রাগ থাকুক নিয়ন্ত্রণে
রাগের
সঙ্গে সবাই পরিচিত। প্রাত্যহিক জীবনে কমবেশি রাগান্বিত অবস্থায় পড়তে হয়
সবাইকেই। রাগের কারণে কখনো উদ্রেক হয় হালকা বিরক্তির, কখনো প্রচণ্ড উষ্মার।
আশার কথা হচ্ছে- রাগ একটি সমপূর্ণ স্বাভাবিক, স্বাস্থ্যকর এবং মানবিক
অনুভূতি। তবে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলেই ঘটে বিপত্তি। লাগামহীন রাগের
ফলে তৈরি হওয়া সমস্যা মানুষের ব্যক্তিগত গণ্ডি পেরিয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে
কর্মক্ষেত্রে, সমপর্কে ও সামাজিক পরিমণ্ডলে। রাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ না থাকা
ব্যক্তির জীবন যেন কোনো এক ঘুমন্ত ‘রাগ দৈত্য’র হাতের পুতুল। যার ঘুম ভাঙলে
ব্যক্তির অজান্তেই তছনছ হয়ে যায় অনেক কিছুর। একসময় রাগ পড়ে গেলে আবার
ঘুমিয়ে পড়ে ওই ‘রাগ দৈত্য’। তবে অতিরিক্ত রাগের খেসারত দিতে হয় ব্যক্তিকেই।
রাগের নানান ধরন
আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে প্রখ্যাত মনোবিদ এবং রাগ নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ চার্লস সপাইলবার্গার লিখেছেন, রাগের উৎস ২ রকমের: ১.অন্তর্গত এবং ২. বহির্গত। বহির্গত রাগের উৎসসমূহ অনেক সময় ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। যেমন: ট্রাফিক জ্যাম কিংবা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। অন্তর্গত রাগ সৃষ্টি হতে পারে ব্যক্তিজীবনে, কর্মক্ষেত্রে কিংবা সমপর্কে মানসিক দ্বন্দ্ব, মতানৈক্য বা অসন্তুষ্টি থেকে। অতীতের কোনো দুঃসহ স্মৃতিও অনেক সময় মানুষের মনে ক্রোধ জাগিয়ে তোলে। রেগে গেলে মানুষ মূলত ৩টি প্রধান উপায় অবলম্বন করে। সেগুলো হলো:
১. রাগের বহিঃপ্রকাশ করা
২. রাগ দমন করা
৩. রাগ ভুলে শান্ত থাকা
তবে উপরের তিনটির কোনোটাই কিন্তু জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। পরিস্থিতিভেদে আপনাকে কখনো কখনো রাগ প্রকাশ করতে হতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে রেগে গিয়ে যাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে না ফেলেন। রাগের প্রকাশ হতে হবে যৌক্তিক এবং পরিমিত। আবার অনেক সময় রাগের মুখে লাগাম পরিয়ে তাকে দমিয়ে রাখতে হতে পারে। মনে চেপে রাখা এই রাগকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে তা থেকে ইতিবাচক কোনকিছু বের করে আনার চেষ্টা চালাতে হবে। হতে পারে ধৈর্যের ফলে অন্যের ভুল ভাঙতে পারে। তবে একটা কথা খেয়াল রাখা ভালো। অতিমাত্রায় ছাড় দিতে থাকলে একসময় নিজের মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। হঠাৎ ক্রোধে ফেটে পড়তে পারে মন। আর ৩ নম্বর ক্যাটাগরি অনুযায়ী রাগ ভুলে শান্ত হয়ে যেতে পারলে রাগের অনেক কুপ্রভাব থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। তবে একটু ভেবে দেখতে হবে, সর্বক্ষেত্রে রাগ এড়ানোর নাম করে মাঝে মাঝে জীবনকে এড়িয়ে যাচ্ছেন কি না। এইটুকু সচেতনতা থাকলেই বেশ।
রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল
১. নিজের রাগের ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করুন। যে ব্যাপারগুলো আপনাকে রাগিয়ে দেয় তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কিংবা সেরকম পরিস্থিতিতে নিজেকে সংবরণ করুন। নিজের রাগের প্যাটার্ন বা ছাঁচটি ভালোভাবে বুঝতে পারলে রাগ নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেয়া সহজ হয়ে যায়।
২. পারলে রাগের সময়টাতে মুখ বন্ধ রাখুন। পরিস্থিতিকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করুন। রাগ পড়ে এলে ভালোভাবে ভেবে আপনার রাগের বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলুন।
৩. মনোযোগ সরিয়ে নিন। সম্ভব হলে ঘটনাস্থল থেকে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও দূরে সরে যান।
৪. লম্বা করে দম নিন। ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন। ফুসফুসে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের প্রবাহ রাগ প্রশমনে খুবই উপকারী।
৫. অবস্থান পরিবর্তন করুন। সম্ভব হলে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় রাগান্বিত হলে বসে পড়ুন। বসে থাকলে শুয়ে পড়ুন।
৬. ব্যায়াম বা শারীরিক কসরত করতে পারেন। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, ব্যায়াম কিংবা খেলাধুলা রাগ কমাতে সাহায্য করে।
৭. রাগের কারণ সমপর্কে কথা বলুন। পরিবারের সদস্য কিংবা বন্ধুরা এ ধরনের আলোচনায় খুব কার্যকর। সামগ্রিক ব্যাপারে তাদের মূল্যায়ন আপনার রাগের প্রশমন কিংবা স্বাস্থ্যকর বহিঃপ্রকাশে সহায়তা করবে।
৮. মেডিটেশন, ধ্যান, উপাসনা- রাগ প্রশমনে অত্যন্ত ফলদায়ী।
সর্বোপরি, এমনটা হতেই পারে, আপনি চেষ্টা করেও রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না। সেক্ষেত্রেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। শুধু প্রয়োজন একটু সচেতনতা। একজন দক্ষ মনোবিদের শরণাপন্ন হয়ে কিছু পথ্য মেনে চললেই রাগ নিয়ন্ত্রণ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। সেইসঙ্গে সহজ হবে জীবনযাপনও। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা এবং প্রচেষ্টা।
রাগের নানান ধরন
আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে প্রখ্যাত মনোবিদ এবং রাগ নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ চার্লস সপাইলবার্গার লিখেছেন, রাগের উৎস ২ রকমের: ১.অন্তর্গত এবং ২. বহির্গত। বহির্গত রাগের উৎসসমূহ অনেক সময় ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। যেমন: ট্রাফিক জ্যাম কিংবা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। অন্তর্গত রাগ সৃষ্টি হতে পারে ব্যক্তিজীবনে, কর্মক্ষেত্রে কিংবা সমপর্কে মানসিক দ্বন্দ্ব, মতানৈক্য বা অসন্তুষ্টি থেকে। অতীতের কোনো দুঃসহ স্মৃতিও অনেক সময় মানুষের মনে ক্রোধ জাগিয়ে তোলে। রেগে গেলে মানুষ মূলত ৩টি প্রধান উপায় অবলম্বন করে। সেগুলো হলো:
১. রাগের বহিঃপ্রকাশ করা
২. রাগ দমন করা
৩. রাগ ভুলে শান্ত থাকা
তবে উপরের তিনটির কোনোটাই কিন্তু জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। পরিস্থিতিভেদে আপনাকে কখনো কখনো রাগ প্রকাশ করতে হতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে রেগে গিয়ে যাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে না ফেলেন। রাগের প্রকাশ হতে হবে যৌক্তিক এবং পরিমিত। আবার অনেক সময় রাগের মুখে লাগাম পরিয়ে তাকে দমিয়ে রাখতে হতে পারে। মনে চেপে রাখা এই রাগকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে তা থেকে ইতিবাচক কোনকিছু বের করে আনার চেষ্টা চালাতে হবে। হতে পারে ধৈর্যের ফলে অন্যের ভুল ভাঙতে পারে। তবে একটা কথা খেয়াল রাখা ভালো। অতিমাত্রায় ছাড় দিতে থাকলে একসময় নিজের মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। হঠাৎ ক্রোধে ফেটে পড়তে পারে মন। আর ৩ নম্বর ক্যাটাগরি অনুযায়ী রাগ ভুলে শান্ত হয়ে যেতে পারলে রাগের অনেক কুপ্রভাব থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। তবে একটু ভেবে দেখতে হবে, সর্বক্ষেত্রে রাগ এড়ানোর নাম করে মাঝে মাঝে জীবনকে এড়িয়ে যাচ্ছেন কি না। এইটুকু সচেতনতা থাকলেই বেশ।
রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল
১. নিজের রাগের ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করুন। যে ব্যাপারগুলো আপনাকে রাগিয়ে দেয় তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কিংবা সেরকম পরিস্থিতিতে নিজেকে সংবরণ করুন। নিজের রাগের প্যাটার্ন বা ছাঁচটি ভালোভাবে বুঝতে পারলে রাগ নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেয়া সহজ হয়ে যায়।
২. পারলে রাগের সময়টাতে মুখ বন্ধ রাখুন। পরিস্থিতিকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করুন। রাগ পড়ে এলে ভালোভাবে ভেবে আপনার রাগের বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলুন।
৩. মনোযোগ সরিয়ে নিন। সম্ভব হলে ঘটনাস্থল থেকে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও দূরে সরে যান।
৪. লম্বা করে দম নিন। ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন। ফুসফুসে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের প্রবাহ রাগ প্রশমনে খুবই উপকারী।
৫. অবস্থান পরিবর্তন করুন। সম্ভব হলে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় রাগান্বিত হলে বসে পড়ুন। বসে থাকলে শুয়ে পড়ুন।
৬. ব্যায়াম বা শারীরিক কসরত করতে পারেন। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, ব্যায়াম কিংবা খেলাধুলা রাগ কমাতে সাহায্য করে।
৭. রাগের কারণ সমপর্কে কথা বলুন। পরিবারের সদস্য কিংবা বন্ধুরা এ ধরনের আলোচনায় খুব কার্যকর। সামগ্রিক ব্যাপারে তাদের মূল্যায়ন আপনার রাগের প্রশমন কিংবা স্বাস্থ্যকর বহিঃপ্রকাশে সহায়তা করবে।
৮. মেডিটেশন, ধ্যান, উপাসনা- রাগ প্রশমনে অত্যন্ত ফলদায়ী।
সর্বোপরি, এমনটা হতেই পারে, আপনি চেষ্টা করেও রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না। সেক্ষেত্রেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। শুধু প্রয়োজন একটু সচেতনতা। একজন দক্ষ মনোবিদের শরণাপন্ন হয়ে কিছু পথ্য মেনে চললেই রাগ নিয়ন্ত্রণ অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। সেইসঙ্গে সহজ হবে জীবনযাপনও। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা এবং প্রচেষ্টা।
No comments