পত্রিকা পড়ে নিভৃতে সময় কাটছে বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
বাড়িটির
নাম ‘গ্র্যান্ড প্রেসিডেন্ট কনকর্ড’। কিন্তু মানুষের কাছে এটি পরিচিত
প্রেসিডেন্ট হাউজ হিসেবে। রাজধানীর গুলশান-২ এর ৫৯ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর
ধূসর রঙের এই বাড়িতে থাকেন একসময়ের আলোচিত প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীন আহমদ।
প্রায় নব্বই বছর বয়সী এই সাবেক প্রধান বিচারপতির শরীর তেমন ভালো নেই এখন।
বয়সজনিত নানা রোগে ভুগছেন। স্বাভাবিক চলাফেরা করতে কষ্ট হয় তার। সাধারণত
তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বাসায় আসেন চিকিৎসকরা। প্রায় দুই মাস আগে
সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ দুই সপ্তাহ বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। বাসায় তার
সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করার জন্য রয়েছেন দু’জন সেবিকা।
তিনি কখনও রাজনীতি করেননি। রাজনীতিক না হয়েও বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ইতিহাসে অনন্য হয়ে আছে তার নাম। ছিলেন বিচারপতি, পরে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর জাতির এক সন্ধিক্ষণে নিয়েছিলেন প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও। শুধু একবার নয়, দু’বার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বহুদিন ধরে নিজেকে লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ে গেছেন এই মানুষটি। সাবেক প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীনের খোঁজ-খবর জানতে তার গুলশানের বাড়িতে গিয়েছিলেন এই প্রতিবেদক। বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। আবাসন কোম্পানি কনকর্ডের সঙ্গে অংশীদারে বানানো ছয়তলা বাড়িটিতে দর্শনার্থীদের প্রবেশে রয়েছে বেশ কড়াকড়ি। নিজের পরিচয় দিয়ে বাড়ির প্রধান ফটক পেরিয়ে অভ্যর্থনা কক্ষে গিয়ে জানা গেল, অনেক দিন থেকেই সাহাবুদ্দীন মিডিয়ায় কথা বলেন না। তার শরীরও ভালো নেই। কথা বলতে কষ্ট হয় তার। কানে শুনেন না। বেশির ভাগ সময় ইশারা-ইঙ্গিতে কথা বলেন তিনি।
গত ৮ই মার্চ দুপুরের দিকে বাড়িটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজার আবদুর রাজ্জাক মানবজমিনকে জানালেন, স্যার একান্ত আপনজন ছাড়া কারও সঙ্গেই দেখা করেন না। রাজ্জাক আরো জানান, স্যার-এর ছোট ছেলে সোহেল আহমেদ বলেছেন উনি (সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ) কানে শোনেন না। সুতরাং আপনার সঙ্গে কথা বলবেন না। বাড়িটির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ছোট ছেলে সোহেল আহমদের সঙ্গে থাকেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। একই তলার অন্য একটি ফ্ল্যাটে থাকেন তার বড় মেয়ের জামাই ও নাতনি। সাহাবুদ্দীনের তিন মেয়ে আর দুই ছেলের মধ্যে বড় মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সিতারা পারভীন। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। বছর তিনেক আগে সাহাবুদ্দীন আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমও মারা যান। বড় ছেলে পরিবেশ প্রকৌশলী শিবলী আহমদ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। মেজো মেয়ে স্থপতি সামিনা পারভীন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। ছোট মেয়ে চারুশিল্পী সামিয়া পারভীন থাকেন দুবাই।
সাবেক প্রেসিডেন্টের একজন চিকিৎসক বলেন, মূলত পত্রিকা পড়া তিনি বেশি পছন্দ করেন। বেশির ভাগ সময়ই তিনি ঘরে থাকেন। শারীরিক দুর্বলতার কারণে কোনো সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন না, এমনকি কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে যান না তিনি। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে আসার পর থেকেই তিনি কোনো ধরনের অনুষ্ঠানে যান না। নিভৃতে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি। নিজেকে নিয়ে আলোচনা হোক সেটি চান না তিনি।
চলতি বছরের ১২ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই সপ্তাহ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসভবনে ফিরেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। বিএসএমএমইউ সূত্র জানায়, সাবেক প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীন আহমদ গত বছরের ৩০শে ডিসেম্বর পেট ব্যথা ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ডা. এবিএম আব্দুল্লাহর তত্ত্বাবধানে কেবিন ব্লকের ৬১১নং কেবিনে ভর্তি হয়েছিলেন। বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কানের সমস্যা, পারকিনসন্সসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ মানবজমিনকে জানান, সাবেক প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীন আহমদ পেটে প্রচণ্ড ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কানের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। কানে শুনেন না। ইশারা-ঈঙ্গিতে কথা বলেন।
এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকার সিভিল সার্জন অফিস সাবেক প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীন আহমদের চিকিৎসার দায়িত্ব দেয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ওপর। এ বিষয়ে হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মানবজমিনকে জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকার সিভিল সার্জন অফিস সাবেক প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীন আহমদের চিকিৎসার দায়িত্ব তাদের ওপর দিয়েছে। তাঁর প্রয়োজন হলেই আমাদের চিকিৎসক দল সাহাবুদ্দীন আহমদের বাড়িতে গিয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন।
কারও সঙ্গে কথা বলতে অনাগ্রহী এই মানুষটি একদা যেমন বিচক্ষণতার সঙ্গে বিচারিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তেমনি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনটিও উপহার দিয়েছিলেন জাতিকে। সাহাবুদ্দীন আহমদ কোনোবারই নিজের ইচ্ছায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেননি। ১৯৯০ সালের ৫ই ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদের পতন হয়। তখন প্রশ্ন দেখা দেয়, কে দেশের দায়িত্ব নেবেন? রাজনৈতিক দলগুলো মিলে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তিনি বিচারিক পদ ছাড়তে চাননি বলেই সর্বসম্মতিক্রমে তাকে আবার আগের পদে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করে। একাদশ সংশোধনী ছিল সেই অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন। নব্বইয়ের অভ্যুত্থানের পর সেদিন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন দায়িত্ব না নিলে দেশে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিত। সাহাবুদ্দীন আহমদের দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রেক্ষাপটও ভুলে যাওয়ার নয়। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নিয়ে অন্তরালে চলে যান সাহাবুদ্দীন আহমদ। আগেও যে খুব একটা প্রকাশ্যে আসতেন এমন নয়। বরাবরই প্রচারবিমুখ মানুষ তিনি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ শেষে একেবারেই নিভৃতে চলে আসেন।
উইকিপিডয়ার মতে, ১৯৩০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পেমই গ্রামে জন্ম নেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ছিলেন ফজলুল হক হলের ছাত্র। ১৯৫৪ সালে তদানিন্তন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রশাসনে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। তার বাবা তালুকদার রিসাত আহমেদ একজন সমাজসেবী ও এলাকায় জনহিতৈষী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
অবশ্য বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের কর্মজীবনের সূচনা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। পরবর্তী সময়ে সহকারী জেলা প্রশাসক হওয়ার পর ১৯৬০ সালে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগে বদলি হন। আসীন হন বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পদে। তারপরের ইতিহাস তো জানা। ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর ৬ই ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। ১৯৯১ সালে তার অধীনে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। পরে শর্তানুযায়ী তাকে প্রধান বিচারপতির পদে ফিরিয়ে দেয়া হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২৩শে জুলাই তাকে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট করা হয়। তখন তিনি অবসরকালীন সময় কাটাচ্ছিলেন। ২০০১ সালের ১৪ই নভেম্বর পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি কখনও রাজনীতি করেননি। রাজনীতিক না হয়েও বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ইতিহাসে অনন্য হয়ে আছে তার নাম। ছিলেন বিচারপতি, পরে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর জাতির এক সন্ধিক্ষণে নিয়েছিলেন প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও। শুধু একবার নয়, দু’বার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বহুদিন ধরে নিজেকে লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ে গেছেন এই মানুষটি। সাবেক প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীনের খোঁজ-খবর জানতে তার গুলশানের বাড়িতে গিয়েছিলেন এই প্রতিবেদক। বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। আবাসন কোম্পানি কনকর্ডের সঙ্গে অংশীদারে বানানো ছয়তলা বাড়িটিতে দর্শনার্থীদের প্রবেশে রয়েছে বেশ কড়াকড়ি। নিজের পরিচয় দিয়ে বাড়ির প্রধান ফটক পেরিয়ে অভ্যর্থনা কক্ষে গিয়ে জানা গেল, অনেক দিন থেকেই সাহাবুদ্দীন মিডিয়ায় কথা বলেন না। তার শরীরও ভালো নেই। কথা বলতে কষ্ট হয় তার। কানে শুনেন না। বেশির ভাগ সময় ইশারা-ইঙ্গিতে কথা বলেন তিনি।
গত ৮ই মার্চ দুপুরের দিকে বাড়িটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজার আবদুর রাজ্জাক মানবজমিনকে জানালেন, স্যার একান্ত আপনজন ছাড়া কারও সঙ্গেই দেখা করেন না। রাজ্জাক আরো জানান, স্যার-এর ছোট ছেলে সোহেল আহমেদ বলেছেন উনি (সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ) কানে শোনেন না। সুতরাং আপনার সঙ্গে কথা বলবেন না। বাড়িটির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ছোট ছেলে সোহেল আহমদের সঙ্গে থাকেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। একই তলার অন্য একটি ফ্ল্যাটে থাকেন তার বড় মেয়ের জামাই ও নাতনি। সাহাবুদ্দীনের তিন মেয়ে আর দুই ছেলের মধ্যে বড় মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সিতারা পারভীন। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। বছর তিনেক আগে সাহাবুদ্দীন আহমদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমও মারা যান। বড় ছেলে পরিবেশ প্রকৌশলী শিবলী আহমদ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। মেজো মেয়ে স্থপতি সামিনা পারভীন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। ছোট মেয়ে চারুশিল্পী সামিয়া পারভীন থাকেন দুবাই।
সাবেক প্রেসিডেন্টের একজন চিকিৎসক বলেন, মূলত পত্রিকা পড়া তিনি বেশি পছন্দ করেন। বেশির ভাগ সময়ই তিনি ঘরে থাকেন। শারীরিক দুর্বলতার কারণে কোনো সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন না, এমনকি কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে যান না তিনি। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে আসার পর থেকেই তিনি কোনো ধরনের অনুষ্ঠানে যান না। নিভৃতে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন তিনি। নিজেকে নিয়ে আলোচনা হোক সেটি চান না তিনি।
চলতি বছরের ১২ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই সপ্তাহ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাসভবনে ফিরেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। বিএসএমএমইউ সূত্র জানায়, সাবেক প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীন আহমদ গত বছরের ৩০শে ডিসেম্বর পেট ব্যথা ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ডা. এবিএম আব্দুল্লাহর তত্ত্বাবধানে কেবিন ব্লকের ৬১১নং কেবিনে ভর্তি হয়েছিলেন। বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কানের সমস্যা, পারকিনসন্সসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ মানবজমিনকে জানান, সাবেক প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীন আহমদ পেটে প্রচণ্ড ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কানের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। কানে শুনেন না। ইশারা-ঈঙ্গিতে কথা বলেন।
এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকার সিভিল সার্জন অফিস সাবেক প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীন আহমদের চিকিৎসার দায়িত্ব দেয় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ওপর। এ বিষয়ে হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মানবজমিনকে জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকার সিভিল সার্জন অফিস সাবেক প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দীন আহমদের চিকিৎসার দায়িত্ব তাদের ওপর দিয়েছে। তাঁর প্রয়োজন হলেই আমাদের চিকিৎসক দল সাহাবুদ্দীন আহমদের বাড়িতে গিয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন।
কারও সঙ্গে কথা বলতে অনাগ্রহী এই মানুষটি একদা যেমন বিচক্ষণতার সঙ্গে বিচারিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তেমনি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনটিও উপহার দিয়েছিলেন জাতিকে। সাহাবুদ্দীন আহমদ কোনোবারই নিজের ইচ্ছায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেননি। ১৯৯০ সালের ৫ই ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদের পতন হয়। তখন প্রশ্ন দেখা দেয়, কে দেশের দায়িত্ব নেবেন? রাজনৈতিক দলগুলো মিলে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তিনি বিচারিক পদ ছাড়তে চাননি বলেই সর্বসম্মতিক্রমে তাকে আবার আগের পদে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করে। একাদশ সংশোধনী ছিল সেই অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন। নব্বইয়ের অভ্যুত্থানের পর সেদিন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন দায়িত্ব না নিলে দেশে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিত। সাহাবুদ্দীন আহমদের দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রেক্ষাপটও ভুলে যাওয়ার নয়। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নিয়ে অন্তরালে চলে যান সাহাবুদ্দীন আহমদ। আগেও যে খুব একটা প্রকাশ্যে আসতেন এমন নয়। বরাবরই প্রচারবিমুখ মানুষ তিনি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ শেষে একেবারেই নিভৃতে চলে আসেন।
উইকিপিডয়ার মতে, ১৯৩০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পেমই গ্রামে জন্ম নেন সাহাবুদ্দীন আহমদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৫২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ছিলেন ফজলুল হক হলের ছাত্র। ১৯৫৪ সালে তদানিন্তন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জনপ্রশাসনে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। তার বাবা তালুকদার রিসাত আহমেদ একজন সমাজসেবী ও এলাকায় জনহিতৈষী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
অবশ্য বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের কর্মজীবনের সূচনা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে। পরবর্তী সময়ে সহকারী জেলা প্রশাসক হওয়ার পর ১৯৬০ সালে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগে বদলি হন। আসীন হন বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ পদে। তারপরের ইতিহাস তো জানা। ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর ৬ই ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। ১৯৯১ সালে তার অধীনে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। পরে শর্তানুযায়ী তাকে প্রধান বিচারপতির পদে ফিরিয়ে দেয়া হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২৩শে জুলাই তাকে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট করা হয়। তখন তিনি অবসরকালীন সময় কাটাচ্ছিলেন। ২০০১ সালের ১৪ই নভেম্বর পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
No comments