আগস্টেই রোহিঙ্গাশূন্য হবে মিয়ানমার?
আগামী
আগস্টের মধ্যে মিয়ানমার রোহিঙ্গাশূন্য হবে কিনা, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী আরাকানে নৃশংস অভিযান অব্যাহত রাখার মধ্যে গত
নভেম্বরে প্রত্যাবাসন চুক্তি সইয়ের পরে নতুন করে ৭০ হাজার রোহিঙ্গা
বাংলাদেশে ঢুকেছে। বর্তমানে আরাকানে প্রায় ৭৯ হাজার রোহিঙ্গা অবশিষ্ট আছে।
এর ভিত্তিতে বলা যায়, পাঁচ মাসে ৭০ হাজার এলে আগামী ৫ বা ৬ মাসে বাকি ৭৯
হাজার বাংলাদেশেই পালিয়ে আসতে পারে। বর্মী সামরিক বাহিনীর একটি নতুন
রিপোর্ট নিশ্চিত করেছে যে, ২০১৬ সালে আরাকানে ৭৬৭০৩৮ জন রোহিঙ্গা ছিল। আর
জাতিসংঘ বলেছে, ৬,৮৮,০০০ বাংলাদেশেই এসেছে। গতকাল প্রয়াত রুশ নেতা ট্রটস্কি
অনুসারী সমাজতন্ত্রীদের দ্বারা পরিচালিত ওয়ার্ল্ড সোসালিস্ট ওয়েবসাইটে
(ডব্লিউএসডব্লিউএস) প্রকাশিত এক রিপোর্টে ওই তথ্যগুলো বেরিয়েছে।
ডব্লিউএসডব্লিউএস-এর ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী বর্মীরা চাপের মুখে ওই চুক্তি সই করেছে। কিন্তু তাতে তারা জাতিসংঘ বা তার কোনো সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করেনি। মিয়ানমার আগামী দুই বছর মেয়াদে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ থেকে গ্রহণ করবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। ২০১২ সাল থেকে গত আগস্টে ক্র্যাকডাউন শুরুর মধ্যবর্তী সময়ে অধিকাংশ রোহিঙ্গা আরাকান ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সাময়িকী ইরাবতীর এক রিপোর্টে উল্লেখ করে পশ্চিম মিয়ানমারের আরাকান থেকে প্রায় ৯০% রোহিঙ্গা পালিয়ে গেছে। এরমধ্যে যারা নিহত, নিখোঁজ কিংবা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা অন্তর্ভুক্ত নেই।
এদিকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত সাধারণ প্রশাসনিক বিভাগ (গ্যাব) রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০১৬ সালে রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ছিল সাত লাখ ৬৭ হাজার ৩৮ জন এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৬ লাখ ৮৮০ হাজার উল্লেখ করা হয়েছে। অধিকাংশ রোহিঙ্গাদের বিদেশি কিংবা বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দশকের পর দশক ধরে তারা রাখাইনে বসবাস করে আসছিল। রোহিঙ্গারা সরকারের বর্ণবাদী নীতির শিকার। তাদের পূর্বসূরিদের অনেকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আরাকানে বসবাস করলেও তারা এখন বলছে তারা বার্মার নাগরিক নয় এবং বার্মার উপর তাদের কোনো অধিকার নেই।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের চাপ থেকে নিজেদের বাঁচাতে সুচির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি প্রতারণার কৌশল নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এই ঘটনায় কিছু দৃশ্যপট বদলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা গণতন্ত্রের আইকন হিসেবে অং সান সুচির প্রশংসা করে চলছিল, সেটিতে একটি ছন্দপতন ঘটেছে মাত্র। বিশ্বব্যাপী মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্মম নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে উঠেছে। গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশ নীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোঘারিনি বর্মী জ্যেষ্ঠ সামরিক নেতাদের একটি তালিকা তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি চাইছেন যে, ওই তালিকাভুক্ত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক। এমনকি তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার সুপারিশ করেন তিনি। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এটাও ভাবছে যে, ১৯৯০ সালে মিয়ানমারের উপর আরোপিত একটি অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, যার মেয়াদ এপ্রিলে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে তা আরো বর্ধিত করা। গত মধ্য ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি সতর্ক করেছেন যে, অং সান সুচি যদি সামরিক নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে তাকে বিপদের সম্মুখীন হতে হবে।
যদিও পর্যবেক্ষকরা মনে করেন মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ লোক দেখানো। চীনের দিকে সুচি যাতে বেশি ঝুঁকে না পড়ে সেদিকে তাদের মনোযোগ রয়েছে। গত ৭ই মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হলোকাস্ট মিউজিয়ামের সুচিকে দেয়া ২০১২ সালের একটি পুরস্কার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। একই দিনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান জায়েদ রাদ হোসেন মিয়ানমারকে ফৌজদারি অপরাধের দায়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে একটি নতুন কমিটি গঠনের আহ্বান জানান।
গত ১৩ই মার্চ ওয়াশিংটন পোস্টের এক রিপোর্টে বলেছে, বিজনেস টাইকুনদের নেপিডোতে ডাকা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার তালিকার মধ্যে যারা অন্তর্ভুক্ত এবং সামরিক জান্তার পুরনো দালাল হিসেবে যারা পরিচিত, তাদেরকে বর্মী রাজধানীতে ডাকা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, রাখাইনে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন ও অবকাঠামো সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। গত ১২ই মার্চ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, নতুন স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে, রোহিঙ্গাদের জন্য আরাকানে সামরিক বাহিনী একটি ‘‘নতুন পদ্ধতি’’ আরোপ করেছে। যেসব গ্রামে থেকে রোহিঙ্গারা বিতাড়িত হয়েছে, যেসব গ্রামে গণহত্যা চালানো হয়েছে, সেগুলোকে নতুন করে ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে। এমন ‘‘উন্নয়ন’’ চলছে, রোহিঙ্গারা ফিরে আসতে যাতে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করে।
গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক রিপোর্টেও বলা হয়েছে, স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে দেখা যাচ্ছে গত নভেম্বর থেকে বিভিন্ন ধরনের কাঠামো ও ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলছে। তিনটি বৃহৎ সামরিক ঘাঁটি তৈরি করা হচ্ছে ধ্বংসস্তূপের উপরে। এপর্যন্ত ৫৫টি গ্রামে ‘পরিচ্ছন্নতা’ চলেছে। গত ২৫শে আগস্ট থেকে যে ৩৬২ গ্রামকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করা হয়েছে তার অন্তর্ভুক্ত ওই ৫৫টি গ্রাম। ওই রিপোর্টে আরো বলা হয় অন্তত দুটি গ্রাম যার কোনো ক্ষতি আগে হয়নি তাও সম্প্রতি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
সরকার দাবি করছে যে, প্রত্যাখ্যাত রোহিঙ্গাদের এসব কেন্দ্রে এনে রাখা হবে, যতদিন না তাদের জন্য বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে সামরিক বাহিনী গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার কাজে ব্যস্ত রয়েছে। কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা ওই প্রত্যাবাসন চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখিয়েছে। এই প্রতিবাদকারীদের একজন হলেন ইলিয়াস। তিনি ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘আমরা প্রয়োজনে বাংলাদেশি হত্যার সম্মুখীন হবো। কারণ এখানে আমরা অন্তত মুসলিম রীতি অনুযায়ী একটি জানাজা পাবো।’
ডব্লিউএসডব্লিউএস রিপোর্ট আরো বলেছে, নতুন সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে দেখা যাচ্ছে যে, রোহিঙ্গা গণকবর আবিষ্কৃত হচ্ছে। মার্কিন সংবাদ সংস্থা এপি জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে একটি বড় ধরনের গণকবরের সন্ধান পেয়েছে। সেটি গু দার পিয়ান গ্রামে অবস্থিত। ভিডিও থেকে দেখা যাচ্ছে অনেক মানুষের অর্ধেক দেহ সমাহিত করা হয়েছে। তাদের দেহের বাকি অংশ বুলেট অথবা এসিড দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। তাদের পরিচয় নিশ্চিহ্ন করে দিতেই এসব করা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে ম্যাডিসন স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স বলেছে, ২৫শে আগস্ট থেকে পরের ৩১ দিনে ৭৩০ শিশুসহ অন্তত ৬৭০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে।
শুধু উত্তর আরাকানেই নয়, সিটিউতেও রোহিঙ্গা নিধন ঘটেছে। টাইম ম্যাগাজিন ১৩ই ফেব্রুয়ারি এক রিপোর্টে বলেছে, রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা রেঙ্গুনেও চলছে।
ডব্লিউএসডব্লিউএস-এর ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী বর্মীরা চাপের মুখে ওই চুক্তি সই করেছে। কিন্তু তাতে তারা জাতিসংঘ বা তার কোনো সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করেনি। মিয়ানমার আগামী দুই বছর মেয়াদে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ থেকে গ্রহণ করবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। ২০১২ সাল থেকে গত আগস্টে ক্র্যাকডাউন শুরুর মধ্যবর্তী সময়ে অধিকাংশ রোহিঙ্গা আরাকান ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সাময়িকী ইরাবতীর এক রিপোর্টে উল্লেখ করে পশ্চিম মিয়ানমারের আরাকান থেকে প্রায় ৯০% রোহিঙ্গা পালিয়ে গেছে। এরমধ্যে যারা নিহত, নিখোঁজ কিংবা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা অন্তর্ভুক্ত নেই।
এদিকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত সাধারণ প্রশাসনিক বিভাগ (গ্যাব) রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০১৬ সালে রাখাইনে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ছিল সাত লাখ ৬৭ হাজার ৩৮ জন এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৬ লাখ ৮৮০ হাজার উল্লেখ করা হয়েছে। অধিকাংশ রোহিঙ্গাদের বিদেশি কিংবা বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দশকের পর দশক ধরে তারা রাখাইনে বসবাস করে আসছিল। রোহিঙ্গারা সরকারের বর্ণবাদী নীতির শিকার। তাদের পূর্বসূরিদের অনেকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আরাকানে বসবাস করলেও তারা এখন বলছে তারা বার্মার নাগরিক নয় এবং বার্মার উপর তাদের কোনো অধিকার নেই।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের চাপ থেকে নিজেদের বাঁচাতে সুচির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি প্রতারণার কৌশল নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এই ঘটনায় কিছু দৃশ্যপট বদলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা গণতন্ত্রের আইকন হিসেবে অং সান সুচির প্রশংসা করে চলছিল, সেটিতে একটি ছন্দপতন ঘটেছে মাত্র। বিশ্বব্যাপী মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্মম নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে উঠেছে। গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশ নীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোঘারিনি বর্মী জ্যেষ্ঠ সামরিক নেতাদের একটি তালিকা তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি চাইছেন যে, ওই তালিকাভুক্ত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক। এমনকি তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার সুপারিশ করেন তিনি। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এটাও ভাবছে যে, ১৯৯০ সালে মিয়ানমারের উপর আরোপিত একটি অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, যার মেয়াদ এপ্রিলে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে তা আরো বর্ধিত করা। গত মধ্য ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি সতর্ক করেছেন যে, অং সান সুচি যদি সামরিক নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে তাকে বিপদের সম্মুখীন হতে হবে।
যদিও পর্যবেক্ষকরা মনে করেন মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ লোক দেখানো। চীনের দিকে সুচি যাতে বেশি ঝুঁকে না পড়ে সেদিকে তাদের মনোযোগ রয়েছে। গত ৭ই মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হলোকাস্ট মিউজিয়ামের সুচিকে দেয়া ২০১২ সালের একটি পুরস্কার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। একই দিনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান জায়েদ রাদ হোসেন মিয়ানমারকে ফৌজদারি অপরাধের দায়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে একটি নতুন কমিটি গঠনের আহ্বান জানান।
গত ১৩ই মার্চ ওয়াশিংটন পোস্টের এক রিপোর্টে বলেছে, বিজনেস টাইকুনদের নেপিডোতে ডাকা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার তালিকার মধ্যে যারা অন্তর্ভুক্ত এবং সামরিক জান্তার পুরনো দালাল হিসেবে যারা পরিচিত, তাদেরকে বর্মী রাজধানীতে ডাকা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, রাখাইনে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন ও অবকাঠামো সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। গত ১২ই মার্চ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, নতুন স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে, রোহিঙ্গাদের জন্য আরাকানে সামরিক বাহিনী একটি ‘‘নতুন পদ্ধতি’’ আরোপ করেছে। যেসব গ্রামে থেকে রোহিঙ্গারা বিতাড়িত হয়েছে, যেসব গ্রামে গণহত্যা চালানো হয়েছে, সেগুলোকে নতুন করে ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে। এমন ‘‘উন্নয়ন’’ চলছে, রোহিঙ্গারা ফিরে আসতে যাতে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করে।
গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক রিপোর্টেও বলা হয়েছে, স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে দেখা যাচ্ছে গত নভেম্বর থেকে বিভিন্ন ধরনের কাঠামো ও ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলছে। তিনটি বৃহৎ সামরিক ঘাঁটি তৈরি করা হচ্ছে ধ্বংসস্তূপের উপরে। এপর্যন্ত ৫৫টি গ্রামে ‘পরিচ্ছন্নতা’ চলেছে। গত ২৫শে আগস্ট থেকে যে ৩৬২ গ্রামকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করা হয়েছে তার অন্তর্ভুক্ত ওই ৫৫টি গ্রাম। ওই রিপোর্টে আরো বলা হয় অন্তত দুটি গ্রাম যার কোনো ক্ষতি আগে হয়নি তাও সম্প্রতি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
সরকার দাবি করছে যে, প্রত্যাখ্যাত রোহিঙ্গাদের এসব কেন্দ্রে এনে রাখা হবে, যতদিন না তাদের জন্য বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে সামরিক বাহিনী গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার কাজে ব্যস্ত রয়েছে। কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা ওই প্রত্যাবাসন চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখিয়েছে। এই প্রতিবাদকারীদের একজন হলেন ইলিয়াস। তিনি ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘আমরা প্রয়োজনে বাংলাদেশি হত্যার সম্মুখীন হবো। কারণ এখানে আমরা অন্তত মুসলিম রীতি অনুযায়ী একটি জানাজা পাবো।’
ডব্লিউএসডব্লিউএস রিপোর্ট আরো বলেছে, নতুন সাক্ষ্যপ্রমাণ থেকে দেখা যাচ্ছে যে, রোহিঙ্গা গণকবর আবিষ্কৃত হচ্ছে। মার্কিন সংবাদ সংস্থা এপি জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে একটি বড় ধরনের গণকবরের সন্ধান পেয়েছে। সেটি গু দার পিয়ান গ্রামে অবস্থিত। ভিডিও থেকে দেখা যাচ্ছে অনেক মানুষের অর্ধেক দেহ সমাহিত করা হয়েছে। তাদের দেহের বাকি অংশ বুলেট অথবা এসিড দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। তাদের পরিচয় নিশ্চিহ্ন করে দিতেই এসব করা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে ম্যাডিসন স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স বলেছে, ২৫শে আগস্ট থেকে পরের ৩১ দিনে ৭৩০ শিশুসহ অন্তত ৬৭০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে।
শুধু উত্তর আরাকানেই নয়, সিটিউতেও রোহিঙ্গা নিধন ঘটেছে। টাইম ম্যাগাজিন ১৩ই ফেব্রুয়ারি এক রিপোর্টে বলেছে, রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা রেঙ্গুনেও চলছে।
No comments