোনিয়া গান্ধী ভদ্রকে পূর্বাঞ্চলীয় উত্তর প্রদেশের জন্য সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ করেন। ‘কংগ্রেস কর্মী হিসেবে আমরা উল্লসিত হলাম আর প্রিয়াংকার রাজনীতিতে প্রবেশের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া উপেক্ষা করলাম। তবে আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, উত্তর প্রদেশের মতো একটি রাজ্যের সঙ্গে এরকম আচরণ কীভাবে করা যেতে পারে? নির্বাচনের আগে আগে আপনি দৃশ্যত নতুন সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ করছেন। আর তারপরে গুলাম নবি আজাদকে পাঠানো হলো হরিয়ানায়। যেখানে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় কোনও সাধারণ সম্পাদক নেই’, বলেন এক সিনিয়র নেতা।
তিন রাজ্যের ফলাফলই স্পষ্ট। হরিয়ানা ও গুজরাটে কোনও আসনই পায়নি কংগ্রেস। আর উত্তর প্রদেশে কমেছে ভোটের ভাগ। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই চারটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড এবং দিল্লিতে আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এই রাজ্য গুলোতে সাংগঠনিক বিপর্যয় কংগ্রেসকে চোখ রাঙাচ্ছে।
কর্নাটকের এক সিনিয়র মন্ত্রী বলেন, ‘কর্নাটকে জনতা দলের (জেডি) সঙ্গে জোট গড়া কংগ্রেসের বিপর্যয় ঘটিয়েছে। এই জোট কোনও কাজে আসেনি। মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস মন্ত্রির মধ্যে কোনও সমন্বয় ছিল না। নেতাদের বিবৃতি ভুল বার্তা দিয়েছে। তারওপর বিবৃতি ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামিয়ার আচরণ নিয়ে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে দুই ধর্মীয় গোষ্ঠী লিঙ্গায়াত ও ভোক্কালিগাসের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। এসব প্রকাশ্যে আসার পর দুটি সম্প্রদায়ই আমাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। গত এক বছরেও দলের শীর্ষ নেতারা এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেনি বা কেউ এখানে আসেনি। এসব ঘটনা বাড়ছেই।’
বহু নেতাই কর্নাটকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সর্বভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি বেনুগোপালের সমালোচক। ‘প্রাদেশিক কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট দিনেশ গুন্ডু রাওয়ের দলের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরও একই অবস্থা। তিনি নিজেও তার মনোযোগ কাজে লাগাননি আর কেউও তার কাছে কোনও কিছুর জন্য যায়নি’, বলেন এক সিনিয়র কংগ্রেস নেতা।
মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বিরাজ চৌহান বলেন, রাজ্যে পরাজয়ের নেপথ্যে রয়েছেন রাজ্যের নেতারা।
যেখানে রাধাকৃষ্ণ ভিকে পাতিল বিধানসভার বিরোধী দলের নেতার পদ ছেড়ে প্রথম দিন থেকেই পূর্ণ নিবেদিত ছিলেন (তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়া তার ছেলে সুজয় ভিকে পাতিলের পক্ষে প্রচারণা চালান) সেখানে কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট অশোক চৌহান দেবেন্দ্র ফাড়নবিস সরকারকে দুর্নীতি নিয়ে কার্যকরভাবে আক্রমণ করতে পারেননি। ফাড়নবিস নিজেই অপরাধ ও দুর্নীতির অভিযোগ মোকাবিলা করছেন, বলেন পৃথ্বিরাজ চৌহান।
আরেক সিনিয়র নেতা বলেন, প্রকাশ আম্বেদকরকে দলে নিতে না পারার ব্যর্থতারও মূল্য দিতে হয়েছে কংগ্রেসকে।
হরিয়ানায় কংগ্রেস বুঝে উঠতেই পারেনি জাট (ওই অঞ্চলের নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী) বা জাটহীন রাজনীতি তারা করবে কীনা। প্রথম বিষয় হলো, জানুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়ে গুলাম নবি আজাদ একটি বাসযাত্রা আয়োজন করলেন। আর পুরোভাগে ছিলেন ভুপেন্দর সিং হুদা ও তার ছেলে দিপেন্দর হুদা। তাদের দুজনকেই মনোনয়ন দেওয়া হলো। বিজেপি সহজেই জাটহীন রাজনীতির কার্ড খেলে দিলে পারলো আর সব জাটহীন ভোট সংহত করার সুযোগ পেল। কুমারি শৈলজার মাঠ তৈরিতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তারপরও আমরা হোয়াইট ওয়াশ হয়ে গেলাম, বলেন রাজ্যের এক সিনিয়র নেতা।
পার্শ্ববর্তী পাঞ্জাবেও বিভক্তি দেখা গেছে। সেখানে ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংকে চূড়ান্ত বলে দেখা হয়ে থাকে। ‘সেখানে বালাকোট ও অন্যান্য বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে তিনি তার মনগড়া কথা বলেছেন যাতে দলের মূল নেতৃত্ব থেকে তার বক্তব্য আলাদা মনে হয়েছে। কিন্তু তিনি বিজেপির আবেগের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। তিনি পরিবর্তনের প্রতি অনেক বেশি বাস্তবিক ও বিচক্ষণ ছিলেন’, বলেন এক সিনিয়র নেতা। অমরিন্দর সিংয়ের সমালোচক বলে অনেকেই জানেন এই নেতাকে।
রাহুলকে ভুলপথে চালানো হয়েছে?
দলের অভ্যন্তরেই রাহুলের ‘কোর টিম’ নিয়েই অস্বস্তি রয়েছে। পুলওয়ামা ও ১৯৮৪’র শিখ দাঙ্গা নিয়ে স্যাম পিতোরদার মতো নেতাদের অসময়োচিত মন্তব্যের জন্য ক্ষোভও আছে।
‘২০১৪ সালের নির্বাচন পরিচালনায় যে দলটি ছিল এবারও সেই একই দল ছিল। এবার কেবলমাত্র প্রবীন চক্রবর্তীকে (কংগ্রেসের ডাটা বিশ্লেষণ বিভাগের প্রধান) যুক্ত করা হয়েছে। তারা রাহুলকে বলেছেন যে, তারা তিন সপ্তাহের মধ্যে ১০ লাখ বুথ কমিটি গঠন করে ফেলেছে’, বলেন এক সিনিয়র কংগ্রেস নেতা।
সূত্র বলছে, ওই বর্ণনা কংগ্রেসের কোর কমিটিতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল কিন্তু ডাটা বিশ্লেষক দল তা ম্যানেজ করে ফেলে। তিনি বলেন, ‘তারা আরও বলেছে দশ দিনের মধ্যে সব বুথ কমিটিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ফেলেছে। আসলে শক্তি অ্যাপে ১২ লাখ মানুষ যুক্ত ছিল আর প্রতি বুথে দশজন করে। তার মানে প্রায় এক কোটি। আমাদের মনে হয় কংগ্রেস সভাপতিও এর আওতায় ছিলেন।’
এক শীর্ষ নেতা বলেন, সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর ছিল কংগ্রেসের বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব।
এক সিনিয়র নেতা বলেন, জনগণ জানতে চায় আমাদের প্রস্তাব কী, বিশেষ করে ভারতের তরুণ অংশ। তাদের জন্য কোনও বার্তা নেই। আর ডাটা বিশ্লেষণ বিভাগ কংগ্রেস সভাপতি ও শীর্ষ নেতাদের বলতে থাকেন প্রধানমন্ত্রীকে রাফায়েল ইস্যুতে আক্রমণ করতে থাকুন, ন্যুনতম আয় যোজনার প্রতিশ্রুতি সঠিক পথেই আছে’।
বিশাল এই পরাজয়ের পরও হয়তো রাহুল বা দলের পতন হয়ে যাবে না। তবে অনেকেই বিশ্বাস করেন এ থেকে উত্তরণ হবে পাহাড়ের চূড়ায় যাত্রা। সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
No comments