মাঠের পর মাঠ সবুজ by ইমাদ উদ দীন
সবজির
গ্রাম নাদামপুর। এমন উপাধি কৃষি বিভাগের। ভালো সবজি চাষে তাদের এমন
পরিচিতি। গ্রামজুড়ে মাঠের পর মাঠ চোখে পড়ে সবজির রাজত্ব। বছর জুড়ে সবজি
চাষে মগ্ন থাকেন ওই এলাকার কৃষক। চাষীদের এমন একাগ্রতায় সফলতাও আসছে। এরই
সঙ্গে বদলাচ্ছে তাদের ভাগ্য ও পরিচিতি। তাদের এমন সফলতায় সবজি চাষে
উজ্জীবিত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষক।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের নাদামপুর গ্রামে গেলে চোখে পড়ে মাঠের পর মাঠ সবুজের সমারোহ আর সবজির রাজত্ব। ক্ষেতের মাঠে ব্যস্ত কৃষক। সবজির পরিচর্যায় রাত-দিন তাদের শক্ত খাটুনি। তারপরও তারা মহাখুশি কারণ তাদের এই পরিশ্রম কাজে আসছে। সফলতাও মিলছে। কথা হয় নাদাম পুরের বিশিষ্ট বীজ ব্যবসায়ী ও সফল চাষি সুহেল আহমদের সঙ্গে। তিনি মানবজমিনকে জানান, ২০০১ সাল থেকে সবজি ও ধান চাষ শুরু করেন। মূলত সবজি চাষেই ফিরে তার আর্থিক সচ্ছলতা। এই আয় দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খুলেছেন। এখন ব্যাপক হারে সবজি চাষের জন্য নাদামপুর সবজি গ্রাম হিসেবেও আলাদা পরিচিতি পাচ্ছে। আর বছরজুড়ে সবজি চাষে বেকারত্বও ঘুচাচ্ছে যুব ও তরুণ সমাজের। সরজমিন নাদামপুর ঘুরে দেখা গেল চাষিরা পরম মমতায় সবজি ক্ষেতের যত্ন নিচ্ছেন। তাদের এই পরিচর্যায় যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রয়েছে নানা নতুনত্ব। সুহেল আহমদ তার সবজি ক্ষেত অতি বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে শেড তৈরি করেছেন। এখন বৃষ্টি না থাকায় শেডের উপর অংশ খুলে রাখা হয়েছে। তার এ টমেটো চাষসহ অন্যান্য সবজি চাষ দেখে এলাকার নাদামপুর, দাউদপুর. হামরকোনা, মোবারকপুর, বাহাদুরপুর, বাদে ফতেপুর, শ্রীধরপুর, করিমপুর, ফতেপুর, মোজেফরাবাদ, হলিমপুর সহ মোট ১১ গ্রামের অসংখ্য মানুষ সবজি চাষ করছেন। কম পরিশ্রম ও অল্প পুঁজিতে অধিক আয়ের উৎস সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় টমেটো চাষের পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম ও তরমুজ চাষ করে কয়েক গ্রামের মানুষ এখন স্বাবলম্বী। পাশাপাশি এলাকায় কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে। সুহেল আহমদ জানান ২৮ কিয়ার (বিঘা) জমিতে সবজি চাষ করেছেন টমেটো-১৩ কেয়ার, বারি-৪, বারি-৮, রাজা, সফল ও সোনালী জাতের টমেটো। এর মধ্যে বারি-৪ ও বারি-৮ দেশীয় জাতের টমেটোর ফলন ভাল হয়। এ দুটি জাত গ্রাফটিং পদ্ধতিতে করে থাকেন। রোগবালাই কম ও ফসল বেশি হওয়ায় গ্রাফটিং পদ্ধতির চারা কিনে জমিতে লাগান। শ্রাবণ মাস থেকে পর্যায়ক্রমে শুরু করেন জমিতে চারা লাগানোর কাজ। গত বছরও ১৩ কেয়ার (বিঘা) জমিতে টমেটো চাষ করেন সুহেল। প্রতি কেয়ারে ফলন হয়েছে ১৫ টন। সব মিলিয়ে ১৯৫ টন টমেটো বিক্রি করে প্রায় ৩২ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা পান। এতে খরচ হয়েছে ১২ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা। চারা লাগানোর ৮০-৯০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করে বাজারজাত করা যায়। পারপল কিং জাতের বেগুন ৭ বিঘা জমিতে চাষ করছেন গত বছর। এ বছর চারা লাগানো হয়েছে। ফলন ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে সংগ্রহ করে বিক্রি করতে পারবেন। গত বছরর ১৭৫ টন বেগুন বিক্রি করে ১৪ লক্ষ টাকা পেয়েছেন। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। আরলি সুইট জাতের মিষ্টি কুমড়া ৬ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। ৪২ টন মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন হয়েছে। প্রতি কেজি ১০ টাকা করে বিক্রি করে ৪ লক্ষ ২০ টাকা পান। খরছ হয়েছে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। তিনি জানান মিষ্টি কুমড়া চাষে তেমন পরিচর্চা লাগেনা। এ ছাড়াও মিষ্টি কুমড়া সংরক্ষণ করে রাখা যায় ৬-৭ মাস পর্যন্ত। চলতি মৌসুমেও মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে গত বছরের চেয়ে বেশী টাকা আয় করতে পারবেন এমনটি জানান সুহেল আহমদ। গেন্ডরী জাম্বু তরমুজ জাতের চাষ করেন ১ বিঘা জমিতে। সব খরচের পর ১০ টন তরমুজ বিক্রি করে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন। সুহেল আহমদ তার সবজি চাষ করতে বছরের ৮ মাস ৮-১০ জন শ্রমিক স্থায়ী এবং অস্থায়ী আরো ৭-৮ জন কাজ করেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ায় শেরপুর এলাকায় কৃষি সরাঞ্জাম ও সার, কিটনাশক, বীজ বিক্রির প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তিনি সবজির পাশাপাশি নিচু জমিতে ধান চাষ করছেন। সবজি ও ধান চাষে সফল হওয়ায় সুহেল আহমদ এখন চাষীদের অনুকরণীয় দৃষ্ঠান্ত। নাদামপুর গ্রামের আজিজ মিয়া বলেন ৭-৮ বছর আগেও তিনি অন্যের জমিতে দিনমজুরি কাজ করতেন। এর ফাঁকে গাড়ি চালাতেন। সুহেল আহমদের সবজি চাষ দেখে সবজি ক্ষেত শুরু করেন। এখন বছর জুড়ে টমেটো, বেগুন, ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করে ভালোই চলছে তার সংসার। তিনি বলেন তার মতো আরও অনেকেই আছে যারা আগে অন্যের জমিতে কাজ করত অথবা বেকার থাকত। এখন তারা তার মতো নিজের জমিতে সবজি চাষের আয় দিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ ও সংসার চালাচ্ছেন। একই কথা জানালে ওই এলাকার কৃষক জনি আহমদ। তিনিও ৮-১০ বছর যাবৎ টমেটো, লাউ, বেগুন ও মরিচ চাষ করে পরিবার চালাচ্ছেন। মৌলভীবাজার কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ শাহাজাহান জানান বছরে একাধিক সময় সুহেল আহমদের সবজি চাষ পর্যবেক্ষণে যান তিনি ও তার দল। এ বছর তার ক্ষেতে ভালো টমেটো ধরেছে। কুশিয়ারা নদীর পাশেই সবজি চাষের অধিকাংশ জমি। নদী পাড়ের মাটি সবজি চাষের উপযোগী হওয়ায় সবজিও ভালো মানের হয়। এখানে সেচ ও সার কম লাগে। ওই এলাকায় প্রায় ৩ শতাধিক কৃষক ভালো সবজি উৎপাদনের কারনে আমরা নাদামপুরকে ‘সবজি গ্রাম’ নাম দিয়েছি।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের নাদামপুর গ্রামে গেলে চোখে পড়ে মাঠের পর মাঠ সবুজের সমারোহ আর সবজির রাজত্ব। ক্ষেতের মাঠে ব্যস্ত কৃষক। সবজির পরিচর্যায় রাত-দিন তাদের শক্ত খাটুনি। তারপরও তারা মহাখুশি কারণ তাদের এই পরিশ্রম কাজে আসছে। সফলতাও মিলছে। কথা হয় নাদাম পুরের বিশিষ্ট বীজ ব্যবসায়ী ও সফল চাষি সুহেল আহমদের সঙ্গে। তিনি মানবজমিনকে জানান, ২০০১ সাল থেকে সবজি ও ধান চাষ শুরু করেন। মূলত সবজি চাষেই ফিরে তার আর্থিক সচ্ছলতা। এই আয় দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খুলেছেন। এখন ব্যাপক হারে সবজি চাষের জন্য নাদামপুর সবজি গ্রাম হিসেবেও আলাদা পরিচিতি পাচ্ছে। আর বছরজুড়ে সবজি চাষে বেকারত্বও ঘুচাচ্ছে যুব ও তরুণ সমাজের। সরজমিন নাদামপুর ঘুরে দেখা গেল চাষিরা পরম মমতায় সবজি ক্ষেতের যত্ন নিচ্ছেন। তাদের এই পরিচর্যায় যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রয়েছে নানা নতুনত্ব। সুহেল আহমদ তার সবজি ক্ষেত অতি বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে শেড তৈরি করেছেন। এখন বৃষ্টি না থাকায় শেডের উপর অংশ খুলে রাখা হয়েছে। তার এ টমেটো চাষসহ অন্যান্য সবজি চাষ দেখে এলাকার নাদামপুর, দাউদপুর. হামরকোনা, মোবারকপুর, বাহাদুরপুর, বাদে ফতেপুর, শ্রীধরপুর, করিমপুর, ফতেপুর, মোজেফরাবাদ, হলিমপুর সহ মোট ১১ গ্রামের অসংখ্য মানুষ সবজি চাষ করছেন। কম পরিশ্রম ও অল্প পুঁজিতে অধিক আয়ের উৎস সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় টমেটো চাষের পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম ও তরমুজ চাষ করে কয়েক গ্রামের মানুষ এখন স্বাবলম্বী। পাশাপাশি এলাকায় কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে। সুহেল আহমদ জানান ২৮ কিয়ার (বিঘা) জমিতে সবজি চাষ করেছেন টমেটো-১৩ কেয়ার, বারি-৪, বারি-৮, রাজা, সফল ও সোনালী জাতের টমেটো। এর মধ্যে বারি-৪ ও বারি-৮ দেশীয় জাতের টমেটোর ফলন ভাল হয়। এ দুটি জাত গ্রাফটিং পদ্ধতিতে করে থাকেন। রোগবালাই কম ও ফসল বেশি হওয়ায় গ্রাফটিং পদ্ধতির চারা কিনে জমিতে লাগান। শ্রাবণ মাস থেকে পর্যায়ক্রমে শুরু করেন জমিতে চারা লাগানোর কাজ। গত বছরও ১৩ কেয়ার (বিঘা) জমিতে টমেটো চাষ করেন সুহেল। প্রতি কেয়ারে ফলন হয়েছে ১৫ টন। সব মিলিয়ে ১৯৫ টন টমেটো বিক্রি করে প্রায় ৩২ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা পান। এতে খরচ হয়েছে ১২ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা। চারা লাগানোর ৮০-৯০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করে বাজারজাত করা যায়। পারপল কিং জাতের বেগুন ৭ বিঘা জমিতে চাষ করছেন গত বছর। এ বছর চারা লাগানো হয়েছে। ফলন ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে সংগ্রহ করে বিক্রি করতে পারবেন। গত বছরর ১৭৫ টন বেগুন বিক্রি করে ১৪ লক্ষ টাকা পেয়েছেন। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। আরলি সুইট জাতের মিষ্টি কুমড়া ৬ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। ৪২ টন মিষ্টি কুমড়া উৎপাদন হয়েছে। প্রতি কেজি ১০ টাকা করে বিক্রি করে ৪ লক্ষ ২০ টাকা পান। খরছ হয়েছে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা। তিনি জানান মিষ্টি কুমড়া চাষে তেমন পরিচর্চা লাগেনা। এ ছাড়াও মিষ্টি কুমড়া সংরক্ষণ করে রাখা যায় ৬-৭ মাস পর্যন্ত। চলতি মৌসুমেও মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে গত বছরের চেয়ে বেশী টাকা আয় করতে পারবেন এমনটি জানান সুহেল আহমদ। গেন্ডরী জাম্বু তরমুজ জাতের চাষ করেন ১ বিঘা জমিতে। সব খরচের পর ১০ টন তরমুজ বিক্রি করে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন। সুহেল আহমদ তার সবজি চাষ করতে বছরের ৮ মাস ৮-১০ জন শ্রমিক স্থায়ী এবং অস্থায়ী আরো ৭-৮ জন কাজ করেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ায় শেরপুর এলাকায় কৃষি সরাঞ্জাম ও সার, কিটনাশক, বীজ বিক্রির প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তিনি সবজির পাশাপাশি নিচু জমিতে ধান চাষ করছেন। সবজি ও ধান চাষে সফল হওয়ায় সুহেল আহমদ এখন চাষীদের অনুকরণীয় দৃষ্ঠান্ত। নাদামপুর গ্রামের আজিজ মিয়া বলেন ৭-৮ বছর আগেও তিনি অন্যের জমিতে দিনমজুরি কাজ করতেন। এর ফাঁকে গাড়ি চালাতেন। সুহেল আহমদের সবজি চাষ দেখে সবজি ক্ষেত শুরু করেন। এখন বছর জুড়ে টমেটো, বেগুন, ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করে ভালোই চলছে তার সংসার। তিনি বলেন তার মতো আরও অনেকেই আছে যারা আগে অন্যের জমিতে কাজ করত অথবা বেকার থাকত। এখন তারা তার মতো নিজের জমিতে সবজি চাষের আয় দিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ ও সংসার চালাচ্ছেন। একই কথা জানালে ওই এলাকার কৃষক জনি আহমদ। তিনিও ৮-১০ বছর যাবৎ টমেটো, লাউ, বেগুন ও মরিচ চাষ করে পরিবার চালাচ্ছেন। মৌলভীবাজার কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ শাহাজাহান জানান বছরে একাধিক সময় সুহেল আহমদের সবজি চাষ পর্যবেক্ষণে যান তিনি ও তার দল। এ বছর তার ক্ষেতে ভালো টমেটো ধরেছে। কুশিয়ারা নদীর পাশেই সবজি চাষের অধিকাংশ জমি। নদী পাড়ের মাটি সবজি চাষের উপযোগী হওয়ায় সবজিও ভালো মানের হয়। এখানে সেচ ও সার কম লাগে। ওই এলাকায় প্রায় ৩ শতাধিক কৃষক ভালো সবজি উৎপাদনের কারনে আমরা নাদামপুরকে ‘সবজি গ্রাম’ নাম দিয়েছি।
No comments