উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের উৎসব
উন্নয়নশীল
দেশের কাতারে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি উদযাপনে উৎসব করেছে
সরকার। গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশে আনন্দ র্যালি ও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে
উৎসব উদযাপন করা হয়। অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে
দেয়া হয় বিপুল সংবর্ধনা। এছাড়া সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের অংশগ্রহণে
রাজধানীতে আনন্দ র্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। সরকারের নানা
অর্জনের তথ্য সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
আনন্দ র্যালিতে অংশ নেন। রাজধানীর নয়টি স্থান থেকে র্যালি গিয়ে শেষ হয়
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। সন্ধ্যায় সেখানে অনুষ্ঠিত হয় জমকালো
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’-এই স্লোগানকে
ধারণ করে আনন্দ র্যালিতে ছিল রং-বেরঙের ব্যানার ও ফেস্টুন। বিভিন্ন রঙের
টি-শার্ট ও টুপি পরে র্যালিতে অংশ নেন অংশগ্রহণকারীরা। ৫৭টি মন্ত্রণালয়,
অধীনস্থ বিভাগ, অধিদপ্তরের পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের
কর্মীরাও শোভাযাত্রায় অংশ নেন। ঢাকঢোল ও বাদ্যের তালে তালে, হাতি-ঘোড়া
নিয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয় বেলা দুইটার পর। বিকাল ৫টার মধ্যেই
শোভাযাত্রা বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গিয়ে শেষ হয়। সন্ধ্যায় সেখানে শুরু হয়
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে জমকালো এই সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় ছোট বোন শেখ রেহানাও
পাশে ছিলেন। স্টেডিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন
উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্রও বড় পর্দায় প্রদর্শিত হয়। এদিকে সকালে বঙ্গবন্ধু
আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দেয়া সংবর্ধনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার যোগ্যতার যে অর্জন এটি এদেশের
মানুষের। সামনে এই অর্জন ধরে রাখতে হবে। তিনি বলেন, এই অর্জন যারা
বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করেছেন তাদের সকলেরই এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্জন।
কাজেই আমি মনে করি বাংলাদেশের জনগণই হচ্ছে মূল শক্তি। তাদেরকে আমি অভিনন্দন
জানাই। আর এই জনগণই পারে সব রকম যোগ্যতা অর্জন করতে। এই অগ্রযাত্রাকে
আমাদের ধরে রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই জনগণের উদ্দেশ্যেই জাতির পিতা বলে গেছেন- বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। দাবায়ে যে রাখতে পারবে না সেটাই আজকে প্রমাণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে থেকে পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছি। কিন্তু যারা কাজ করেছে আমার কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ থেকে শুরু করে আমাদের পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রত্যেকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। তিনি বলেন, যারা কাজ করেন তারা কিন্তু সরকারের মনোভাবটা বুঝতে পারেন। আর সেটা বুঝেই তারা কাজ করেন। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। কাজেই সরকার যখন আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে তখন তারাও অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে বলেই আজকে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৮ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা আর পরমুখাপেক্ষী নই। শতকরা ৯০ ভাগ নিজেদের অর্থায়নে আমরা বাজেট করতে পারি। যে বাজেট অতীতের থেকে চারগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) আয়োজনে অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সভাপতিত্ব করেন। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফজিতা ম্যানুয়েল কাতুয়া ইউতাউ কমন বক্তৃতা করেন। ইউএনডিপি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আসীম স্টেইনারের একটি লিখিত বার্তাও অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়। ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আজম স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ থেকে উত্তরণের সুপারিশপত্রের রেপ্লিকা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন। এ সময় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুশান্ত কুমার মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এরপর একটি ৭০ টাকা মূল্যমানের স্মারক নোট অবমুক্ত করেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল মালেক এবং প্রধান তথ্য কর্মকর্তা বেগম কামরুন্নাহার প্রধানমন্ত্রীর হাতে ৭০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির একটি ফটো অ্যালবাম তুলে দেন।
এরপরই শুরু হয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানোর পালা। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্যগণ, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা, ১৪ দল, সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, পুলিশ বাহিনী, মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিক, শিল্পী, পেশাজীবী সংগঠন, মহিলা সংগঠন, এনজিও প্রতিনিধি দল, ক্রীড়াবিদ, শিশু প্রতিনিধি দল, প্রতিবন্ধী প্রতিনিধি দল, শ্রমজীবী সংগঠন এবং মেধাবী তরুণ সমাজের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গ্রাজুয়েশনে পৃথক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম, এডিবি প্রেসিডেন্ট তাকেহিকে নাকাও, ইউএসএআইডি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মার্ক গ্রিন এবং জাইকার প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা। এছাড়া দেশের খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের পক্ষ থেকেও ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে এই অর্জনের পেছনে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এই অর্জনের কথাগুলো যত সহজে তিনি বললেন সময় কিন্তু তত সহজে যায়নি। অনেক চড়াই-উৎরাই যেমন পার হতে হয়েছে তেমনি গ্রেনেড হামলাসহ তার ওপর বারংবার হত্যা প্রচেষ্টাও করা হয়েছে।
তিনি রূপক অর্থে বলেন, অনেক পথের কাঁটা পায়ে বিঁধিয়েও এগিয়ে যেতে হয়েছে। বারবার আঘাত এসেছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি সেই গ্রেনেড হামলা থেকে শুরু করে বারবার মৃত্যুকে দেখেছি, কিন্তু ভয় পাইনি কখনো। যে দেশে তার বাবা, মা-ভাইদের হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথকে রুদ্ধ করার জন্য খুনিদের ইনডেমনিটি দেয়া হয়, তারা স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়, ভোট চুরি করে এমপি হয়, রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্র্থী হওয়ারও সুযোগ পায়- সেখানে তিনি ভয় কেন পাবেন, পাল্টা প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনে যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশকে গড়ে তুলে তাকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে যান। আজকে সেখান থেকে বাংলাদেশকে তার সরকার উন্নয়শীল দেশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও জাতির পিতা বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নত দেশের পর্যায়ে চলে যেতে পারতো।
প্রধানমন্ত্রী বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, আমি জানি না আমার বাবা আজ বাংলাদেশের মানুষের এই অর্জনগুলো তিনি পরপার থেকে দেখতে পাচ্ছেন কিনা। নিশ্চয়ই বাংলাদেশের এই অর্জনে লাখো শহীদের আত্মার পাশাপাশি তার আত্মাও শান্তি পাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অগ্রযাত্রাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। এই যাত্রাপথ যেন থেমে না যায়। আমরা তো যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো? অন্যের কাছে কেন হাত পেতে চলবো? আমরা যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি সেটা তো আজকে আমরা প্রমাণ করেছি। বাবার কাছ থেকে তার শেখা রাজনীতির মূল শিক্ষাই জনকল্যাণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা। নিজের জন্য নয়, নিজের ভোগ বিলাস নয়, জনগণ যাতে একটু ভালো থাকে, সুখে থাকে, সেটাই লক্ষ্য। যে লক্ষ্য বাস্তবায়নেই তার নিরন্তর পথ চলা। কাজেই যতটুকু অর্জন এর সব কৃতিত্বই বাংলার জনগণের।
জনগণের কাছ থেকে সাড়া না পেলে, তাদের সহযোগিতা না পেলে, তারা যদি ভোট দিয়ে নির্বাচিত না করতো তাহলে তো ক্ষমতায়ও আসতো পারতাম না।
তিনি বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ আমাদের লক্ষ্য মধ্যম আয়ের দেশ, দেশকে যেন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্য মুক্তভাবে গড়ে তুলতে পারি। আর ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করবো। আর সেই সময়ে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলায় তা আমরা উদযাপন করতে পারবো।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘জাতির পিতার আকাঙ্ক্ষা ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। বাংলার মানুষ অন্ন পাবে, বস্ত্র পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে- এটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। তাই বঙ্গবন্ধু সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন সাধারণ মানুষের ভাগ্য ফেরানোর জন্য।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন গত ১৭ই মার্চ ছিল জাতির পিতার ৯৯তম জন্মদিন। ঐদিন আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের এই সুসংবাদটি পাই। জাতির পিতার জন্মদিনে আমাদের জন্য এর চেয়ে বড় উপহার আর কী হতে পারে! ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক আমাদের নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দেয়। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সনদ পেলো।’
শোভাযাত্রায় বর্ণিল রাজধানী: অর্জন উদযাপনকে ঘিরে গতকাল উৎসবমুখর ছিল রাজধানী। সরকারের ৫৭টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধীনস্থ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিকাল ২টার পর থেকে শোভাযাত্রার জন্য নির্ধারিত স্থানে জড়ো হতে থাকেন। তিনটার দিকে শুরু হয় শোভাযাত্রা। এই উদযাপনের দিনে সকাল থেকেই সচিবালয়ে ছিল প্রায় ছুটির আমেজ। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অনেকে মন্ত্রণালয়ে যাননি। দুপুরের আগেই টুপি-টিশার্ট পরে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি শুরু করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শোভাযাত্রায় নৌকার প্রতিকৃতিসহ বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন বহন করতে দেথা যায়। ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ লেখা সবুজ-লাল টি-শার্ট এবং একেক মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ একেক রংয়ের টুপি পরে শোভাযাত্রায় যোগ দেন তারা। প্রায় সব দলের সামনে ছিল ব্যান্ড বাদকের দল। কোনো কোনো দল এগিয়েছে বর্ণিল সাজে নেচে, গেয়ে। কোনো কোনো দলে ছিল হাতি, ঘোড়া, বিশাল আকৃতির নৌকা। মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পাশাপাশি আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে স্বায়ত্তশাসিত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও। এতে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে থেকে শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। শোভাযাত্রা শুরুর আগে তিনি বলেন, মার্চ মাস আমাদের শুভক্ষণ। এ মাসেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এ মাসেই ৭ই মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। আমাদের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। আমরা অর্থনৈতিকভাবে আরো এগিয়ে যাবো। পরে শোভাযাত্রা রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এদিকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশের উদযাপন উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাসেম খান, ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম, এফসিএ, সহ-সভাপতি রিয়াদ হোসেন সহ সকল স্তরের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
স্টেডিয়াম ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা: সাফল্য উদযাপন উৎসব উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানকে ঘিরে এর চারপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ওই এলাকায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। উৎসবকে ঘিরে পুরো স্টেডিয়াম এলাকা ও চারপাশের সড়কে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়। ছিল দুই স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঢোকার ক্ষেত্রে দুই স্থানেই বসানো ছিল আর্চওয়ে। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে দেহ তল্লাশি করা হয়। মাঠের চারপাশে সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের তৎপরতা দেখা গেছে। চারপাশে বসানো হয় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। সেই ক্যামেরা থেকে পুরো এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং করা হয়। মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত দুইপাশের রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই যানবাহনগুলোকে উল্টোপথে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। যানবাহনের পাশাপাশি পথচারীরাও বিকল্পপথে গন্তব্যস্থলে গেছেন। নিরাপত্তার বিষয়ে মতিঝিল জোনের পুলিশের এডিসি শিবলি নোমান মানবজমিনকে জানান, উৎসবকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছিল যাতে উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা নির্বিঘ্নে অংশ নিতে পারেন।
যানবাহন কম, যানজট: এদিকে সরকারের এ কর্মসূচিকে ঘিরে একদিকে ছিল যান চলাচল সীমিত অন্যদিকে তীব্র যানজট। এই দুই কারণে গতকাল দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। বাসে, হেঁটে, রিকশায় এভাবেই গন্তব্য পৌঁছেছে তারা। তবে সময় লেগেছে অন্যান্য দিনের তুলনায় কয়েক ঘণ্টা বেশি। বেলা ১১টার দিকে ফার্মগেট, কাওরান বাজার, বাংলামোটর হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত দেখা যায় এসব সড়কে যানবাহনের চাপ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব সড়কে যান চলাচলও কমে আসে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে যানজটও। ওই সময় শাহবাগ এলাকায় সড়কে যান চলাচল কম হওয়ায় অনেক মানুষকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মিরপুর হয়ে ফার্মগেট থেকে গুলিস্তান ও মতিঝিল গন্তব্যে চলে নিউ ভিশন পরিবহন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কাওরান বাজারে বাসের চালক মানিক বলেন, সকালে রাস্তায় কিছুটা জ্যাম ছিল। এখন রাস্তা ফাঁকা। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বাংলামোটরের এক দোকানদার বলেন, অনুষ্ঠানের কথা ভেবে মনে হয় আগে থেকেই মানুষ সতর্ক হয়ে গেছে। সকালে রাস্তায় ভিড় ছিল, এখন কম। তবে সকালে মিরপুর এলাকায় অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি যানজট ছিল। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক নারী চাকরিজীবী বলেন, তিনি সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মিরপুর ১২ থেকে বাসে ওঠেন গুলিস্তানে যাবেন বলে। কিন্তু বাসে উঠে দেখেন, কিছু দূর যাওয়ার পর বাস যানজটের কারণে থেমে আছে। তিনি আগের বাস পরিবর্তন করে কিছু দূর হেঁটে দেখেন একই অবস্থা। বাসের চালকেরাও তাকে বলেন অনেক যানজটের কারণে বাস ধীরে চলছে। যানজট ঠেলে ফার্মগেট আসার পর বাকি রাস্তা অনেকটা ফাঁকাই পেয়েছেন তিনি। দুপুর ১টার পর থেকে মগবাজার থেকে কাকরাইলের হেয়ার রোড (প্রধান বিচারপতির বাসভবন সংলগ্ন সড়ক), বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেট থেকে মধ্য বাড্ডা, রামপুরা ব্রিজে দেখা যায় তীব্র যানজট। সড়কের একপাশ ও ফুটপাথে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আনন্দ মিছিল। মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত সড়কেও ছিল তীব্র যানজট। মহাখালী থেকে বনানী-কাকলীর দিকে সড়কের দু’পাশেই ছিল যানজট। এ বিষয়ে আফিয়া পিনা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, গাড়ি দিয়ে শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ফার্মগেট যেতে সাধারণত ৩০-৪০ মিনিট লাগে। তবে আজ ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটেও পৌঁছাতে পারিনি। কাকরাইল থেকে নয়াপল্টন মোড়, বিএনপির কার্যালয় সংলগ্ন সড়ক ছিল প্রায় যানবাহনশূন্য। অনেকে প্রাইভেট কার নিয়ে খুব অল্প সময়ে এসব সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। পাশাপাশি এসব সড়কে চলাচলরত বাসগুলো দরজা আটকে দেয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন অনেক যাত্রী। দুপুরে শাহবাগ মোড়, কাওরান বাজার, কাকরাইল মোড় এলাকায় অনেক যাত্রীকে বাসের অপেক্ষায় দেখা গেছে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর পায়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে যেতে দেখা গেছে অনেককেই। কর্মদিবসে কেন রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট থাকা প্রসঙ্গে ঢাকা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের কারণে কয়েকটি সড়ক বন্ধ রয়েছে। এ কারণে সেসব রুটে বাস চলছে না। অন্যান্য রুটে বাস বন্ধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, এই জনগণের উদ্দেশ্যেই জাতির পিতা বলে গেছেন- বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। দাবায়ে যে রাখতে পারবে না সেটাই আজকে প্রমাণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারে থেকে পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছি। কিন্তু যারা কাজ করেছে আমার কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ থেকে শুরু করে আমাদের পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রত্যেকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। তিনি বলেন, যারা কাজ করেন তারা কিন্তু সরকারের মনোভাবটা বুঝতে পারেন। আর সেটা বুঝেই তারা কাজ করেন। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। কাজেই সরকার যখন আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে তখন তারাও অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে বলেই আজকে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৮ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা আর পরমুখাপেক্ষী নই। শতকরা ৯০ ভাগ নিজেদের অর্থায়নে আমরা বাজেট করতে পারি। যে বাজেট অতীতের থেকে চারগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) আয়োজনে অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সভাপতিত্ব করেন। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফজিতা ম্যানুয়েল কাতুয়া ইউতাউ কমন বক্তৃতা করেন। ইউএনডিপি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আসীম স্টেইনারের একটি লিখিত বার্তাও অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়। ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আজম স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ থেকে উত্তরণের সুপারিশপত্রের রেপ্লিকা প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন। এ সময় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুশান্ত কুমার মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এরপর একটি ৭০ টাকা মূল্যমানের স্মারক নোট অবমুক্ত করেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল মালেক এবং প্রধান তথ্য কর্মকর্তা বেগম কামরুন্নাহার প্রধানমন্ত্রীর হাতে ৭০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির একটি ফটো অ্যালবাম তুলে দেন।
এরপরই শুরু হয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানোর পালা। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্যগণ, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা, ১৪ দল, সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, পুলিশ বাহিনী, মুক্তিযোদ্ধা, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিক, শিল্পী, পেশাজীবী সংগঠন, মহিলা সংগঠন, এনজিও প্রতিনিধি দল, ক্রীড়াবিদ, শিশু প্রতিনিধি দল, প্রতিবন্ধী প্রতিনিধি দল, শ্রমজীবী সংগঠন এবং মেধাবী তরুণ সমাজের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গ্রাজুয়েশনে পৃথক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম, এডিবি প্রেসিডেন্ট তাকেহিকে নাকাও, ইউএসএআইডি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মার্ক গ্রিন এবং জাইকার প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা। এছাড়া দেশের খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের পক্ষ থেকেও ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে এই অর্জনের পেছনে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এই অর্জনের কথাগুলো যত সহজে তিনি বললেন সময় কিন্তু তত সহজে যায়নি। অনেক চড়াই-উৎরাই যেমন পার হতে হয়েছে তেমনি গ্রেনেড হামলাসহ তার ওপর বারংবার হত্যা প্রচেষ্টাও করা হয়েছে।
তিনি রূপক অর্থে বলেন, অনেক পথের কাঁটা পায়ে বিঁধিয়েও এগিয়ে যেতে হয়েছে। বারবার আঘাত এসেছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি সেই গ্রেনেড হামলা থেকে শুরু করে বারবার মৃত্যুকে দেখেছি, কিন্তু ভয় পাইনি কখনো। যে দেশে তার বাবা, মা-ভাইদের হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথকে রুদ্ধ করার জন্য খুনিদের ইনডেমনিটি দেয়া হয়, তারা স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়, ভোট চুরি করে এমপি হয়, রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্র্থী হওয়ারও সুযোগ পায়- সেখানে তিনি ভয় কেন পাবেন, পাল্টা প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনে যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশকে গড়ে তুলে তাকে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে যান। আজকে সেখান থেকে বাংলাদেশকে তার সরকার উন্নয়শীল দেশে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও জাতির পিতা বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নত দেশের পর্যায়ে চলে যেতে পারতো।
প্রধানমন্ত্রী বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, আমি জানি না আমার বাবা আজ বাংলাদেশের মানুষের এই অর্জনগুলো তিনি পরপার থেকে দেখতে পাচ্ছেন কিনা। নিশ্চয়ই বাংলাদেশের এই অর্জনে লাখো শহীদের আত্মার পাশাপাশি তার আত্মাও শান্তি পাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অগ্রযাত্রাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। এই যাত্রাপথ যেন থেমে না যায়। আমরা তো যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো? অন্যের কাছে কেন হাত পেতে চলবো? আমরা যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি সেটা তো আজকে আমরা প্রমাণ করেছি। বাবার কাছ থেকে তার শেখা রাজনীতির মূল শিক্ষাই জনকল্যাণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা। নিজের জন্য নয়, নিজের ভোগ বিলাস নয়, জনগণ যাতে একটু ভালো থাকে, সুখে থাকে, সেটাই লক্ষ্য। যে লক্ষ্য বাস্তবায়নেই তার নিরন্তর পথ চলা। কাজেই যতটুকু অর্জন এর সব কৃতিত্বই বাংলার জনগণের।
জনগণের কাছ থেকে সাড়া না পেলে, তাদের সহযোগিতা না পেলে, তারা যদি ভোট দিয়ে নির্বাচিত না করতো তাহলে তো ক্ষমতায়ও আসতো পারতাম না।
তিনি বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ আমাদের লক্ষ্য মধ্যম আয়ের দেশ, দেশকে যেন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্য মুক্তভাবে গড়ে তুলতে পারি। আর ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করবো। আর সেই সময়ে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলায় তা আমরা উদযাপন করতে পারবো।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘জাতির পিতার আকাঙ্ক্ষা ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। বাংলার মানুষ অন্ন পাবে, বস্ত্র পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে- এটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। তাই বঙ্গবন্ধু সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন সাধারণ মানুষের ভাগ্য ফেরানোর জন্য।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন গত ১৭ই মার্চ ছিল জাতির পিতার ৯৯তম জন্মদিন। ঐদিন আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের এই সুসংবাদটি পাই। জাতির পিতার জন্মদিনে আমাদের জন্য এর চেয়ে বড় উপহার আর কী হতে পারে! ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক আমাদের নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দেয়। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সনদ পেলো।’
শোভাযাত্রায় বর্ণিল রাজধানী: অর্জন উদযাপনকে ঘিরে গতকাল উৎসবমুখর ছিল রাজধানী। সরকারের ৫৭টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধীনস্থ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিকাল ২টার পর থেকে শোভাযাত্রার জন্য নির্ধারিত স্থানে জড়ো হতে থাকেন। তিনটার দিকে শুরু হয় শোভাযাত্রা। এই উদযাপনের দিনে সকাল থেকেই সচিবালয়ে ছিল প্রায় ছুটির আমেজ। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের অনেকে মন্ত্রণালয়ে যাননি। দুপুরের আগেই টুপি-টিশার্ট পরে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি শুরু করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শোভাযাত্রায় নৌকার প্রতিকৃতিসহ বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন বহন করতে দেথা যায়। ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ লেখা সবুজ-লাল টি-শার্ট এবং একেক মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ একেক রংয়ের টুপি পরে শোভাযাত্রায় যোগ দেন তারা। প্রায় সব দলের সামনে ছিল ব্যান্ড বাদকের দল। কোনো কোনো দল এগিয়েছে বর্ণিল সাজে নেচে, গেয়ে। কোনো কোনো দলে ছিল হাতি, ঘোড়া, বিশাল আকৃতির নৌকা। মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পাশাপাশি আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে স্বায়ত্তশাসিত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও। এতে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে থেকে শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। শোভাযাত্রা শুরুর আগে তিনি বলেন, মার্চ মাস আমাদের শুভক্ষণ। এ মাসেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এ মাসেই ৭ই মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। আমাদের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। আমরা অর্থনৈতিকভাবে আরো এগিয়ে যাবো। পরে শোভাযাত্রা রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এদিকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশের উদযাপন উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাসেম খান, ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম, এফসিএ, সহ-সভাপতি রিয়াদ হোসেন সহ সকল স্তরের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
স্টেডিয়াম ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা: সাফল্য উদযাপন উৎসব উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানকে ঘিরে এর চারপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ওই এলাকায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। উৎসবকে ঘিরে পুরো স্টেডিয়াম এলাকা ও চারপাশের সড়কে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়। ছিল দুই স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঢোকার ক্ষেত্রে দুই স্থানেই বসানো ছিল আর্চওয়ে। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে দেহ তল্লাশি করা হয়। মাঠের চারপাশে সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের তৎপরতা দেখা গেছে। চারপাশে বসানো হয় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। সেই ক্যামেরা থেকে পুরো এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং করা হয়। মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত দুইপাশের রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই যানবাহনগুলোকে উল্টোপথে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। যানবাহনের পাশাপাশি পথচারীরাও বিকল্পপথে গন্তব্যস্থলে গেছেন। নিরাপত্তার বিষয়ে মতিঝিল জোনের পুলিশের এডিসি শিবলি নোমান মানবজমিনকে জানান, উৎসবকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছিল যাতে উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা নির্বিঘ্নে অংশ নিতে পারেন।
যানবাহন কম, যানজট: এদিকে সরকারের এ কর্মসূচিকে ঘিরে একদিকে ছিল যান চলাচল সীমিত অন্যদিকে তীব্র যানজট। এই দুই কারণে গতকাল দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। বাসে, হেঁটে, রিকশায় এভাবেই গন্তব্য পৌঁছেছে তারা। তবে সময় লেগেছে অন্যান্য দিনের তুলনায় কয়েক ঘণ্টা বেশি। বেলা ১১টার দিকে ফার্মগেট, কাওরান বাজার, বাংলামোটর হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত দেখা যায় এসব সড়কে যানবাহনের চাপ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব সড়কে যান চলাচলও কমে আসে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে যানজটও। ওই সময় শাহবাগ এলাকায় সড়কে যান চলাচল কম হওয়ায় অনেক মানুষকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মিরপুর হয়ে ফার্মগেট থেকে গুলিস্তান ও মতিঝিল গন্তব্যে চলে নিউ ভিশন পরিবহন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কাওরান বাজারে বাসের চালক মানিক বলেন, সকালে রাস্তায় কিছুটা জ্যাম ছিল। এখন রাস্তা ফাঁকা। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বাংলামোটরের এক দোকানদার বলেন, অনুষ্ঠানের কথা ভেবে মনে হয় আগে থেকেই মানুষ সতর্ক হয়ে গেছে। সকালে রাস্তায় ভিড় ছিল, এখন কম। তবে সকালে মিরপুর এলাকায় অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি যানজট ছিল। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক নারী চাকরিজীবী বলেন, তিনি সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মিরপুর ১২ থেকে বাসে ওঠেন গুলিস্তানে যাবেন বলে। কিন্তু বাসে উঠে দেখেন, কিছু দূর যাওয়ার পর বাস যানজটের কারণে থেমে আছে। তিনি আগের বাস পরিবর্তন করে কিছু দূর হেঁটে দেখেন একই অবস্থা। বাসের চালকেরাও তাকে বলেন অনেক যানজটের কারণে বাস ধীরে চলছে। যানজট ঠেলে ফার্মগেট আসার পর বাকি রাস্তা অনেকটা ফাঁকাই পেয়েছেন তিনি। দুপুর ১টার পর থেকে মগবাজার থেকে কাকরাইলের হেয়ার রোড (প্রধান বিচারপতির বাসভবন সংলগ্ন সড়ক), বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেট থেকে মধ্য বাড্ডা, রামপুরা ব্রিজে দেখা যায় তীব্র যানজট। সড়কের একপাশ ও ফুটপাথে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আনন্দ মিছিল। মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত সড়কেও ছিল তীব্র যানজট। মহাখালী থেকে বনানী-কাকলীর দিকে সড়কের দু’পাশেই ছিল যানজট। এ বিষয়ে আফিয়া পিনা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, গাড়ি দিয়ে শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ফার্মগেট যেতে সাধারণত ৩০-৪০ মিনিট লাগে। তবে আজ ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটেও পৌঁছাতে পারিনি। কাকরাইল থেকে নয়াপল্টন মোড়, বিএনপির কার্যালয় সংলগ্ন সড়ক ছিল প্রায় যানবাহনশূন্য। অনেকে প্রাইভেট কার নিয়ে খুব অল্প সময়ে এসব সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। পাশাপাশি এসব সড়কে চলাচলরত বাসগুলো দরজা আটকে দেয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন অনেক যাত্রী। দুপুরে শাহবাগ মোড়, কাওরান বাজার, কাকরাইল মোড় এলাকায় অনেক যাত্রীকে বাসের অপেক্ষায় দেখা গেছে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর পায়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে যেতে দেখা গেছে অনেককেই। কর্মদিবসে কেন রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট থাকা প্রসঙ্গে ঢাকা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের কারণে কয়েকটি সড়ক বন্ধ রয়েছে। এ কারণে সেসব রুটে বাস চলছে না। অন্যান্য রুটে বাস বন্ধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
No comments