বিমানবন্দরের বিঘ্নিত নিরাপত্তা
প্রায়
দুই বছর পর গত রোববার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে
যুক্তরাজ্যে আকাশপথে পণ্য পরিবহনের নিষেধাজ্ঞা উঠেছে এবং এ জন্য অনেক কাঠখড়
পোড়াতে হয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থায় ত্রুটি আছে—এই কারণ দেখিয়ে
যুক্তরাজ্য এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা আনুষ্ঠানিকভাবে
যেদিন উঠল, তার আগের রাতেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার উদ্বেগজনক
ত্রুটি সবার সামনে উন্মোচিত হলো। একজন পুলিশ সদস্য কীভাবে সব
নিরাপত্তাব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে কোনো কাগজপত্র ছাড়া একটি বিদেশি বিমান
সংস্থার উড়োজাহাজে উঠে পড়লেন এবং তা চলতে শুরু করার পরও রয়ে গেলেন, তা
সত্যিই বিস্ময়কর। বিশ্বের যেকোনো দেশে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে
জিরো টলারেন্সের নীতি অনুসরণ করা হয়। অথচ আমাদের এই ঘটনা প্রমাণ করে যে
আমাদের বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা কতটা ঠুনকো এবং কত সহজেই তা উপেক্ষা
করা যায়। এটা আরও দুর্ভাগ্যজনক যে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরের
নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলার মতো অপকর্মটি করেছেন ঢাকা রেঞ্জের একজন
পুলিশ সদস্য। এসআই আশিকুর রহমান পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাকে অবলীলায় উপেক্ষা
করতে পেরেছেন কার্যত তাঁর পোশাকের কারণে। ঢাকা রেঞ্জের পুলিশের পোশাকের
রঙের সঙ্গে বিমানবন্দরের কর্মরত ইমিগ্রেশন পুলিশের পোশাকের মিল থাকায় এমন
হয়েছে বলে যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কোনো
ইমিগ্রেশন পুলিশ কি কোনো কারণ ছাড়া বা তঁার আত্মীয়কে তুলে দিতে উড়োজাহাজে
উঠতে পারেন? যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা গুরুতর। থাই এয়ারলাইনসের পাইলট এই ঘটনার
পর উড়োজাহাজ চালাতে পর্যন্ত অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দরে এ ধরনের ঘটনার খারাপ অভিঘাত রয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা
পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করে এমন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ঘটনাটিকে বিবেচনায়
নেবে এবং আমাদের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রেটিংয়ে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য।
যুক্তরাজ্য আকাশপথে পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিলেও অস্ট্রেলিয়া ও
ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফে নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে।
আমরা যখন এসব
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রত্যাশা করছি, তখন এই ঘটনা নেতিবাচক ভূমিকা
রাখতে পারে। এই ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট পুলিশের এসআইকে রক্ষা করতে যে তৎপরতা
দেখা গেছে ও যাচ্ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীর সদস্য হিসেবে তিনি যে কাজ করেছেন, তা গুরুতর শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল।
তিনি স্পষ্টতই তাঁর পদ ও পোশাককে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়
করেছেন। এ ধরনের পুলিশ সদস্য বাহিনীর ভাবমূর্তির জন্য বিপজ্জনক। কোনো
বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানের কেউ অপকর্ম করলে তার দায় সেই বাহিনী বা
প্রতিষ্ঠানের নয়। এ ধরনের সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাঁকে রক্ষার
চেষ্টা বরং বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করে। এই প্রবণতা
খুবই বিপজ্জনক। এই ঘটনার একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত জরুরি। অভিযোগ আছে
যে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ ওই এসআইকে সহায়তা করেছেন। এসবের সত্যতা
খুঁজে বের করা কোনো কঠিন কাজ নয়। যে নিরাপত্তাবলয়গুলো আশিকুর রহমান অতিক্রম
করেছেন, তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। কেউ
তাঁকে সহযোগিতা করে থাকলে বা কারও গাফিলতি ধরা পড়লে তাঁদের বিরুদ্ধেও
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে কারা এই অভিযুক্ত পুলিশ
কর্মকর্তাকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন বা করছেন, তাঁদের চিহ্নিত করেও
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বিমানবন্দর একটি সংবেদনশীল স্থাপনা, এর
সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার সম্পর্ক রয়েছে। এখানে কারও খামখেয়ালি
বা মর্জিমাফিক কিছু করার সুযোগ নেই—তা সব মহলকে স্মরণ করিয়ে দিতে এই ঘটনার
সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।
No comments