বড় অঙ্কের চেক ফিরিয়ে দিচ্ছে ব্যাংক
সাম্প্রতিক
সময় দেশের ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের সংকটে বড় অঙ্কের চেক ফিরিয়ে দেয়ার
পরিমাণ বেড়েছে। আমানতকারীরা চেক দিয়েও সময়মতো টাকা পাচ্ছেন না। তহবিলের
অভাবে চেক বাউন্সও হচ্ছে। বিশেষ করে বড় বড় গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এ রকম হচ্ছে
বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের ঋণের অর্থ ছাড় করতেও
সময়মতো দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া বেশকিছু ব্যাংকে আমানতকারীর
সংখ্যাও কমছে।
এফডিআর ভাঙানোর হিড়িক পড়েছে এসব ব্যাংকে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ব্যাংকাররা। গতকাল ব্যাংকপাড়া নামে খ্যাত মতিঝিলের বিভিন্ন নতুন ও পুরাতন ব্যাংকের শাখায় সরজমিন ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। রাজধানীর বাইরের শাখারও একই চিত্র বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ব্যাংক কর্মকর্তারা আমানত ফেরত দিতে গড়িমসি করছে। সঠিকভাবে লেনদেন করা যাচ্ছে না। তবে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, এ্যাকাউন্ট ক্লোজ আর ওপেনিংয়ের মধ্যেই তাদের সময় কাটছে। তারা স্বীকার করেছেন, সংকুচিত হয়ে আসছে লেনদেন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, গণমাধ্যমে যতটুকু আসছে, বাস্তব চিত্র আরো ভয়াবহ। শেয়ার মার্কেটের মতো বিপর্যয় আসতে পারে। ফলে ব্যাংক থেকে ব্যাপকভাবে টাকা উত্তোলনের হিড়িক পড়তে পারে। এ ছাড়া গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলোতে আমানতের পরিমাণ কমাসহ খেলাপি ঋণ আদায় না হওয়ায় ব্যাংকগুলোতে এই অর্থ সংকট বলে মনে করেন ব্যাংকিং খাতের সংশ্লিষ্টরা। মাস ছয়েক আগেও দেশের ব্যাংকগুলোতে দেখা গেছে অতিরিক্ত তারল্য। কিন্তু কয়েক মাসের ব্যবধানে সেই চিত্র সম্পূর্ণ উল্টে গেছে।
জানা গেছে, আস্থার সংকট শুরু হয় বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা দিয়ে। এই ব্যাংকে রাখা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না আমানতকারীরা। জলবায়ু তহবিল ৫০৮ কোটি টাকা ফেরত না পাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানায় টিআইবি। এরপরই বেসরকারি ব্যাংক থেকে তহবিল সরিয়ে ফেলতে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান।
ব্যাংকাররা জানান, আরো বেশ কয়েকটি ব্যাংকে এমন পরিস্থিতি ঘটেছে। বিশেষ করে নতুন ব্যাংকগুলোতে। নতুন কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে টাকা রাখার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও নিরাপদ বোধ করছে না। পুরনো বেসরকারি ব্যাংক থেকেও কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এতে তারল্যসংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। যার প্রভাব পড়েছে পুরো অর্থনীতিতে।
এসব ঘটনায় উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। পরিস্থিতি সামাল দিতে শনিবার একটি অনুষ্ঠানে গভর্নর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এতে গভর্নর বলেন, একটি বেসরকারি ব্যাংক খারাপ অবস্থায় পড়ে গেছে। এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি ব্যাংক থেকে আমানত সরিয়ে নিতে চাইছে। একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
গতকাল মতিঝিলে চেক ফেরতের বিষয়ে কথা হয় একটি বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কাজী সাজেদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান থেকে কাঁচামাল কিনতে আরেক প্রতিষ্ঠানকে টাকা দেয়ার জন্য চেক দিয়ে ছিলাম। কিন্তু আমার লেনদেনকারী ব্যাংক ওই ব্যবসায়ী বন্ধুকে টাকা দিতে পারেনি। চেক ফিরিয়ে দিয়েছে। পরে বাধ্য হয়ে আমরা অন্য মাধ্যমে ওই ব্যবসায়ীকে টাকা দিয়েছি। ব্যাংকাররা বলেন, শুধু সাজেদুর রহমান নন। সাম্প্রতিক সময়ে চেক ফেরতের ঘটনা নিয়মে পরিণত হয়েছে।
সরজমিন দেখা গেছে, গতকাল মতিঝিলের একটি ব্যাংকের শাখায় ৫০ লাখ টাকার চেক নিয়ে বসে আছেন একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তারা বারবার তাকে অপেক্ষা করতে বলছেন। দুপুর পার হয়ে গেলেও তিনি টাকা হাতে পাননি। এর আগেও দুইদিন তিনি টাকা তুলতে ব্যাংকে এসে ফিরে যান বলে জানান। তবে পরে পরিমাণের চেয়ে কিছু কম টাকা পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া কোনো কোনো শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনো গ্রাহককে হাতজোড় করে পরে আসতে বলছেন। ফলে এ্যাকাউন্টে টাকা থাকলেও চেক দিয়ে টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। বারবার চেক বাউন্স হচ্ছে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন গ্রাহকরা। এটা শুধু ঘটছে বড় বড় গ্রাহকের ক্ষেত্রে। তবে ছোট আকারের এ্যাকাউন্টের গ্রাহকরা সহজেই টাকা তুলতে পারছেন। গতকাল মতিঝিলের বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় সরজমিন পরিদর্শনে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো নির্দিষ্ট ব্যাংকের সমস্যা নয়, এটি ব্যাংকের সামগ্রিক চিত্র। নগদ টাকার সংকট চলছে। এ জন্য চেক দিয়ে নিজের জমানো টাকা তুলতে পারছেন না গ্রাহকরা।
মতিঝিলের একটি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে দেখা যায়, একদিকে ১০ থেকে ১২ জন লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিচ্ছেন। অন্যপাশে দুটি লাইনে ৭ থেকে ৮ জন চেক হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। এর মধ্যে যারা বড় এ্যাকাউন্টের টাকা তুলতে এসেছেন তাদের বেশ খানিকটা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। কোনো কোনো কর্মকর্তারা তাদের আলাদা ডেকে নিচ্ছেন। বোঝানোর চেষ্টা করছেন, টাকা আপনি পাবেন। কিন্তু সময় লাগবে। এখন ফান্ড ক্রাইসিস। পরে আসেন। এত টাকা এক সঙ্গে দেয়া যাবে না। ওই গ্রাহকের নাম আমিনুল ইসলাম। পেশায় ব্যবসায়ী। ব্যবসার পাওনা পরিশোধে টাকা নেয়ার জন্য আগেই নোটিশ করে চেক পাঠান। ওই দিন চেকটি বাউন্স করে। সে ৫ লাখ টাকার একটি চেক দিয়েছিল।
একটি ব্যাংকের ম্যানেজারের কক্ষে প্রবেশ করে দেখা যায়, হাতে চেক নিয়ে দুই গ্রাহক বসে আছেন। তাদের দু-একদিন পরে আসার জন্য অনুরোধ করছেন ম্যানেজার। এফডিআর মেয়াদপূর্তির আগে ভেঙে ফেলতে চান। কিন্তু ম্যানেজার বলছেন, এখন মেয়াদপূর্তির আগে কারো এফডিআর ভাঙা হচ্ছে না। আপনি পরে আসেন।
একাধিক কর্মকর্তা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যাংকিং জীবনে এত ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে কখনো পড়িনি। গ্রাহকরা টাকা নিতে আসছেন; কিন্তু তাদের টাকা দিতে পারছি না। হাতজোড় করে তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন বলেন, অপারেশন খরচ কমাতে হবে। ডিফল্ট ঋণ, বন্ধ ঋণগুলো আদায় করতে হবে। ব্যাংকিং খাতে কঠোর নজরদারির পাশাপাশি চলমান এই সংকট নিরসনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেই সব থেকে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই সরকারি প্রতিষ্ঠান টাকা তুলে নেয়ায় এর প্রভাব অন্য প্রতিষ্ঠানেও পড়ছে।
এদিকে ঢাকা চেম্বারের একটি প্রতিনিধি দল গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একটি বৈঠক করে। সংগঠনটির সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, গভর্নর আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন যে ব্যাংকে তারল্যসংকট সাময়িক। এটা কিছু ব্যাংকের জন্য হচ্ছে, পুরো খাতের চিত্র নয়। তবে আমরা যখন ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলছি, তখন ঠিকই তারা তারল্যসংকটের কথা বলছেন।
পুরাতন একটি ব্যাংকের পরিচালক আবদুল আজিজ বলেন, এখানে হঠাৎ করেই শেষ ছয় মাসে রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি বেড়ে গেছে। ডিফল্ট লোনগুলো যথাসময়ে রিকভার হচ্ছে না। ফলে একটা খারাপ সময়ের সৃষ্টি হয়েছে।
এফডিআর ভাঙানোর হিড়িক পড়েছে এসব ব্যাংকে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ব্যাংকাররা। গতকাল ব্যাংকপাড়া নামে খ্যাত মতিঝিলের বিভিন্ন নতুন ও পুরাতন ব্যাংকের শাখায় সরজমিন ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। রাজধানীর বাইরের শাখারও একই চিত্র বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ব্যাংক কর্মকর্তারা আমানত ফেরত দিতে গড়িমসি করছে। সঠিকভাবে লেনদেন করা যাচ্ছে না। তবে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, এ্যাকাউন্ট ক্লোজ আর ওপেনিংয়ের মধ্যেই তাদের সময় কাটছে। তারা স্বীকার করেছেন, সংকুচিত হয়ে আসছে লেনদেন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, গণমাধ্যমে যতটুকু আসছে, বাস্তব চিত্র আরো ভয়াবহ। শেয়ার মার্কেটের মতো বিপর্যয় আসতে পারে। ফলে ব্যাংক থেকে ব্যাপকভাবে টাকা উত্তোলনের হিড়িক পড়তে পারে। এ ছাড়া গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলোতে আমানতের পরিমাণ কমাসহ খেলাপি ঋণ আদায় না হওয়ায় ব্যাংকগুলোতে এই অর্থ সংকট বলে মনে করেন ব্যাংকিং খাতের সংশ্লিষ্টরা। মাস ছয়েক আগেও দেশের ব্যাংকগুলোতে দেখা গেছে অতিরিক্ত তারল্য। কিন্তু কয়েক মাসের ব্যবধানে সেই চিত্র সম্পূর্ণ উল্টে গেছে।
জানা গেছে, আস্থার সংকট শুরু হয় বেসরকারি খাতের ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা দিয়ে। এই ব্যাংকে রাখা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না আমানতকারীরা। জলবায়ু তহবিল ৫০৮ কোটি টাকা ফেরত না পাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানায় টিআইবি। এরপরই বেসরকারি ব্যাংক থেকে তহবিল সরিয়ে ফেলতে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান।
ব্যাংকাররা জানান, আরো বেশ কয়েকটি ব্যাংকে এমন পরিস্থিতি ঘটেছে। বিশেষ করে নতুন ব্যাংকগুলোতে। নতুন কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে টাকা রাখার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও নিরাপদ বোধ করছে না। পুরনো বেসরকারি ব্যাংক থেকেও কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এতে তারল্যসংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। যার প্রভাব পড়েছে পুরো অর্থনীতিতে।
এসব ঘটনায় উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। পরিস্থিতি সামাল দিতে শনিবার একটি অনুষ্ঠানে গভর্নর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এতে গভর্নর বলেন, একটি বেসরকারি ব্যাংক খারাপ অবস্থায় পড়ে গেছে। এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি ব্যাংক থেকে আমানত সরিয়ে নিতে চাইছে। একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
গতকাল মতিঝিলে চেক ফেরতের বিষয়ে কথা হয় একটি বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কাজী সাজেদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান থেকে কাঁচামাল কিনতে আরেক প্রতিষ্ঠানকে টাকা দেয়ার জন্য চেক দিয়ে ছিলাম। কিন্তু আমার লেনদেনকারী ব্যাংক ওই ব্যবসায়ী বন্ধুকে টাকা দিতে পারেনি। চেক ফিরিয়ে দিয়েছে। পরে বাধ্য হয়ে আমরা অন্য মাধ্যমে ওই ব্যবসায়ীকে টাকা দিয়েছি। ব্যাংকাররা বলেন, শুধু সাজেদুর রহমান নন। সাম্প্রতিক সময়ে চেক ফেরতের ঘটনা নিয়মে পরিণত হয়েছে।
সরজমিন দেখা গেছে, গতকাল মতিঝিলের একটি ব্যাংকের শাখায় ৫০ লাখ টাকার চেক নিয়ে বসে আছেন একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তারা বারবার তাকে অপেক্ষা করতে বলছেন। দুপুর পার হয়ে গেলেও তিনি টাকা হাতে পাননি। এর আগেও দুইদিন তিনি টাকা তুলতে ব্যাংকে এসে ফিরে যান বলে জানান। তবে পরে পরিমাণের চেয়ে কিছু কম টাকা পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া কোনো কোনো শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনো গ্রাহককে হাতজোড় করে পরে আসতে বলছেন। ফলে এ্যাকাউন্টে টাকা থাকলেও চেক দিয়ে টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। বারবার চেক বাউন্স হচ্ছে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন গ্রাহকরা। এটা শুধু ঘটছে বড় বড় গ্রাহকের ক্ষেত্রে। তবে ছোট আকারের এ্যাকাউন্টের গ্রাহকরা সহজেই টাকা তুলতে পারছেন। গতকাল মতিঝিলের বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় সরজমিন পরিদর্শনে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো নির্দিষ্ট ব্যাংকের সমস্যা নয়, এটি ব্যাংকের সামগ্রিক চিত্র। নগদ টাকার সংকট চলছে। এ জন্য চেক দিয়ে নিজের জমানো টাকা তুলতে পারছেন না গ্রাহকরা।
মতিঝিলের একটি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে দেখা যায়, একদিকে ১০ থেকে ১২ জন লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিচ্ছেন। অন্যপাশে দুটি লাইনে ৭ থেকে ৮ জন চেক হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। এর মধ্যে যারা বড় এ্যাকাউন্টের টাকা তুলতে এসেছেন তাদের বেশ খানিকটা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। কোনো কোনো কর্মকর্তারা তাদের আলাদা ডেকে নিচ্ছেন। বোঝানোর চেষ্টা করছেন, টাকা আপনি পাবেন। কিন্তু সময় লাগবে। এখন ফান্ড ক্রাইসিস। পরে আসেন। এত টাকা এক সঙ্গে দেয়া যাবে না। ওই গ্রাহকের নাম আমিনুল ইসলাম। পেশায় ব্যবসায়ী। ব্যবসার পাওনা পরিশোধে টাকা নেয়ার জন্য আগেই নোটিশ করে চেক পাঠান। ওই দিন চেকটি বাউন্স করে। সে ৫ লাখ টাকার একটি চেক দিয়েছিল।
একটি ব্যাংকের ম্যানেজারের কক্ষে প্রবেশ করে দেখা যায়, হাতে চেক নিয়ে দুই গ্রাহক বসে আছেন। তাদের দু-একদিন পরে আসার জন্য অনুরোধ করছেন ম্যানেজার। এফডিআর মেয়াদপূর্তির আগে ভেঙে ফেলতে চান। কিন্তু ম্যানেজার বলছেন, এখন মেয়াদপূর্তির আগে কারো এফডিআর ভাঙা হচ্ছে না। আপনি পরে আসেন।
একাধিক কর্মকর্তা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যাংকিং জীবনে এত ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে কখনো পড়িনি। গ্রাহকরা টাকা নিতে আসছেন; কিন্তু তাদের টাকা দিতে পারছি না। হাতজোড় করে তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন বলেন, অপারেশন খরচ কমাতে হবে। ডিফল্ট ঋণ, বন্ধ ঋণগুলো আদায় করতে হবে। ব্যাংকিং খাতে কঠোর নজরদারির পাশাপাশি চলমান এই সংকট নিরসনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকেই সব থেকে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই সরকারি প্রতিষ্ঠান টাকা তুলে নেয়ায় এর প্রভাব অন্য প্রতিষ্ঠানেও পড়ছে।
এদিকে ঢাকা চেম্বারের একটি প্রতিনিধি দল গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একটি বৈঠক করে। সংগঠনটির সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, গভর্নর আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন যে ব্যাংকে তারল্যসংকট সাময়িক। এটা কিছু ব্যাংকের জন্য হচ্ছে, পুরো খাতের চিত্র নয়। তবে আমরা যখন ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলছি, তখন ঠিকই তারা তারল্যসংকটের কথা বলছেন।
পুরাতন একটি ব্যাংকের পরিচালক আবদুল আজিজ বলেন, এখানে হঠাৎ করেই শেষ ছয় মাসে রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি বেড়ে গেছে। ডিফল্ট লোনগুলো যথাসময়ে রিকভার হচ্ছে না। ফলে একটা খারাপ সময়ের সৃষ্টি হয়েছে।
No comments