ফয়জুরের বন্ধু সুমনকে খুঁজছে পুলিশ by ওয়েছ খছরু
ফয়জুরের
ভাই এনামুলকে আটক করা হয়েছে। পাওয়া গেছে ট্যাব ও মোবাইল ফোন। এখন ফয়জুরের
বন্ধু সুমনকে খুঁজছে পুলিশ। এনামুল বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর থেকে
গ্রেপ্তার হলেও পাওয়া যাচ্ছে না সুমনকে। তার সন্ধানে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন
স্থানে অভিযানে রয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা। পুলিশের
ওই ইউনিটের দুই জন উপ-পুলিশ কমিশনারের তত্ত্বাবধানে সিলেটের শাহজালাল
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ড. জাফর ইকবালের ওপর
হামলার ঘটনার তদন্ত চলছে। দেশের চলমান জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে ফয়জুরের
সম্পর্ক রয়েছে কী না- সেটিই এখন খোঁজা হচ্ছে। পুলিশ ধারণা করছে, জঙ্গিরা
আলাদা ফরমেটে তৈরি হয়ে নতুনভাবে মিশন শুরু করেছে। আর এই মিশনের প্রথম
টার্গেট ছিলেন প্রফেসর ড. জাফর ইকবাল। প্রথম মিশনটি তারা কাজে লাগাতে
ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সিলেটের শেখপাড়া গ্রামের ফয়জুর রহমান হামলার
দিন আটক হওয়ার পরপরই তার বন্ধু সুমন ও ভাই এনামুল হাসান সিলেট থেকে পালিয়ে
যায়। এরপর থেকে তাদের দুই জনকে খুঁজে ফিরছিল সিলেট মহানগর পুলিশ। পুলিশ
প্রথম দিন থেকেই খুঁজছিল এনামুলকে। কিন্তু তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর
জিজ্ঞাসাবাদেও ফয়জুরের মুখ থেকে তার ভাই এনামুলের সম্পৃক্ততার বিষয়টি জানা
যায়। এনামুলকে গ্রেপ্তারে সিলেটের পুলিশ সুনামগঞ্জের দিরাই ও জগন্নাথপুরে
তাদের আত্মীয়ের বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। এনামুলের
কাছে ছিল ফয়জুরের মোবাইল ফোন ও ট্যাব। শেখপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা প্রথমে
পুলিশকে ট্যাবের সন্ধান দিয়েছিলেন। ফয়জুরের হাতে প্রায় সময় একটি ট্যাব দেখা
যেতো। ফলে ফয়জুরের ট্যাব ও মোবাইল ফোন পাওয়া ছিল জরুরি। অবশেষে
বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা এনামুলকে
গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে। একই সঙ্গে তার কাছ থেকে ফয়জুরের ট্যাব ও
মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। কিন্তু ট্যাব ও মোবাইল ফোনের অনেক তথ্যই মুছে
ফেলা হয়েছে। এগুলো ফরেনসিক টেস্টে পাঠানো হয়েছে। সুমনকে পাওয়া যায়নি।
সুমনের বাড়িও সিলেটে। সে ফয়জুরের খুব কাছের বন্ধু ছিল। সুমনও ফয়জুরের মতো
সালাফি মতবাদে বিশ্বাসী। এ কারণে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে নিজের বোন বিয়ে দিতে
চেয়েছিল ফয়জুর। পরিবারের অমত থাকায় সেটি হয়নি। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ
ফয়জুরের পাশাপাশি তার বন্ধু ও ভাইয়ের সম্পৃক্ততার বিষয়টি খুঁজে পেয়েছে।
সিলেটের জালালাবাদ থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ফয়জুরকে তারা
জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তার কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সেসব
তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ফয়জুর এখনো বলছে, সে একাই পরিকল্পনা নিয়ে
প্রফেসর ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা করেছে। তার সঙ্গে কে কে এই হামলায় জড়িত
সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। ইতিমধ্যে ফয়জুরের
পিতা-মাতাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পিতা-মাতা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত
কী না- সেটি এখনো পরিষ্কার হয়নি বলে জানান তিনি। এদিকে, গাজীপুর থেকে আটক
করা ফয়জুরের ভাই এনামুল হাসানকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা গতকাল
বিকাল পর্যন্ত সিলেটে নিয়ে আসেননি। রাতে তাকে সিলেটে নিয়ে আসা হতে পারে।
তাকে ঢাকায় রাখা হয়েছে। এনামুলের কাছ থেকে কিছু তথ্য নিয়ে তারা সুমনের
সন্ধান করছেন। সুমনের সন্ধানে অভিযান চলছে। তদন্তে থাকা পুলিশ জানায়,
ফয়জুর, এনামুল ও সুমনকে বিশেষ আ্যপসের যোগাযোগের মাধ্যমে জঙ্গি গোষ্ঠী
তাদের আর্দশে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং সেটি বেশি দিন আগে নয়। ২০১৬ সাল থেকে
একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ওই গোষ্ঠীর অনুপ্রেরণায়
উৎসাহিত হয়ে ফয়জুর ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা করেছে বলে অনেকটা নিশ্চিত
হওয়া গেছে। কীভাবে জাফর ইকবালের ওপর হামলা করা হবে, এরপর অপর দুই জন এনামুল
ও সুমন ঘটনার পরবর্তী সময়ে কী করবে-সবকিছু আগে থেকেই পরিকল্পনা করা ছিল।
নির্দেশ দাতা জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যরা আ্যপসের মাধ্যমে সব পরিকল্পনা বলে
দিয়েছিল। এ কারণে ফয়জুর গ্রেপ্তার হওয়ার পরপরই এনামুল ও সুমন পালায়। আর
এনামুলের দেয়া খবরে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল তার পিতা-মাতাও। হামলা পেছনে
মদদদাতা গোষ্ঠী কারা সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টায় রয়েছে পুলিশ।
No comments