ভিআইপি বন্দি থাকায় কারাগারে বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণ আপাতত বন্ধ by দীন ইসলাম
ঢাকার
নাজিম উদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে ভিআইপি বন্দি হিসেবে আছেন বিএনপি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা দুইশ’ বছরের পুরনো
ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিনোদনকেন্দ্রে রূপান্তরের
পরিকল্পনা বাস্তবায়ন আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রত্নতত্ত্ব
অধিদপ্তরের কাছে নাজিমউদ্দিন রোডের জেলখানাটি হস্তান্তরও করছে না
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যদিও এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চিঠি চালাচালি
করছে। কিন্তু সর্বশেষ চিঠিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়ে দিয়েছে,
ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এ জায়গাটি তারা নিজেরাই রক্ষণাবেক্ষণ করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের শেষদিকে কেরানীগঞ্জের জেলখানায়
বন্দি স্থানান্তরের পর পরই সিদ্ধান্ত হয় নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারের ১৮
একর জমিতে করা হবে পার্ক, জাদুঘর, কনভেনশন সেন্টার, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর,
উন্মুক্ত নাট্যমঞ্চ ছাড়াও বিনোদনের নানা ব্যবস্থা। এছাড়া ঐতিহাসিক মূল্য
রয়েছে এমন ভবনগুলো সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য গেল বছরের ২৫শে মার্চ
থেকে ২৭শে মার্চ পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হয় সাবেক ঢাকা
কেন্দ্রীয় কারাগার। ওই সময় ১০০ টাকায় দর্শন করা গেছে লাল দালান নামে পরিচিত
পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারটি। এর আগে জেলহত্যা দিবস
উপলক্ষে প্রথম বারের মতো ২০১৬ সালের ২রা নভেম্বর থেকে ৫ই নভেম্বর পর্যন্ত
১০০ টাকা টিকিটের বিনিময়ে কারাগারটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করেছিল
কারা কর্তৃপক্ষ। সূত্রমতে, ১৭৮৮ সালে একটি ক্রিমিনাল ওয়ার্ড চালুর মাধ্যমে
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (পুরনো ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে) যাত্রা শুরু
হয়েছিল। তখন এর ধারণ ক্ষমতা ছিল ৫শ’। সুদীর্ঘ যাত্রাপথে এ কারাগারের রয়েছে
হাজারো স্মৃতি। এটি শুধু কারাগার নয়, এর সঙ্গে জড়িত বাংলাভাষা ও স্বাধীনতা
অর্জনের ইতিহাস। দেশের সর্ববৃহৎ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটি ২০১৬ সালের ২৯শে
সেপ্টেম্বর স্থানান্তরিত হয়েছে কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে। স্থানান্তরের
পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারটি স্থান পায় ইতিহাসের পাতায়।
১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেকের
ঠাঁই হয় এ কারাগারে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন ছাড়াও রাজনৈতিক, সেনা
শাসকবিরোধী আন্দোলন, ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও স্বাধীনতা আন্দোলনের
সময় অনেককেই এ কারাগারে রাখা হয়। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অনেক কারারক্ষী
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তৎকালীন রাজবন্দিদের তথ্য আদান-প্রদান করে মুক্তিযুদ্ধে
অবদান রাখেন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালি কারারক্ষী ও কর্মকর্তারা
যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধ শুরু হলে, কয়েদিখানা খুলে দেয় কারারক্ষীরা। এ কারণে
পাকিস্তানিরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ সব কারাগারে হামলা চালিয়ে
নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর খুলে দেয়া হয় ঢাকা কেন্দ্রীয়
কারাগার। সর্বশেষ একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের দণ্ড কার্যকর হয় এই কারাগারে।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতীয় চার নেতা সৈয়দ
নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম
কামরুজ্জামানকে বন্দি করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। ১৯৭৫ সালের ৩রা
নভেম্বর রাতে এ কারাগারের ভেতরেই এই চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়।
বর্তমানে নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে ?দু’টি জাদুঘর রয়েছে। এর একটি
‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর,’ অপরটি ‘জাতীয় চার নেতার জাদুঘর’। দেশের শ্রেষ্ঠ
স্থপতিদের নকশায় অনেক কিছুই করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলতাফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, ঐতিহাসিক স্থাপনা
হস্তান্তর করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তারা
জানিয়ে দিয়েছে নিজেরাই এসব স্থাপনা সংরক্ষণ করবেন।
No comments