খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন হবে না by আলফাজ আনাম ও মঈন উদ্দিন খান
ব্যারিস্টার
মওদুদ আহমদ। জন্ম ১৯৪০ সাল, নোয়াখালী জেলায়। সাবেক আইন ও সংসদ
বিষয়কমন্ত্রী। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য।
তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বাংলাদেশ
সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও উপরাষ্ট্রপতি পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন দক্ষ
পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে তার খ্যাতি আছে। তিনি জার্মানির হাইডেলবার্গ
বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো।
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলিয়ট স্কুলের একজন ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে
তিনি অধ্যাপনার কাজ করেছেন। বাংলা ও ইংরেজিতে তার লেখা অনেক বই রয়েছে। এর
মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশ : এরা অব শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ :
শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল, ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড দি চ্যালেঞ্জ অব
ডেভেলপমেন্ট, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ, বাংলাদেশ : স্বায়ত্তশাসন
থেকে স্বাধীনতা, চলমান ইতিহাস ১৯৮৩-১৯৯০। বেগম খালেদা জিয়ার
কারাদণ্ড-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি নয়া দিগন্তের সাথে কথা
বলেছেন।
নয়া দিগন্ত : আপনি বলছেন বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতার বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি টার্নিং পয়েন্ট। কোন দৃষ্টিতে এটিকে টার্নিং পয়েন্ট বলছেন?
মওদুদ আহমদ : এ কারণে বলছি যে, বেগম জিয়ার কারাবরণ অপ্রত্যাশিত ঘটনা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তিনি এখন কারাগারে আছেন। এই উপমহাদেশে সব সময় দেখা গেছে- কোনো রাজনৈতিক নেতা কারাগারে গেলে তার জনপ্রিয়তা আরো বাড়ে। ব্রিটিশ আমল থেকে আমরা তা দেখে আসছি। বেগম জিয়াকে গ্রেফতারের ঘটনায় রাজনীতি অন্য দিকে মোড় নিয়ে নিলো। আগের রাজনীতির যে গতিধারা, তা থেকে নতুন এক দিগন্তের সূচনা হয়েছে। বেগম জিয়ার মুক্তি যতই বিলম্বিত হবে, ততই সরকারের জনপ্রিয়তা কমবে; বিএনপির জনপ্রিয়তা বাড়বে। সে জন্য এটি একটি টার্নিং পয়েন্ট। বিএনপি আর এখান থেকে ফিরে যেতে পারবে না। চরম অবস্থা বিরাজ করছে।
নয়া দিগন্ত : ঠিক কী ধরনের ‘চরম অবস্থা’ বিরাজ করছে বলে মনে করেন?
মওদুদ আহমদ : বেগম খালেদা জিয়া তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। দু’বার তিনি জনগণের বিপুল ভোটে গঠিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বর্তমান সরকার তো জনগণের ভোটে গঠিত সরকার নয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে যে নির্বাচন হয়েছে, সেটিকেও আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন মনে করি না। সেখানেও অনেক রকমের কারসাজি হয়েছে। সেনাসমর্থিত সরকার তখন সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে। সেদিক থেকে এখনকার প্রেক্ষাপটে আমরা যদি চিন্তা করি তাহলে দেখব, বেগম জিয়ার এই কারাবরণ সাধারণ মানুষ খুব ভালোভাবে নেয়নি। তারা মনে করে, ভুল ও অন্যায় হয়েছে। তার মতো একজন নেত্রীকে এভাবে কারারুদ্ধ করায় দেশের মানুষের গভীর সহানুভূতি তিনি এরই মধ্যে অর্জন করেছেন। আগে তো আমাদের অ্যাজেন্ডা ছিল একটাই- নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। এখন তার সাথে যোগ হয়েছে বেগম জিয়ার কারা মুক্তি। এটা এখন আমাদের অ্যাজেন্ডা। কারণ তাকে মুক্তি পেতেই হবে। তার মুক্তি ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে পারবে বলে মনে করি না।
নয়া দিগন্ত : তাহলে কি তার মুক্তি ছাড়া আপনারা নির্বাচনে যাবেন না?
মওদুদ আহমদ : না, সেটি আমরা এখনও বলছি না। আমরা বলছি, বেগম জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচন হবে না। তিনি ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাব না- এটা আমরা বলতে চাই না। আমরা মনে করি, তিনি ছাড়া বাংলাদেশে নির্বাচন হবে না। নির্বাচন করতে পারবে না।
নয়া দিগন্ত : বেগম জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বিশেষ করে জামিনের ব্যাপারে আইনি অবস্থা এখন কী?
মওদুদ আহমদ : আমি মনে করি, তিনি যাতে মুক্তি না পান সেজন্য সরকার ইচ্ছাকৃত অপকৌশল করছে। যত বেশি দিন তাকে জেলখানায় রাখা যায়, তত বেশি হয়তো তারা আনন্দ পান। তারা মনে করেন, এটি রাজনৈতিক খেলার অংশ। আমি মনে করি, এটি আওয়ামী লীগের পলিটিক্যাল ব্লান্ডার। এই কারাবরণ বেগম জিয়াকে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নিয়ে যাবে। তাকে নিয়ে ক্ষমতাসীন দল নানা রকম কথাবার্তা বলে, সে কথা বলার এখন আর সুযোগ থাকবে না। কারণ দল এখন সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে।
নয়া দিগন্ত : আপনি কারাদণ্ডের সাথে সরকারের সম্পর্কের কথা বলছেন। কিন্তু তিনি তো আদালতের মাধ্যমে কারাগারে গেছেন?
মওদুদ আহমদ : এটা আইওয়াশ। সারা দেশের মানুষ জানে, আদালতের অবস্থা এখন কী। এই যে নিম্ন আদালতের কথা বলা হচ্ছে। নিম্ন আদালতের একটি মামলায় তারেক রহমানকে খালাস দেয়া হয়েছিল। সে বিচারককে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। তারা খুব ভালো করে জানেন, এটি আদালতের বিষয় নয়। এটি একটি রাজনৈতিক বিষয়। একে ফৌজদারি মামলা বলা চলে না। এটি রাজনীতির মামলা। বিরোধী দলের নেত্রী যিনি প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী, তাকে নির্মূল, নিষ্ক্রিয় ও দুর্বল করার জন্য সরকার চেষ্টা করছে।
এখন নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধির বিষয়ে ১১ ডিসেম্বর সরকার যে গেজেট প্রকাশ করেছেন, তাতে তো কোনো স্বাধীনতা নেই। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে অধস্তন আদালতগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিষয়ে বলা হচ্ছে ‘বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে রত ম্যাজিস্টেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি দান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকিবে এবং সুপ্রিম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাহা প্রযুক্ত হইবে।’ আগে এই ক্ষমতা ছিল সুপ্রিম কোর্টের। সেটা বদলে আনা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট’। প্রেসিডেন্ট কে? যিনি রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী; যিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সব কাজ করেন। এই বিধান থাকা অবস্থায় কিভাবে বলা যায়, এটি আদালতের বিষয়। নতুন গেজেটে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা তো আছেই, আবার আইন ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়কেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তারাও ‘কর্তৃপক্ষ’। এই ১১৬ ধারা মোতাবেক সুপ্রিম কোর্ট পরামর্শ দিতে পারবে। কিন্তু কাজ করবে নির্বাহী বিভাগ। কাজেই নিম্ন আদালত সম্পূর্ণভাবে সরকারের অধীনে কাজ করছে। তারা তো সুপ্রিম কোর্টের অধীনে কাজ করে না। তাদের শৃঙ্খলা বিধিসহ যা কিছু আছে আগে সুপ্রিম কোর্ট করতো, তা মূল সংবিধানে ছিল। এরপর চতুর্থ সংশোধনী এনে এটা প্রেসিডেন্টের হাতে দেয়া হলো। পরবর্তীতে দুটো রক্ষা করার জন্য বলা হলো, প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ অনুযায়ী করবেন। যদি এটা হতো যে, সুপ্রিম কোর্ট করবে প্রেসিডেন্টের সাথে পরামর্শ করে, সেটি হলেও কথা ছিল। তারা সম্পূর্ণ উল্টে দিয়েছেন। এই গেজেট নোটিফিকেশনের পর আদালত- স্বাধীন এটা বলার সুযোগ নেই। সম্পূর্ণভাবে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে গেছে। সুতরাং আমরা অনেক যুক্তি দিয়েই বলছি, নিম্ন আদালত নিজের ইচ্ছায় কাজ করতে পারে না।
নয়া দিগন্ত : ফৌজদারি মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ড হওয়ায় বেগম জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ ব্যাপারে আপনার মত কী?
মওদুদ আহমদ : আমি মনে করি, তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। আপিল হলো বিচারের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আপিল বিভাগ যতক্ষণ পর্যন্ত না বলবে, তার সাজা সঠিক হয়েছে, তত দিন পর্যন্ত ধরে নিতে হবে যে, তার সাজা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এখন আমরা আপিল করব। আপিলের পরে আমার যদি জিতি, ওরা আপিল করবেন। ওরা যদি জেতেন, আমরা আপিল করব। অ্যাপিলেট ডিভিশনে যাব। সর্বোচ্চ আদালতে এই মামলা নিষ্পত্তি হবে।
এ ব্যাপারে দুই ধরনের তথ্য আছে। একটি হচ্ছে বিচারের ধারাবাহিকতা। ফলে বলা যাবে না, তিনি দোষী বা পাঁচ বছরের সাজা সঠিক হয়েছে কী হয়নি। এই সময়ে তিনি নির্বাচন থেকে বঞ্চিত হবেন কেন? আরেকটি যুক্তি হলো, জরুরি অবস্থার সময় কিছু পরিবর্তন করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, আপিল করলেই রায় স্থগিত করা যাবে না আর জামিন দেয়া যাবে না। তখন সুপ্রিম কোর্ট ওভাবে একটি রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু এই উপমহাদেশে এখন এটা স্বীকৃত বিষয় যে, নিম্ন আদালতের রায় যাই হোক না কেন যদি আপিলে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট ডিভিশন পর্যন্ত নিশ্চিত না করা হয়, তত দিন পর্যন্ত ধরে নিতে হবে- আগের রায় চূড়ান্ত নয়। অন্য দিকে যুক্তি হচ্ছে, যেহেতু তিনি একবার দণ্ডিত হয়ে গেছেন সুতরাং অযোগ্য। এই মতের সাথে আমি একমত নই।
নয়া দিগন্ত : আপনি ‘রাজনৈতিক মামলা’ বললেও দুর্নীতির মামলার এই রায় নির্বাচনের বছরে কী প্রভাব ফেলবে?
মওদুদ আহমদ : এই মামলার উদ্দেশ্য হলো, বাংলাদেশে বিরোধী দল থাকতে পারবে না। বিরোধী দলকে নির্মূল করতে হবে। এ কারণে তাদের নেতাকে ধরা হয়েছে। বেগম জিয়াকে কারাবন্দী করা মানে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে কারাবন্দী করা। বেগম জিয়াকে বিএনপি থেকে আলাদা করা সম্ভব নয়।
নয়া দিগন্ত : ক্ষমতাসীন দল কি তাহলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করতে চায় বলে মনে করেন?
মওদুদ আহমদ : তাদের সে রকম ইচ্ছে থাকতে পারে। যেহেতু ভোট ছাড়া তারা এভাবে কাটাতে পেরেছেন, তারা মনে করতে পারেন আরো পাঁচ বছর ভোট ছাড়া কাটাতে পারব না কেন? এই বিশ্বাস নিয়ে তারা এখন এগোচ্ছেন। তারা মনে করেন, বিএনপিকে কোণঠাসা করে দেয়া হবে; নির্বাচনের আগে তার একটি প্রক্রিয়া হলো, বেগম খালেদা জিয়ার কারাবরণ। তারপর এমন অবস্থা সৃষ্টি করা হবে যে, আমরা নির্বাচন করলেও কিছু আসে যায় না। করলে বরং তাদের জন্য ভালো; তাতে তারা বৈধতা পাবেন। যেমন তেমনভাবে একটি নির্বাচন করতে চাইবেন। তবে সেই নির্বাচন হবে না, হতে পারবে না। ২০১৪ সালের অবস্থা এখন নেই। বৈশ্বিকভাবে নেই, অভ্যন্তরীণভাবেও নেই। দেশের মানুষ পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছে।
নয়া দিগন্ত : আপনি বলছেন আপিল চলতে থাকবে এবং বেগম জিয়া নির্বাচন করতে পারবে। নির্বাচন কমিশন বলছে এ বিষয়ে তাদের কোনো করণীয় নেই। নির্বাচন কমিশনের কি আসলেই কিছু করার নেই?
মওদুদ আহমদ : অনেক কিছু করার আছে। ধোঁকা দেয়া হচ্ছে এই বলে, তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশনের কোনো ভূমিকা নেই। কেন? নির্বাচন কমিশন কি তিন মাসের জন্য গঠিত হয়? তাদের দায়িত্ব কি শুধু নির্বাচন করা? না। তাহলে ভোটার তালিকা তারা তৈরি করেন কেন? কেন্দ্র নির্ধারণ ও প্রিজাইডিং অফিসার ঠিক তো তারাই করেন। এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। পুরো পাঁচ বছর ধরেই নির্বাচন কমিশনের কাজ।
এ কারণে আমরা বলি, দলীয় সরকারের অধীনে স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশনের কাজ করা সম্ভব নয়। তারা বলতে পারেন, আমাদের ক্ষমতা নেই। কিন্তু কেন ক্ষমতা নেই? বাধা কোথায়? প্রধানমন্ত্রী সরকারের সুযোগসুবিধা নিয়ে সরকারের খরচে ভোট চাইছেন। তফসিল ঘোষণার আগেই তিনি ভোট চাইছেন। নির্বাচন কমিশন তো চিঠি লিখতে পারে এভাবে ভোট চাওয়া উচিত হবে না। এ ধরনের কাজ করলে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হবে। সভা সমাবেশ করার অধিকার আছে; কিন্তু যদি নির্বাচনী প্রচার করেন, তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারব না। এই সাহস তো কমিশন দেখাতে পারছে না। তাদের যে ক্ষমতা আছে, তারা প্রয়োগ করতে চান না।
নয়া দিগন্ত : তাহলে কি নির্বাচন কমিশনের ওপর আপনাদের আস্থার ঘাটতি তো থেকে যাচ্ছে?
মওদুদ আহমদ : একদম। এই নির্বাচন কমিশনের ওপর আমরা কী করে আস্থা রাখব, যাদের চোখের সামনে এক পক্ষ ভোট চাইছেন। আরেক পক্ষের নেত্রীকে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে। কেন আমাদের সভা করতে অনুমতি নিতে হয়? ক্ষমতাসীনদের তো অনুমতি নিতে হয় না। তারা শুধু অবহিত করে।
নয়া দিগন্ত : ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। আপনাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি কতদূর?
মওদুদ আহমদ : আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তফসিল ঘোষণার পর দু’মাস সময় পাওয়া যাবে। এই সময়ই যথেষ্ট। আমরা এর আগে নির্বাচন করেছি। এটা নতুন নয়। অন্তত ২০০ আসনে কারা সম্ভাব্য প্রার্থী তা আমাদের জানা আছে।
নয়া দিগন্ত : বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলছেন, সরকার বিএনপিকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। এই অভিযোগ কি বিএনপির অন্তর্নিহিত দুর্বলতার প্রকাশ নয়?
মওদুদ আহমদ : না। এগুলো প্রচারণা। ক্ষমতাসীনদের বানানো কথা। সরকার ও সরকারের এজেন্সিগুলো এসব গল্প তৈরি করে। যারা এসব গল্প তৈরি করে, তারা দিবাস্বপ্নে আছে। বেগম খালেদা জিয়া কারাবরণের পর বিএনপি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ। আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোতে মানুষের ঢল নামছে। আবার তারা সংযমও দেখাচ্ছে। এটা তো প্রমাণ করে, বিএনপি সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধ আছে। আমরা যদি একবার মাঠে নেমে যেতে পারি, রাজনৈতিক সব চিত্র বদলে যেতে পারে। প্রশাসন, পুলিশ দিয়ে ঠেকানো যাবে না।
নয়া দিগন্ত : চেয়ারপারসনের গ্রেফতারের পরও বিএনপি কঠোর কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে না। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই কি এমন কর্মসূচি?
মওদুদ আহমদ : না। আমরা সরকারের উসকানিতে পা দিচ্ছি না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। তারা আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পণ্ড করতে চাইবে। আমরা সে সুযোগ তাদের দিতে চাই না।
নয়া দিগন্ত : আপনি বলছেন বেগম খালেদা জিয়ার গ্রেফতার বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি টার্নিং পয়েন্ট। কোন দৃষ্টিতে এটিকে টার্নিং পয়েন্ট বলছেন?
মওদুদ আহমদ : এ কারণে বলছি যে, বেগম জিয়ার কারাবরণ অপ্রত্যাশিত ঘটনা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তিনি এখন কারাগারে আছেন। এই উপমহাদেশে সব সময় দেখা গেছে- কোনো রাজনৈতিক নেতা কারাগারে গেলে তার জনপ্রিয়তা আরো বাড়ে। ব্রিটিশ আমল থেকে আমরা তা দেখে আসছি। বেগম জিয়াকে গ্রেফতারের ঘটনায় রাজনীতি অন্য দিকে মোড় নিয়ে নিলো। আগের রাজনীতির যে গতিধারা, তা থেকে নতুন এক দিগন্তের সূচনা হয়েছে। বেগম জিয়ার মুক্তি যতই বিলম্বিত হবে, ততই সরকারের জনপ্রিয়তা কমবে; বিএনপির জনপ্রিয়তা বাড়বে। সে জন্য এটি একটি টার্নিং পয়েন্ট। বিএনপি আর এখান থেকে ফিরে যেতে পারবে না। চরম অবস্থা বিরাজ করছে।
নয়া দিগন্ত : ঠিক কী ধরনের ‘চরম অবস্থা’ বিরাজ করছে বলে মনে করেন?
মওদুদ আহমদ : বেগম খালেদা জিয়া তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। দু’বার তিনি জনগণের বিপুল ভোটে গঠিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বর্তমান সরকার তো জনগণের ভোটে গঠিত সরকার নয়। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে যে নির্বাচন হয়েছে, সেটিকেও আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন মনে করি না। সেখানেও অনেক রকমের কারসাজি হয়েছে। সেনাসমর্থিত সরকার তখন সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে। সেদিক থেকে এখনকার প্রেক্ষাপটে আমরা যদি চিন্তা করি তাহলে দেখব, বেগম জিয়ার এই কারাবরণ সাধারণ মানুষ খুব ভালোভাবে নেয়নি। তারা মনে করে, ভুল ও অন্যায় হয়েছে। তার মতো একজন নেত্রীকে এভাবে কারারুদ্ধ করায় দেশের মানুষের গভীর সহানুভূতি তিনি এরই মধ্যে অর্জন করেছেন। আগে তো আমাদের অ্যাজেন্ডা ছিল একটাই- নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। এখন তার সাথে যোগ হয়েছে বেগম জিয়ার কারা মুক্তি। এটা এখন আমাদের অ্যাজেন্ডা। কারণ তাকে মুক্তি পেতেই হবে। তার মুক্তি ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে পারবে বলে মনে করি না।
নয়া দিগন্ত : তাহলে কি তার মুক্তি ছাড়া আপনারা নির্বাচনে যাবেন না?
মওদুদ আহমদ : না, সেটি আমরা এখনও বলছি না। আমরা বলছি, বেগম জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচন হবে না। তিনি ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাব না- এটা আমরা বলতে চাই না। আমরা মনে করি, তিনি ছাড়া বাংলাদেশে নির্বাচন হবে না। নির্বাচন করতে পারবে না।
নয়া দিগন্ত : বেগম জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে বিশেষ করে জামিনের ব্যাপারে আইনি অবস্থা এখন কী?
মওদুদ আহমদ : আমি মনে করি, তিনি যাতে মুক্তি না পান সেজন্য সরকার ইচ্ছাকৃত অপকৌশল করছে। যত বেশি দিন তাকে জেলখানায় রাখা যায়, তত বেশি হয়তো তারা আনন্দ পান। তারা মনে করেন, এটি রাজনৈতিক খেলার অংশ। আমি মনে করি, এটি আওয়ামী লীগের পলিটিক্যাল ব্লান্ডার। এই কারাবরণ বেগম জিয়াকে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নিয়ে যাবে। তাকে নিয়ে ক্ষমতাসীন দল নানা রকম কথাবার্তা বলে, সে কথা বলার এখন আর সুযোগ থাকবে না। কারণ দল এখন সম্পূর্ণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে।
নয়া দিগন্ত : আপনি কারাদণ্ডের সাথে সরকারের সম্পর্কের কথা বলছেন। কিন্তু তিনি তো আদালতের মাধ্যমে কারাগারে গেছেন?
মওদুদ আহমদ : এটা আইওয়াশ। সারা দেশের মানুষ জানে, আদালতের অবস্থা এখন কী। এই যে নিম্ন আদালতের কথা বলা হচ্ছে। নিম্ন আদালতের একটি মামলায় তারেক রহমানকে খালাস দেয়া হয়েছিল। সে বিচারককে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। তারা খুব ভালো করে জানেন, এটি আদালতের বিষয় নয়। এটি একটি রাজনৈতিক বিষয়। একে ফৌজদারি মামলা বলা চলে না। এটি রাজনীতির মামলা। বিরোধী দলের নেত্রী যিনি প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী, তাকে নির্মূল, নিষ্ক্রিয় ও দুর্বল করার জন্য সরকার চেষ্টা করছে।
এখন নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধির বিষয়ে ১১ ডিসেম্বর সরকার যে গেজেট প্রকাশ করেছেন, তাতে তো কোনো স্বাধীনতা নেই। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে অধস্তন আদালতগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিষয়ে বলা হচ্ছে ‘বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে রত ম্যাজিস্টেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি দান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকিবে এবং সুপ্রিম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাহা প্রযুক্ত হইবে।’ আগে এই ক্ষমতা ছিল সুপ্রিম কোর্টের। সেটা বদলে আনা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট’। প্রেসিডেন্ট কে? যিনি রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী; যিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সব কাজ করেন। এই বিধান থাকা অবস্থায় কিভাবে বলা যায়, এটি আদালতের বিষয়। নতুন গেজেটে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা তো আছেই, আবার আইন ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়কেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তারাও ‘কর্তৃপক্ষ’। এই ১১৬ ধারা মোতাবেক সুপ্রিম কোর্ট পরামর্শ দিতে পারবে। কিন্তু কাজ করবে নির্বাহী বিভাগ। কাজেই নিম্ন আদালত সম্পূর্ণভাবে সরকারের অধীনে কাজ করছে। তারা তো সুপ্রিম কোর্টের অধীনে কাজ করে না। তাদের শৃঙ্খলা বিধিসহ যা কিছু আছে আগে সুপ্রিম কোর্ট করতো, তা মূল সংবিধানে ছিল। এরপর চতুর্থ সংশোধনী এনে এটা প্রেসিডেন্টের হাতে দেয়া হলো। পরবর্তীতে দুটো রক্ষা করার জন্য বলা হলো, প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ অনুযায়ী করবেন। যদি এটা হতো যে, সুপ্রিম কোর্ট করবে প্রেসিডেন্টের সাথে পরামর্শ করে, সেটি হলেও কথা ছিল। তারা সম্পূর্ণ উল্টে দিয়েছেন। এই গেজেট নোটিফিকেশনের পর আদালত- স্বাধীন এটা বলার সুযোগ নেই। সম্পূর্ণভাবে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে গেছে। সুতরাং আমরা অনেক যুক্তি দিয়েই বলছি, নিম্ন আদালত নিজের ইচ্ছায় কাজ করতে পারে না।
নয়া দিগন্ত : ফৌজদারি মামলায় পাঁচ বছরের দণ্ড হওয়ায় বেগম জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ ব্যাপারে আপনার মত কী?
মওদুদ আহমদ : আমি মনে করি, তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। আপিল হলো বিচারের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আপিল বিভাগ যতক্ষণ পর্যন্ত না বলবে, তার সাজা সঠিক হয়েছে, তত দিন পর্যন্ত ধরে নিতে হবে যে, তার সাজা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এখন আমরা আপিল করব। আপিলের পরে আমার যদি জিতি, ওরা আপিল করবেন। ওরা যদি জেতেন, আমরা আপিল করব। অ্যাপিলেট ডিভিশনে যাব। সর্বোচ্চ আদালতে এই মামলা নিষ্পত্তি হবে।
এ ব্যাপারে দুই ধরনের তথ্য আছে। একটি হচ্ছে বিচারের ধারাবাহিকতা। ফলে বলা যাবে না, তিনি দোষী বা পাঁচ বছরের সাজা সঠিক হয়েছে কী হয়নি। এই সময়ে তিনি নির্বাচন থেকে বঞ্চিত হবেন কেন? আরেকটি যুক্তি হলো, জরুরি অবস্থার সময় কিছু পরিবর্তন করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, আপিল করলেই রায় স্থগিত করা যাবে না আর জামিন দেয়া যাবে না। তখন সুপ্রিম কোর্ট ওভাবে একটি রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু এই উপমহাদেশে এখন এটা স্বীকৃত বিষয় যে, নিম্ন আদালতের রায় যাই হোক না কেন যদি আপিলে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট ডিভিশন পর্যন্ত নিশ্চিত না করা হয়, তত দিন পর্যন্ত ধরে নিতে হবে- আগের রায় চূড়ান্ত নয়। অন্য দিকে যুক্তি হচ্ছে, যেহেতু তিনি একবার দণ্ডিত হয়ে গেছেন সুতরাং অযোগ্য। এই মতের সাথে আমি একমত নই।
নয়া দিগন্ত : আপনি ‘রাজনৈতিক মামলা’ বললেও দুর্নীতির মামলার এই রায় নির্বাচনের বছরে কী প্রভাব ফেলবে?
মওদুদ আহমদ : এই মামলার উদ্দেশ্য হলো, বাংলাদেশে বিরোধী দল থাকতে পারবে না। বিরোধী দলকে নির্মূল করতে হবে। এ কারণে তাদের নেতাকে ধরা হয়েছে। বেগম জিয়াকে কারাবন্দী করা মানে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে কারাবন্দী করা। বেগম জিয়াকে বিএনপি থেকে আলাদা করা সম্ভব নয়।
নয়া দিগন্ত : ক্ষমতাসীন দল কি তাহলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন করতে চায় বলে মনে করেন?
মওদুদ আহমদ : তাদের সে রকম ইচ্ছে থাকতে পারে। যেহেতু ভোট ছাড়া তারা এভাবে কাটাতে পেরেছেন, তারা মনে করতে পারেন আরো পাঁচ বছর ভোট ছাড়া কাটাতে পারব না কেন? এই বিশ্বাস নিয়ে তারা এখন এগোচ্ছেন। তারা মনে করেন, বিএনপিকে কোণঠাসা করে দেয়া হবে; নির্বাচনের আগে তার একটি প্রক্রিয়া হলো, বেগম খালেদা জিয়ার কারাবরণ। তারপর এমন অবস্থা সৃষ্টি করা হবে যে, আমরা নির্বাচন করলেও কিছু আসে যায় না। করলে বরং তাদের জন্য ভালো; তাতে তারা বৈধতা পাবেন। যেমন তেমনভাবে একটি নির্বাচন করতে চাইবেন। তবে সেই নির্বাচন হবে না, হতে পারবে না। ২০১৪ সালের অবস্থা এখন নেই। বৈশ্বিকভাবে নেই, অভ্যন্তরীণভাবেও নেই। দেশের মানুষ পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছে।
নয়া দিগন্ত : আপনি বলছেন আপিল চলতে থাকবে এবং বেগম জিয়া নির্বাচন করতে পারবে। নির্বাচন কমিশন বলছে এ বিষয়ে তাদের কোনো করণীয় নেই। নির্বাচন কমিশনের কি আসলেই কিছু করার নেই?
মওদুদ আহমদ : অনেক কিছু করার আছে। ধোঁকা দেয়া হচ্ছে এই বলে, তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশনের কোনো ভূমিকা নেই। কেন? নির্বাচন কমিশন কি তিন মাসের জন্য গঠিত হয়? তাদের দায়িত্ব কি শুধু নির্বাচন করা? না। তাহলে ভোটার তালিকা তারা তৈরি করেন কেন? কেন্দ্র নির্ধারণ ও প্রিজাইডিং অফিসার ঠিক তো তারাই করেন। এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। পুরো পাঁচ বছর ধরেই নির্বাচন কমিশনের কাজ।
এ কারণে আমরা বলি, দলীয় সরকারের অধীনে স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশনের কাজ করা সম্ভব নয়। তারা বলতে পারেন, আমাদের ক্ষমতা নেই। কিন্তু কেন ক্ষমতা নেই? বাধা কোথায়? প্রধানমন্ত্রী সরকারের সুযোগসুবিধা নিয়ে সরকারের খরচে ভোট চাইছেন। তফসিল ঘোষণার আগেই তিনি ভোট চাইছেন। নির্বাচন কমিশন তো চিঠি লিখতে পারে এভাবে ভোট চাওয়া উচিত হবে না। এ ধরনের কাজ করলে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হবে। সভা সমাবেশ করার অধিকার আছে; কিন্তু যদি নির্বাচনী প্রচার করেন, তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারব না। এই সাহস তো কমিশন দেখাতে পারছে না। তাদের যে ক্ষমতা আছে, তারা প্রয়োগ করতে চান না।
নয়া দিগন্ত : তাহলে কি নির্বাচন কমিশনের ওপর আপনাদের আস্থার ঘাটতি তো থেকে যাচ্ছে?
মওদুদ আহমদ : একদম। এই নির্বাচন কমিশনের ওপর আমরা কী করে আস্থা রাখব, যাদের চোখের সামনে এক পক্ষ ভোট চাইছেন। আরেক পক্ষের নেত্রীকে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে। কেন আমাদের সভা করতে অনুমতি নিতে হয়? ক্ষমতাসীনদের তো অনুমতি নিতে হয় না। তারা শুধু অবহিত করে।
নয়া দিগন্ত : ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। আপনাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি কতদূর?
মওদুদ আহমদ : আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তফসিল ঘোষণার পর দু’মাস সময় পাওয়া যাবে। এই সময়ই যথেষ্ট। আমরা এর আগে নির্বাচন করেছি। এটা নতুন নয়। অন্তত ২০০ আসনে কারা সম্ভাব্য প্রার্থী তা আমাদের জানা আছে।
নয়া দিগন্ত : বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলছেন, সরকার বিএনপিকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে। এই অভিযোগ কি বিএনপির অন্তর্নিহিত দুর্বলতার প্রকাশ নয়?
মওদুদ আহমদ : না। এগুলো প্রচারণা। ক্ষমতাসীনদের বানানো কথা। সরকার ও সরকারের এজেন্সিগুলো এসব গল্প তৈরি করে। যারা এসব গল্প তৈরি করে, তারা দিবাস্বপ্নে আছে। বেগম খালেদা জিয়া কারাবরণের পর বিএনপি অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ। আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোতে মানুষের ঢল নামছে। আবার তারা সংযমও দেখাচ্ছে। এটা তো প্রমাণ করে, বিএনপি সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধ আছে। আমরা যদি একবার মাঠে নেমে যেতে পারি, রাজনৈতিক সব চিত্র বদলে যেতে পারে। প্রশাসন, পুলিশ দিয়ে ঠেকানো যাবে না।
নয়া দিগন্ত : চেয়ারপারসনের গ্রেফতারের পরও বিএনপি কঠোর কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে না। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই কি এমন কর্মসূচি?
মওদুদ আহমদ : না। আমরা সরকারের উসকানিতে পা দিচ্ছি না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। তারা আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পণ্ড করতে চাইবে। আমরা সে সুযোগ তাদের দিতে চাই না।
No comments