রায়ের কপি মিলেছে, মিসঅ্যাপ্রোপ্রিয়েশন সব সময় প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণের দরকার নেই
জিয়া
অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে । গতকাল বিকাল ৪টা
২০ মিনিটে এই মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি হাতে পান বিএনপি চেয়ারপারসন
বেগম খালেদা জিয়ার ও দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবীরা। আদালত রায়ের
পর্যবেক্ষণে বলেছেন, এই মামলার ৬ আসামির প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে
লাভবান হয়েছে মর্মে অত্র আদালত মনে করেন। তারা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধী
হিসেবে গণ্য হবেন। আদালত আরো বলেন, অর্থনৈতিক দুর্নীতি রাষ্ট্রের অর্থনীতির
স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করে এবং এর বাজে প্রভাব সমাজের প্রতিটি স্তরে
সংক্রমিত হয়। এদিকে, খালেদা জিয়ার আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, আজই এ রায়ের
বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান।
রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালতের বিচারক। একই সঙ্গে মামলার অন্য পাঁচ আসামি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ জনের প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়। রায়ে আদালত উল্লেখ করেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলেও খালেদা জিয়ার সামাজিক ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। রায়ের পরই খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ঘটনাপুঞ্জ প্রমাণ করে যে, উক্ত এতিম তহবিলের টাকার উপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এনট্রাস্টমেন্ট ছিল এবং তিনি যেভাবে ওই টাকা ব্যয় করা উচিত ছিল তা না করে নিজেই ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়া অথবা অন্য আসামিদের লাভবান করা বা ওই টাকা আত্মসাৎ করার কাজে সহায়তা করায় অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন। আদালত বলেন, মিসঅ্যাপ্রোপ্রিয়েশন সবসময় প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য দ্বারা প্রসিকিউশনকে প্রমাণ করা দরকার নেই। এটি পরিবেশ পরিস্থিতির উপর অনেকখানি নির্ভর করে।
আদালত আরো বলেন যে, নথি পর্যালোচনায় এই আদালত মনে করে যে, দণ্ডবিধির ৪০৫ ধারার উপাদানসমূহ এই মামলায় বিদ্যমান রয়েছে। ওই ধারার উপাদান প্রমাণিত হলে একই আইনের ৪০৯ ধারার বিধান মোতাবেক শাস্তি দেয়ার সুযোগ রয়েছে।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারার বিধান পর্যালোচনায় লক্ষ্য করা যায় যে, এই ধারায় কোনো ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করতে হলে তাকে সরকারি কর্মচারী, ব্যাংকার, মার্চেন্ট, এজেন্ট হতে হয়। পূর্বেই লক্ষ্য করা গেছে যে, এই মামলার আসামি বেগম খালেদা জিয়া এবং কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে কাজী কামাল ঘটনার সময় জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। জাতীয় সংসদ সদস্যগণ বিদ্যমান আইন অনুসারে সরকারি কর্মচারী হিসেবে গণ্য হন। আলোচনায় এটিও লক্ষ্য করা গেছে যে আসামি তারেক রহমান এবং মমিনুর রহমান প্রাইভেট ট্রাস্টে ট্রাস্টি হলেও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুসারে ট্রাস্টিগণ সরকারি কর্মচারী হিসেবে গণ্য হন। আসামি শরফুদ্দিন আহমেদ মার্চেন্ট বা এজেন্ট হিসেবে গণ্য হন। ফলে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারার বিধান প্রয়োগযোগ্য হবে বলে এই আদালত মনে করে। আদালত বলেন, নথি পর্যালোচনায় এটা প্রতীয়মান হয় যে, এই মামলার আসামিগণ কর্তৃক পরস্পর যোগসাজশে সরকারি এতিম তহবিলের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। পরিমাণের দিক থেকে এর বর্তমান বাজারমূল্যের অধিক না হলেও তর্কিত ঘটনার সময়ে ওই টাকার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। আসামিগণের মধ্যে আসামি বেগম খালেদা জিয়া ঐ সময়ে এ দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আসামি কাজী সালিমুল হক ওরফে কাজী কামাল সংসদ সদস্য ছিলেন। আসামি ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী শীর্ষ কর্মকর্তা হয়ে আসামি খালেদা জিয়াকে সরকারি এতিম তহবিলে ব্যাংক হিসাব খুলতে সহায়তা করা এবং পরবর্তীতে ওই হিসাব থেকে দুইটি প্রাইভেট ট্রাস্টের অনুকূলে সরকারি অর্থের চেক বেআইনিভাবে প্রদান করায় বর্ণিত দুইজন আসামিকে অপরাধ করতে সহায়তা করার শামিল। আসামি তারেক রহমান, মুমিনুর রহমান এবং শরফুদ্দিন আহমেদ কৌশল অবলম্বন করে সরকারি এতিম তহবিলের টাকা একে অপরের সহযোগিতায় আত্মসাৎ করতে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন। এর মাধ্যমে এই মামলার ছয়জন আসামির প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে লাভবান হয়েছে মর্মে আদালত মনে করেন। তারা (আসামিরা) অর্থনৈতিক অপরাধী হিসেবেও গণ্য হবেন। আদালত আরো বলেন, অর্থনৈতিক দুর্নীতি রাষ্ট্রের অর্থনীতির স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করে এবং এর বাজে প্রভাব সমাজের প্রতিটি স্তরে সংক্রমিত হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে আদালত ১১টি বিবেচ্য বিষয় বিবেচনায় নিয়েছেন।
১. আসামি বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১-১৯৯৬ সালের মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীকে দিয়ে ১৯৯১ সালের ২রা জুন তারিখে ‘প্রাইম মিনিস্টার্স অরফানেজ ফান্ড’ নামীয় সোনালী ব্যাংক রমনা শাখায় ৫৪১৬ নং চলতি হিসাবটি খুলেছিলেন কি না?
২. ওই হিসাবে ১৯৯১ সালের ৯ই জুন তারিখে ইউনাইটেড সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক হতে ডিডি নং-১৫৩৩৩৬৭৯৭০ মূলে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ইউএস ডলার জমা হয় কি না?
৩. উক্ত ১২ লাখ ৫৫ হাজার ইউএস ডলারের সমপরিমাণ বাংলাদেশি টাকা ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের নামে মেয়াদি জমা রশিদ (এফডিআর) নং-৯৮৪১১২ এ জমা করা হয়েছিল কি না এবং ওই টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৪ কোটি ৬৬ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ টাকায় উন্নীত হয় কি না?
৪. উক্ত এফডিআর এর ৪ কোটি ৬৬ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ টাকা পুনরায় ৫৪১৬ নং চলতি হিসাবে জমা রাখা হয় কি না?
৫. প্রধানমন্ত্রীর বর্ণিত এতিম তহবিল থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এর নামীয় এসটিডি-৭নং হিসাবে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫ শত টাকা স্থানান্তরিত হয় কিনা বা ঐ এসটিডি নং-৭নং হিসাব থেকে আসামি তারেক রহমান ও মমিনুর রহমান অবৈধভাবে টাকা প্রাইম ব্যাংকে স্থানান্তর করেছেন কি না?
৬. আসামি কাজী সালিমুল হক ওরফে কাজী কামাল প্রাইম ব্যাংক, গুলশান শাখা থেকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিউ ইস্কাটন শাখায় টাকা স্থানান্তর করেন কি না?
৭. আসামি কাজী সালিমুল হক ওরফে কাজী কামাল অবৈধভাবে উক্ত টাকা আসামি শরফুদ্দীন আহমেদ এর ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর করতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেন কি না?
৮. আসামি বেগম খালেদা জিয়াসহ মামলার অন্যান্য আসামিগণ পরস্পর সহযোগিতায় অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে এবং অন্যকে অবৈধভাবে লাভবান করার অসৎ মানসে প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের অর্থ ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে স্থানান্তর করার কাজে সহায়তা করেন কি না এবং এভাবে উক্ত তহবিলের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাৎ করা হয় কি না?
৯. আসামিগণ দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন কি না?
১০. প্রসিকিউশনপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে সক্ষম হয়েছে কি না?
১১. আসামিগণ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য কি না?
গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান।
রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালতের বিচারক। একই সঙ্গে মামলার অন্য পাঁচ আসামি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ জনের প্রত্যেককে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়। রায়ে আদালত উল্লেখ করেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলেও খালেদা জিয়ার সামাজিক ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। রায়ের পরই খালেদাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ঘটনাপুঞ্জ প্রমাণ করে যে, উক্ত এতিম তহবিলের টাকার উপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এনট্রাস্টমেন্ট ছিল এবং তিনি যেভাবে ওই টাকা ব্যয় করা উচিত ছিল তা না করে নিজেই ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়া অথবা অন্য আসামিদের লাভবান করা বা ওই টাকা আত্মসাৎ করার কাজে সহায়তা করায় অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন। আদালত বলেন, মিসঅ্যাপ্রোপ্রিয়েশন সবসময় প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য দ্বারা প্রসিকিউশনকে প্রমাণ করা দরকার নেই। এটি পরিবেশ পরিস্থিতির উপর অনেকখানি নির্ভর করে।
আদালত আরো বলেন যে, নথি পর্যালোচনায় এই আদালত মনে করে যে, দণ্ডবিধির ৪০৫ ধারার উপাদানসমূহ এই মামলায় বিদ্যমান রয়েছে। ওই ধারার উপাদান প্রমাণিত হলে একই আইনের ৪০৯ ধারার বিধান মোতাবেক শাস্তি দেয়ার সুযোগ রয়েছে।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারার বিধান পর্যালোচনায় লক্ষ্য করা যায় যে, এই ধারায় কোনো ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করতে হলে তাকে সরকারি কর্মচারী, ব্যাংকার, মার্চেন্ট, এজেন্ট হতে হয়। পূর্বেই লক্ষ্য করা গেছে যে, এই মামলার আসামি বেগম খালেদা জিয়া এবং কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে কাজী কামাল ঘটনার সময় জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। জাতীয় সংসদ সদস্যগণ বিদ্যমান আইন অনুসারে সরকারি কর্মচারী হিসেবে গণ্য হন। আলোচনায় এটিও লক্ষ্য করা গেছে যে আসামি তারেক রহমান এবং মমিনুর রহমান প্রাইভেট ট্রাস্টে ট্রাস্টি হলেও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুসারে ট্রাস্টিগণ সরকারি কর্মচারী হিসেবে গণ্য হন। আসামি শরফুদ্দিন আহমেদ মার্চেন্ট বা এজেন্ট হিসেবে গণ্য হন। ফলে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারার বিধান প্রয়োগযোগ্য হবে বলে এই আদালত মনে করে। আদালত বলেন, নথি পর্যালোচনায় এটা প্রতীয়মান হয় যে, এই মামলার আসামিগণ কর্তৃক পরস্পর যোগসাজশে সরকারি এতিম তহবিলের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। পরিমাণের দিক থেকে এর বর্তমান বাজারমূল্যের অধিক না হলেও তর্কিত ঘটনার সময়ে ওই টাকার পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। আসামিগণের মধ্যে আসামি বেগম খালেদা জিয়া ঐ সময়ে এ দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আসামি কাজী সালিমুল হক ওরফে কাজী কামাল সংসদ সদস্য ছিলেন। আসামি ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী শীর্ষ কর্মকর্তা হয়ে আসামি খালেদা জিয়াকে সরকারি এতিম তহবিলে ব্যাংক হিসাব খুলতে সহায়তা করা এবং পরবর্তীতে ওই হিসাব থেকে দুইটি প্রাইভেট ট্রাস্টের অনুকূলে সরকারি অর্থের চেক বেআইনিভাবে প্রদান করায় বর্ণিত দুইজন আসামিকে অপরাধ করতে সহায়তা করার শামিল। আসামি তারেক রহমান, মুমিনুর রহমান এবং শরফুদ্দিন আহমেদ কৌশল অবলম্বন করে সরকারি এতিম তহবিলের টাকা একে অপরের সহযোগিতায় আত্মসাৎ করতে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন। এর মাধ্যমে এই মামলার ছয়জন আসামির প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে লাভবান হয়েছে মর্মে আদালত মনে করেন। তারা (আসামিরা) অর্থনৈতিক অপরাধী হিসেবেও গণ্য হবেন। আদালত আরো বলেন, অর্থনৈতিক দুর্নীতি রাষ্ট্রের অর্থনীতির স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করে এবং এর বাজে প্রভাব সমাজের প্রতিটি স্তরে সংক্রমিত হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে আদালত ১১টি বিবেচ্য বিষয় বিবেচনায় নিয়েছেন।
১. আসামি বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১-১৯৯৬ সালের মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকীকে দিয়ে ১৯৯১ সালের ২রা জুন তারিখে ‘প্রাইম মিনিস্টার্স অরফানেজ ফান্ড’ নামীয় সোনালী ব্যাংক রমনা শাখায় ৫৪১৬ নং চলতি হিসাবটি খুলেছিলেন কি না?
২. ওই হিসাবে ১৯৯১ সালের ৯ই জুন তারিখে ইউনাইটেড সৌদি কমার্শিয়াল ব্যাংক হতে ডিডি নং-১৫৩৩৩৬৭৯৭০ মূলে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ইউএস ডলার জমা হয় কি না?
৩. উক্ত ১২ লাখ ৫৫ হাজার ইউএস ডলারের সমপরিমাণ বাংলাদেশি টাকা ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের নামে মেয়াদি জমা রশিদ (এফডিআর) নং-৯৮৪১১২ এ জমা করা হয়েছিল কি না এবং ওই টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৪ কোটি ৬৬ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ টাকায় উন্নীত হয় কি না?
৪. উক্ত এফডিআর এর ৪ কোটি ৬৬ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ টাকা পুনরায় ৫৪১৬ নং চলতি হিসাবে জমা রাখা হয় কি না?
৫. প্রধানমন্ত্রীর বর্ণিত এতিম তহবিল থেকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এর নামীয় এসটিডি-৭নং হিসাবে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫ শত টাকা স্থানান্তরিত হয় কিনা বা ঐ এসটিডি নং-৭নং হিসাব থেকে আসামি তারেক রহমান ও মমিনুর রহমান অবৈধভাবে টাকা প্রাইম ব্যাংকে স্থানান্তর করেছেন কি না?
৬. আসামি কাজী সালিমুল হক ওরফে কাজী কামাল প্রাইম ব্যাংক, গুলশান শাখা থেকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিউ ইস্কাটন শাখায় টাকা স্থানান্তর করেন কি না?
৭. আসামি কাজী সালিমুল হক ওরফে কাজী কামাল অবৈধভাবে উক্ত টাকা আসামি শরফুদ্দীন আহমেদ এর ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর করতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেন কি না?
৮. আসামি বেগম খালেদা জিয়াসহ মামলার অন্যান্য আসামিগণ পরস্পর সহযোগিতায় অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে এবং অন্যকে অবৈধভাবে লাভবান করার অসৎ মানসে প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের অর্থ ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে স্থানান্তর করার কাজে সহায়তা করেন কি না এবং এভাবে উক্ত তহবিলের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা আত্মসাৎ করা হয় কি না?
৯. আসামিগণ দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন কি না?
১০. প্রসিকিউশনপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে সক্ষম হয়েছে কি না?
১১. আসামিগণ শাস্তি পাওয়ার যোগ্য কি না?
No comments