হায়রে উন্নয়নের জোয়ার! by সৈয়দ আবদাল আহমদ
জনপ্রিয়
পত্রিকা আমার দেশ বন্ধ করে রাখার পাঁচ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। পত্রিকার
সম্পাদক মাহমুদুর রহমান দুই দফায় পাঁচ বছর বন্দী জীবন কাটিয়ে বর্তমানে
জেলের বাইরে রয়েছেন। তিনি অবশ্য এই মুক্ত অবস্থাকে মুক্ত বলতে রাজি নন।
মাহমুদুর রহমান বলে থাকেন, ‘ছোট কারাগার থেকে এখন বড় কারাগারে আছি।’ তার এ
বক্তব্য মিথ্যে নয়। কারণ জেলের হয়রানি-নির্যাতনের চেয়েও মুক্ত অবস্থায় তিনি
এখন অনেক বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে আগে ছিল ৮২টি মামলা।
বর্তমানে নতুন করে আরো ৩৬টি মামলা যোগ হয়েছে। ফলে তার মামলার সংখ্যা
দাঁড়িয়েছে ১১৭।
ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা মামলাগুলো দিয়েছে দেশব্যাপী।
মঙ্গলবার বিনা ভোটের সরকারের তথ্যমন্ত্রী এক সহযোগী ঢাকায় আরেকটি মামলা
দিয়েছে। এ নিয়ে অবশ্য মামলার সংখ্যা হয়েছে ১১৮। নতুন মামলাগুলোর ব্যাপারে
আমার দেশ সম্পাদক হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন। হাইকোর্ট বেশ কয়েকটি মামলায়
তাকে আগাম জামিন দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী হাইকোর্টের বেইলবন্ড সংশ্লিষ্ট
কোর্টে গিয়ে বিচারকের সামনে হাজির হয়ে জমা দিতে হয়। মামলাগুলো সারা দেশে
ছড়িয়ে থাকার কারণে মাহমুদুর রহমানকে প্রায়ই দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে
সংশ্লিষ্ট কোর্টে হাজিরা দিতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে তিনি কুমিল্লা, চট্টগ্রাম,
বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, মাগুরা ও নাটোরের কোর্টে হাজির হয়ে ‘বেইলবন্ড’ জমা
দিয়েছেন। দীর্ঘ দিন জেলে থাকার কারণে তার শরীর এমনিতেই ভালো নেই। এই অসুস্থ
শরীর নিয়েই তাকে যেতে হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। সুহৃদ হিসেবে আমরা কয়েকজন
পেশাজীবী তার সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গেছি। নিজের চোখে দেখেছি তার কষ্ট।
অবশ্য তার সাথে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে তার কষ্ট বোঝার পাশাপাশি আমরা
দেশ ও দেশের সাধারণ মানুষ যে কতটা কষ্টের মধ্যে আছেন তাও দেখা এবং জানার
সুযোগ হয়। ক্ষমতাসীনেরা কথায় কথায় উন্নয়নের গল্প বলে থাকেন। দেশের নাকি শনৈ
শনৈ উন্নতি হচ্ছে। উন্নয়নের জোয়ারে নাকি ভাসছে দেশ। হায়রে উন্নয়ন! দেশের
বিভিন্ন জেলায় সরেজমিন না গেলে বুঝতেই পারতাম না উন্নয়নের জোয়ারে কতটা ভেসে
গেছে দেশ! গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে আমরা বগুড়া হয়ে নাটোর গিয়েছিলাম।
সেই অভিজ্ঞতাটুকুই শুনুন। বিকেল ৪টায় আমরা ঢাকা থেকে রওনা হই।
বগুড়ার
হোটেলে পৌঁছি রাত প্রায় ২টায়। আশুলিয়া থেকে যমুনা ব্রিজে পৌঁছতেই লেগেছে
সাত-আট ঘণ্টা। রাস্তা ভাঙা এবং যানজটে আমাদের ছিল ত্রাহি অবস্থা। সিরাগঞ্জ
থেকে বগুড়া পর্যন্ত রাস্তা এতটাই ভাঙাচোরা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার উপায়
নেই। বগুড়ায় রাত কাটিয়ে পরদিন বেলা সাড়ে ১১টায় আমরা পৌঁছি নাটোর কোর্টে।
কাজ শেষ করে ঢাকায় ফেরার জন্য রওনা হই। আগেই আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল নাটোর
থেকে যমুনা ব্রিজ দিয়ে টাঙ্গাইল হয়ে আমরা ঢাকায় আর ফিরব না। কারণ রাস্তার
অপর পাশে এত বেশি যানবাহন আটকা থাকতে দেখেছি, তাতে আমাদের মনে হয়েছে ঢাকায়
পৌঁছতে এক দিনে হবে না, দুই দিনও লেগে যেতে পারে। কিছুটা বেশি পথ হলেও
আরিচা দিয়ে ঢাকায় ফেরাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক নাটোর থেকে
কুষ্টিয়ার পথে রওনা হলাম। লালন সেতু পর্যন্ত পৌঁছতে খুব অসুবিধা হয়নি।
হায়-আল্লাহ; এরপর যেন ফুলসিরাত! বিশেষ করে ভেড়ামারা থেকে কুষ্টিয়া হয়ে
রাজবাড়ীর পাংশা পর্যন্ত ৪০-৪৫ কিলোমিটার রাস্তার যে কী শোচনীয় অবস্থা তার
বর্ণনা দেয়ার ভাষা জানা নেই। কখনো মনে হয়েছে ৮-৯ মাত্রার বড় কোনো ভূমিকম্প
হলে রাস্তার যে করুণ পরিণতি হয়, ওই রাস্তাটি সে রকম। আবার মনে হয়েছে বড়
বন্যায় রাস্তা ভেসে যাওয়ার পর যে অবস্থা হয় সেটা। পাজেরো জিপে করে আমরা
ঢাকায় ফিরছিলাম। আমার মনে হয়েছে জিপ ফেলে হেঁটে গেলেও এর চেয়ে অনেক আগে
যাওয়া যাবে। প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছিল আমার হার্টের রিংগুলো খুলে পড়ছে!
বারবার মনে হচ্ছিল আমার দেশ আজ চালু নেই। আজ যদি আমার দেশ থাকত তাহলে
কয়েকজন রিপোর্টার-ফটোগ্রাফারকে আমরা ওখানে পাঠাতাম। সরেজমিন ওই রাস্তার ওপর
‘লিড স্টোরি’ করাতাম।
ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রধান মিডিয়ার শীর্ষ পদে কাজ
করেন এমন তিনজন সাংবাদিক রয়েছেন যাদের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। তাদের প্রতিও রাগ
হচ্ছিল। তারাও কি রাস্তায় এই করুণ অবস্থা দেখেননি? তাদের মিডিয়ায় তো এ
রাস্তা নিয়ে কোনো প্রতিবেদন দেখিনি। গাড়ি থেকেই আমরা ঢাকায়-কুষ্টিয়ার একজন
সাংবাদিককে ফোন করে তাদের এলাকার দুরবস্থার কথা বলি। আমাদের সাথে সুর
মিলিয়ে তিনিও হতাশাই ব্যক্ত করলেন। মাহমুদ ভাই বারবার বলছিলেন, বিনা ভোটের
মন্ত্রী সাহেব, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবউল-আলম হানিফ কিভাবে কুষ্টিয়ায় আসেন?
নাকি তারা আসেন না? রাস্তার এই খানাখন্দ, বিশাল বিশাল গর্ত, এবড়ো-খেবড়ো
অবস্থার কথা তাদের মুখে তো কোনো দিন শোনা যায়নি, তাদের বাড়ি তো কুষ্টিয়ায়।
দেশের প্রতি মায়া না থাকলেও অন্তত নিজ এলাকার প্রতি কিছুটা দরদ তো তাদের
থাকা উচিত ছিল। আমাদের সফরসঙ্গীদের একজন বললেন- রাস্তার কথা বলার তাদের সময়
কোথায় মাহমুদ ভাই? খালেদা জিয়ার প্রতি বিষোদগার করতেই তো তাদের দিন চলে
যায়! এই মহা বিপর্যস্ত রাস্তা দিয়ে আসার সময় কুষ্টিয়া শহরে এসে আমাদের
হাসিও পেয়েছে। ভাঙা রাস্তার ওপর কিছুদূর পর পর নির্মিত তোরণে লেখা- ‘শেখ
হাসিনার দুই নয়ন, বাংলাদেশের উন্নয়ন’, ‘শেখ হাসিনার মূলমন্ত্র-উন্নয়নের
গণতন্ত্র’, ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ’- ইত্যাদি ক্ষমতাসীনদের সস্তা
স্লোগান। যাক, এই অভিজ্ঞতার কয়েক দিন পর ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোতে সারা
দেশের সড়ক-মহাসড়কের দুরবস্থা নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্ট দেখে ভালো লেগেছে।
সেখানে ক্ষমতাসীনদের উন্নয়নের জোয়ারের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। বলা হয়েছে,
মহাসড়ক মানেই মহাদুর্ভোগ। সড়ক-মহাসড়কগুলোর যে দুর্দশা তা শুধু মানুষের
দুর্ভোগেরই কারণ হচ্ছে না, জাতীয় অর্থনীতির বিরাট ক্ষতিরও কারণ হচ্ছে। ৬
ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে ১২ ঘণ্টা, কখনো কখনো ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত লাগছে। গত আট
বছরে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-সেতু মেরামত ও নির্মাণের পেছনে প্রায় ৪০
হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অথচ অর্ধেকের বেশি সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা
শোচনীয়।
একটি সড়ক নির্মাণ করার পর কোনো রকম মেরামত ছাড়াই তা টানা ১৫ বছর
ভালো থাকবে- এটা ধরে নিয়েই সড়কের নকশা ও নির্মাণকাজ করার রীতি। অথচ
নির্মাণের পর এক বছর না যেতেই সড়ক-মহাসড়কের স্থানে স্থানে ভেঙে যায়,
খানাখন্দ সৃষ্টি হয়। রিপোর্টে বলা হয়, সিলেট রংপুর খুলনা ও বরিশালে যাওয়ার
চারটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের এক হাজার ৬০ কিলোমিটার রাস্তার ৩৫০
কিলোমিটারেই দুর্ভোগকে সঙ্গী করে চলতে হয়। এর মধ্যে ৬৭ কিলোমিটার খুবই
বেহাল, যানবাহন চলে খুব কষ্ট করে। বাকিটিতে ভাঙাচোরা খানাখন্দ। ঢাকা-রংপুর
মহাসড়কের ৩০৭ কিলোমিটারের মধ্যে ১৩৫ কিলোমিটারই বেহাল। এশিয়ার দেশগুলোর
মধ্যে বাংলাদেশের সড়ক সবচেয়ে নিকৃষ্ট বলে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সড়ক ও নৌপথ অধিদফতরের হিসাবেই দেশের ৩৭ দশমিক
৩৪ শতাংশ সড়ক-মহাসড়ক খুবই খারাপ। ২৩ শতাংশ চলনসই। পত্রিকায় প্রকাশিত
আরেকটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, দুদক সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ বিভাগের আর্থিক
অনিয়ম-দুর্নীতির উৎস অনুসন্ধান করতে গিয়ে যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাতে আছে
সড়ক নির্মাণ হচ্ছে নিম্নমানের ইট, বালু, বিটুমিন দিয়ে। নির্মাণের আগেই বিল
দেয়া, ঘুষ দেয়াসহ বিভিন্ন কারসাজি চলছে। এভাবেই ক্ষমতাসীনেরা উন্নয়নের
জোয়ারের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে উজাড় করে দিচ্ছে দেশ। দেশের
সাধারণ মানুষকে অসহায়ের মতো এই অন্যায় দেখে যেতে হচ্ছে। যা হোক, অনেক
দুর্ভোগ-ভোগান্তি সহ্য করে রাত ১০টায় আমরা ঢাকায় পৌঁছি। তবে লুকাব না।
নাটোর থেকে ঢাকায় ফেরার পথে দুর্ভোগে পড়লেও রূপসী বাংলার শ্যামলী নিসর্গ
চোখ জুড়িয়েছে। নাটোর থেকে ফেরার পথে মুকুলে ভরা আমগাছ, লিচু বাগান, সমতলের
দিগন্ত বিস্তৃত ক্ষেতে কচি ধানের ডগার সবুজ সমারোহ আমাদের মুগ্ধ করেছে।
কষ্ট পাচ্ছিলাম এ কথা ভেবে সব দেশের সেরা আমাদের এই অপরূপ জন্মভূমি আমরাই
শেষ করে দিচ্ছি।
পুলিশের বাড়াবাড়ি
আবার পুলিশের বাড়াবাড়ি যে কতটা বেপরোয়া পর্যায়ে পৌঁছে গেছে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করার পর দেশের মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। ৮ ফেব্রুয়ারির আগে ও পরে পাঁচ হাজারের বেশি বিএনপি নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেলে নিয়ে গেছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপিকে কোনো কর্মসূচিই করতে দিচ্ছে না পুলিশ। বিএনপি আগেই ঘোষণা দেয় তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মানববন্ধন, গণ-অনশন, লিফলেট বিতরণ, বিক্ষোভ সমাবেশ, গণস্বাক্ষর ইত্যাদি। পুলিশ এসব কর্মসূচিতেও হস্তক্ষেপ করে তা পণ্ড করে দিয়েছে। দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে সম্প্রতি কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু ওই দিনই পুলিশ যুদ্ধ সাজে সজ্জিত হয়ে বিএনপি মোকাবেলায় মাঠে নামে। জলকামান থেকে রঙিন পানি ছিটিয়ে, লাঠিচার্জ করে পুরো কর্মসূচি পণ্ড করে দেয়। শুধু তাই নয়, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে গলা চেপে ধরে পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়। মাটিতে ফেলে কর্মীদের গলা টিপে ধরে, বুকের ওপর পায়ের বুট দিয়ে চেপে ধরে। কর্মীদের কোমর, হাঁটু ও পায়ের গোড়ালিতে বেধড়ক লাঠিপেটা করা হয়। গত মঙ্গলবার প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ছিল বিএনপির। সেখান থেকেও অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভেতরে ঢুকে সাংবাদিকদের সামনে পিস্তল উঁচিয়ে গেয়েন্দা পুলিশের মহড়া, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে গলাচেপে ধরে গ্রেফতারের ছবি সামাজিক মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে। শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই একই অবস্থা। হবিগঞ্জে জনপ্রিয় পৌর মেয়র জি কে গউছকে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেয় পুলিশ। প্রকাশ্যে চিৎকার করে পুলিশ কর্মকর্তাটি বলেন,
পুলিশের বাড়াবাড়ি
আবার পুলিশের বাড়াবাড়ি যে কতটা বেপরোয়া পর্যায়ে পৌঁছে গেছে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করার পর দেশের মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। ৮ ফেব্রুয়ারির আগে ও পরে পাঁচ হাজারের বেশি বিএনপি নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেলে নিয়ে গেছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপিকে কোনো কর্মসূচিই করতে দিচ্ছে না পুলিশ। বিএনপি আগেই ঘোষণা দেয় তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মানববন্ধন, গণ-অনশন, লিফলেট বিতরণ, বিক্ষোভ সমাবেশ, গণস্বাক্ষর ইত্যাদি। পুলিশ এসব কর্মসূচিতেও হস্তক্ষেপ করে তা পণ্ড করে দিয়েছে। দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে সম্প্রতি কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু ওই দিনই পুলিশ যুদ্ধ সাজে সজ্জিত হয়ে বিএনপি মোকাবেলায় মাঠে নামে। জলকামান থেকে রঙিন পানি ছিটিয়ে, লাঠিচার্জ করে পুরো কর্মসূচি পণ্ড করে দেয়। শুধু তাই নয়, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে গলা চেপে ধরে পুলিশ ভ্যানে তোলা হয়। মাটিতে ফেলে কর্মীদের গলা টিপে ধরে, বুকের ওপর পায়ের বুট দিয়ে চেপে ধরে। কর্মীদের কোমর, হাঁটু ও পায়ের গোড়ালিতে বেধড়ক লাঠিপেটা করা হয়। গত মঙ্গলবার প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ছিল বিএনপির। সেখান থেকেও অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভেতরে ঢুকে সাংবাদিকদের সামনে পিস্তল উঁচিয়ে গেয়েন্দা পুলিশের মহড়া, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে গলাচেপে ধরে গ্রেফতারের ছবি সামাজিক মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে। শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই একই অবস্থা। হবিগঞ্জে জনপ্রিয় পৌর মেয়র জি কে গউছকে ক্রসফায়ারে হত্যার হুমকি দেয় পুলিশ। প্রকাশ্যে চিৎকার করে পুলিশ কর্মকর্তাটি বলেন,
ক্রসফায়ারের তালিকায় গউছের নাম আছে। হুমকিদাতা পুলিশ
কর্মকর্তা চড়া গলায় বলেন, তার পিস্তল দিয়েই নাকি তিনি গউছকে ‘ক্রস’ করবেন।
সংবাদ সম্মেলনে জি কে গউছ এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। কুমিল্লার
মুরাদনগরে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বের হওয়া মহিলাদের মিছিলেও অমানবিক
হামলা চালিয়েছে পুলিশ। মুরাদনগরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কর্মীদের গ্রেফতার করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে বলেছিলেন, সরকার কারও
রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ন করছে না, কোনো দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা
দিচ্ছে না। কিন্তু এই কথার ২৪ ঘণ্টা পরই বিএনপির নয়াপল্টনের কালো পতাকা
প্রদর্শন কর্মসূচি পুলিশ পণ্ড করে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার
করে। এভাবে পুলিশ নিতান্ত নিরীহ এবং নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিও করতে দিচ্ছে
না। পুলিশের নতুন আইজি সম্প্রতি ঢাকার একটি দৈনিকে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন,
পুলিশ হবে গণমুখী। সমস্যায় পড়লে মানুষ সৃষ্টিকর্তার পরই পুলিশের সাহায্য
চায়। বাংলাদেশের পুলিশকে সেরকম কি বলা যায়? বাংলাদেশের পুলিশ এখন এক ভয়ের
নাম। অজানা বিপদ থেকে বাঁচার জন্য মানুষ যতটা পারে পুলিশকে এড়িয়ে চলে।
পুলিশের সামনে পড়লে কোনো না কোনো বিপদের আশঙ্কা থাকে। দেশব্যাপী একটি কথা
চালু হয়ে গেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকার চালাচ্ছে না, সরকার চালাচ্ছে পুলিশ।
পুলিশের গ্রেফতার বাণিজ্যে আজ রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা দিশেহারা। এ অবস্থায়
আইজিপির এই বক্তব্য হাসির খোরাক নয় কি? বাংলাদেশের লাঠিয়াল পুলিশকে কিভাবে
তিনি গণমুখী পুলিশ হিসেবে দেখবেন? আজ দেশের অবস্থা কতটা বেগতিক হয়েছে তা ড.
কামাল হোসেনের মন্তব্য থেকেই বোঝা যায়। তিনি বলেছেন, দেশের জনগণই এখন
বেদখল হয়ে গেছে। অথচ সংবিধান অনুযায়ী দেশের মালিক হচ্ছেন জনগণ। তিনি প্রশ্ন
করেন- সেই জনগণকেই গলাটিপে ধরা কোন গণতন্ত্র? তারা কি রাস্তায় বিশৃঙ্খলা
সৃষ্টি করেছিল? আজ রাজনৈতিক দলগুলোর জমায়েত পুলিশের বেষ্টনীর মধ্যে হয়। এটা
কোন গণতন্ত্র?
দেশ ও নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা
ঢাকা ফোরামের একটি গোলটেবিলে অংশ নিয়ে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, এখন পর্যন্ত অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। কোনো দল নয়, দেশের স্বার্থেই আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হতে হবে। তা না হলে বিপর্যয় নেমে আসবে। কিন্তু একটি সুষ্ঠু নির্বাচন যে হবে সে ব্যাপারে কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। তারা স্পষ্ট করেই বলেছেন, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ই দেশের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। দেশের আজকের পরিস্থিতির জন্য ওই রায়ই দায়ী। এর ফলেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একটি প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে। গণতন্ত্র নির্বাসনে চলে যায়। এই কথাগুলো শুধু বিশিষ্ট নাগরিকদেরই নয়, দেশের বেশির ভাগ মানুষই তা বিশ্বাস করেন। তাদের আশঙ্কা আরেকটি ভুয়া নির্বাচন করার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীনেরা। ইতোমধ্যে তারা নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছে। দেশের মানুষ বলছে একদল নির্বাচনের প্রচার করছে, আরেক দল বন্দী। খালেদা জিয়াকে জেলে বন্দী করে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার নিয়ে সারা দেশে নির্বাচনী প্রচার করে যাচ্ছেন। বিএনপি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে। অথচ তাদের মুখে টুঁ-শব্দটি পর্যন্ত নেই। ওবায়দুল কাদের বলছেন, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগদের প্রধান হিসেবে নির্বাচনী প্রচার করছেন। কিন্তু তিনি রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে রাষ্ট্রীয় খরচে প্রচার চালিয়েছেন। ইতোমধ্যে সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী ও খুলনায় হেলিকপ্টারে গিয়ে শেখ হাসিনা জনসভা করেছেন,
দেশ ও নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা
ঢাকা ফোরামের একটি গোলটেবিলে অংশ নিয়ে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, এখন পর্যন্ত অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। কোনো দল নয়, দেশের স্বার্থেই আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হতে হবে। তা না হলে বিপর্যয় নেমে আসবে। কিন্তু একটি সুষ্ঠু নির্বাচন যে হবে সে ব্যাপারে কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। তারা স্পষ্ট করেই বলেছেন, সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ই দেশের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। দেশের আজকের পরিস্থিতির জন্য ওই রায়ই দায়ী। এর ফলেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একটি প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে। গণতন্ত্র নির্বাসনে চলে যায়। এই কথাগুলো শুধু বিশিষ্ট নাগরিকদেরই নয়, দেশের বেশির ভাগ মানুষই তা বিশ্বাস করেন। তাদের আশঙ্কা আরেকটি ভুয়া নির্বাচন করার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীনেরা। ইতোমধ্যে তারা নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছে। দেশের মানুষ বলছে একদল নির্বাচনের প্রচার করছে, আরেক দল বন্দী। খালেদা জিয়াকে জেলে বন্দী করে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার নিয়ে সারা দেশে নির্বাচনী প্রচার করে যাচ্ছেন। বিএনপি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে। অথচ তাদের মুখে টুঁ-শব্দটি পর্যন্ত নেই। ওবায়দুল কাদের বলছেন, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগদের প্রধান হিসেবে নির্বাচনী প্রচার করছেন। কিন্তু তিনি রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে রাষ্ট্রীয় খরচে প্রচার চালিয়েছেন। ইতোমধ্যে সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী ও খুলনায় হেলিকপ্টারে গিয়ে শেখ হাসিনা জনসভা করেছেন,
উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেছেন। অর্থাৎ
প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে থেকে, সংসদ বহাল
রেখে আরেকটা একতরফা নির্বাচন সম্পন্ন করতেই তিনি মরিয়া। শুধু তাই নয়,
নির্বাচনকে সামনে রেখে হাজার হাজার কোটি সরকারি টাকা লুটপাটেরও ফন্দি করা
হয়েছে। ইতোমধ্যে বিনা ভোটের এমপিদের বিশেষ বরাদ্দ দেয়ার জন্য সরকার তিনটি
প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এই প্রকল্পে ১৬ হাজার ১৫১ কোটি টাকা খরচ করার
সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রতিটি সংসদীয় আসনে ১০টি নতুন স্কুল ভবন ও ১০টি
স্কুলের ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ এবং মসজিদ ও মন্দির নির্মাণের এ প্রকল্প
নেয়া হয়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রত্যেক এমপিকে এক কোটি
টাকা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সবই ভোটের প্রকল্প। বিশিষ্ট
নাগরিকেরা বলেছেন, বর্তমান এমপিরা সবাই বিনাভোটের। প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা না
করে অপরিকল্পিতভাবে তাদের ইচ্ছানুযায়ী এসব প্রকল্প নেয়া হয়েছে।
স্কুল-মাদরাসা, মসজিদ, মন্দির নির্মাণ বড় নয়, টাকা লুটই বড় কথা। এসব
প্রকল্প আদৌ হবে কিনা কেউ জানে না। প্রকল্পের নামে জনগণের বিপুল টাকা
লুটপাট করার জন্য এটা করা হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের কি উপায় কারো
জানা নেই?
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক
জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক
জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা
No comments