নারীর কিডনি রোগ



গতকাল যুগপৎ পালিত হয়েছে বিশ্ব নারী দিবস ও বিশ্ব কিডনি দিবস। এ দুই দিবসের একটি আন্তঃসম্পর্কও ধরা পড়েছে। সেটা হল, কিডনিসংক্রান্ত রোগে পুরুষের চেয়ে নারীরাই ভুগছে বেশি। নারীর ১৪ শতাংশের বিপরীতে কিডনি রোগে পুরুষের আক্রান্তের হার ১২ শতাংশ। একটি গবেষণায় দেখে গেছে, ক্রনিক কিডনি রোগ বিশ্বব্যাপী একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এ সমস্যায় বিশ্বের ১ কোটি ৫০ লাখ নারী আক্রান্ত এবং প্রতি বছর এ রোগে মৃত্যু ঘটে থাকে ৬ লাখেরও বেশি। নারীদের ক্ষেত্রে কিডনি রোগের এটাই যখন বাস্তবতা, তখন এর চিকিৎসার সুযোগ কী অবস্থায় রয়েছে দেখা যেতে পারে। দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যার তুলনায় ডায়ালাইসিস সেন্টার খুব কম, মাত্র ৯৬টি। ১৮ হাজার রোগী এসব সেন্টারে সপ্তাহে দু’বার সেবা পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে বেসরকারি সেন্টারগুলোয় ডায়ালাইসিস করাতে হলে সাড়ে তিন হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা গুনতে হয়। বলাবাহুল্য, এই টাকা বহন করা মধ্যবিত্তদের জন্যও কষ্টকর, নিম্নবিত্ত বা বিত্তহীনদের জন্য তা প্রায় অসম্ভব। একটা জরিপে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় মোট কিডনি রোগীর মাত্র ১৫ শতাংশ ডায়ালাইসিসের সুযোগ পেয়ে থাকে। আমাদের তাই বলতেই হচ্ছে, ডায়ালাইসিসের খরচ কমাতে হবে এবং তা সরকারি ও বেসরকারি উভয় উদ্যোগে। দ্বিতীয় কথা, কিডনি রোগ প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা সম্ভব হলে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে কিডনির বিকল হয়ে যাওয়া রোধ করা সম্ভব। কিন্তু সাধারণ মানুষের অধিকাংশই কিডনির অবস্থা ও এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করান না। এর কারণ দ্বিবিধ। স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব ও পরীক্ষাসংক্রান্ত খরচ। সাধারণ মানুষের এই স্বাস্থ্য অসচেতনতা দূর করতে হবে এবং একইসঙ্গে কিডনিসংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচও কমাতে হবে। নারীদের ক্ষেত্রে কিডনি রোগের আধিক্যের কারণে এবার বিশ্ব কিডনি দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে- ‘কিডনি অ্যান্ড উইমেন হেলথ; ইনকুড, ভ্যালু, এমপাওয়ার’। অর্থাৎ নারীদের কিডনি রোগের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। বস্তুত বাংলাদেশের বিশেষত গ্রামীণ নারীসমাজ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত থাকে। তারা কীভাবে কোন্ রোগ পুষে চলেছে, তা টেরও পায় না অনেক ক্ষেত্রে। এই ভাগ্যবিড়ম্বিত নারীদের চিকিৎসা, বিশেষত কিডনি রোগের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি হাসপাতালগুলোর ভূমিকা এক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ গ্রামীণ নারীরা পিছিয়ে রয়েছে আর্থিকভাবেও।

No comments

Powered by Blogger.